সংবাদ শিরোনামঃ

তীব্রতর হচ্ছে আন্দোলন ** পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে ** শক্তি নয় সমাধান সংলাপে ** টানা অবরোধ হরতালে অচল দেশ ** সংলাপে বসতে বহির্বিশ্বের প্রচণ্ড চাপে বেকায়দায় সরকার ** অনুমতি ছাড়াই চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান ** আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে সরকার টিকে আছে ** রাজনৈতিক দমন নিপীড়ন বন্ধ করুন ** আবারও দৃশ্যপটে বিদেশী কূটনীতিকরা ** অভিযান নামের নির্যাতন ** গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে ২০ দলীয় জোটের অবরোধে অচল দেশ ** আল মাহমুদের কবিতা কার প্রেমে, কার সান্নিধ্যে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪২১, ১ রবিউস সানি ১৪৩৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

সরেজমিন বোয়ালখালী

গ্রাম বাংলা ডেস্ক : অনলবর্ষী বক্তা জাসদ নেতা, সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল। বাক্যবাণ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারদর্শী, আবার কথার জাদুতে মানুষকে সম্মোহিত করারও অদ্ভুত ক্ষমতা তার। চট্টগ্রামের যে ক’জন নেতা জাতীয় রাজনীতিতে ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে কাজ করেন বাদল তাদের মধ্যে অন্যতম। বোয়ালখালীর সন্তান বাদল যখন ২০০৮ সালে ১৪ দলের প্রার্থী হন, আশায় বুক বাঁধেন বঞ্চিত এ জনপদের মানুষ। মানুষ উজাড় করে ভোট দেন বাদলকে।

কিন্তু সেই বাদলকে নিয়ে মানুষের স্বপ্ন আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে। উন্নয়ন বঞ্চনা, জীবনযাত্রায় ভোগান্তি, প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির মধ্যে বিশাল ফারাক মানুষকে আস্তে আস্তে হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। স্বপ্নের জনপ্রতিনিধি আস্তে আস্তে পরিণত হচ্ছেন হতাশার প্রতীকে।

বঞ্চিত বোয়ালখালীবাসী আর তাদের জনপ্রতিনিধির গল্প শুনতে সেখানে গিয়ে কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে। আহলা শেখ চৌধুরী পাড়া গ্রামের শাহআলম বললেন সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমপি সাহেবকে টেলিভিশনে দেখি, বড় বড় কথা বলেন। এলাকায় এসেও খালি বড় বড় কথা বলেন, নানা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু কাজের বেলায় ঘোড়ার ডিম।’

মানুষের স্বপ্নভঙ্গের কথা সংসদ সদস্য বাদলের কানে পৌঁছেছে কিনা, জানতে চাওয়া হয় তার কাছে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনের আগে আমি যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার শতভাগ পালন করেছি। বোয়ালখালীর রাস্তাঘাটের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বলতে গেলে, এখন বোয়ালখালীতে আর কোনো কাঁচা রাস্তা নেই। ৫৪টি প্রাইমারি স্কুল আমি পাকা করেছি। কর্ণফুলী নদী ও বোয়ালখালী খালের ভাঙন রোধে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি প্রকল্পের কাজ চলছে।

রাস্তাঘাটের আমূল পরিবর্তন দেখতে সরেজমিন যাওয়া হয় বোয়ালখালীর ধোরলা, কড়লডেঙ্গা, আহলা প্রকাশ ধলঘাট, শেখ চৌধুরী পাড়া, উত্তর ভূর্ষি, সারোয়াতলীসহ বিভিন্ন গ্রামে।

ধোরলা হয়ে কড়লডেঙ্গা পর্যন্ত রাস্তাটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী বললে ভুল হবেনা। পিচ ঢালা কয়েক কিলোমিটার পথের মাঝে মাঝে বড় গর্ত। কোনো কোনো স্থানে রাস্তার একপাশ ভেঙ্গে মিশে গেছে খালের সঙ্গে। এবড়োথেবড়ো ইট, কংক্রিটের রাস্তায় গাড়ি চলা দায়। রাস্তার সঙ্গে সেতু-কালভার্টের উচ্চতা মেলেনা, আটকে যায় গাড়ি।

ধোরলা গ্রামের বাসিন্দা সম্ভু দাশ বলেন, রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায়না। বড় কোনো গাড়ি তো আসতেই পারেনা। লোকাল সিএনজি অটোরিক্সা চলতেও কষ্ট হয়। মাঝে মাঝে আটকে যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল বলেন, পাঁচ বছর আগে রাস্তা পাকা করেছি। পাঁচ বছরের ব্যবধানে অনেক রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়েছে। এখন কিছু কিছু রাস্তা সংস্কার করছি।

দাশের দিঘি থেকে মুকুন্দ রামের হাট পর্যন্ত সড়কের সঙ্গে আল্লাহ দরবার শরীফ পর্যন্ত সড়কটি পিচ করা হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে জয়কালি খাল পর্যন্ত যে সড়কটি আছে সেটির অনেকাংশ এখনও কাঁচাই আছে। এর সঙ্গে সংযুক্ত অন্তত আরও তিনটি সড়ক আছে যেগুলোতে ইট বসেনি।

মুকুন্দ রামের হাট এলাকার বাসিন্দা নিখিল চৌধুরী বলেন, আহলা দরবার শরীফ থেকে জয়কালি খাল এবং মুকুন্দ রামের হাট থেকে ধনার দোকান পর্যন্ত সড়ক দিয়ে মানুষ ও গাড়ির চলাচল সবচেয়ে বেশি। এমপি সাহেবকে বারবার অনুরোধ করার পরও রাস্তাগুলোর উন্নয়ন হয়নি।

বাদলের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গল্প শোনালেন সারোয়াতলী ইউনিয়নে দক্ষিণ কঞ্জুরি গ্রামের কয়েকজন। তাদের ভাষ্যমতে, ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার পর সংবর্ধনায় দক্ষিণ কঞ্জুরি গ্রামের ভবানী ভবন মাতৃমন্দিরে গিয়ে বাদল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ মন্দিরের ইটের রাস্তা তিনি আর দেখতে চান না। পরের বছর তিনি ওই মন্দিরে যাবেন পিচ ঢালা পথের উপর দিয়ে। 

এরপর প্রায় ছয় বছর হতে চলল। দক্ষিণ কঞ্জুরি গ্রামের মানুষ এখনও মন্দিরে যান ইটের রাস্তা দিয়েই। অথচ আশপাশের দশ গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তাও সেটিই।

ভবানী ভবন মাতৃমন্দির কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. তপন কান্তি দাশগুপ্ত বলেন, এমপি সাহেব আমাদের রাস্তা করার জন্য উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অশোক ভঞ্জকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ভঞ্জ মারা গেছেন, এমপিও প্রতিবছর ইটের রাস্তা দিয়েই আমাদের এখানে আসেন। কিন্তু রাস্তায় পিচ আর হলনা। বাধ্য হয়ে এখন আমরা জেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ নিয়ে রাস্তায় ডবল ইট বসাচ্ছি। এখানে এমপির কোনো ভূমিকা নেই।

কানুনগোপাড়া-বোয়ালখালী সড়কের ছনদণ্ডী থেকে দক্ষিণ কঞ্জুরি সংযোগ সড়ক পাকা কিংবা পিচ করার দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। ছয় বছর ধরে সাংসদ শুধু এ সড়কের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিই শোনাচ্ছেন।

এলাকার বাসিন্দা আবু হান্নান বলেন, এমপি সাহেব নিজের বাড়ির সামনের রাস্তা সুন্দর করে পিচ করেছেন। অন্যান্য সড়কগুলো পাকা করার ব্যাপারে তার কোনো আগ্রহ নেই। গত ছয় বছরে তিনি নতুন করে একটি রাস্তায়ও একটি ইট বসাতে পারেননি।

এ তো গেল অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের কথা। দুর্ভোগ, ভোগান্তির অন্ত নেই অন্যান্য খাতেও।

নদীভাঙনের কবলে পড়ে অতিষ্ঠ বোয়ালখালীর বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। ২০১৩ সালে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনকে এলাকায় এনে ঢাকাঢোল পিটিয়ে নদীভাঙন রোধে পাথরের বাঁধ দেয়ার কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু গত দু’বছরে গোমদন্ডী টেকসোপাড়া ছাড়া আর কোথাও কাজ হয়নি বলে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

বোয়ালখালীতে ফায়ার সার্ভিস, ট্যুরিস্ট পুলিশ একাডেমি এবং কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে ডাকবাংলো নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল সংসদ সদস্য বাদলের। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ছাড়া বাকি দু’টি প্রকল্প এখনও সাইনবোর্ড টাঙানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

কড়লডেঙ্গা মেধস মুনির আশ্রম এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে জমির মাঝখানে একটি উঁচু টিলার মধ্যে পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সাইনবোর্ড ঝোলানো আছে। ডাকবাংলোর কোনো সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অবশ্য মঈনউদ্দিন খান বাদলকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়নি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বার গেছেন সংসদে।  (সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।