বাংলা সাহিত্য পরিষদের আলোচনা সভা

ইস্কাটন গার্ডেনকে কবি ফররুখ স্কয়ার ঘোষণার দাবি

কবি ফররুখ আহমদ ছিলেন জাতীয় মননের একজন প্রতিভাধর কবি। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত করতে তার কবিতা, গান আমাদের প্রেরণা জোগায়। তিনি জাতিকে স্বাতন্ত্র্যবোধ ও নিজস্ব স্বকীয়তা দিয়েছেন। নানাভাবে আজ কবি ফররুখকে জাতির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনকে ফররুখ স্কয়ার ঘোষণার দাবি জানিয়েছে বাংলা সাহিত্য পরিষদ।

গত শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসকাবে কবি ফররুখ আহমদের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা  সাহিত্য পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় দেশের প্রখ্যাত কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা এ দাবি জানান। দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক ও বাংলা সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আবুল আসাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম লুৎফর রহমান, কবি আল মুজাহেদী, অধ্যাপক মতিউর রহমান, কথাশিল্পী মাহবুবুল হক, কবি সোলায়মান আহসান, কবি আসাদ বিন হাফিজ, কবি হাসান আলিম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কবি লিলি হক, শরীফ বায়জীদ মাহমুদসহ দেশের বিশিষ্ট আবৃত্তিকার ও শিল্পীরা কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন।

বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরুল ও ফররুখের রচনাকে বাইপাসের ঘটনা অত্যন্ত হীন ও দ্বীনতার ঘটনা। এটা খুবই অন্যায়। এতটা দ্বীনতা দিয়ে জ্ঞানের লড়াই হয় না। তিনি বলেন, কবি ফররুখকে নানাভাবে অবমূল্যায়ন করে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে। জাতির প্রয়োজনে আবার তা পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানান। কবি আল মুজাহেদীর দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, বাংলা সাহিত্যে তার যে অবদান, স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে কিছুই দেয়া হয়নি। তাই তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ইস্কাটন গার্ডেনকে ফররুখ স্কয়ার ঘোষণার দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে আবুল আসাদ বলেন, আজ কবি ফররুখের কোন উত্তরসূরি নেই। নতুন প্রজন্মের মাঝ থেকেই ফররুখ ও নজরুলের উত্তরসূরি আসবে বলে আশা করি। কবি ফররুখের নামে স্কয়ার নামকরণের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, যারা ফররুখকে হত্যা করেছে তারা কি ফররুখ স্কয়ার হতে দিবে? তবুও দাবি করা উচিত।

কবি আল মুজাহেদী বলেন, কবি ফররুখ আহমদ ছিলেন, বাংলা সাহিত্যের শক্তিধর কবি। কিন্তু আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পণ্ডিতরা কবি ফররুখের অস্তিত্ব সংহার করতে চায়। তাকে বাদ দিয়ে বাংলা সংকলন করা হচ্ছে। এটা সাংস্কৃতিক কারচুপি বলে মনে করি। সরকার সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ সরাতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পপ বেনেডিক্ট যেখানে সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বক্তৃতা দিয়েছেন সেখানে আমরা সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে বললেই জঙ্গিবাদ বানানো হচ্ছে। ঘরে ঘরে ফররুখ চর্চার আহ্বান জানিয়ে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনকে (যেখানে কবিবাস করতেন) ফররুখ স্কয়ার করার দাবি জানান।

অধ্যাপক মতিউর রহমান বলেন, কবি ফররুখ আহমদ ছিলেন মৌলিক স্বাতন্ত্র্যবোধ, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের উজ্জ্বল প্রতিভাধর কবি। কবি সম্পর্কে আজ জানার সুযোগ কম। পাঠ্যপুস্তক থেকে তার রচনা তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কবি ফররুখ স্বাধীনতা আন্দোলনে পথিকৃৎ ছিলেন। অথচ তার রচিত এই আজ বাজারে দু®à¦ªà§à¦°à¦¾à¦ªà§à¦¯à¥¤ তাকে আমরা আজ ভুলতে বসেছি। তার রচনা চর্চার মাধ্যমে নিজেদেরই সমৃদ্ধি করতে পারি। ফররুখ চর্চায় পাশাপাশি তার রচিত সকল রচনা সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রকাশের দাবি জানান।

কবি মাহবুবুল হক বলেন, কবি ফররুখ আমাদের জাতীয় মননের কবি। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও জাতিসত্তা সমুন্নত করতে তাকে আমরা স্মরণ করে থাকি। তিনি বলেন, জাতি আজ নানাভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। কারণ আমরা আজ নিজেদের আত্মপরিচয় ও জাতিসত্তা সম্পর্কে সচেতন নই। বাঙালি মুসলমানের আলাদা পরিচয় ও স্বাতন্ত্র্যবোধ যুগে যুগে যারা বিনির্মাণ করেছেন কবি ফররুখ তাদের অন্যতম। তিনি বেশি বেশি করে কবি ফররুখের রচিত গান-কবিতা চর্চার আহ্বান জানান। প্রেস বিজ্ঞপ্তি