রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৬ষ্ঠ সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২0 বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ৩ মে ২০২৪

ভারতীয় পণ্য বর্জন

নীরব সামাজিক আন্দোলন

॥ বিশেষ সংবাদদাতা ॥
ভোক্তাদের অপছন্দনীয় কোম্পানি বা দেশের পণ্য বর্জন ও বয়কট আন্দোলন আধুনিক বিশ্বে নতুন কোনো বিষয় নয়। আজকের বাংলাদেশে এটি নতুন একটি ধারণা হলেও ইউরোপ-আমেরিকায় শত বছর আগেই শুরু হয়েছে এবং চলছে একসময় ভারতেও এ পণ্য বর্জন আন্দোলন করা হয়েছে। আজ থেকে এক শত বছর আগে ভারতে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের একটি আন্দোলন করেছিলেন কংগ্রেস ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতারা, যা স্বদেশি আন্দোলন নামেই পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী যিনি ভারতে মহাত্মা গান্ধী হিসেবেই সমধিক পরিচিত- এটাকে স্বরাজ নামে অভিহিত করেন। ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হল থেকে স্বদেশি আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়- যাতে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি করে বিদেশি পণ্য তথা ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা যায়। স্বদেশি আন্দোলন ছিল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনেরই একটি কর্মসূচি। স্বদেশি আদর্শে উদ্বুদ্ধ এ আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিকভাবে ব্রিটিশ শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদসাধন এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নতিসাধন। আন্দোলনের রণকৌশলের অন্তর্গত ছিল ব্রিটিশ পণ্য বয়কট এবং দেশীয় শিল্প ও উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নতিসাধন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন।
পণ্যের ভোক্তাদের শক্তিকে কাজে লাগাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আন্দোলন গড়ে তুলতে বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকে ১৮৯৯ সালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল কনজ্যুমারস লীগ নামে একটি বেসরকারি এডভোকেসি গ্রুপ গঠিত হয়। কনজ্যুমারস লীগ ভোক্তাদের সংগঠিত করে শিশুশ্রম, খাদ্য নিরাপত্তা, ভোক্তাদের কল্যাণ ও শ্রমঘণ্টা আট ঘণ্টা করার জন্য আইনি সুুরক্ষার জন্য আইনপ্রণয়নেও রাষ্ট্রকে বাধ্য করার আন্দোলন গড়ে তোলে। শুধু তাই নয়, কনজ্যুমারসদের ক্রয়ক্ষমতাকে আরো সংগঠিতভাবে কাজে লাগানোর জন্য কনজ্যুমারস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি আন্তর্জাতিক সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনের প্রধান কার্যালয় হচ্ছে লন্ডনে, ১২০টি দেশে যার সদস্য সংগঠনের সংখ্যা হচ্ছে ২৫০।
পণ্য বর্জন ও তার প্রভাব
উৎপাদনকারীরা পণ্য উৎপাদন করে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করার জন্যই। তাদের এ বিক্রির মূল টার্গেটই হচ্ছে মুনাফা করা। আর এ মুনাফার জন্য তাদের পণ্য বিক্রি করতেই হবে। শুধু উৎপাদন করলেই তাদের মুনাফা হবে না। বিক্রির জন্য তাদের ক্রেতা তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে ভোক্তা লাগবে। পণ্যের উৎপাদন, ক্রেতা ও ভোক্তা- এ তিনটি পক্ষ থাকলেই মুনাফা করতে পারে উৎপাদনকারী। উৎপাদনকারীর উৎপাদনের পর কয়েক পর্যায়ে ক্রেতা থাকতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যায়ে যে ক্রেতা, সেই হচ্ছে আসল ক্রেতা তথা ভোক্তা। তাই উৎপাদনকারী ও মধ্যস্থতাকারী ক্রেতাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সর্বশেষ ক্রেতা তথা ভোক্তারা। এ ভোক্তারা যদি কোনো পণ্য না কেনে, তাহলে উৎপাদনকারী ও মধ্যপর্যায়ের ক্রেতাদের ব্যবসা তথা মুনাফা করার সুযোগ থাকে না। তাই আধুনিক বিশ্বে পণ্যের ভোক্তারা কোনো পণ্যের উৎপাদন, বাণিজ্য ও মুনাফাকে প্রভাবিত করতে পারে। ভোক্তারা পণ্য ক্রয় করা বা বর্জনের মাধ্যমে একটি কোম্পানির বাণিজ্যিক সম্ভাবনাকে থামিয়ে দিতে পারে, তেমনিভাবে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও স্তব্ধ করে দিতে পারে।
যেমন বাংলাদেশে কয়েক হাজার গার্মেন্টস পোশাক তৈরি করে। এ তৈরি পোশাক তারা ইউরোপ-আমেরিকায় বিক্রি করে। কারণ হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার সাধারণ জনগণই হচ্ছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মূল ক্রেতা। তারা এ পোশাক কিনতে গিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী তথা গার্মেন্টস মালিকদের ওপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শর্তারোপ করে থাকে। যেমন- শিশুশ্রম বন্ধ করা, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার, পরিবেশ ইত্যাদি ইস্যু। তৈরি পোশাকের ইউরোপীয় ক্রেতা তথা ভোক্তারা বলে উৎপাদনকারীরা যদি শিশুদের শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে আমরা এ পোশাক ক্রয় করব না। তখন তারা ইউরোপীয় বায়ারদের মাধ্যমে তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের জানায়, তোমরা পোশাক বিক্রি করতে চাইলে শিশুশ্রম বন্ধ করতে হবে। এভাবে তারা পরিবেশ বিষয়েও বিভিন্ন শর্তারোপ করে থাকে। ইউরোপীয় ভোক্তাদের চাপে বিভিন্ন শর্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের মেনে নিতেও হয়। কারণ সর্বশেষ ক্রেতা তথা ভোক্তাদের শর্ত না মানলে তারা কিনবেন না। আর ভোক্তারা যদি উৎপাদনকারীর উৎপাদিত পণ্য তৈরি পোশাক না কেনেন, তাহলে তারা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন না। তখন উৎপাদনকারীর ব্যবসা বলি আর মুনাফা বলি- তার কোনোটাই হবে না। তাহলে এখানে উৎপাদনকারী, মধস্বত্ব ব্যবসায়ী বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো সংস্থা; এমনকি সরকার থেকেও বেশি ক্ষমতাশালী হচ্ছে সর্বশেষ ক্রেতা তথা ভোক্তা। তাই আধুনিক উৎপাদন ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় ভোক্তাই ক্রমেই নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠেছে। ভোক্তারা যদি পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে ইথিক্যালি খুবই সচেতন হয়ে ওঠে এবং পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে মানবতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া কোম্পানি ও কোম্পানির দেশগুলোর পণ্য বর্জন শুরু করে, তখন তার একটি বিরাট প্রভাব পড়ে। তখন কোম্পানি ও তার দেশ ইথিক্যাল কনজ্যুমার ও ক্রেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমলে আনতে বাধ্য হয়।
ভোক্তার এ নিয়ামক শক্তিকে ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় বহু আগ থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে এবং এখনো চলছে। ভোক্তারা তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে ব্যবহার করে একটি নৈতিক ভোক্তা বাজার গঠন করতে পারে। এ নৈতিক ভোক্তা বাজার তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে ব্যবহার করে উৎপাদনকারী ও তাদের সরকারকে বিভিন্নভাবে চাপে ফেলতে পারে। ভোক্তার পণ্য বয়কটের মূল টার্গেটই হচ্ছে উৎপাদনকারীকে বিশ্বমানবতার পক্ষে প্রভাবিত করা। এককথায় বলা যায়, উৎপাদনকারী দেশি-বিদেশি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এবং তাদের দেশগুলোকেও বিশ্বমানবতা ও কল্যাণের পক্ষে থাকতে বাধ্য করা।
ইথিক্যাল কনজামশন ও পারচেজিং
ইথিক্যাল কনজামশন, ইথিক্যাল কনজ্যুমার, ইথিক্যাল পারচেজিং, মোরাল পারচেজ, ইথিক্যাল ইনভেস্টমেন্ট, কনজ্যুমারিজম, ইথিক্যাল কনজ্যুমার মুভমেন্ট, কনজ্যুমার একটিভিজম ইংরেজিতে এসব টার্ম বহুকাল ধরেই ইউরোপ ও আমেরিকায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ টার্মগুলোর বাংলা পরিভাষা হচ্ছে যেমন ইথিক্যাল কনজামশন অর্থ হচ্ছে নৈতিক ভোগ, ইথিক্যাল কনজ্যুমার অর্থ নৈতিক ভোক্তা, ইথিক্যাল পারচেজিং অর্থ নৈতিক ক্রয়, ইথিক্যাল ইনভেস্টমেন্ট অর্থ নৈতিক বিনিয়োগ। ইথিক্যাল কনজামশন, ইথিক্যাল পারচেজিং ও ইথিক্যাল ইনভেস্টমেন্টসহ এ সংক্রান্ত টার্মগুলোর সারসংক্ষেপ হচ্ছে ভোক্তাকে কোনো পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে নৈতিকভাবে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া। আরো ব্যাখ্যা করলে এটা হলো ভোক্তা যাদের উৎপাদিত পণ্য কিনছেন তারা দেশ জাতি তথা বিশ্বমানবতার পক্ষে ভূমিকা রাখছেন? নাকি বিপক্ষে ভূমিকা রাখছেন? এ বিষয়ে অবহিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। উৎপাদনকারী কোম্পানি ও দেশ যদি ভোক্তার দেশ ও জাতির কল্যাণের বিরুদ্ধে ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে, তাহলে তাদের পণ্য না কেনা এবং এটাই নৈতিকতা। এককথায় বললে, এটাকেই বলা হয়ে থাকে ইথিক্যাল পারচেজিং বা ইথিক্যাল বায়িং অর্থাৎ নৈতিক ক্রয়। যারা এ চিন্তা করে পণ্য ক্রয় করে, তাদেরই বলা হয়ে থাকে ইথিক্যাল কনজ্যুমার তথা নৈতিক ভোক্তা। তেমনিভাবে ইথিক্যাল বিনিয়োগও হতে পারে। আর এ ইথিক্যাল কনজামশন, পারচেজ ও বিনিয়োগকে কেন্দ্র করেই ইউরোপ আমেরিকাতে শুরু হয়েছিল কনজ্যুমারিজম ও ইথিক্যাল কনজ্যুমার মুভমেন্ট।
অবশ্য বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ কনজামশন ও তথা ভোগ ও ভোক্তা টার্ম এ শব্দগুলোর সাথে খুব বেশি পরিচিত নয়। আমাদের দেশে ১৭ কোটি মানুষের একটি বিরাট বাজার। ১৭ কোটি মানুষের মোট ক্রয়ক্ষমতা বিরাট একটি শক্তি, যদিও বাংলাদেশের মানুষ তার ক্রয়ক্ষমতাকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজে লাগাতে পারে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের এ ভোক্তা বাজারকে বুঝতে পারলেও সাধারণ জনগণের উপলব্ধিতে নেই। অন্যদিকে দেশের রাষ্ট্রচালকদের মধ্যে রয়েছে দেশপ্রেমের অভাব। অতি সম্প্রতি বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী ও অ্যাকটিভিস্ট বাংলাদেশের বিরাট ভোক্তাবাজার ও পণ্য বয়কটের শক্তিটাকে জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন। তার কিছুটা প্রভাব দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও বিক্রিতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। একটি পণ্য দিয়ে তার উদাহরণ তুলে ধরে যেতে পারে। সেটা হচ্ছে একটি কোমল পানীয়। আমেরিকান কোকাকোলা ও বাংলাদেশের মোজো ব্র্যান্ডের প্রতি ভোক্তাদের আচরণ। সাম্প্রতিককালে একটি প্রচার হয়েছে যে, কোকাকোলা পেপসি ব্র্যান্ডের পানীয়গুলো পশ্চিমা পণ্য; বিশেষ করে ইসরাইল সমর্থিত কোম্পানির পণ্য, তাই এ পণ্যগুলো বয়কট করতে হবে। কারণ ইসরাইল গাজায় নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যা করছে। অপরদিকে বাংলাদেশি আকিজ গ্রুপ উৎপাদিত পানীয় মোজো ফিলিস্তিনের মুসলিমদের আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসছে। তাই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কোকাকোলার বিক্রি কমছে; অপরদিকে মোজোর বিক্রি বাড়ছে।
ভারতের পণ্য বর্জন
কোকাকোলা ও পেপসি এখন বহুজাতিক কোম্পানি পণ্য, বিধায় সারা বিশ্বেই ইসরাইলের অন্যায় যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মানবতাবাদী জনগণ এ পানীয়টি বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে এবং তাদের বিক্রিতে ধস নেমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা তার সাথে আর একটি বয়কট আন্দোলন শুরু করেছে, তা হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সাধারণ জনগণের ভোটেই জাতীয় সংসদ গঠিত হয়। জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও সরকার গঠন করে। এককথায় বাংলাদেশে জনগণের ভোটে এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী ও সরকার গঠিত হয়। কিন্তু বিগত ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশে সাধারণ জনগণের ভোট ছাড়াই জাতীয় সংসদের এমপিরা নির্বাচিত হচ্ছেন। তাই ভোট ছাড়া গঠিত একটি সংসদ দিয়ে দেশের সরকার গঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের অভিযোগ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহযোগিতায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়াই জাতীয় সংসদ ও সরকার গঠন করছে। বিগত পনেরো বছরে প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাধারণ জনগণের ভোটাধিকার হরনে ভারতের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের আপামর জনগণের অভিযোগ ভারতই বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাকে শেষ করে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ভারতের তথা ভারতের বর্তমান সরকারের প্রতি দারুণভাবে ক্ষুব্ধ। তারা এখন ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে না। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ক্ষুব্ধভাব ও নেতিবাচক ধারণা থেকে একটি বৈরী মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। আর এটা এক দুই বছরেই ডেভেলপ করেনি, বিগত পনেরো বছরে ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বৈরী মনোভাবটা চরম আকার ধারণ করেছে। ভারত বাংলাদেশের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র আর প্রতিবেশী রাষ্ট্র পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। ভারতকে বাংলাদেশকের সাথে নিয়েই চলতে হবে, তেমনিভাবে বাংলাদেশকেও ভারতের সাথে চলতে হবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভারতের প্রতি বিদ্বেষটা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা অকল্পনীয়। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের বিদ্বেষের মাত্রা কোনো পর্যায়ে, সে নিয়ে কোনো সমীক্ষা বা জরিপ নেই। তবে ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভোটের মাত্রাটা থেকে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের একটি মেসেজ পাওয়ার কথা। যে নির্বাচনের প্রতি ভারত অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছে, সেই নির্বাচনের বাংলাদেশের ৯০ ভাগও মানুষ ভোট দিতে যায়নি। ভারত সমর্থিত নির্বাচনে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভোট দিতে না যাওয়াটা দিয়েই ভারতের একটি চূড়ান্ত মেসেজ। বাংলাদেশের নির্বাচন, ভোট ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে ভারতের অগণতান্ত্রিক আচরণে বাংলাদেশের জনগণ দারুণভাবে মর্মাহত ও বিক্ষুব্ধ। এমনি একটি প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া বয়কট ও ভারতের পণ্য বর্জন আন্দোলন। ফ্রান্সের প্যারিসে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা পিনাকী ভট্টাচার্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতের পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান। তারপর বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অনেক অ্যাক্টিভিস্ট ভারতের পণ্য বর্জন আন্দোলন শুরু করেছেন। অবশ্য ভারতের পণ্য বর্জনের এ আন্দোলনকে বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন দেয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রকাশ্যে তার নিজের ভারতীয় শাল পুড়িয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলন কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। কিন্তু তার দল থেকে এটাকে কোনো সমর্থন দেয়া হয়নি। তবে নতুন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদের একটি অংশকে ভারতের পণ্য বর্জন আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পোস্টারিং করতে দেখা গেছে। তবে জোরালো না হলেও ভারতের পণ্য বর্জন আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে, আর তার প্রভাব পড়ছে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ।
বয়কটের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
একটি কোম্পানি ও দেশের পণ্য বর্জন ও বয়কটের যেমন অর্থনৈতিক প্রভাব আছে, তেমনিভাবে তার রাজনৈতিক প্রভাবও রয়েছে। বিশ শতকের ভারতের স্বদেশি আন্দোলন ছিল রাজনৈতিক, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কনজ্যুমার লীগের আন্দোলন হচ্ছে মানবিক ও আর্থিক। বিশ্বব্যাপী ইসরাইলি পণ্য বর্জন আন্দোলন হচ্ছে মানবিক ও রাজনৈতিক। বাংলাদেশে ভারতের পণ্য বর্জন হচ্ছে রাজনৈতিক ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রেক্ষাপটে। তাই বাংলাদেশে ভারতের পণ্য বর্জনের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, রাজনীতিতে তার একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলেই বিশ্লেষকদের অভিমত। ইতোমধ্যে ভারতের পত্রপত্রিকায় বাংলাদেশের ভারতের পণ্য বর্জন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। শুধু তাই ভারতের সরকার ও প্রশাসনেরও এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীকেও ভারতের পণ্য বর্জন নিয়ে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।