সংবাদ শিরোনামঃ

সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে একতরফা! ** কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারতে শেরপুরে হাজারো মানুষের ঢল ** আওয়ামী লীগ মরিয়া ** শহীদী কাফেলায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ** গণতন্ত্রহীনতায় অরক্ষিত অর্থনীতি ** সরকার সিটি নির্বাচনকে পুরোপুরি রাজনৈতিককরণ করেছে ** অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক ** পহেলা বৈশাখের ‘লীলা’ ** আমার সন্তানের কি দোষ ** ফারাক্কা বাঁধের কারণে সাতক্ষীরার ২৭টি নদী এখন মরা খাল ** যাদের কাছে কোনো পুঁজি নেই তারাই সমালোচনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায়: মনজুর আলম **

ঢাকা, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪২২, ৪ রজব ১৪৩৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

॥ মু. জিয়াদ হাসান রাসেল॥
‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’ এটা সবারই জানা। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি উন্নত জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারে না, যেমনি পারে না মেরুদণ্ডহীন প্রাণী। তাই সকল দেশের সকল সরকারের মূল দায়িত্বগুলোর অন্যতম দায়িত্ব থাকে শিক্ষাকে জাতির মধ্যে বিকশিত করা। শিক্ষাকে বাদ দিয়ে বা শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে কোনো জাতি বা দেশ উন্নতির দিকে ধাবিত হতে পারে না। আবার শুধুমাত্র শিক্ষার হার বাড়লেই দেশ বা জাতি উন্নতির দিকে ধাবিত হয় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশী মুদ্রা ১ টাকার সমমূল্য ছিল মালয়েশিয়ান মুদ্রা ১ রিংগিট। কিন্তু বর্তমান মালয়েশিয়ান মুদ্রা ১ রিংগিট এর সমমূল্য হচ্ছে বাংলাদেশী মুদ্রা ২৭ টাকা। অর্থাৎ আমরা বলতে পারি মালয়েশিয়া আমাদের চেয়ে ২৭ গুণ এগিয়েছে। কিন্তু ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে যে পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বর্তমানে তার চেয়ে কমপক্ষে ২৭ গুণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে এবং ২৭ গুণ শিক্ষার হারও বেড়েছে। শুধুমাত্র বাড়েনি জাতির সমৃদ্ধির হার। তাহলে এর পেছনে কারণ কি।

একটি বাস্তব চিত্র হতে দেখলাম তাহসিন পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ঘুম থেকে উঠে সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত স্কুলের ম্যাডামের নিকট প্রাইভেট পড়ে, ৯টা হতে ২টা পর্যন্ত স্কুলে অবস্থান করে। ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাসায় এসে এক শিক্ষক পড়ান। ঐ শিক্ষক যাওয়ার পর রাত ১১টা পর্যন্ত মায়ের কাছে পড়ে ঘুমাতে যায়। আবার সকাল ৬টা হতে শুরু হয়...। এভাবে চলে সপ্তাহের ৬দিন, শুক্রবার ছুটি। কিন্তু তাহসিনের ছুটি নেই শুক্রবারেও। কারণ তাকে শুক্রবার ৯টা হতে অংশ নিতে হয় আরেকটি কোচিং সেন্টারের মডেল টেস্টে।

            তাহসিনের মতো এ রকম অবস্থা ঐ বয়সী প্রায় প্রতিটি শিশুর। এর কারণ এত ছোট্ট বয়সে তাকে পিএসসি নামক একটি পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হচ্ছে। আর পাবলিক পরীক্ষা নামক যুদ্ধটির প্রস্তুতি নিতে এত পরিশ্রম, মানসিক চাপ ও যন্ত্রণা। সে সাথে অভিভাবকদেরও উদ্বিগ্নতা। যে বয়সে একটি ছেলে বাবা-মায়ের আদর স্নেহে পালিত হয়ে মানসিক চাপ মুক্ত থেকে নিজের মেধাকে বিকশিত করবে সেখানে আমাদের সন্তানদের নিতে হয় যুদ্ধের প্রস্তুতি। আবার সারা বছর এমন প্রস্তুতি নিয়ে যখন পরীক্ষা দিতে যাবে তার আগে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ফাঁস করে দেয়া হয় প্রশ্নপত্র। আগের দিন প্রশ্নপত্র পেয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পর পরীক্ষা হলে পরিদর্শক লাজ-লজ্ঝার মাথা খেয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উত্তর বলে দেন, এমনকি অনেক সময় নিজেই খাতায় লিখে দেন। তখন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চিন্তা করে কেন এত কষ্ট করলাম?

            এমন ডামা-ডোলের মাত্র ৩ বছর পার হলে, আবার জেএসসি নামক আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়। সে যুদ্ধটিও একইভাবে শেষ হয়। তার ২ বছর পর আবার এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি। ঐ পরীক্ষা আরো ব্যতিক্রমভাবে সম্পন্ন করে। এ বছর দেখা গেল যেভাবে ভোট কেন্দ্রগুলো দখল করে নিয়েছিল বহিরাগতরা, তেমনি পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোও দখল করে যা যা করার তা করে। এক্ষেত্রে কক্ষ পরিদর্শকেরা মহাখুশীমনে তাতে সমর্থন দেয়।

            এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একটি শিশুর পরিপূর্ণ পারিপার্শ্বিক জ্ঞান অর্জনের পূর্বে কেন এতগুলো পাবলিক পরীক্ষা নেয়া হয়? কেন তাদের মধ্যে জালিয়াতির মানসিকতা সৃষ্টি করে দেয়া হয়? কেন তাকে পড়া লেখার নামে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, খেলাধুলা থেকে দূরে রেখে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়। আবার এসব পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার সনদ কোনো চাকরির ক্ষেত্রে কাজে আসবে না। তাহলে আমার সন্তানের উপর কেন এ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে? আমার সন্তানকে কেন বন্দী করা হয়?

অন্যদিকে বন্দীদশায় বড় হওয়ায় বাস্তব জীবন হতে তারা অনেক দূরে থেকে যায়। মন-মানসিকতাও হয়ে উঠে জড়বাদী। ভুলে যায় নিজের আত্মপরিচয়। বেপরোয়া জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। মা-বাবার অবাধ্য হয়ে পড়ে। কেউ সুপথে আসতে পরামর্শ দিলে তা ভিন্নভাবে দেখে। মনে করে খাও দাও ফূর্তি কর এটাই জীবন। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরা যতটুকু সময় পায় তারা পড়া লেখার জন্য ব্যয় করা দরকার ততটুকু করে না, আবার যতটুকু পরিশ্রম করে তার তিনগুন ফলাফল লাভ করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির কল্যাণে! আর এটা যে এ জাতিকে মেধাশূন্য ও একটি রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র সেটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ২ জন শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়ে আমাদের শিক্ষার করুন চিত্রটি জাতির সামনে তুলে ধরে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো যারা ঐ সেশনে বিভিন্ন ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তাদের মধ্যে লক্ষাধিক ছাত্র-ছাত্রী ছিল এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত। তাহলে আমার সন্তান কি পেল? সে মেধাহীন হলো, নৈতিক অবক্ষয়ের শিকারও হলো আর দেশও বা কি পেল?

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার আরেকটি ত্র“টিপূর্ণ দিক হলো আমাদের যুব সমাজকে নৈতিক চরিত্র গঠনের পরিবর্তে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করা। এটা এই জন্যই বলছি যে, মূলত মানুষ একটি নির্দিষ্ট বোধ-বিশ্বাসের আলোকে তার নৈতিকতা গড়ে তোলে। আমাদের যুব সমাজ এই বোধ বিশ্বাসের সঙ্কটে পতিত হচ্ছে। এ দেশে আজ একটি প্রজন্ম গড়ে উঠেছে, যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কে বেখবর। আল্লাহকে মানা না মানার বিষয়টি তাদের কাছে খুবই গৌণ। জীবনের ইহকালীন ও পরকালীনতার বিষয়টি তারা কখনো বিবেচনায় আনে না। তাদের কাছে ইহলোকই শুরু ও শেষ, পরলোক অবিবেচ্য বিষয়। একটাই ওদের দর্শন ‘নগদ যা পাও হাত পেতে নাও/বাকির খাতা শূন্য থাক, দূরের বাক্য শূন্যে কি লাভ/মাঝখানে তার বেঝায় ফাঁক’। এক আত্মকেন্দ্রিকতা যুবকদের নীতি নৈতিকতার ব্যাপারে উদাসীন করে ফেলছে। ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’ এই যাদের বোধ তাদের কাছ থেকে সমাজ কতটুকু সামাজিকতা, আন্তরিকতা, ভালোবাসা, দেশপ্রেম আশা করতে পারে?

            আমাদের তরুণরা হঠাৎ করেই এক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে পড়ে, নাকি এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্রের ফল? হ্যাঁ, একদিকে এটি আমাদের আত্ম-বিস্তৃতি উদাসীনতা আর বেখেয়ালির পরিণতি অপরদিকে তা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের উপর চেপেবসা শাসকগোষ্ঠী ও বর্তমান বিশ্বমোড়েলদের পরিচালিত অব্যাহত ষড়যন্ত্রের ফল। এসব ষড়যন্ত্রের অন্যতম হচ্ছে-

নৈতিককতা বিবর্জিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন। ১৮৮৩ সাল লর্ড ম্যাকলে যখন একটি শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের সুপারিশ করেন তখন তার ভূমিকায় উল্লেখ করেন- “আমরা এমন একটি শ্রেণী তৈরি করবো যারা আমাদের ও শাসিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে দোভাষীর কাজ করবে। তারা রক্তে-মাংসে-বর্ণে হবে ভারতীয় কিন্তু মেজাজ, চিন্তা-চেতনা, নৈতিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত তরুণরা আজ ইংরেজ, আমেরিকান বা ভারতীয় হচ্ছে, ভালো বাংলাদেশী বা ভালো মুসলমান হচ্ছে না।

কেননা এ শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্ম উপেক্ষিত, দেশপ্রেম অনুপস্থিত, নৈতিকতা উপেক্ষিত। যে শিক্ষাব্যবস্থা সুদকষার মাধ্যমে লাভের হার বের করতে বলে। ঘুষকে অনুৎসাহিত করে না। সে শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত যুবক আত্মকেন্দ্রিক মুনাফাখোর সুদি ও ঘুষখোর হবে এটাই স্বাভাবিক। যে শিক্ষাব্যবস্থা বানরকে মানুষের বংশধর হিসেবে জ্ঞান দেয়, মানব জন্মের মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে অসচেতন রাখে তাতে শিক্ষিত হয়ে কেউ অমানুষ ও মানবতাবিরোধী হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কেবল সিলেবাস-কারিকুলাম নয় সামাজিকভাবে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিক্ষার পরিবেশকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন এখানে মানুষ বিপদগামী হয়। সহ শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণেরা এক পর্যায়ে জুটি বাধবে, অবৈধ সম্পর্ক রক্ষা করবে, প্রেমের মহড়া দেবে তারপর আবার হতাশও হবে এটা খুবই স্বাভাবিক কথা। আর সব কিছুর জন্য দায়ি ত্র“টিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা পদ্ধতি নয় কি?

লেখক : প্রভাষক, ফেনী ভিক্টোরিয়া কলেজ।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।