কুষ্টিয়ায় ২৩ বছরে শিবিরের ১০ নেতাকর্মী শহীদ

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা : দেশের মধ্যে লাল চিহ্নিত অধিকতর সন্ত্রাস প্রবণ জেলা কুষ্টিয়া। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে স্বাধীনতা উত্তর কোনো সময়ই কুষ্টিয়া জেলা সন্ত্রাসী জনপদের এক নম্বর অবস্থানের নড়চড় হয়নি। এখানে সন্ত্রাসীরা কত বর্বর, নৃসংশ ও পৈশাচিক হতে পারে তা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে তাদের মাঝে। এ প্রতিযোগিতার বলি মিছিলে কুষ্টিয়ায় গত ২৩ বছরে ছাত্রশিবিরের ১০ নেতাকর্মী নির্মম ভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া মেধাবী ছাত্র। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের বেশির ভাগই সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা জবেদ মোড়ে সবুজ আহমেদ ও আল মুকিত তরুণ নামে দুই শিবির কর্মীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নিহত আল মুকিত তরুন উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের বামনগাড়ী গ্রামের শফিউল আলমের ছেলে। এবং সবুজ আহমেদ একই উপজেলার হালসা গ্রামের খবির উদ্দিনের ছেলে। ২০১২ সালের ১৩ এপ্রিল কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আব্দুল্লাহ আল মঞ্জু শেখ নামে এক শিবির কর্মী নিহত হয়। সে উপজেলার  পান্টি চেয়ারম্যানপাড়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে। ২০০৩ সালের ৬ অক্টোবর কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিবিরের প্রতিবাদ মিছিলে ছাত্রদলের সশস্ত্র সন্ত্রসীরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই নির্মমভাবে নিহত হয় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের একাউন্টিং তৃতীয়বর্ষের মেধাবী ছাত্র শফিকুর রহমান শিমুল। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার যুগিয়ায়। ২০০১ সালের ৮ জুন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজের মাস্টার্সের ছাত্র রফিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়। ওইদিন জুম্মার নামাজ শেষে ফেরার পথে ঝিনাইদহ মদন ডাঙ্গা এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগের হামলায় রফিকুল নিহত হয়। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার লাঙ্গলদাঁড়িয়ায়। ১৯৯০ সালের ২২ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার নাজমুল উলুম সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী মোজাহের আলীকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা শেষে আখ খেতের মধ্যে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। তার বাড়ি উপজেলার আমলা ইউনিয়নের মেটন গ্রামে। ১৯৯২ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুরের পাঞ্জেরী ছাত্রাবাসে ছাত্রদল ও ছাত্রমৈত্রীর ক্যডারদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম মামুন। তার বাড়ি বগুড়া জেলার ঠনঠনিয়া হাজীপাড়া গ্রামে। ১৯৯২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মুহাম্মদ আমিনুর রহমানকে গুলি করে হত্যাকরে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন ইবি শাখার শিবির সভাপতির উপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদ সমাবেশে ছাত্রলীগের সশস্ত্র হালায় আমিনুর রহমান নিহত হয়। সে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিস বিভাগের অনার্স ফলপ্রার্থী ছিলেন। তার বাড়ি যশোর জেলার অভয়নগর থানার পায়রা গ্রামে। ১৯৯৮ সালের ৩১ অক্টোবর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শিবির কর্মী মুহাম্মদ মুহসীন কবির নিহত হয়। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার হামদহ খন্দকার পাড়া গ্রামে। ১৯৯৮ সালের ১ নভেম্বর একই ঘটনায় দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র আল মামুন নিহত হয়। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং গ্রামে।