বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

বোদা (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা : পঞ্চগড়ের বোদায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজার মূল্য ভালো না থাকায় কৃষকের মুখে হাসি নেই। শস্যভাণ্ডার বলে পরিচিত পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় তুলনামূলকভাবে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও মিলছে না কৃষকের। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে দেনা পরিশোধ করতে না পারায় কৃষকের চোখে-মুখে এখন হতাশার গ্লানি। বাজারগুলোতে নতুন ধান আসলেও তা মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে এখন সাড়ে ৪শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা পর্যন্ত। অথচ উৎপাদন খরচ পড়েছে মণপ্রতি ৭১৫ টাকা। এ ছাড়া সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান বা চাল সংগ্রহ না করায় এ ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং তেমন কোনো রোগবালাই না হওয়ায় ধানের ফলন হয়েছে বাম্পার। এ বছর বোরো চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে। চলতি বোরো মওসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ জমিতে বোরা চাষ করা হয়েছে। সরেজমিন উপজেলার মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেখানে মণপ্রতি ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। সেখানে বর্তমানে মণ প্রতি ধান ৪শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে কৃষক। ফলে উৎপাদন খরচ না ওঠায় কৃষকদের দুশ্চিন্তা এখন আরো বেড়ে যাচ্ছে। চড়া সুদে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে এখন ধার শোধ করবে কিভাবে দুশ্চিন্তা ভাবিয়ে তুলছে সবাইকে। স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে ধান নিয়ে গেলে ক্রেতা পাওয়া যায় না, ক্রেতা থাকলেও সর্বোচ্চ সাড়ে ৫শ’ টাকার উপরে ধান বিক্রি হচ্ছে না। এ জন্য সরকারের ধান-চাল কেনার ভুল সিদ্ধান্তকেই দায়ী করলেন মাঠ পর্যায়ের শ্রমজীবী কৃষকরা। বেংহারী ইউনিয়নের কৃষক ওসমান গণি, আজিজার রহমানসহ অনেকেই জানালো সারের দাম বেড়েছে সেই সঙ্গে জমিতে সেচ দেয়ার জন্য ডিজেলসহ অন্যসব সামগ্রীর দাম বেড়েছে। এমনকি ধান রোপণ করা থেকে কাটা পর্যন্ত দিন মজুরদের মজুরি বেড়েছে অনেক। ধান কাটতে একজন মজুর কমপক্ষে আড়াইশ থেকে তিনশত টাকা মজুরি নেয়। অথচ ধান চাষ করে যে টাকা খরচ হয়েছে সেটাই উঠছে না। তারা জানান, দাদন ব্যবসায়ী এনজিওসহ বিভিন্ন স্থান থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে এখন বিক্রি করতে হচ্ছে অর্ধেক দামে। বর্তমান সময়ের খরচ অনুযায়ী একমণ ধানে কমপক্ষে ৯শ থেকে হাজার টাকা হওয়া উচিৎ ছিল। কৃষি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, খাদ্য বিভাগ ধান কাটামাড়াইয়ের পরপরই যদি কৃষকদের কাছ থেকে সরকার সরাসরি ধান ক্রয় করত তাহলে কৃষকরা একটু হলেও লাভবান হতো। যেহেতু তারা আগস্ট মাস পর্যন্ত চাল কিনবে সে কারণে বড় বড় ব্যবসায়ী কম দামে ধান কেনার আশায় ধান কেনা থেকে বিরত রয়েছে। কিন্তু প্রান্তিক কৃষকরা যেহেতু ধান কাটার পরপরই চড়া সুদে নেয়া ঋণ পরিশোধ করার জন্য ধান পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এ সুযোগটা নেয় ব্যবসায়ীরা। এতে তারাই লাভবান হয়, কৃষকরা নয়। মূলত কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পায় বলে ধান-চাল কেনার কথা খাদ্য বিভাগ বললেও এতে তাদের পকেট ভারি হয় আর লাভবান হয় ব্যবসায়ীরা। সে কারণে কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করা না গেলে ধান চাষে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর এর প্রভাব পড়বে সামগ্রিক অর্থনীতিতে এমনটাই মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।