সংবাদ শিরোনামঃ

সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে একতরফা! ** কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারতে শেরপুরে হাজারো মানুষের ঢল ** আওয়ামী লীগ মরিয়া ** শহীদী কাফেলায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ** গণতন্ত্রহীনতায় অরক্ষিত অর্থনীতি ** সরকার সিটি নির্বাচনকে পুরোপুরি রাজনৈতিককরণ করেছে ** অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক ** পহেলা বৈশাখের ‘লীলা’ ** আমার সন্তানের কি দোষ ** ফারাক্কা বাঁধের কারণে সাতক্ষীরার ২৭টি নদী এখন মরা খাল ** যাদের কাছে কোনো পুঁজি নেই তারাই সমালোচনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায়: মনজুর আলম **

ঢাকা, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪২২, ৪ রজব ১৪৩৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

॥ ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ॥
ইংরেজি নববর্ষ এখন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বলে নববর্ষের কথা উঠলেই আমরা থার্টিফাস্ট নাইট কিংবা পয়লা জানুয়ারির কথা ভেবে থাকি। কিন্তু সারা বিশ্বে নববর্ষ একটা নির্দিষ্ট উৎসবের দিন। পৃথিবীর সব নতুন বছর এক সময়ে আরম্ভ হয় না। প্রকৃতির রাজ্যে এক ঋতুর আগমনে যে নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, তা প্রকৃতির অঙ্গে অঙ্গে ফুটে উঠে। এদেশের নয়, পৃথিবীর সব দেশের পশু-পক্ষীও প্রকৃতির পরিবর্তিত প্রভাব থেকে রেহাই পায় না। মানুষগুলোর শরীর ও মনে ছোঁয়া লাগে। আর তারা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা প্রকাশ করে থাকে। এ অনুষ্ঠানগুলোর ঢং আর রং সর্বত্র এক নয়। যুগে যুগে দেশে দেশে মানুষের ধ্যান-ধারণার অনুসারে এগুলো ভোল পাল্টিয়েছে। মানব-সভ্যতার যাযাবর অবস্থায় পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র চন্দ্রকলা বা তিথিভিত্তিক মাস ও বছর গণনা প্রচলিত ছিল। কারণ, মাস বা বছর নির্ণয় করার জন্য চন্দ্রের তিথি বা কলা দেখে দিন মনে রাখা মানুষের পক্ষে যত সহজ, সূর্যের উদয়াস্ত দেখে দিন মনে রাখা তত সোজা ছিল না। কেননা ত্রিশ দিনের মধ্যে চাঁদ বাড়তে বাড়তে পূর্ণ হয় এবং ক্ষয় পেতে লোপ পায়। এটা মানুষের চোখের সামনেই ঘটতো। তাই সে শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের এক চাঁদের স্থিতিকালকে অনন্ত সময়ের মধ্যে ফেলে মেপে নিয়ে মাস নামে একটা ভাগ করে নিত।

চাঁদের গণনাকৃত মাস ও বছর ছোট। এর দিন সংখ্যা  ৩৫৪ দিন ৯ ঘণ্টা। এ কারণে এতে কৃষি কাজে ব্যাঘাত ঘটেছে। কেননা কৃষি কাজের জন্য বছরের সুনির্দিষ্ট সময় আবশ্যক হচ্ছে; শস্য বপনেরও নির্দিষ্ট সময় চাই, শস্য সংগ্রহেরও নির্দিষ্ট সময় চাই। অথচ চান্দ্র মাসের হিসাবে তা ঠিক রাখতে পারা যাচ্ছে না। সময় ঠিক রাখতে গিয়ে তাকে প্রতি তিন বছরে এক চান্দ্র মাস বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে। নইলে কৃষির উপযুক্ত শীত, বর্ষা ও গ্রীষ্মকাল পাওয়া যাচ্ছে না। তখন তাকে বাধ্য হয়েই চান্দ্র সৌর বছরভিত্তিক বছর গণনা শুরু করতে হয়। কারণ, সৌর বছরের মাসগুলো ঠিক সময়েই আসে।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতার অধিকারী প্রায় সমস্ত জাতিই চান্দ্র সৌর বছর অণুসরণ করতেন। প্রাচীন মিসরীয়, প্রাচীন বাবিলনীয়, প্রাচীন চৈনিক, প্রাচীন ইহুদি ও প্রাচীন ভারতীয় পঞ্জিকা চান্দ্র সৌর মাস হিসেবেই চলত। এখনও ভারতীয় হিন্দু পঞ্জিকায় যাবতীয় পূজা-পার্বণ চন্দ্রের তিথি অনুসারে সৌর মাসের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে সম্পাদিত হবার ব্যবস্থা দেওয়া আছে। অথচ কৃষি ও বিবাহাদির বেলায় সৌর মাসের হিসেবেই ব্যবস্থা দেওয়া থাকে।

প্রাচ্যের চীন, কোরিয়া, জাপানসহ গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পালন হয়ে থাকে নববর্ষ। এসব দেশে নববর্ষ আসে চাঁদের আলোয়। ইংরেজি ফেব্র“য়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মার্চে ১৯ তারিখের যে কোনো দিন হতে পারে এই নববর্ষ। এ সময়ের মধ্যে যেদিন নতুন চাঁদ উঠবে সেদিনই শুরু হয় নতুন বছরের। একে বলা হয় লুনার ক্যান্ডোর। আরবি হিজরি সালের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। একেবারেই ওদের নিজস্ব। এসব অঞ্চলে নববর্ষ উদযাপন করা হয় একেবারেই নিজস্ব আদলে, ঐতিহ্যের বাতাবরণে। আর প্রথম মাসের অর্ধেকটা জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ ও আয়োজন। পূর্ণিমার রাতে ওদের জীবনে নেমে আসে বাঁধভাঙা আনন্দের বন্যা। নববর্ষের দিনগুলিতে চীন, কোরিয়া, জাপান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে আত্মীয়তা ও পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার জন্য আয়োজন করা হয় পুনর্মিলনীর। বিনিময় করা হয় উপহার। বন্ধুত্বের দিগন্ত প্রসারিত করার জন্য তারা দেশি কায়দায় আয়োজন করে নানান অনুষ্ঠানের। মেলাও বসে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। নববর্ষের প্রথম দিনে তারা স্বর্গ ও পৃথিবীর দেবতাকে তুষ্ট করে নানা উপাসনা-উপচারে, দ্বিতীয় দিনে পূর্বপুরুষের মঙ্গল কামনা করা হয়। ওয়েইলু নামক বিশেষ ভোজনের আয়োজন করা হয় চীনে। পক্ষব্যাপী আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের মধ্যে সপ্তম দিনটি পালিত হয় ‘শস্যদিবস’ নামে। ভিয়েতনামে নববর্ষকে সংক্ষেপে টেট শব্দে অভিহিত করা হয়। ভিয়েতনামিদের বিশ্বাস, ঈশ্বর ঘরে ঘরে বাস করেন। নববর্ষে কার্প মাছের পিঠে চড়ে বেড়াতে যান স্বর্গে। সেখানে বসে শন্তরে লোক কী করছে, তা খতিয়ে দেখেন। এ বিশ্বাসে অনেকে নদী বা পুকুরে কার্প মাছ ছাড়েন।

ইরানে সুপ্রাচীনকাল থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে নওরোজ উৎসব। সূর্যের উত্তরায়নে যেদিন দিনরাত সমান থাকে সেদিনই পালিত হয় নওরোজ বা নবদিন উৎসব। সাধারণত ২১ মার্চ বা পারস্য ক্যালেন্ডার মতে ২১ মার্চের ২/১ দিন আগে বা পরে সূর্যের বসন্তবিষুবের দিন পালিত হয়ে থাকে পারস্যদের ঐতিহ্যবাহী নওরোজ উৎসব। পারস্য পুরাণ মতে পৌরাণিক রাজা জামশেদ নওরোজ প্রথার গোড়াপত্তন করেন। নওরোজে বিভিন্ন প্রতীক হিসেবে নানাবিধ ফুল ফল দিয়ে পারস্যবাসী সাজায় তাদের ঐত্যিবাহী নওরোজ টেবিল। আয়না আকাশের প্রতীক, আপেল পৃথিবী প্রতীক, মোমবাতি আগুনের প্রতীক, গোলাপ জলের প্রতীক, শস্যদানা এবং সদ্য অঙ্কুরিত গাছ শস্যের প্রতীক, মাছ পশুর প্রতীক, ডিম মনুষ্যত্ব এবং উর্বরতার প্রতীক, শুকনা ফল প্রেমের প্রতীক, সিরকা বার্ধ্যকের প্রতীক, পুডিং সমৃদ্ধির প্রতীক ইত্যাদি। এগুলো একই সাথে বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, সূর্য এবং চন্দ্রেরও প্রতিনিধিত্ব করে।

পারস্যবাসী নওরোজ উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা দুই সপ্তাহ অবকাশ যাপন করে থাকে। বেশীর ভাগ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই নওরোজের প্রথম সপ্তাহে চলে বাৎসরিক ছুটির আমেজ। ইরানের বাইরেও আফগানিস্তান, ইরাক কুর্দীস্থান, কসোভো, আজারবাইজান, কাজাখিস্থান, তুর্কেমেনিস্থান, তাজিকিস্থান, উজবেকিস্থান প্রভৃতি দেশে নওরোজ উৎসব পালিত হয়ে থাকে।

পৃথিবীর নববর্ষের প্রাচীনতম উৎসবগুলোর মধ্যে ইরানীদের নওরোজ অন্যতম। এটি ছয়দিনের উৎসব। ইরানী নববর্ষের প্রথম দিনকে নওরোজই কচুক বা ছোট নববর্ষ এবং ষষ্ঠ দিনকে নওরোজ ই বুজর্গ বা সম্ভ্রান্ত নববর্ষ বলা হয়। আধুনিক মুসলিম ইরানে উৎসব হিসেবে নওরোজ ও ঈদ দুইটিই প্রতিপালিত। ইরান থেকে স¤à§à¦°à¦¾à¦Ÿ হুমায়ুন উৎসবটি উত্তর ভারতে আমদানী করেন। স¤à§à¦°à¦¾à¦Ÿ আকবরের রাজত্বের (১৫৫৬-১৬০৫) গোড়া থেকেই নওরোজ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। তাতে হেরেমবাসিনী নারীরা শখের দোকান সাজিয়ে মীনা বাজার বা আনন্দ মেলাও বসাতেন।

বছরের শুরুতেই সমস্ত পাপগ্লানি ক্লান্তি ও অশুভকে ধুয়ে দিতে থাইল্যান্ডে পালিত হয় সংক্রান উৎসব। তাই নতুন বছরের প্রথম দিন ১৪ এপ্রিল সকলে মেতে উঠে জলকেলিতে। সংস্কৃত শব্দ সংক্রান্তি থেকেই সংক্রান কথাটির উৎপত্তি। যার অর্থ পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তনের দিনে জলখেলার পাশাপাশি চলে ঐতিহ্যবাহী থাই নববর্ষ শোভযাত্রা এবং বিশেষ প্রার্থনা উৎসব। ১৪ এপ্রিল নববর্ষের প্রথম দিবস থাকলেও মূলত ১৩, ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল তিনদিনব্যাপী চলে থাইদের নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান। থাইল্যান্ডের বাইরেও লাওস, কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারে পালিত হয়ে থাকে সংক্রান উৎসব।

ভারতে বর্ষবরণ উৎসবকে দিওয়ালি উৎসব বলে অভিহিত করে। দিওয়ালি অর্থ দীপাবলি বা আলোর উৎসব। এটি হয় বিভিন্ন রাজ্য বা সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী। দিওয়ালি ধর্মীয় উৎসবও বটে। লক্ষ্মীপূজাসহ চলে দেবদেবীর স্মৃতিচারণ করার উদ্দেশ্যে ভজনসঙ্গীত, কৃষ্ণকীর্তন ইত্যাদি। পাঞ্জাবে নববর্ষ উৎসব পরিচিত বৈশাখী নামে। নববর্ষে পুষ্পসজ্জা প্রায় সর্বভারতীয় রেওয়াজ। দক্ষিণ ভারতের অঞ্চলবিশেষের মজাদার খাবার ও পুষ্পাহার গুরুত্বপূর্ণ প্রথা। উত্তর-ভারতের নববর্ষের উৎসব হোলি বা দোল। এটি বসন্তকালীন উৎসব। এতে পিচকারি মেরে রঙ ছিটিয়ে হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যদিয়ে আনন্দ প্রকাশ করার রীতি এখনও বর্তমান আছে। দক্ষিণ-ভারতের দ্রাবিড়দের তিন দিন ধরে এ উৎসব পালিত হয়। তারা প্রথম দিনে নতুন চালে নবান্ন খাওয়াকে নববর্ষের জন্য একটা সৌভাগ্যসূচক কাজ বলে মনে করে। এ সময়ে গবাদি পশুর গলায় ফুলের মালা পরিয়ে তারা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে উপহার বিনিময় করে।

স¤à§à¦°à¦¾à¦Ÿ আকবরের সময় রাজকার্যে সে সময় হিজরি সনের প্রবর্তন ছিল। ভারতবর্ষে মুগল সা¤à§à¦°à¦¾à¦œà§à¦¯ প্রতিষ্ঠার পরও হিজরি পঞ্জিকা অনুসারে কৃষিপণ্যের খাজনা আদায় করা হতো। হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল থাকায তা কৃষি ফলনের সাথে মিলত না। যার ফলে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করা হতো। সুষ্ঠুভাবে খাজনা আদায়ের লক্ষ্যেই মুঘল সম্রাট আকবর সে সময় এলাহি সনের প্রচলন করেন। সম্রাটের আদেশ অনুযায়ী জ্যোতিবিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজি সৌরসন এবং আরবি হিজরি সনের উপর ভিত্তিকরে নতুন সনের নিয়ম নির্মাণ করেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ বা ১১ মার্চ থেকে নতুন সন গণনা শুরু হয়। এলাহি সন হলেও প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন। পরে এটি বঙ্গাব্দ বা বাংলাবর্ষ নামে পরিচিত হয়। ১৫৫৬ সালে হিজরি সন ছিল ৯৬৩। বাংলা সনও তখন ৯৬৩ থেকে যাত্রা শুরু করে। বঙ্গাব্দ শুরু হলেও এখন যেভাবে মাসের সাতটি দিন প্রচলিত তখন তেমনটা ছিল না। সম্রাট আকবরের সময় মাসের প্রত্যেকটি দিনের জন্য পৃথক নাম ছিল। পরবর্তীতে সম্রাট শাহজাহান একজন বিদেশী পণ্ডিতের সাহায্য নিয়ে সাপ্তাহিক পদ্ধতিতে দিনের নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন করেন। বঙ্গাব্দের সাথে খ্রিস্টীয় সনের দিন-তারিখের পার্থক্যের কারণে সাধারণ মানুষের পক্ষে উভয় সন গণনায় সমস্যা হতো। এজন্য ১৯৬৬ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গাব্দ সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ এপ্রিলকে স্থায়ীভাবে বাংলা নববর্ষ শুরুর দিন হিসেবে ঠিক করা হয়।

চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের প্রথম থেকেই গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হয়। চাষবাসের সব কাজ বৈশাখ মাস থেকেই শুরু করতে হয়। জীবনের নতুনত্ব খুঁজে আনার জন্যই সমস্ত জড়তাকে বিসর্জন দিয়ে কোমলতা আর পেলবতার স্বগত জানাতেই পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের নানাস্থানে সারা বৈশাখ মাস ধরে বিশেষ করে পয়লা বৈশাখে মেলা বসে। স্থানীয় লোকেরাই এসব মেলার আয়োজন করে থাকে।

পুণ্যাহ বাংলা নববর্ষের আরও একটি অনুষ্ঠান। এ দিন জমিদার ও বড় বড় তালুকদারের কাছারিতে পুণ্যাহ অনুষ্ঠিত হত। সেদিন অধিকাংশ প্রজা ভালো কাপড় পরে জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে আসতো। ঐ দিন জমিদার প্রজার দূরত্ব খুব কমে আসতো। বর্তমানে হালখাতা বাংলা বছরের হিসেব পাকাপাকিভাবে টুকে রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা খোলার এক আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ। যারা তাদের নিয়মিত গ্রাহক, পৃষ্ঠপোষক ও শুভার্থী, তাঁদেরকে পত্রযোগে অথবা লোক মারফত দাওয়াত দিয়ে দোকানে একত্র করে সাধ্যমতো আপ্যায়িত করা হয়। হালখাতা অনুষ্ঠান পুণ্যাহ অনুষ্ঠানেরই ও পিঠ। উভয় অনুষ্ঠানের সামাজিকতা, লৌকিকতা, সম্প্রীতি ও সৌজন্যের দিকও লক্ষণীয়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীরা বৈসাবি বা বিজু মেলা বসায়। সাঁওতাল, গারো সমাজেও জাঁকজমকের সঙ্গে বর্ষবরণ উৎসব পালিত হয়। এদিন তীর-ধনুক নিয়ে জঙ্গলে শিকার করতে যাওয়া সাঁওতাল সম্প্রদায়ের একটি ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ। মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন চারদিন ধরে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে। পুরনো বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিনই সাংগ্রাই উৎসবের দিন হিসেবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। পরের দু’দিন মারমা সম্প্রদায়ের জনপদে হয় আনন্দের বন্যা। ওই দু’দিন মারমা সম্প্রদায়ের পাহাড় পাহাড় চলে জল উৎসব। একে অপরের গায়ে জল ছিটিয়ে পুরনো বছরের ব্যর্থতা, হিংসা-বিদ্বেষ মুছে নতুন বছর হোক ভালোবাসা, সাফল্য আর সম্প্রীতির আনন্দ-আশ্রয়। গ্রামেগঞ্জে বৈশাখের আমেজ খানিকটা লোপ পেলেও মিডিয়ার কল্যাণে এটি এখন বেশ জনপ্রিয়। আবৃত্তি, আলোচনা, যাত্রা, পালাগান, বাউল, কীর্তন, শহরের পান্তা-ইলিশ ভোজের দৃশ্যে বর্ষবরণ এখন শহুরে অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

আজ বৈশাখী মেলার নামে বইছে বিশ্বাসের বৈরি বাতাস; চলছে উলঙ্গ সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা, যুবক-যুবতির নির্লজ্জ মেলামেশা, বটমুলে বসে কপোত কপোতির পান্তা খাওয়ার নামে অশ্লীলতার স্রোত বওয়া, প্রগতির নাম করে অশ্লীলতার বিষবাষ্প ছড়ানো, বাঙালি সংস্কৃতির নাম করে বিশ্বাস বিরোধী ও চরিত্র বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড; যা কোনো কোনো ধর্মের আবরণে পরিচালিত হয়ে থাকে। এর প্রতিবাদ করলেই তাকে প্রগতির অন্তরায় কিংবা বাঙালি সংস্কৃতির বিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়। যারা এমনটি বলেন তাদেরকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে, আসলে বাঙালির পরিচয় কি? বাঙালি মানে কি বিশ্বাসের বিরুদ্ধে চলা? আজকাল কুকুর, শৃগাল, বানর ও গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণির মুখোশ পড়ে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা চলছে। এটাকে প্রতিবাদের হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হলেও এ দৃশ্য দেখে রশিকজন বলে থাকেন, বাঙালি মানে যদি পশুদের মুখোশ হয়, তবে কি আমাদের পূর্বপুরুষ মানুষ ছিলনা?

সুতরাং বৈশাখী ঐতিহ্য কোনো অংশীবাদী কিংবা অশ্লীলতার মোড়কে জড়ানো উৎসব নয়। এটি অতীতের ব্যর্থতা ও দুঃখ-বেদনাকে ভুলে নতুন স্বপ্নে এগিয়ে যাবার প্রত্যয়দৃপ্ত একটি দিন। এ উৎসবের সম্পর্ক মায়ের সাথে, মাটির সাথে, বিশ্বাসের সাথে এবং লোকজ ঐতিহ্যের সাথে। এ উৎসব বুঝে দিতে চায় জীবনের হালখাতা, খুলে দিতে চায় স্বকীয়তা ও সম্ভাবনার অফুরন্ত দুয়ার। জেঁকে বসা অপসংস্কৃতির প্রতিরোধে সুস্থ সংস্কৃতির পক্ষে একটা কাল বৈশাখী ঝড়ের আজ বড় প্রয়োজন। তবেই দেশ বাঁচবে, জাতি বাঁচবে, বাঁচবে নিজস্ব সংস্কৃতি, ফিরে আসবে সুস্থ মন মানসিকতা। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সাথে স্লোগান তুলি- ‘বৈশাখ এসো এসো নতুন আবেশে।’

লেখক : কবি ও গবেষক, সহযোগী অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

mrakhanda@gmail.com

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।