ইসরাইলের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা যে অবৈধ, এ সত্যও কেউ অস্বীকার করেন না। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভূমি অবৈধভাবে দখল করে বৈধ অধিবাসীদের নিজস্ব বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করেই দখলদার ইসরাইল থেমে নেই। প্রতিদিন অগণিত নারী-পুরুষ, শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ বনি আদমকে হত্যা করছে। ইসরাইলের সেনাবাহিনী ও নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অস্বীকার করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস নিউজ সাইট তাদের প্রকাশিত একটি সংবাদে জানিয়েছে যে, ইসরাইলের অধিকৃত পশ্চিমতীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর নেৎজা ইয়েহুদার ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। অধিকৃত পশ্চিমতীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ইউনিটে মার্কিন সামরিক সহায়তা কমানো হতে পারে- এমন খবরের সত্যতা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সামনের দিনগুলোয় আপনারা তা দেখতে পাবেন।’ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের একটি সেনা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সহায়তা কমানোর পরিকল্পনার খবর প্রকাশের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, তার দেশের সেনাবাহিনীর ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইসরাইল সেটি প্রত্যাখ্যান করবে। বিশ্বমোড়ল আমেরিকার বিরুদ্ধে এমন প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরও বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের সকল অপকর্ম সমর্থন করছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠা ও গাজার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিরোধিতা করছে।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ এমন ঘোষণা দিয়েই জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আমেরিকার সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু আমেরিকার ইসরাইলনীতি এ ঘোষণার বিপরীত। এ দ্বৈতনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। বিভিন্ন শহরে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হলেও এখন তা প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণ শিক্ষার্থীরা আমেরিকান সরকারের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। অথচ তাদের এ ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে না নিয়ে বাইডেন প্রশাসন শক্তি প্রয়োগের নীতিগ্রহণ করেছে, যা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ইহুদি এবং বিবেকবান ছাত্র ও শিক্ষাবিদরা গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিবাদ করায় তাদের ওপরও চলছে নির্মম নির্যাতন। ইসরাইলি স্বার্থের কাছে পশ্চিমা গণতন্ত্র আজ সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। ইসরাইলের স্বার্থে আঘাত লাগলেই পশ্চিমাদের কাছে সেটা গণতন্ত্র ও ইহুদিবিরোধী হয়ে যায়।’ বিশ্বের প্রতিটি বিবেকবান মানুষ পশ্চিমাদের এ ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু নেতারা সাধারণের কণ্ঠস্বর শক্তির জোরে বন্ধ করার ভুল পথে হাঁটছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের গণহারে গ্রেফতার করছে। ফলে প্রতিবাদ আরো বেগবান হচ্ছে। প্রতিবাদের ঢেউ আমেরিকা ছাড়িয়ে ইউরোপসহ দেশে দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে।
আমরা মনে করি, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের নেতাদের উচিত তরুণ ছাত্র, জনতা; বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবিকে বিবেচনায় নিয়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ন্যায়ের পথে চলা। ইসরাইল রাষ্ট্র রক্ষার নামে মানবাধিকারের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান বিশ্বকে যে ভুল বার্তা দিচ্ছে, তার খেসরাত প্রজন্মের পর প্রজন্ম দিতে হবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র, মানবাধিকারের পক্ষের শক্তিগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে, আবার ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতির প্রসার ঘটবে; যা মানবসভ্যতার জন্য শুধু বিপদ নয়, ধ্বংসও ডেকে আনবে। আমরা আশা করি, বিশ্ববাসী সেই দুঃসময়ের মুখোমুখি হওয়ার আগেই বিশ্বনেতারা সত্য উপলব্ধি করবেন। আগ্রাসী ইসরাইলের আগ্রাসন প্রতিহত করে সত্য ও ন্যায়ের ভারসাম্যপূর্ণ একটি পৃথিবী গড়ার পক্ষে দেয়া অঙ্গীকার রক্ষার শপথ রক্ষা এবং আত্মমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবেন।
এ পাতার অন্যান্য খবর
এ বিভাগ বা পাতায় আর কোন সংবাদ, কবিতা বা অন্যকোন ধরণের লেখা পাওয়া যায়নি।