রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৫ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২৬ এপ্রিল ২০২৪

॥ প্রফেসর ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ ॥
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থ, মানবাধিকার সংরক্ষণসহ গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংবাদপত্রের পথচলা। বাংলা সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু হয় ১৮১৮ সালে বেঙ্গল গেজেট, দিকদর্শন ও সমাচার দর্পণ পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। বিশ শতকের শুরুতে সাংবাদিকতা পেশার বিস্তৃতি ঘটে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ এবং পূর্ববাংলার রাজধানী হিসেবে ঢাকার উত্থান সাংবাদিকতা বিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে মোগল শাসনামলেও মধ্যযুগীয় ভারতে সংবাদপত্রের প্রচলন ছিল। অবশ্য তখন সংবাদপত্র মুদ্রিত হতো না, সকল রাজনৈতিক বিষয়ক সংবাদ হাতে লেখা হতো এবং তা দেশের প্রধান প্রধান রাজকর্মচারীর নিকট প্রেরিত হতো। আবুল ফজল আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে লিখেছেন, সম্রাট আকবরের সময় প্রতি মাসে গভর্নমেন্ট গেজেটের মতো রাজকীয় সমাচারপত্র প্রচলিত ছিল। বাদশাহ শাহজাহান আগ্রার দরবারে বলেছিলেন, ‘এলাহাবাদের হিন্দু রাজাদের বিদ্রোহের কথা সমাচারপত্র পাঠ করে বিস্মিত ও বিষাদিত হলাম।’ সম্রাট আওরঙ্গজেবের অসুস্থতা ও ইন্তেকালে বিবরণও দিল্লির পয়গম-এ-হিন্দ্ নামক ফারসি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।  সমাচার দর্পণ প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলা পত্রিকা প্রকাশের যে সূচনা হয়েছিল, তা ক্রমেই বিকশিত হতে থাকে। ১৮৪৭ সালে পূর্ববাংলার প্রথম পত্রিকা ‘রংপুর বার্তাবহ’ প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে ঢাকার প্রথম বাংলা সংবাদপত্র ‘ঢাকা’ প্রকাশ হয় বাবুবাজারের ‘বাঙ্গালা যন্ত্র’ থেকে, কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের সম্পাদনায়। এটি চলে ১০০ বছর। আগের বছর কৃষ্ণচন্দ্রের সম্পাদনায় বের হয় কাব্যবিষয়ক সাময়িকী ‘কবিতাকুসুমাবলী’। এটি পূর্ববাংলার প্রথম সাময়িকপত্র। কুষ্টিয়ার কাঙাল হরিনাথ ১৮৬৩ সালে মাসিক ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ বের করেন। এছাড়া পূর্ববাংলায় নিয়মিত প্রকাশিত সংবাদপত্রের মধ্যে ছিল ১৮৭১ সালে ই. সি. ক্যাম্পের ‘বেঙ্গল টাইমস’ ও ১৮৭৪ সালে কালীপ্রসন্ন ঘোষের ‘বান্ধব’। ১৮৯৪ থেকে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদে’র মুখপত্র হিসেবে প্রতি মাসে প্রকাশিত হতে থাকে সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা। মীর মশাররফ হোসেনের মাসিকপত্র ‘আজীজন নেহার’ (১৮৭৪) ও পাক্ষিকপত্র হিতকরী (১৮৯০), শেখ আবদুর রহিমের সুধাকরসহ উনিশ শতকের শেষভাগে ছিল আরও কিছু পত্রিকা। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত হয় সৈয়দ এমদাদ আলীর সম্পাদনায় মাসিক সাহিত্যপত্র ‘নবনূর’। ১৯১৮ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন বের করেন ‘মাসিক সওগাত’। একই সালে বের হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মোহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-পত্রিকা’। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ও আবদুর রশীদ সিদ্দিকীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘মাসিক সাধনা’। মোজাম্মেল হক ১৯২০ সালে প্রকাশ করেন ‘মোসলেম ভারত’।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে নবযুগ, লাঙল ও ধূমকেতু। বাংলা দীনেশচন্দ্র দাস কল্লোল সম্পাদনা শুরু করেন ১৯২৩ সালে। ১৯২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আবুল হুসেনের নেতৃত্বে ঢাকায় ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৭ সালে প্রকাশিত ‘শিখা’ ছিল এ সংগঠনের বার্ষিক মুখপত্র। ১৯৪৭-এর দেশভাগের পর পূর্ববাংলার প্রথম সংবাদপত্র ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী সম্পাদিত ‘দৈনিক পয়গাম’। এ সময় ঢাকার বংশাল রোড থেকে দৈনিক ইনসাফ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন বলিয়াদীর জমিদার সাইয়েদ আশরাফ হোসাইন। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। মাওলানা আকরম খাঁ সম্পাদিত ‘দৈনিক আজাদ’ তখন অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কোলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো। ১৯৫০ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়ে সংবাদমাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। কোলকাতা থেকে প্রকাশিত ইত্তেফাক তখনো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। ১৯৫০-এর পরে ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ ও  ১৯৫১ থেকে ‘সংবাদ’ ছাপা শুরু হয়ে এখনো প্রকাশিত হচ্ছে। সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে ছয় দশকের অধিক সময় ধরে প্রকাশিত হয়ে আসছে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা। বিশ্বাসকে সমুন্নত রেখে মাটি ও মানুষের খেদমতে কাগজটি আজো বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে।
মূলত উনিশ শতকের সংবাদপত্রগুলো ছিল প্রধানত রচনাভিত্তিক। ছোট-খাটো সংবাদ ছাড়া প্রায় ক্ষেত্রেই যেকোনো একটি সংবাদ বা বিষয়কে কেন্দ্র করে বিস্তারিত আলোচনা ও মতামত ছাপা হতো। খবরের মধ্যে বেশিরভাগ থাকতো স্থানীয় খবর, আর কিছু থাকতো বিদেশি কাগজ থেকে সংগৃহীত খবর। মাঝে মাঝে ছাপা হতো মফস্বল থেকে পত্রিকা পাঠকদের প্রেরিত সংবাদ ও চিঠিপত্র। সম্পাদকরা বিষয়ভিত্তিক রচনা বা কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরতেন।
১৯০০ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় জাগরণ ও ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক তৎপরতার বছরগুলোয় এ অঞ্চলে সংবাদপত্র শিল্প বিকাশের ভিত্তি প্রস্তুত হয়। এ সময় বাংলায় প্রকাশিত ১৭৩টি সংবাদপত্রের মধ্যে আনুমানিক ৬৫টি পূর্ববঙ্গ থেকে মুদ্রিত হয়। এগুলোর অধিকাংশই ছিল মতামতধর্মী, উপজীব্য ছিল সাহিত্য, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমস্যা, সংস্কার এবং ধর্ম। পঞ্চাশের দশকের এ সকল সংবাদপত্রের মান তেমন উল্লেখযোগ্য ছিল না। তখন পত্রিকার মুদ্রণসৌকর্যও তেমন ছিল না এবং ভালো কোনো প্রেস ছিল না। সে সময় হাতে কম্পোজ হতো, ছবি ব্লক করে ছাপা হতো এবং শীর্ষ সংবাদের শিরোনাম হতো কাঠের টাইপে। পত্রিকা ছাপা হয়ে বিলম্বে বের হতো এবং বহু পত্রিকা দুপুরেও বের হতো। রাজধানীর বাইরে ডাকযোগে পত্রিকা সরবরাহ হতো এবং মফস্বলে এক-দুই দিন পরও পত্রিকা পৌঁছাতো।
১৯৭১-এর দিনগুলোতে এদেশে সংবাদপত্র শিল্পে ব্যাপক বিপর্যয় নেমে আসে। বেশকিছু সংবাদপত্র এ সময় বন্ধ হয়ে যায়, অনেকগুলো পত্রিকা পাকিস্তান সামরিক প্রশাসনের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে চলে যায়। তবে বেশ কয়েকটি পত্রিকা তখন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা এবং ভারত থেকে প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল শাশ্বত বাংলা, স্বাধীন বাংলা, জয় বাংলা, সোনার বাংলা, দৈনিক সংগ্রাম, বাংলার বাণী, বিপ্লবী বাংলা, দ্য নিউ নেশন, মুক্ত বাংলা, দ্য পিপল, দুর্জয় বাংলা, মুক্তি, একতা ইত্যাদি।
এ সময়ে একটি চমকপ্রদ ঘটনা ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাসে পূর্ব পাকিস্তান পাবলিকেশন্স লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ঢাকার ওয়ারীর ৮নং র‌্যাংকিন স্ট্রীট থেকে যাত্রা বাংলা ভাষার একটি আধুনিকতম পত্রিকা দৈনিক সংগ্রামের। অধিকাংশ উর্দুভাষী উদ্যোক্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত দৈনিক সংগ্রাম ১৯৭১ সালেরর পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। দৈনিক সংগ্রামের অফিস, প্রেস বেদখল হয়ে যায়। সেখান থেকে প্রকাশিত হতে থাকে কবি আল মাহমুদের সম্পাদনায় দৈনিক গণকণ্ঠ। সম্পূর্ণ নতুন প্রেস নতুন স্থান থেকে দৈনিক সংগ্রাম আবার তার যাত্রা শুরু করে ১৯৭৭ সালে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর  বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ১০। ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলা প্রকাশনী থেকে সংবাদনির্ভর সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বিচিত্রার প্রকাশনা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সরকারিভাবে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক বাংলা, দ্য বাংলাদেশ অবজারভার ও দ্য বাংলাদেশ টাইমস- এ চারটি পত্রিকা ছাড়া সরকার অন্যসব পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ করে দেন।
১৯৭৫ সালের পর থেকে পুরনো পত্রিকাগুলো একে একে আবার প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত সংবাদপত্র স্বৈরশাসকের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আশির দশকের শেষভাগে স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিবাদে মূলধারার সাংবাদিকতার বাইরে প্রতিবাদী সাংবাদিকতার একটি বিশেষ ধারা চালু হয়। কার্টুন প্রচ্ছদসংবলিত এসব কাগজ এরশাদ সরকারের বিদ্রুপাত্মক সমালোচনায় মুখর ছিল। ফলে সম্পাদকমণ্ডলীসহ এগুলোর প্রকাশনা নানা বাধা-বিপত্তির মুখে পড়ে। এরশাদ সরকারের পতনের পেছনে এসব কাগজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরশাদের পতনের পর ম্যাগাজিন সাংবাদিকতার এ ধারাটি আর থাকেনি।
মূলত ১৯৭১ পরবর্তী সময় থেকে আশির দশক পর্যন্ত দৈনিক পত্রিকাসমূহ রাজনৈতিক সাংবাদিকতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। বস্তুনিষ্ঠ ও এথিক্যাল রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি রুচিশীলতা, সংস্কৃতিমনস্কতার পরিচয় দেয় বেশ কিছু পত্রিকা। কম্পিউটার ডেস্কটপ প্রকাশনা ও অফসেট মুদ্রণ প্রযুক্তি ইতোমধ্যে চলে আসায় মুদ্রণমানেও পরিবর্তন আসে। গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন আসে দৈনিক পত্রিকায় লেখক ও পাঠকের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। নির্ধারিত উপসম্পাদকীয় লেখকের বাইরে মধ্যপাতায় চিন্তক, বুদ্ধিজীবী; এমনকি পাঠক পর্যন্ত লেখা শুরু করেন নিজ পরিচয় বিবৃত করার মাধ্যমে। এরা সবাই হয়ে ওঠেন কলামিস্ট এবং দ্রুত মধ্যপাতানির্ভর একটি সিভিল সোসাইটি গড়ে ওঠতে থাকে বাংলাদেশে।
১৯৯২ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের তথ্য পাওয়ার উৎস ছিল হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা, বিবিসি রেডিও ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা সংবাদ। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে নতুন ভাষা, তথ্য বিন্যাস ও অবয়ব নিয়ে কয়েকটি কাগজ প্রকাশিত হয়। তাদের নতুন বৈশিষ্ট্য ছিল যে সংবাদ যে পাতায় শুরু হতো, সে পাতায় তা শেষ হতো। পত্রিকার নিজস্ব সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়-এর বাইরেও পাঠকদের থেকে কিংবা সাংবাদিক-লেখক গণ্ডির বাইরে চিন্তাশীল পাঠকদের কলাম লেখক হিসেবে পরিচিত করে তোলে। প্রকাশ ভঙ্গিতে বৈচিত্র্য থাকলেও বিপণন ব্যবস্থা ছিল আগের সংবাদপত্রগুলোর মতোই। ১৯৯২ সালে অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ব্যবহার করে দেশের পাঁচটি স্থান থেকে একযোগে প্রকাশিত হয় জনকণ্ঠ। ১৯৯৮ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ ভেঙে প্রথম আলো প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকা বাজারে আসার আগে প্রচারের ভিন্ন এক কৌশল বেছে নেয়। সম্পাদকের নেতৃত্বে কর্মীরা সারা দেশে জেলায় উপজেলায় মতবিনিময় সভার মাধ্যমে পাঠকদের নিয়ে ‘বন্ধুসভা’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। ফলে পত্রিকা বাজারে আসার আগেই পত্রিকার কর্মীরা দেশের প্রায় সব অঞ্চলের মানুষের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। ১৯৯৯ সালে একই কৌশল নিয়ে যুগান্তর বাজারে আসে। এরপর একে একে সমকাল, আমার দেশ, নয়া দিগন্তসহ অনেক পত্রিকা আধুনিক সৌকর্যে প্রকাশিত হয়।
১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশন যাত্রা শুরু করলেও স্যাটেলাইট টেলিভিশনের সম্প্রচার শুরু হয় ১৯৯২ সালে। এ বছর বাংলাদেশ টেলিভিশন সিএনএন ও বিবিসির অনুষ্ঠান রিলে করে সম্প্রচার শুরু করে। সরকার ১৯৯৫ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এসটিভিআর (স্যাটেলাইট টিভি রিসিভার)-এর বৈধতা দিলে বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার শুরু হয়। ১৯৯৭ সালে এটিএন বাংলা, ১৯৯৯ সালে চ্যানেল আই, ২০০০ সালে একুশে টিভি চালু হয়। একুশে টিভি চালু হওয়ার পর এর সংবাদকর্মীরা ক্যামেরা হাতে ঘটনাস্থলে ছুটতে থাকেন। সংবাদ কতভাবে দেখানো যায় একুশে টিভি তা দর্শক সাধারণকে দেখিয়ে দেয়। ভোক্তা দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে টেলিভিশন চ্যানেলের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এ মাধ্যমে বিনিয়োগ। বিংশ শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে দেশে স্যাটেলাইট টেলিভিশনের আবির্ভাব সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে।
সংবাদমাধ্যমের অন্যতম বাহন রেডিওর যাত্রা শুরু করে ১৯৩৯ সালে অলইন্ডিয়া রেডিও ঢাকা কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি রেডিও ক্ষমতাসীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকায় শ্রোতাদের রুচি, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের পরিবর্তনের কথা বিবেচনায় রেখে অনুষ্ঠানের মান বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে মানুষ রেডিও বিমুখ হয়ে পড়ে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারিভাবে পরিচালিত এফএম রেডিও দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে আমাদের দেশে অর্ধডজনের বেশি এফএম রেডিও চ্যানেলের সম্প্রচার চলছে। প্রাইভেট এ রেডিও স্টেশনগুলো অতি অল্পসময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এ রেডিও চ্যানেলগুলো বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
প্রযুক্তি ও কারিগরি পরিবর্তনের ফলে আধুনিক সংবাদপত্রের প্রকাশনা প্রযুক্তি ও তার ক্রমবিকাশ অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছে। বর্তমানে কম্পিউটার আবিষ্কার ও এর ব্যাপক ব্যবহার মুদ্রণজগতের যাবতীয় ধ্যান ধারণা, পদ্ধতি-প্রক্রিয়া পাল্টে দেয়। কম্পোজ থেকে শুরু করে কালার সেপারেশন সবকিছুই এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা চর্চায় ব্যবহৃত তথ্যপ্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে- স্যাটেলাইট সম্প্রচার নেটওয়ার্ক, টেলিভিশন, ভিডিও, ডিজিটাল রেডিও, ইন্টারনেট (ই-মেইল, ই-কমার্স, ই-কনফারেন্সিং ইত্যাদি), ওয়্যারলেস যোগাযোগ পদ্ধতি যেমন- মোবাইল ফোন, ভিডিও, ডিজিটাল ভিডিও ডিস্ক, সিডি-রম এবং ভিডিও-ভয়েস মেইল। এখন স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল স্তরের সাংবাদিকরা তথ্যের আদান প্রদানে এসব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সর্বশেষ সংবাদ, ব্রেকিং নিউজ, খেলার সংবাদ, ক্রিকেটের সংবাদ বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্নভাবে সংবাদ এখন পাঠকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে এ তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষতার ফলে।
আগের তুলনায় গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কলেবর অনেক বড় হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ভাবনায়, উপস্থাপনায়, প্রকাশে-প্রকরণে নিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকাগুলোয় গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ ইস্যুতে মোড়ক বের করার প্রবণতাও ইদানীং পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটি ইস্যুকে চারটি পাতাজুড়ে ছবি-গ্রাফ-মানচিত্র দিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয় পাঠকের সামনে। ক্রমান্বয়ে পাঠকের চাহিদারও পরিবর্তন চোখে পড়ছে।
বর্তমান বিশ্বে সাংবাদিকতা পেশায় সবচেয়ে আধিপত্য বিস্তারকারী প্রযুক্তি হলো ইন্টারনেট। এটি তথ্য ও যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি স্বল্পসময়ের মধ্যে বিশ্বের সকল ক্ষেত্রে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক (আইএসএন) নামের একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ‘অনলাইন’ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করে নবদিগন্তের সূচনা করে। বাংলাদেশ অনলাইন ইন্টারনেটের জগতে প্রবেশ করার পর থেকে ই-মেইল, ইন্টারনেট, ফ্যাক্স এবং ওয়েব ব্রাউজিং অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯৬-এর মাঝামাঝি বাংলাদেশ যখন ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, তখন থেকে ঢাকার দু-একটি জাতীয় দৈনিক এ ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে। ১৯৯৭ সালের শেষদিকে কয়েকটি পত্রিকা তাদের ওয়েবসাইট সংস্করণের প্রচলন ঘটায়। ১৯৯৮ থেকে ব্যাপকহারে সংবাদপত্রগুলো তাদের ওয়েবসাইট সংস্করণ চালু করে। এ ইন্টারনেটের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অনলাইন সাংবাদিকতার একটি নতুন ধারা চালু হয়েছে। প্রচলিত সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশন ক্রমান্বয়ে অনলাইনের দিকে ঝুঁকছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি, শিক্ষার বিস্তার, সময়ের স্বল্পতা সব মিলিয়ে অনলাইন পত্রিকার পাঠক দিন দিন বাড়ছে। সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি, সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে নাগরিক মতামত তৈরি ছাড়াও সাহিত্যচর্চা, চলচ্চিত্র সমালোচনাসহ নানা বিষয় ব্লগে উঠে আসছে।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম আমাদের দেশে একটি ভিত্তিভূমি নির্মাণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে এখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাধ্যমে সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি)সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। সাংবাদিকতা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে তুলতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। অন্যান্য পেশার মতো সাংবাদিকতাও একটি নতুন পেশাগত শিক্ষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে।
বিপুল  সফলতার মধ্যেও কিছু কষ্টছবি ভেসে ওঠে মিডিয়াজগতে। সংবাদমাধ্যমকে এখন মিডিয়া ব্যবসা বলে অনেকেই অভিহিত করছে। সামাজিক বিবর্তন ও রাজনৈতিক মেরুকরণে সংবাদপত্রের যে বিশেষ ভূমিকার কথা গত শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত বলা হতো, এখন আর সেভাবে বলা হয় না। এখন আর কোনো ব্যক্তি বা একক সংস্থা নয়, রেডিও টিভি বা সংবাদপত্রের মালিক হচ্ছেন কোনো দলীয় ক্যাডার, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী বা গ্রুপ অব কোম্পানিজ। ‘নষ্ট’ রাজনীতিক ও ‘দুষ্ট’ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থে সংবাদপত্র আর টিভি চ্যানেলের মালিক হচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম মালিকানায় করপোরেটাইজেশনের কারণে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রকট হয়ে উঠেছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও ব্ল্যাকমেইলিং প্রবণতা। এটি সাংবাদিকতার নৈতিকতার অবক্ষয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও পেশার মর্যাদা ও জনআস্থায় সংকট সৃষ্টি করছে। তাই রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারই শুধু নয়, অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর পরিবেশিত সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
সাংবাদিকরা জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, তার মেলবন্ধন ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাব। একটি সময়ে এসে জাতীয় প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক ঢাকার সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা, ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থকরণ, সদস্যপদ না পাওয়া, নেতৃত্বে কোন্দল নানাবিধ কারণে এ বিভক্তি শুধু জাতীয় পর্যায়ে নয়; এমনকি জেলা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। সাংবাদিকদের এ বিভাজনের ফলে সাংবাদিকতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, পড়ছে তাদের পেশাগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপরও। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় এ বিভক্তি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে গোষ্ঠীগত, দলগত ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে তথ্যের বিকৃতি, হলুদ সাংবাদিকতার প্রসার, সাংবাদিকদের নৈতিক অবক্ষয়, সমাজে সাংবাদিকদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হওয়া, সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতা, সর্বোপরি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। এ বিভক্তি সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সত্যিকার অর্থে, সংবাদমাধ্যম শুধুমাত্র চলমান ঘটনার বিবরণ প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অবাধ তথ্যপ্রবাহ, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, নতুন নতুন সৃজন, মেধা ও মননের সর্বোত্তম ব্যবহার, বোধ ও বোধির পূর্ণ প্রকাশ নানা প্রয়োগকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সংবাদমাধ্যম বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছে। সংবাদমাধ্যম বিশেষত সংবাদপত্র দুর্গত মানুষের আর অবহেলিত জনপদের খবরই প্রকাশ করছে না, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ট্রাস্ট গঠন করে জনকল্যাণমূলক কাজে পুরোদস্তুর অংশগ্রহণ করছে। এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য সহায়ক তহবিল গঠন, মাদকবিরোধী আন্দোলন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গঠন ও সচেতনতা তৈরি করছে। কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও তাদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করছে। সংবাদমাধ্যম সামাজিক বিভিন্ন জরুরি ইস্যুতে গোলটেবিল বৈঠক, মুক্ত সংলাপ, নাগরিক সংলাপ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনমত ও সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সংবাদমাধ্যম আগের তুলনায় বর্তমানে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা বিষয়ে অনেক বেশি সম্পৃক্ত। স্বাধীনতা উত্তর কয়েক দশকে রাজনীতির বাইরেও মানবিক ও সামাজিক নানা বিষয়ে সংবাদমাধ্যম ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। মানুষের অধিকার, নারী স্বাধীনতা, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, সন্ত্রাস দমন, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার দূরীকরণ, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। নানা সামাজিক পরিবর্তনে সংবাদমাধ্যম যেমন কাজ করছে, তেমনি করে সামাজিক নানা পরিবর্তনকেও সংবাদমাধ্যম ধারণ করছে।
পরিশেষে বলা যায়, এখন বিশ্বায়নের যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে  সংবাদপত্রের সংকট তৈরি হচ্ছে। প্রথমত, অনলাইন যুগে ছাপা পত্রিকা টিকে থাকা নিয়ে সংশয় আছে। সংবাদপত্র পাঠকের স্বল্পতা ক্রমেই এমনভাবে প্রকট হচ্ছে যে ধীরে ধীরে সংবাদপত্রের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। পাঠক এখন আর আগের মতো সংবাদপত্র কিনে পড়তে চায় না। দু’চারটি কাগজ ছাড়া প্রচার সংখ্যা কারোরই তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। বাংলাদেশে প্রতিদিন কয়েক শত দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এগুলোর প্রচার সংখ্যা এতই সীমিত যে এর দ্বারা সমাজের, গণতন্ত্রের কতটা উন্নতি হয় তা প্রশ্নসাপেক্ষ। আরেকটি সংকট আমাদের দেশে প্রকট হয়ে উঠছে। আর তা হচ্ছে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারিভাবে তো বটেই, সাধারণভাবেও পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো বা সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা প্রকট আকার ধারণ করছে। এ সংকট থেকে উত্তরণে সাহসী সম্পাদক যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। এ পরিসরটি ফিরিয়ে আনা তাই খুবই জরুরি। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে সোনার বাংলা সেই সাহসী ভূমিকায় নিজেকে প্রমাণ করতে পারবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
লেখক : কবি ও গবেষক; প্রফেসর, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।