সংবাদ শিরোনামঃ

দেশকে চরম সংঘাতের মুখে ঠেলে দেবেন না, নির্বাচন বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় মেনে নিন ** বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস'ার বিস-ৃত নেটওয়ার্ক ** আফগান সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও শক্তিশালী নেতৃত্ব ** ভারত আ’লীগকে ‘তালাক’ দিচ্ছে ** সরকার ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অশান- করে তুলেছে ** আন-র্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ** লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন! ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** রাসূলই (সা.) আমাদের আদর্শ ** ঝালকাঠিতে ডাক্তার ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ক্লিনিক ব্যবসা ** কাব্যে অলঙ্কারের কারুকাজ ** বিদেশি ভাষা শিখতে গিয়ে মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা দুঃখজনক ** ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র শতবর্ষ পূর্তি **

ঢাকা শুক্রবার ৫ ফাল্গুন ১৪১৮, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৩৩, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২

‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র শতবর্ষ পূর্তি

অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান
(পূর্ব প্রকাশের পর)

কবি প্রতি রোববারে হুগলী হতে কলকাতা এসে সমিতির জন্য পরিশ্রম করতেন। এর দু’বছর পূর্বে আমি কলকাতা ছেড়েছিলাম। নতুন চাকরি পেয়ে আবার কলকাতায় বাসা নিই। অতঃপর কবির যুগ্ম-সম্পাদক হিসেবে আমি নিজে এবং আরও কতিপয় সদস্য কবির সঙ্গে চাঁদার খাতা নিয়ে কলকাতার সাহিত্যামোদী ও শিক্ষিত মুসলমানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি।” (গোলাম মোস-ফা স্মরণে : মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ-রচনাবলী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৭১-৭২)।

১৯২৮ সালে ৮ ও ৯ এপ্রিল বসিরহাটে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সভাপতিত্বে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনের চতুর্থ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন সৈয়দ মোকাররম আলী। এরপর ১৯৩২ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাকবি কায়কোবাদের সভাপতিত্বে সমিতির পঞ্চম অধিবেশন কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম এ অধিবেশন উদ্বোধন করেন। মূল অধিবেশন ছাড়াও এ সম্মেলনে প্রথম বারের মত সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও বিজ্ঞান-এ চারটি শাখার স্বতন্ত্র অধিবেশন হয় এবং এতে যথাক্রমে সভাপতিত্ব করেন কাজী আব্দুল ওদুদ, অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম, অধ্যাপক কাজেম উদ্দীন আহমদ ও ড. কুদরতে খোদা। (দ্র. মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ বাহার : সাহিত্য সমিতির ইতিহাস, মাসিক মোহাম্মদী, ১৪শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, বৈশাখ, ১৩৪৮, পৃ. ৪৫৪)।

সাহিত্য-সমিতির ষষ্ঠ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৯ সালের ৬ ও ৭ মে কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে। উদ্বোধন করেন তদানীন-ন বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক। মূল সভাপতি ছিলেন আব্দুল করিম সাহিত্য-বিশারদ এবং অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস-চ্যান্সেলর খান বাহাদুর আজিজুল হক। সম্মেলনের বিভিন্ন শাখা যেমন কথা সাহিত্য, মনন সাহিত্য, সংস্কৃতি, মহিলা-সাহিত্য ও কাব্য-সাহিত্য এতে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে খান সাহেব মোহাম্মদ হেদায়েতুল্লাহ, কাজী মোতাহার হোসেন, এস. ওয়াজেদ আলী, মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ ও কবি শাহাদৎ হোসেন। সরোজিনী নাইডু, ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন ও বক্তৃতা দান করেন। সম্মেলনে কবিতা পাঠ করেন গোলাম কুদ্দুস, কাদের নওয়াজ, তালিম হোসেন, আহসান হাবীব প্রমুখ। (দ্র. বুজর চেহ মেহের, ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলন’ : মাসিক মোহাম্মদী, ১২শ বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ, ১৩৪৬, পৃ. ৫৮৭-৯০)।

সম্মেলনের মূল সভাপতি আব্দুল করিম সাহিত্য-বিশারদ তার ভাষণে বলেন : “সাহিত্যে জাতী-ধর্মের গণ্ডি আমি কখনও স্বীকার করি নাই, এখনও করি না, কিন' ইহার বৈচিত্র্য স্বীকার করি।... বঙ্গীয় মুসলমানদের বর্তমান সাহিত্যিক জাগরণ এই সম্প্রদায়ের প্রগতির পরিচায়ক ত বটেই সঙ্গে সঙ্গে অখ বাঙালা সাহিত্যেরও বৈচিত্র্য এবং সম্পদ বৃদ্ধির একটি প্রধান চিহ্ন। বাঙালা সাহিত্য শুধু বাঙালি হিন্দুর কিংবা বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য নয়, ইহা উভয়েরই সম্মিলিত সাহিত্য। উভয় জাতি এই সাহিত্যকে আপন ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা দিয়া সৌষ্ঠবমণ্ডিত করিয়া না তুলিলে এই সাহিত্য যে নিতান-ই একদেশদর্শী হইয়া পড়িবে, তাহাতে আর সন্দেহ কি?” (দ্র. ঐ, পৃ. ৫২১-২২)।

১৯৪১ সালের ৫ ও ৬ এপ্রিলে সাহিত্য-সমিতির ‘রজত-জুবিলী’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার মুসলিম ইন্সটিটিউট হলে কাজী নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে। বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী একে ফজলুল হক এর উদ্বোধন করেন। এ উৎসবে নজরুল ইসলামের প্রদত্ত অভিভাষণটি নানাদিক থেকে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। এটাই তার জীবনের শেষ অভিভাষণ। এরপর তিনি অসুস' হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। নজরুল তাঁর অভিভাষণে বলেন :

“আপনারা এই ভিখারীকে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র জুবিলী উৎসবে সভাপতি কেন যে মনোনীত করলেন, যিনি বিশ্বভূবনের পরমপতি, পরমগতি, পরমপ্রভু, তিনিই জানেন। আপনাদের কাছে আজ অজানা নেই যে ঘরে-বাইরে, সভায় বা সমাধির গোপন গুহায় কোথাও পতিত্ব করার ইচ্ছা বা সাধ আমার নেই।... অসুন্দরের সাধনা আমার নয়, আমার আল্লাহ পরম সুন্দর। তিনি আমার কাছে নিত্য প্রিয়ঘন সুন্দর, প্রেমঘন সুন্দর, আনন্দঘন সুন্দর।... আমার সর্ব অসি-ত্ব জীবন-মরণ-কর্ম, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ যে তাঁরই নামে শপথ করে তাঁকে নিবেদন করেছি। আজ আমার বলতে দ্বিধা নেই, আমার ক্ষমা-সুন্দর প্রিয়তম আমার আমিত্বকে গ্রহণ করেছেন।

“আমার বহু আত্মীয়াধিক প্রিয় সাহিত্যিক ও কবি-বন্ধু আমায় অভিযোগ করেন, আমার নাকি দান করার অপরিমেয় শক্তি ছিল দেশকে, জাতিকে, সাহিত্য-রস-পিপাসু মনকে- শুধু কার্পণ্য করে বা স্বার্থপরের মতো আপন মুক্তির প্রচেষ্টায় সেই দক্ষিণা-দানের দক্ষিণ হস-কে ঊর্ধ্বে, না-জানা শূন্যের পানে তুলে ধরেছি।... তাঁরা যখন এ-কথা বলেন, আমার চোখের জলে বুক ভেসে যায়। যে অভিমান তাঁরা আমার উপর করেন, সেই অভিমান জানাই আমি আমার নির্বিকার উদাসীন একাকীত্ব নিয়ে আমার পরম সুন্দরকে। যে মহাসাগর থেকে ঝড়ের রাতে শ্যাম-ঘন মেঘ-রূপে আমি সহসা এসেছিলাম ঘন ঘন বিদ্যুৎছটায়, বজ্রের রোলে, ঘোর তিমির-ঘন-ঘটায়, মুক্ত জটায় দিগ-দিগন- ছেয়ে ফেলেছিলাম, অজস্র বারি-বর্ষণে তৃষিত মাঠ-ঘাট প্রান-রের তৃষা মিটিয়েছিলাম; আমার রুদ্র-সুন্দর মৃত্যু দেখে যারা দেখতে পাননি যে, এই অশান- মেঘ-ঘন রূপ শুধু রুদ্রের ডমরু বিষাণ নিয়েই আসেনি, এরই করুণ নয়নের অশ্রু ধারায় পৃথিবীতে ফুটেছে প্রেমের ফুল, শতদল, বৃন-, বনলতা হয়ে উঠেছে আনন্দে কণ্টকিত; এই মেঘই এনেছে আনন্দ-বন্যা, ছন্দের নূপর-ধ্বনি, সুরের সুরধ্বনী গানের প্রবাহ,- সেই মেঘ একদিন দেখতে পেলো সে তুষারীভূত হয়ে শ্বেত শুভ্ররূপে হিমালয়ের উচ্চতম শিখরে পড়ে আছে।....

 

“আপনাদের এই সাহিত্যসভায় রসের জলসায় আপনারা আমার অসহায় জীবনী শুনতে আসেননি।.... যদি আর বাঁশি না বাজে- আমি কবি বলে বলছিনে- আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম সেই অধিকারে বলছি... বিশ্বাস করুন আমি কবি হতে আসিনি, আমি নেতা হতে আসিনি- আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম- সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নীরব পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।...“সাহিত্য ব্যক্তিত্বেরই প্রকাশ। আমি সাহিত্যে কি করেছি, তার পরিচয় আমার ব্যক্তিত্বের ভেতর।...“বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতির সাথে আমার যোগাযোগ বহুদিনের।... সাহিত্য-সমিতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, একে সর্বপ্রকার সাহায্য করতে- বিশেষভাবে অর্থ সাহায্য পুষ্ট করে তুলতে সকলকে আবেদন জানাচ্ছি। সাহিত্য-সমিতি বিত্তশালী হলে বহু তরুণ প্রতিভাকে আশ্রয় দিতে পারবে, তাদের প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করতে পারবে।” (দ্র. আব্দুল কাদির সম্পাদিত ‘কাজী নজরুল রচনা সম্ভার’, পৃ. ১৪২-৪৬)।

নজরুলের উপরোক্ত অভিভাষণটি পরবর্তীতে ‘যদি আর বাঁশি না বাজে’ শিরোনামে ছাপা হয়ে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করে। এটি তাঁর জীবনের সর্বশেষ অভিভাষণ এবং এতে তাঁর জীবন সম্পর্কে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য থাকায় এর এক অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে।

‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র সপ্তম সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৩ সালের ৮ ও ৯ মে তারিখে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে সৈয়দ এমদাদ আলীর সভাপতিত্বে । মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ সম্মেলন উদ্বোধন করেন। অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে স্যার আহমদ ফজলুর রহমান (এ.এফ. রহমান) ও মুহম্মদ হবিবুল্লাহ বাহার। এ সম্মেলনকে সাহিত্য, সংবাদ সাহিত্য, পুঁথি-সাহিত্য, কথা-সাহিত্য, শিশুসাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, ধন-বিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদি শাখায় বিভক্ত করা হয় এবং সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, ড. আব্দুল গফুর সিদ্দিকী, মাহ্‌বুবুল আলম, বেগম শামসুন নাহার মাহমুদ, অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁ, ড. আলী করিম, সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম প্রমুখ। সম্মেলনে যারা উপসি'ত ছিলেন তাঁদের মধ্যে শেখ হবিবর রহমান, আব্বাস উদ্দীন আহমদ, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, আবু সয়ীদ আইয়ুব, বিষ্ণু দে, আবু মুহাম্মদ হবীবুল্লাহ, শওকত ওসমান, আব্দুল মওদুদ প্রমুখ বিশিষ্ট শিল্পী-সাহিত্যিকগণ। (দ্র. বুজর-চে-মেহের : ‘এবারকার সাহিত্য সম্মেলন’, মাসিক মোহাম্মদী, ১৬শ বর্ষ, ১ম সংখ্যা, আষাঢ় ১৩৫০)।

অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি স্যার আহমদ ফজলুর রহমান তাঁর ভাষণে বলেন : “... নবীন মুসলমান সাহিত্যিকদের উৎসাাহ দিবার জন্য, তাঁদের রচিত জিনিসগুলো জনসাধারণের সম্মুখে ফুটিয়ে তুলবার জন্য মুসলমান সাহিত্য-সমিতির প্রয়োজন হয়। এই সমিতি অনেকটা সফলতা লাভ করছে। নবীন সাহিত্যিকরা আজ বঙ্গ সাহিত্যে উচ্চ স'ান অধিকার করে যে সমাজের মুখোজ্জ্বল করেছেন সেটা কতকটা এই সমিতির অক্লান- পরিশ্রম, চেষ্টা ও একনিষ্ঠ সেবার ফল, তা আপনাদের অবিদিত নেই। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এই সমিতির গঠন, তা সফল হয়েছে। এর অক্লান- কর্মীদের কাছে আমাদের সমাজের ও বঙ্গ-সাহিত্যের ঋণ অপূরণীয়।” (দ্র. বঙ্গ সাহিত্যের ভবিষ্যৎ রূপায়ণ, মাসিক মোহাম্মদী, ১৬শ বর্ষ, ৮ম সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ, ১৩৫০, পৃ. ৩৪০-৪১)।

উপরোক্ত ভাষণে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র মূল উদ্দেশ্য ব্যক্ত হয়েছে। এভাবে কলকাতায় ১৯১১ সালে ৪ সেপ্টেম্বর ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯), ‘জাতীয় মঙ্গলে’র (১৯০৯) কবি ভোলার মোজাম্মেল হক (১৮৮৫-১৯৭৬) প্রমুখের উদ্যোগে যে সাহিত্য-সমিতি গঠিত হয় পরবর্তী চারদশক কাল পর্যন- বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা, শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। সাহিত্য-সমিতির সাথে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আরো যারা জড়িত ছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে যেমন স্ব স্ব ক্ষেত্রে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন, স্ব সমাজের উন্নয়নেও তাঁরা যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালান। বাঙালি মুসলিম সমাজের উন্নতি, অগ্রগতি ও নবজাগরণের পেছনে এদের প্রত্যেকের বিশেষ অবদান রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তাঁরা নবজাগ্রত বাঙালি মুসলমানদের চিন-া-চেতনা বিকাশে, শিক্ষা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, সমাজ উন্নয়ন ও বিশেষ করে আত্মমর্যাদা ও আত্মপ্রত্যয়বোধ নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন। বিংশ শতাব্দীর নানা দিক-পরিবর্তনকারী ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে এদের অনেকেরই সম্পৃক্ততা ছিল, অনেকেই এ পরিবর্তনের ধারাকে প্রভাবিত করেছেন অথবা তাঁরা ছিলেন তখনকার বিভিন্ন অবস'া ও ঘটনার কালিক সাক্ষী। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৬ সালের ঢাকায় সর্বভারতীয় মুসলমানদের জাতীয় সংগঠন ‘মুসলিম লীগে’র প্রতিষ্ঠা, ১৯১১ সালের বাঙালি মুসলমানদের উন্নয়নের প্রতীক বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯২১ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রমপ্রসার, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস-াব, বৃটিশ ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে দুটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র কায়েমের দাবি (মূল লাহোর প্রস-াবের প্রতিপাদ্য ছিল এটাই) এবং এর প্রেক্ষিতে মুসলিম-বিদ্বেষী উগ্র হিন্দুবাদীদের উস্কানীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং অবশেষে দেশ বিভাগ, ১৯৪৭ সালে পাকিস-ান ও ভারতের স্বাধীনতা লাভ ইত্যাদি ছোট-বড় অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী ছিলেন এরা। বাঙালি মুসলমানের নবজাগরণ ও বিভিন্ন ক্রানি-কালে সঠিক পথ-নিদের্শনা প্রদান, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্বদান, শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজ উন্নয়নে অনুপ্রেরণা সৃষ্টির কাজে উপরোক্ত কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীগণ বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’ এক্ষেত্রে মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

সাহিত্য-সমিতির সাথে যারা যুক্ত ছিলেন তাঁরা অধিকাংশই ১৯৪৭ সালে দেশ-বিভাগের পর কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। পরিবর্তিত অবস'ায় ও রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের ফলে সমিতির নাম বজায় রাখা ও স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয় মনে করে সমিতির তৎকালীন কর্মকর্তাগণ যথা আইনুল হক খান, আবুল মনসুর আহমদ, ডা. আবুল আহসান, কবি আব্দুল কাদের প্রমুখ ১৯৫১ সালে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’ নাম পরিবর্তন করে ‘নজরুল-পাঠাগার’ নাম রাখেন।

এভাবে, বাঙালি মুসলমানদের সাহিত্য-চর্চা, চিন-া-চেতনার বিকাশ ও জাতীয় জাগরণের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটে। কিন' বিলুপ্তি হলেও এ প্রতিষ্ঠানটি তার দায়িত্ব যথাযথরূপেই পালন করেছে। আজ জাতীয়ভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের যা কিছু অর্জন তার মূলে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য-সমিতি’র অবদানকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা চলে না। ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর উক্ত প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষ পূর্ণ হলো। এ উপলক্ষে উক্ত প্রতিষ্ঠান ও দীর্ঘকালব্যাপী প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তা ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আজ পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বসমাজের প্রতি তাঁদের অসামান্য ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য। (সমাপ্ত)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।