নবাবগঞ্জে বাঙ্গি চাষিদের মুখে হাসি নেই

নবাবগঞ্জে বাঙ্গি চাষিদের মুখে হাসি নেই

দোহার (নবাবগঞ্জ, ঢাকা) সংবাদদাতা : প্রায় বছরই ক্ষ্যাতে (জমিতে) বাঙ্গি বুনি। এ বছরও ৩ একর ক্ষ্যাতে বাঙ্গি বুনছিলাম। সার, কীটনাশক, কামলা দিয়ে খরচ হইছে আড়াই লাখ ট্যাকা। সিজিনের প্রথম দিকে একটু বেশি দাম পাইছিলাম। অহন এক ঝাকা বাঙ্গি দেড়শ-দুই’শ ট্যাকায় বেপারীরা (পাইকারী ক্রেতা) নিবার চায় না। ক্ষ্যাত থিকা না তুললে পইচ্যে যাইবো। তাই লচ দিয়ে অইলেও কামলার রুজ উঠাইতাছি।

হুনছি বাজারে বাঙ্গি মেলা দামে বেঁচা অয়। কিন্তু আমরা যারা কৃষক তাগোতো প্যাটের ভাত জুটতাছে না।

গত ১৩ এপ্রিল সোমবার সকালে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ভাঙাভিটা গ্রামের বাঙ্গির বাজারে দাঁড়িয়ে এভাবে হাহাকারের সুরে কথাগুলি বলছিলেন বাঙ্গি চাষি করিম বেপারী। একই রকম হাহাকারের সুর বাঙ্গী চাষি পঙ্কজ মণ্ডল, সমৃত সিদ্ধা, আউয়াল খা, বিনেন্দ্র বৈদ্য, সজীব শেখ এর মতো কয়েক’শ কৃষকের।

কৃষক দিলীপ সিদ্ধা বলেন, ৪ পাকি জমিতে বাঙ্গি রোপণ করেছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছরটা আমার দূরঅবস্থায় যাবে। কৃষি ব্যাংকে গিয়েছিলাম ১ হাজার টাকার বেশি ঋণ দেবেন না বলে তারা সাফ বলে দিয়েছেন। কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বাংলা কার্তিক মাসে প্রথম সপ্তাহে চারা রোপন করা হয়। এর মধ্যে সার, কীটনাশক ব্যবহার, জমিতে নিরানী, পানি সেচ কাজ করতে হয়। অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ মাস শেষে ফাল্গুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জমি থেকে বাঙ্গি তুলা শুরু হয়। এই দীর্ঘ ৫ মাসে পরিবারের সদস্য ছাড়াও শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়। এবার ফলন বেশি হওয়ায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ৩ থেকে সাড়ে ৩’শ টাকা মজুরি সাথে ৩ বেলা খাবার দিয়ে শ্রমিক মিলছে না। অন্যদিকে, বাজারে প্রতি ঝাকা (ডালি) বাঙ্গির দাম দেড়শ থেকে ২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। কৃষক তার পণ্যের মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর মধ্যস্বত্ত্বভোগী পাইকাররা ফায়দা লুটছে।

স্থানীয় দোকানদার নিতাই মণ্ডল অভিযোগ করেন, উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে এ গ্রামটি অবস্থিত। অবহেলিত এই এলাকাটিতে নেই কোনো সড়ক যোগযোগ ব্যবস্থা। নৌপথে নৌকায় বা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারই একমাত্র ভরসা এ এলাকার জনসাধারণের। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তার নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ মাস জুরে পাইকাররা দিনের দু’বার বাজারে জড়ো হয়। ভোরের আলো ফুটতেই কৃষকরা জড়ো হয় নৌকায় করে ঝাকা ভর্তি বাঙ্গি নিয়ে। রাজধানীর কাওরান বাজার, শ্যামবাজার, যাত্রাবাড়ী, নবাবগঞ্জ, দোহার, সাভারসহ গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে পাইকাররা জরো হয় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার যোগে। সকাল ৯টার মধ্যে পাইকাররা বাঙ্গি নিয়ে চলে যায়। আবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনা-বেচা। সাধারণত বিকেলের বাজারে আসেন দূরের পাইকাররা। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মুকলেছ বেপারী জানান, তিনি ১২৫০ টাকায় ১ নৌকা বাঙ্গি কিনেছেন। বিক্রি হবে সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত। দোহারের জয়পাড়ার সিরজন বেপারী জানান, এ বছর বাঙ্গির ফলন ভালো হওয়ায় কম দামে কিনতে পাচ্ছি, ক্রেতারাও পাচ্ছে কম দামে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকারের প্রতিটি বাঙ্গি ১০ টাকা। মাঝারি আকারের প্রতিটি বাঙ্গি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড়টি ২৫-৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বাজারগুলোতে। নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মকবুল আহমেদ বলেন, ঐ এলাকার মাঠ কর্মকর্তা সব সময়ে কৃষকের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। নির্দেশ দেয়া আছে। সমস্যা হলে তারা কৃষকের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন।