অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি

অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি রাষ্ট্রপ

অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি রাষ্ট্রপ

সোনার বাংলা রিপোর্ট
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারি  ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষে পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এর আগে সকালে চতুর্থ দিনের মতো গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। অভিযোগপত্রের বাকি পৃষ্ঠা পাঠ করে শোনান প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম ও নুরজাহান আক্তার মুক্তা। সকালে বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে ১০টা ৩৫’র দিকে তাকে আদালতের এজলাস করে কাঠগড়ায় আনা হলে মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মামলার শুনানিতে অধ্যাপক গোলাম আযমকে  ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।

এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি  ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। ওইদিন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে উপস্থাপনের জন্য আনা অভিযোগের ১৯১ পৃষ্ঠার মধ্যে ৪৪ পৃষ্ঠা পাঠ করে শুনিয়েছিলেন রাষ্ট্রপরে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু ও রানা দাস গুপ্ত। ১৯  ফেব্রুয়ারি অভিযোগের পরবর্তী ৭৮ পৃষ্ঠা পাঠ করেছেন প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম। সোমবার প্রসিকিউটর নুরজাহান আক্তার মুক্তা ২৯ পৃষ্ঠা পাঠ করেন। ঐ দিন সকালে অধ্যাপক গোলাম আযমের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আদালতে ছয়টি আবেদনের শুনানি করেন। এর মধ্যে তিনটি আবেদন আদালত গ্রহণ করেন এবং প্রসিকিউশনকে তার মামলার নথির অষ্পষ্ট ২৫ পৃষ্ঠা ডিফেন্স পকে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়ে দেন। এছাড়া জামিনের আবেদনের বিষয়ে শুনানি শেষ করে ২৩ ফেব্রুয়ারি আদেশের দিন ধার্য করেন । অধ্যাপক গোলাম আযমের জামিনের আবেদনের বিষয়ে আদালতে ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক বলেন, জামিনের শর্তে যা যা থাকবে তার সব পালনে সচেষ্ট থাকবে আমার মক্কেল অধ্যাপক গোলাম আযম। গত ১১ জানুয়ারি  ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার পর অধ্যাপক গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন আদালত। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে  রাখা হয়।

জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠানোর আগে গত ৯ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপরে প্রসিকিউশনের দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

 à¦Ÿà§à¦°à¦¾à¦‡à¦¬à§à¦¯à§à¦¨à¦¾à¦²à§‡à¦° প্রসিকিউশনের জমা দেয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মোট ৬২টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে।

গত  ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ শেষ করেন তদন্তকারী কর্মকতারা। পরে তদন্ত কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন আদালতে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের মাধ্যম। মোট ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনের পাশাপাশি ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র সংযুক্ত করা হয়।

পরে তার সঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাসের ৪, ১১ ও ১৮ তারিখে  মোট তিন দিন তার আইনজীবীরা দেখা করেছেন। ওই সাাতের দ্বিতীয় দিনে তিনি তার মামলার নথিপত্র নিজ চোখে দেখেছেন বলে জানিয়েছিলেন তার আইনজীবী। তবে তার চোখের সমস্যার কারণে তিনি তার নথি  সম্পূর্ণ দেখতে পারেননি। ১৮ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দিনের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে সর্বশেষ দেখা করেছেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও ব্যারিস্টার ইমরান এ সিদ্দিক। বিকালে তার স্ত্রী, ছেলে ও নাতনি দেখা করেছেন। 

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে দেখা করার পর অ্যাডভোকেট শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, “অধ্যাপক গোলাম আযম গুরুতর অসুস্থ, শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল। বঙ্গবন্ধু হাসপাতালের প্রিজন সেলে তার জন্য একজন সাহায্যকারী দরকার, যিনি তাকে দেখাশোনা করবেন। কারণ তিনি বাথরুমে একা যেতে পারেন না। ওঠা বসা করতে হলেও যে কারো সাহায্য প্রয়োজন পড়ে। কোনোভাবেই তিনি একা চলতে পারছেন না।”

এখন পর্যন্ত যেসব অংশ পড়া হয় তার মধ্যে মূলত ছিল ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন সভা-সামবেশের খবর দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক ইত্তেফাক, পাকিস্তান অবজারভার, দৈনিক পাকিস্তান, দৈনিক আজাদসহ তৎকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্রে এ সংক্রান্ত যেসব খবর প্রকাশিত হয় তার উদ্ধৃতি রয়েছে এই পঠিত অংশে। অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্তও আনতে পারেনি রাষ্ট্রপ। সবই রাজনৈতিক বক্তব্য এবং তৎকালীন সংবাদপত্রে প্রকাশিত জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রসংঘের বিভিন্ন খবরা-খবর রয়েছে এই লিখিত বক্তব্যে।

 à¦—্রেফতারের আগে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর এ সব বক্তব্য সম্পর্কে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি দেশবাসীকে ভারত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানোর সাথে সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বলিষ্ঠ বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তৎকালীন সামরিক সরকার সেন্সর করায় তাঁর বক্তব্য যথাযথভাবে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। বিশেষ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি যে বলিষ্ঠ বক্তব্য রেখেছেন, তা সেন্সর করা হয়েছে।