সাবেক এমপি মুফতি আবদুস সাত্তারের ইন্তিকাল

বাগেরহাট জেলা জামায়াতের ইসলামীর সাবেক আমীর ও জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য মুফতি মাওলানা আবদুস সাত্তার গত ৬ই ফেব্র“য়ারি দিবাগত রাত ১২টা ৩০ মিনিটে ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তিকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলা.ইহি রাজিউন।) তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৮৩ বছর। তিনি বার্ধক্যের কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তিনি ৩ ছেলে ও ৭ মেয়েসহ বহু আত্মীয় স্বজন রেখে গিয়েছেন। তিনি বাগেরহাটের শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে দুইবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ৭ ফেব্র“য়ারি সকাল ১০টায় ধানমন্ডি ঈদগাহ ময়দানে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা শেষে তাঁর লাশ প্রথমে খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে জানাজা শেষে পরে বাগেরহাট শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জে জানাজার পর নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়  সেখানে নামাজে জানাজা শেষে ৮ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ঢাকায় অনুষ্ঠিত মরহুমের নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল কালাম মুহাম্মদ ইউসুফ। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা মহানগরী জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সাইফুল আলম খান মিলন, আমিনুল ইসলাম, আহমদ উল্লাহ ভূঁইয়া, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ঢাকা মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল হালিম, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর আমীর মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন প্রমুখ।

জীবন বৃত্তান্ত : মুফতি আব্দুস সাত্তার বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের চালিতাবুনিয়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত আকন পরিবারে ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আলিমুদ্দিন আকন। তিনি মোড়েলগঞ্জের আমতলী মাদরাসায় শিক্ষাজীবন শুরু করে। পরে লক্ষ্মীপুর জেলার টুমচর মাদরাসা ও ছারছিনা কামিল মাদরাসায় শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে পাকিস্তান আমলে বৃহত্তর বরিশাল জেলা জামায়াতের আমীর ছিলেন। সেখানে ১৯৬৯ সাল এবং পরে ১৯৭০ সাল থেকে বৃহত্তর খুলনার জেলা আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। ইতোপূর্বে তিনি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই বর্ণাঢ্য জীবনে তিনি বাগেরহাট আলিয়া মাদরাসা, খুলনা নেছারিয়া কামিল মাদরাসা ও চুয়াডাঙ্গা আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি বহু মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল ও কলেজের প্রতিষ্ঠার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-৪ আসন (মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলা) জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শোকবানী :

বাগেরহাট জেলা জামায়াতের ইসলামীর সাবেক আমীর ও জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য মুফতি মাওলানা আবদুস সাত্তারের ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান গত ৭ ফেব্র“য়ারি নিম্নোক্ত শোকবাণী প্রদান করেছেন। শোকবাণীতে তাঁরা বলেন,“বাগেরহাট জেলা জামায়াতের ইসলামীর সাবেক আমীর ও জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য মুফতি মাওলানা আবদুস সাত্তারের ইন্তিকালে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাঁর ইন্তিকালে আমরা একজন খ্যাতিমান আলেমের দ্বীনকে হারালাম। মরহুম সারা জীবন ইসলামী শিক্ষা বিস্তার ও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছেন। বাগেরহাট ও খুলনা-বরিশাল অঞ্চলে জামায়াতে ইসলামীর কাজের উন্নতি অগ্রগতির পেছনে মরহুম বিরাট অবদান রেখে গেছেন। জনগণের ভোটাধিকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মরহুম অবদান রেখে গেছেন। তাঁর জীবনের সকল নেক আমল কবুল করে আল্লাহ তাকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন।

আমরা মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং দোয়া করছি আল্লাহ তাদের এ শোক সহ্য করার তাওফিদ দান করুণ।”