১৮ এপ্রিল বড়াইবাড়ি দিবস

যুদ্ধে নিহত ৩ বিডিআর পরিবারের খোঁজ কেউ রাখে না

ফয়েজী, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে : বড়াইবাড়ি যুদ্ধের এক যুগেরও বেশি (১৩ বছর) সময় পার হলেও নিহত ৩ বিডিআর সদস্যের পরিবারের খোঁজ কেউ রাখে না। তাদের গ্রামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাকার অভাবে ছেলে মেয়ের লেখাপড়া করাতে পারছেন না অনেকেই, পারছে না বৃদ্ধ পিতা-মাতার ওষুধ কিনতে। অভাবের কারণে ওই পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। তৎকালীন সময়ে সরকার ও বিডিআর-এর প থেকে আর্থিক সহায়তা দিলেও সেটা ছিল অতীব নগন্য। গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার নিহত বিডিআর সদস্যদের পরিবাররা বড়াইবাড়িতে এলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়। ওই এলাকার মানুষ শহীদ পরিবারদের ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা দেন। নানা কর্মসূচি ও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটি পালন উপলে রৌমারীতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। আয়োজন করা হয়েছে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, বড়াইবাড়ি গ্রামে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে আলোচনা সভা ও মিলাদ মহফিল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি রুহুল আমিন, ইউএনও আব্দুল হান্নান, থানা অফিসার ইনচার্জ শামীম সরদার, উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফসানা রাব্বি রিপা, বিজিবি কোম্পানী কমান্ডার আব্দুল আজিজ, বড়াইবাড়ি ক্যাম্প কমান্ডার আবুল কালাম, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও নুরে-শাহী ফুল।

২০০১ সালের ১৮ এপ্রিল ভোর রাতে ভারতের সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে অনধিকার প্রবেশ করে বড়াইবাড়ি গ্রামের ঘুমন্ত মানুুষের ওপর হামলা চালায় ও বাড়ি-ঘর নির্বিচারে জ্বালিয়ে দেয়। ওই দিন হামলার দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছিল বিডিআর ও স্থানীয় জনতা। আর সেই প্রতিরোধে বিএসএফ ১৬ জনের লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। তাদের অতর্কিত হামলায় শহীদ হয়েছিল আমাদের বিডিআর জওয়ান ও ৩৩ রাইফেলস ব্যাটলিয়নের ল্যান্স নায়েক ওহিদুজ্জামান, সিপাহী মাহফুজার রহমান এবং ২৬ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের সিপাহী আ. কাদের। এছাড়া আহত হয় বিডিআরের হাবিলদার আব্দুল গনি, নায়েক নজরুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক আবু বকর সিদ্দিক, সিপাহী হাবিবুর রহমান ও সিপাহী জাহিদুন নবী। বিএসএফের তাণ্ডবে পুড়ে ছাই হয়েছিল বড়াইবাড়ি গ্রামের ৮৯টি বাড়ি। সরকারি হিসেবে তির পরিমাণ ছিল ৭২ লাখ টাকা। সেই থেকে ঐতিহাসিক এই দিনটি পালিত হয় ‘বড়াইবাড়ি দিবস’ হিসেবে।

এ ঘটনার ১৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও সীমান্তে শান্তি ফিরে আসেনি। কাটেনি সীমান্ত আতঙ্ক। গ্রামের মানুষ এখনও দুঃসহ স্মৃতিতে হঠাৎ রাতে আঁতকে ওঠে। শেষ হয়নি তাদের দুঃখের দিন। সরকারি আশ্বাস পূরণ হয়নি। দেয়া হয়নি কড়া নিরাপত্তা, যোগাযোগ সুবিধাসহ নিরাপদ আবাসন হয়নি সেখানে যাওয়ার রাস্তা এখনও হয়নি, বিদ্যুৎ নেই, নেই কোনো শিা প্রতিষ্ঠান। তাই পোড়া ভিটায় পোড়া টিনের চালের নিচে এবং ঐ সময়ের দেয়া ৮টি তাঁবুতেই কাটছে অনেকের দুর্বিষহ জীবন। কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে রৌমারী উপজেলা শহর ৪৫ কি.মি. দূরে। তাও আবার ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন। রৌমারী উপজেলা সদর থেকে দণি-পূর্ব দিকে ১০ কি.মি, দূরে বড়াইবাড়ি গ্রাম। ভারতের আসাম সীমান্তের ২২৬ একর জমি নিয়ে বড়াইবাড়ি গ্রাম। মানুষ বলাবলি করছে, সীমান্ত রক্ষায় যারা জীবন দিয়েছিল, জাতি তাদের জীবনের বিনিময়ে উপকৃত হলেও, তারা ও তাদের পরিবার রয়ে গেছে অবহেলিত।