সংবাদ শিরোনামঃ

জনসমর্থন বাড়ছে জামায়াতের ** প্রধান বিচারপতির অভিসংশনের আবেদন : শিক্ষিত সমাজ স্তম্ভিত ** অধ্যাপক মুজিব ও গোলাম পরওয়ারকে কারাগারে প্রেরণ ** শরণার্থী ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ ইউরোপ ** ভুল পথে সরকার অতিষ্ঠ জনগণ ** অশান্ত ইয়েমেন ** ভারত থেকে গরু আসছে ** আমরা সবাই এই দেশের শরণার্থী ** কুরবানির চিরাচরিত ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে ** একদলীয় শাসনে হাঁসফাঁস ** নবমূল্যায়নে নজরুল ** কুষ্টিয়ায় পর্যটন আকর্ষণে সরকারি উদ্যোগ নেই ** মঙ্গাপীড়িত রংপুর বিভাগে ঈদের চাঁদ হাসবে কি ** বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বন্ধ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ আশ্বিন ১৪২২, ৩ জিলহজ ১৪৩৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ড. মাহফুজ পারভেজ
একজন কবিকে, একজন সাহিত্যিককে, এমন কি, একটি গ্রন্থকে (সৃজনশীল কিংবা মননশীল) দুই রকমভাবে আলোচনা করা যায়। প্রথমত, কাব্য বা সাহিত্যগত তুল্যমূল্য স্বরূপে; এবং দ্বিতীয়ত, ঐতিহাসিক তত্ত্ব আবিষ্কারের উপায় স্বরূপে।

প্রথমোক্ত পন্থা অবলম্বন করা হলে আমরা কেবলমাত্র গ্রন্থ বা গ্রন্থকারের দেশকাল-নিরপে কাব্য বা সাহিত্য কৃতিত্বের দোষ-গুণ বিচারে সমর্থ হই।

দ্বিতীয় প্রথা অবলম্বন করা হলে আমরা তা যে নির্দিষ্ট সময়ে যে দেশে বা যেরূপ বিশ্বব্যবস্থায় রচিত, সে দেশ ও বিশ্বব্যবস্থার তৎসাময়িক অবস্থাসমূহের আলোচনা দ্বারা এবং তৎকালীন অন্যান্য সাহিত্য-কাব্যকর্মের সঙ্গে তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে রচনাটি বা রচয়িতার দোষ ও গুণ, সাফল্য ও ব্যর্থতার কার্যকারণ সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।

সাহিত্যতত্ত্বে কাব্যের দোষ-গুণ বিচার করাই সমালোচনা-আলোচনার মুখ্য উদ্দেশ্য। ঐতিহাসিক প্রথায় আলোচনা উক্ত বিচারের সহায়তাসাধন করে মাত্র। কিন্তু এই উভয় পদ্ধতির মিলিত সাহায্যেই যথার্থ সমালোচনা করা যায়। বর্তমান বাংলাদেশে এবং ব্যাপকার্থে সমগ্র বাংলা সাহিত্যের নিরিখে সমকালের অন্যতম প্রধান কবি ও বহুমাত্রিক সাহিত্য-প্রতিভা আল মাহমুদকে বীণের জন্যেও প্রয়োজন একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণী কাঠামোর সাহায্য নেয়া।

২.

পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকমুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশের ঢাকায় একসঙ্গে জীবন শুরু করেন কয়েকজন তরুণ’-বাচ্চু (শামসুর রাহমান), হুমায়ুন (ফজল শাহাবুদ্দীন), শহীদ কাদরী। এদের সঙ্গে এসে যুক্ত হন মফস্বলের আরেকজন, আল মাহমুদ। সেই পঞ্চাশে, বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-কবিতার নানা েেত্র প্রথম যৌবনের উত্তাপে কর্মপ্রবণ ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, কায়সুল হক, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আলাউদ্দিন আল আজাদ এবং আরও অনেকেই। বস্তুত এদের হাতেই আধুনিক বাংলাদেশের প্রথম প্রজন্মের সাহিত্য সৃজিত হয়। কারণ, এদের অগ্রবর্তীরা, যেমন ফররুখ আহমদ, সৈয়দ আলী আহসান, আহসান হাবীব, শওকত ওসমান, আবুল হোসেনরা এসেছিলেন কলকাতার খানিকটা অভিজ্ঞতা নিয়ে। ঢাকায় বা বাংলাদেশের প্রোপটে উত্থান ও বিকাশের ধারায় পঞ্চাশ দশকের কবি ও লেখকগণ সব দিক থেকেই স্বতন্ত্র, বিশিষ্ট এবং ভিত্তি স্থাপনকারী।

পঞ্চাশের কবি ও লেখকগণ শুরুটা একই সঙ্গে করলেও ক্রমেই তাদের বিশিষ্টতা ও স্বাতন্ত্রিকতা সুস্পষ্ট হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঘরানায় পর্যবসিত হয়। এই পার্থক্য কেবল শৈলী বা স্টাইলে নয়; চিন্তা, চেতনা এবং বিশ্বাসেরও। আল মাহমুদের সামগ্রিক প্রবণতার মধ্যেও আলাদা একটি অভিব্যক্তি সমকালের আর সকলের চেয়ে তাঁকে পার্থক্যপূর্ণ করেছে। সোনালী কাবিন কিংবা মায়াবী পর্দা দোলে ওঠে থেকে যে আল মাহমুদের যাত্রা, সেটা বখতিয়ারের ঘোড়া, প্রহরান্তে পাশ ফেরা, কাবিলের বোন ইত্যাদি হয়ে বার বার তাঁর সম্পর্কে জানাচ্ছে যে, আমি দূরগামী। এ কারণেই ঢাকা এবং কলকাতা মিলিয়ে অখণ্ড বাংলা সাহিত্যের বিবেচনায় কবিতার প্রসঙ্গ এলেই পঞ্চাশের কবিদের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে দেখতে পাওয়া যায় আল মাহমুদকে। তাঁর ‘গাঙের ঢেউ-এর মতো বলো কন্যা কবুল কবুল’ লাইনটি থেকে ‘ঘুমের মধ্যে জেহাদ জেহাদ বলে জেগে ওঠি’ ধরনের পংক্তিগুলো বাংলা কবিতায় মিথ হয়ে আছে। যারা তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ যেভাবে বেড়ে ওঠি পড়েছেন, তারা জানেন, কবিতা ও কাব্যচর্চার মতোই জীবনযাপনের অভিজ্ঞতাতেও আল মাহমুদ একজন জীবন্ত কিংবদন্তী। বোহেমিয়ান-সৃষ্টিছাড়া তারুণ্য-যৌবন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা পরবর্তী বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের রোমান্টিক উন্মাতালতা, গণতন্ত্র ও শুভতার সংগ্রাম এবং  সর্বোপরি আস্তিক-দার্শনিকতার মাধ্যমে একটি বিশ্বাসী আবহে পৌঁছার প্রয়াসে আত্মার মুক্তির অন্বেষণ আল মাহমুদের জীবন ও কবিতার অভিমুখকে একটি যৌক্তিক পথরেখায় নিয়ে এসেছে। এই মনোদার্শনিক গতিপথ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ থাকার কারণে তিনি গোড়া থেকেই বলতে পারেন যে, ঢাকা হবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য, কবিতা ও কীর্তির কেন্দ্রীয় ত্রে; বৈশ্বিক রাজধানী। এবং তাঁর কবিতায় ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলাদেশের প্রকৃতি, প্রেম, সংগ্রাম, সংােভ, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন, জীবনবোধ সুললিত কাব্যভাষায় উচ্চারিত হয়। তাবৎ বাংলাদেশ ও এর মানবমণ্ডলীকে ঘিরে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যাবতীয় প্রপঞ্চকে নিজের অভীষ্ট ল্য-উদ্দেশ্য-বিশ্বাসের নিরিখে পরীা-নিরীায় জারিত করে চিরায়ত বাংলার মানবকণ্ঠে কথা বলার ইতিহাসই আল মাহমুদের জীবনেতিহাস।

৩.

আল মাহমুদের সাহিত্যজগত এবং কাব্যবোধ তাঁর বিশ্বাস ও মৃত্তিকার পাটাতনে দৃঢ়মূলপ্রবিষ্ট। তাঁর ভেতরে লুকিয়ে থাকা রোমান্টিক, বোহেমিয়ান চরিত্রটি নিজের বিশ্বাসনির্ভর দার্শনিকতায় বেগবান হয়ে স্বপ্ন ও কল্পনার পথে যেমন বিচরণ করে, তেমনি ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পথেও প্রদণি করে। তাঁর কবিতার মূল সুর ভালোবাসা, দেহগত কিংবা আত্মাগত। ছন্দের হাত তাঁর অসাধারণ। (পাঠক মনে করতে পারেন, আমার মায়ের সোনার নোলক...এর কথা।) তাঁর কবিতায় রয়েছে দেশজ শব্দের ছড়াছড়ি, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গের ভাষাবৈশিষ্ট্য। দীর্ঘ কবিতায়, সনেটে, বিষয়ভিত্তিক কবিতায় তিনি অনায়াস। ধারাবাহিক ফিচার, কলাম, প্রবন্ধেও তিনি সফল। উপন্যাস বা ছোটগল্পে তাঁর তীè মানবিকবোধ, গভীর পর্যবেণ এবং আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিশ্লেষণের সচেতন পারঙ্গমতা অলণীয় নয়। সমগ্র আল মাহমুদকে সামনে রেখে পঞ্চাশের অন্য সবার রচনাবলিকে তুলনামূলক বিবেচনা করা হলে, তাঁর চিন্তা, বিশ্বাস, শৈলী, কাঠামো ইত্যাদির অন্তর্নিহিত পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এবং এ কারণে তাঁকে কেবল তুলনা করা যায় তাঁরই সঙ্গে।

ব্যক্তিসত্তা এবং লেখকসত্তায় আল মাহমুদ স্বাতন্ত্রিকতাকে অত রেখেছেন সব সময়ই। ছোট-খাট, সাধারণ দর্শনের অবয়বকে তিনি দ্রোহ ও সাহসের উচ্চতর জায়গায় নিয়ে গেছেন আপস ও আত্মসমর্পণ না করার ঐতিহ্যে। যা তিনি বিশ্বাস করেন, শত বিরূপতাতেও সেটা বলতে দ্বিধা করেন না তিনি। প্রবল প্রতিপকে সামনে রেখেও স্বমত প্রকাশ ও প্রচারে তিনি অকুতোভয়। ফলে এই খর্বাকায় মানুষটি প এবং প্রতিপরে সামনে মহীরুহের আকার ও আয়তন অর্জন করেন। তীব্র সংগ্রাম, অনিশ্চয়তা, দারিদ্র্য, গন্তব্যহীনতার মধ্যে দিয়ে মধ্যবিত্তের যাপিত-জীবনের এক-একটি পর্যায় অতিক্রম করে আল মাহমুদ নিজের বিশ্বাসের তরীটিকে ভাসিয়ে আনতে সম হয়েছেন কাক্সিত মোহনায়। জীবনের শেষ পর্যন্ত টেনে এনেছেন নিজের চিন্তা ও আস্থার যাবতীয় অনুসঙ্গ। এনেছেন নান্দনিক সুষমায়। মননশীলতার স্নিগ্ধতায়। তাঁর সঙ্গে মিল বা অমিলের পরেও কেউ তাঁকে এড়িয়ে যেতে বা অবজ্ঞা করে আধুনিক বাংলা কবিতা ও সাহিত্য আলোচনা-পর্যালোচনা করতে সম হয়নি। তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসের বিন্দুমাত্র সাযুজ্য নেই, এমন পও তাঁকে মান্য করতে বাধ্য হয়েছে তাঁর বিশ্বাসজাত-প্রকাশের সততার জন্য; তাঁর কাব্যশক্তির জন্যে।

ব্যক্তি ও কবি হিসেবে আল মাহমুদ সকল আলোচনা-সমালোচনার পরেও নিবিষ্ট-কর্মের নৈপূণ্যে সফলতার ঠিকানাটি খুঁজে পেয়েছেন। যা তাঁর সমকালের সহযাত্রীদের অনেকেই পাননি। কারণ, তিনি বিভ্রান্ত ছিলেন না; ছিলেন নিজ বিশ্বাসে বলীয়ান। এবং তাঁর বিশ্বাস ও বক্তব্য এমন একটি সার্বজনীনতা লাভ করেছে যে, তিনি কবি ও দার্শনিকরূপে পৌঁছে গেছেন বৃহতায়ন মানবসমাজের মর্মমূলে। মূলত তিনি মানুষের শাশ্বত বিশ্বাসকে কবিতার ভাষায় গেয়ে গেয়ে কাল-কালান্তরে জাগরুক রেখেছেন। একজন কবি যখন নিজের এবং অপরাপর ব্যক্তিগণের কথা বলতে বলতে জাতির কণ্ঠস্বরে পরিণত হন, তখন তিনি তাঁর সফলতার শীর্ষ বিন্দুটিকে স্পর্শ করার অমীয় আনন্দ উপভোগ করেন। ইতিহাসে খুব কম কবিই এমন অপার আনন্দের সন্ধান পেয়েছেন।

৪.

ব্যক্তিগতভাবে পঞ্চাশের কবিগণের মধ্যে ফজল শাহাবুদ্দীন এবং আলাউদ্দিন আল আজাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ও সংশ্লেষ সবচেয়ে বেশি। ফজল শাহাবুদ্দীনের কবিতা একটি ঘোরের মতো আত্মমগ্ন জগতকে উন্মোচিত করে। তাঁর ব্যক্তিত্ব নানা সীমাবদ্ধতা ও সমস্যার পরেও অনেককেই আকৃষ্ট করে। তুলনায় আলাউদ্দিন আল আজাদ মৃদুকণ্ঠী, নীরব ও নিভৃতচারী। আমাদের কর্মত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি যখন জীবনের শেষ বছরগুলোতে অধ্যাপনা-গবেষণায় ব্যাপৃত ছিলেন, তখন ঢাকার পূর্ব-যোগাযোগের নিরিখে আমি বহু বহু বার দীর্ঘ আড্ডা ও আলোচনায় লিপ্ত হয়েছি তাঁর সঙ্গে। তাঁর কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্পসহ লেখালেখির নানা প্রসঙ্গে আলাপচারিতায় তৎকালের বাংলা বিভাগের কিছু কিছু ছাত্রছাত্রী আমাদের অনুসরণ করেছে; যারা এখন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিকতা করছে। আলাউদ্দিন আল আজাদের ওপর যে মূল্যায়নধর্মী গ্রন্থ ‘গতিধারা প্রকাশনী’ থেকে বের হয়েছে, তাতে আমার একাধিক রচনা রয়েছে এবং তাঁর ওপর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচুর লেখারও সুযোগ ঘটেছে। পঞ্চাশের আরেক অন্যতম কবি শামসুর রাহমানের সঙ্গে আমার ভালো পরিচয় ছিল, বলা যাবে না। মাত্র একবার তাঁর সঙ্গে আমার চাুষ দেখা-সাাৎ হয়েছে। আইয়ুব হোসেন ‘বিজ্ঞান চেতনা পরিষদ’-এর একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে। সেখানে আমরা আলোচক ছিলাম। আরও ছিলেন আহমদ শরীফ এবং বশীর আল হেলাল। বলতে দ্বিধা নেই, মানুষ হিসেবে, আচরণে ও ব্যবহারে, শামসুর রাহমান অতুলনীয় শিষ্টাচারের অধিকারী ছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ও বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হয়েও তাঁর সঙ্গে চমৎকার সৌজন্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখা যায়, যেটা স্বমতের অনেকের সঙ্গেই, অনেক সময় রাখা সম্ভব হয় না।

আল মাহমুদের সঙ্গে আমার পরিচয় ও সম্পর্ক খুবই আনুষ্ঠানিক। প্রথম তাঁকে দেখি ১৯৮৩ সালে কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির এক অনুষ্ঠানে, যেখানে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির একজন কর্মকর্তারূপে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে সম্ভবত ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে আমার অনুজপ্রতীম তরুণ কবি ইশারফ হোসেন তার ‘সকাল সাহিত্য গোষ্ঠী’-এর প থেকে জাতীয় জাদুঘরে আল মাহমুদের একটি সংবর্ধনার আয়োজন করে, যাতে আমি সম্মাননাপত্র পাঠ করে সেটা কবিকে উপস্থাপন করি। প্রসঙ্গত, সেই অনুষ্ঠানে আল মাহমুদ বলেছিলেন, ‘নিকট ভবিষ্যতে ঢাকা হবে বাংলা ভাষার রাজধানী’। তাঁর বক্তব্যের আলোকে দৈনিক সংগ্রাম-এর জন্য অনুষ্ঠানের নিউজটিও কভার করেছিলাম আমি, যা প্রথম পাতার অষ্টম কলামের শীর্ষদেশে ছাপা হয়।

তারপর মূলত পল্টনে ফজল শাহাবুদ্দীনের কবিকণ্ঠ কার্যালয়ে আল মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার দেখা, সাাৎ, বাক্যবিনিময় হয়েছে। আরেকটি বিচিত্র যোগযোগ তাঁর সঙ্গে গড়ে ওঠে সাপ্তাহিক রোববার-এর মাধ্যমে। আমি তখন মোটামুটিভাবে পত্রিকাটির দেখাশোনা করি। সহকর্মী-সাংবাদিক সৈয়দ কাজিম রেজা একদিন আল মাহমুদের একটি দীর্ঘ কবিতা নিয়ে আসেন। কিন্তু কোনও আর্টিস্টকে হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত কোলাজধর্মী অলঙ্করণের মাধ্যমে আমি নিজেই এক পৃষ্ঠায় আল মাহমুদের কবিতাটি সজ্জিত করি। সবাই তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে অলঙ্করণে আমার নাম ছাপিয়ে দিয়েছিলেন। এসব তথ্য বলার উদ্দেশ্য হলো, আল মাহমুদ আমার আগ্রহ ও জ্ঞাত জগতের বাইরে ছিলেন না; যেমন ছিল না তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলী। এটাও বলে রাখা ভালো যে, আমি ও আমার বন্ধুবর্গ, যারা আশি দশকের কবি-লেখক নামে পরিচিত, তারা মূলত বহুমাত্রিক পাঠের অভিজ্ঞতার মধ্য নিয়ে অতীতকে মন্থন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রয়াসী ছিলাম বা আছি। এই তথ্যটিও জানানোর প্রয়োজনবোধ করেছি একটি বিশেষ কারণে। কারণটি হলো, অতি সম্প্রতি কবি ও সম্পাদক ফারুক মাহমুদ, আমাদের উভয়েরই অতিপ্রিয় ও স্নেহধন্য, নববই দশকের একজন তরুণ কবির একটি মন্তব্য আমাকে জানালেন। সে বলেছে, ‘আজকাল আর রবীন্দ্রনাথ পড়া যায় না।’ মানে তার কাছে রবীন্দ্রনাথ পাঠের অযোগ্য! কবিতার পাশাপাশি সে টিভি ও মিডিয়াতে যথেষ্ট নামডাক করেছে। অতএব তার নামটি উল্লেখ করে বেচারাকে বিব্রত করছি না। শুধু এটুকুই জানাচ্ছি যে, আমরা আমাদের সময় ও অভিজ্ঞতাকে ঋপদী ও সমকালীন সাহিত্য ও কাব্যের পাঠের মাধ্যমে ঋদ্ধ ও পূর্ণ করেছি। অন্যান্যের মধ্যে আল মাহমুদও সে পাঠতালিকায় ছিলেন।

কিন্তু যখন শুনতে হয় যে, ‘আজকাল আর রবীন্দ্রনাথ পড়া যায় না’; তখন অন্যান্যরা অনাগতকালে কতটুকু পঠিত হবেন, সেই প্রশ্ন ও সংশয় অবশ্যই তো থাকে! লেখকের মান নেমে যাওয়া কিংবা পাঠকের মান নেমে যাওয়ার উভয়বিধ ঝুঁকির মধ্য দিয়েই তো সাহিত্য এগিয়ে এসেছে এতোটুকু দীর্ঘ ও বন্ধুর পথ। বাংলা সাহিত্যের সেই পথে কেউ পড়ুক বা না পড়ুক, তিনজনকে কখনওই বাদ দেয়া যাবে না’-মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। এই তিনজনকে স্তম্ভের মতো ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছে তাবৎ বাংলা সাহিত্য। এই তিনটি মহাসূর্যকে ঘিরে রয়েছে শত-সহস্র তারার মেলা। সেই আলোকিত মণ্ডলে আল মাহমুদের অবস্থান কোথায় হবে? মহাকালে দখলে থাকা এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার অধিকার আমার নেই। আমি যা বলতে পারি তা হলো, আল মাহমুদ শত-সাধারণের মধ্যে মিশে থাকবেন না; অবশ্যই থাকবেন স্বতন্ত্র আলোর ঔজ্জ্বল্যে; স্বনির্মিত একটি বিশেষ ও দৃষ্টিগ্রাহ্য অবস্থানে। কারণ, আল মাহমুদের কবিতা ও সাহিত্যকর্মে যে সমাজ ও মানুষগুলো উঁকি মারে, তা একান্তভাবেই বাংলার নিজস্ব প্রাণের প্রকাশ। বাংলার নিজস্ব প্রাণের প্রকাশের মাধ্যমে আল মাহমুদ যে সাহিত্যজগত সৃজন করেছেন; যে ভাবসম্পদ গড়ে তুলেছেন; তা আবশ্যিকভাবেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম অর্জনসমূহের অন্যতম। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিজের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থাকার দায়বদ্ধতায় আল মাহমুদের এমন স্বর্ণালী সাফল্যকে স্বীকার না করে কীভাবে পারবে?

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।