সংবাদ শিরোনামঃ

জনসমর্থন বাড়ছে জামায়াতের ** প্রধান বিচারপতির অভিসংশনের আবেদন : শিক্ষিত সমাজ স্তম্ভিত ** অধ্যাপক মুজিব ও গোলাম পরওয়ারকে কারাগারে প্রেরণ ** শরণার্থী ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ ইউরোপ ** ভুল পথে সরকার অতিষ্ঠ জনগণ ** অশান্ত ইয়েমেন ** ভারত থেকে গরু আসছে ** আমরা সবাই এই দেশের শরণার্থী ** কুরবানির চিরাচরিত ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে ** একদলীয় শাসনে হাঁসফাঁস ** নবমূল্যায়নে নজরুল ** কুষ্টিয়ায় পর্যটন আকর্ষণে সরকারি উদ্যোগ নেই ** মঙ্গাপীড়িত রংপুর বিভাগে ঈদের চাঁদ হাসবে কি ** বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাট ও পাটজাত দ্রব্য রফতানি বন্ধ **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ আশ্বিন ১৪২২, ৩ জিলহজ ১৪৩৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মনসুর আহমদ
ঈদুল আজহার প্রধান আকর্ষণ কুরবানি। এ দিনে গোটা বিশ্বের মুসলমানেরা হজরত ইবরাহীম (আ.)’র আদর্শে আল্লাহর রাহে গরু, ছাগল, উট, দুম্বা ও মহিষ কুরবানি দিয়ে থাকে। একজন মুমিন “ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়ায়ি ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামীন” ঘোষণা দিয়ে তার জীবনের সব কিছু আল্লাহর রাহে কুরবানি করার ওয়াদা করেন পশু কুরবানির মধ্য দিয়ে। সে কারণে ঈদুল আজহার বৈশিষ্ট্য ঈদুল ফিতর থেকে কিছুটা ভিন্নতর।

ঈদ আমাদের জীবনে শুধুমাত্র আনন্দ নিয়ে আসে না। ঈদ এলে আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনে মধুর রসের এক স্রোত বয়ে যায়। সেই স্রোতে সিক্ত হয়ে সংস্কৃতি কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের সৃষ্টিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাদের অধিকাংশের সৃষ্টিতে মুসলমানদের জাতীয় আদর্শে রূপ প্রকাশিত না হয়ে তরল আনন্দ ও আর্থিক লাভ লোকসান বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। এ েেত্র জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ব্যতিক্রম । তিনি ঈদকে ঘিরে তার সৃষ্টিতে ইসলামী চিন্তা চেতনা জাগিয়ে তোলার স্বপ্ন এঁকেছেন। তিনি রচনা করেছেন বিভিন্ন গান ঈদকে ঘিরে। যেমন -“নাই হলো মা জেওর লেবাস এই ঈদে আমার,” “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, ” “আজ ঈদ ঈদ খুশির ঈদ, এলো ঈদ,” “ঈদোজ্জোহার তকবীর শোন ঈদগাহে,” “শহীদানের ঈদ এল বকরীদ,” “ ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক,” “শহীদী ঈদ,” “ঈদ মোবারক হো গাজী,” “ঈদুল ফেতর,” “এলো আবার ঈদ ফিরে, এলো আবার ঈদ”। কবি রচনা করেছেন কৃষকের ঈদ, ঈদ মোবারক, বকরীদ প্রভৃতি কবিতা। এ সবের প্রত্যেকটিতে ফুটে উঠেছে কুরবানির প্রকৃত তাৎপর্য। ‘বকরীদ’ কবিতায় তিনি ঈদের মর্মবাণী ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে।

বিভিন্ন উম্মতের জীবন ধারা পেরিয়ে মুসলিম উম্মাহর বর্তমান কুরবানির মূল সম্পৃক্ত হলো হজরত ইবরাহীম ও হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর সাথে। হজরত ইবরাহীম (আ.)-এর বিভিন্ন পরীার মধ্যে আল্লাহর হুকুমের কাছে আত্মসমর্পণের স্বীকৃতি স্বরূপ নিজ পুত্রকে কুরবানির প্রস্তুতি ছিল সবচেয়ে কঠিন। কুরবানির সেই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন,

“ইবরাহীমের কাহিনী শুনেছ? ইসমাইলের ত্যাগ?

আল্লারে পাবে মনে কর কুরবানি দিয়ে গরু ছাগ?

আল্লার নামে ধর্মের নামে, মানব জাতির লাগি

পুত্রেরে কুরবানি দিতে পারে, আছে কেউ হেন ত্যাগী?

সেই মসুলিম থাকে যদি কেউ, তসলিম করি তারে,

ঈদগাহে গিয়া তারি সার্থক হয় ডাকা আল্লারে।

অন্তরে ভোগী বাইরে সে যোগী, মুসলমান সে নয়,

চোগা চাপকানে ঢাকা পড়িবে না সত্য সে পরিচয়!”

বিশ্বময় মুসলিম জাতির যে দুর্দশা তা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন হজরত ইবরাহীমের ন্যায় শক্তিশালী ইমামের। আজ বিশ্বময় মুসলমানদের নেতৃত্ব প্রদানকারী শক্তিশালী ইমামের আকাক্সায় ‘কৃষকের ঈদ’ কবিতায় তিনি লিখেছেনÑ

“কোথা সে শক্তি- সিদ্ধ ইমাম, প্রতি পদাঘাতে যার

আবেÑজমজম শক্তি উৎস বাহিরায় অনিবার?

আপনি শক্তি লভেনি যে জন , হায় সে শক্তিহীন

হয়েছে ইমাম , তাহারি খোৎবা শুনিতেছি নিশিদিন।

দীন কাঙ্গালের ঘরে ঘরে আজ দেবে যে নব তাগিদ

কোথা সে মহান শক্তি Ñসাধক আনিবে যে পুনঃ ঈদ।”

আজ যদি হজরত ইবরাহীম, ইসমাঈলের মতো কোনো যোগ্য ইমাম জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ না করে তবে কুরবানির ঈদ মুসলমানদের ঘরে আনন্দ বহাতে পারবে না। গোটা বিশ্বে সেই নীল, শাতিল আরব থেকে শুরু করে কাশগড়ের বেলাভূমি পর্যন্ত সমস্ত মুসলমান শত্র“র কৃপাণ তলে প্রাণ হারাচ্ছে। তাই তাদেরকে রার জন্য যদি ইবরাহীমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের প্রাণ, ঐশ্বর্য কুরবানি না করি তা হলে শুধু পশু কুরবানি দিয়ে আল্লাহর রেজামন্দী হাসিল করা যাবে না। সে দিকে ইঙ্গিত করে কবি লিখেছেন,   

“ওরে হত্যা নয় আজ সত্য-গ্রহ শক্তির উদ্বোধন!

চড়েছে খুন আজ খুনিয়ারার

মুসলিমে সারা দুনিয়াটার!

‘জুলফেকার’ খুলবে তার

দুধারী ধার শেরে খোদার রক্তে পূত বদন!

খুনে আজকে রুধবো মন !

ওরে শক্তি হস্তে মুক্তি, শক্তি রক্তে সুপ্ত শোন!

[কুরবানি]

কবি মুসলমানদের কুরবানি শিায় উজ্জীবিত হয়ে আল্লাহর রাহে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন,

“স্ত্রী পুত্রে আল্লারে সঁপি জেহাদে যে নির্ভীক

হেসে কুরবানি দিত প্রাণ হায় ! আজ তারা মাগে ভিখ্ !

কোথা সে শিা -আল্লাহ ছাড়া,

ত্রিভুবনে ভয় করিত না যা’রা

আজাদ করিতে এসেছিল যা’রা সাথে লয়ে কুরআন!”

কুরবানির ঈদ উৎসবকে দেখেছেন কবি শহীদানদের উৎসব রূপে। তাইতো তিনি গাইলেনÑ

“ ‘শহীদান’দের ঈদ এলো বকরীদ !

অন্তরে চির নৌ-জোয়ান যে, তারি তরে এই ঈদ .. ..

উমরে, খালেদে, মুসা ও তারেকে বকরীদে মনে করো ,

শুধু সালোয়ার পরিও না, ধরো হাতে তলোয়ার ধরে।”

কবি নজরুলের এই আহ্বান ধ্বনি ধ্বনিত হয়েছে কবি শাহাদৎ হোসেনের কণ্ঠে অভিন্ন সুরে। তিনি বলেছেন:

 ‘কই কোথা ‘ইব্রাহীম’, জেগে ওঠো এসেছে আহ্বান

অশ্র“হীন শুষ্ক আঁখি ‘হাজেরার’ জাগো মাতৃ প্রাণ

নিষ্করুণ অকম্পিত প্রাণে

আজি এই মীনার ময়দানে

ল কোটি ‘ইসমাঈল’ তরুণের তপ্ত তাজা প্রাণে

জাগায়ে তুলিতে হবে ঈদের বোধন।’

কুরবানির আসল তাৎপর্য তুলে ধরে ঈদের বোধন জাগাতে এক অভিভাষণে কবি বলেন,

“দু’দিন বাদে কুরবানির ঈদ আসছে। ঈদের নামাজ আমাদের শিখিয়েছে, সত্যিকার কুরবানি করলেই মিলবে নিত্যানন্দ। আমরা গরু-ছাগল কুরবানি করে খোদাকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছি। তাতে করে আমরা নিজদেরকেই ফাঁকি দিচ্ছি। আমাদের মনের ভিতরে যেসব পাপ অন্যায়, স্বার্থপরতা ও কুসংস্কারের গরু à¦›à¦¾à¦—à¦²Ñ à¦¯à¦¾ আমাদের সৎবৃত্তির ঘাস খেয়ে আমাদের মনকে মরুভূমি করে ফেলছে, আসলে কুরবানি করতে হবে সেই সব গরুÑছাগলের। হজরত ইব্রাহীম নিজের প্রাণ তুল্য পুত্রকে কুরবানি করেছিলেন ব’লেই তিনি নিত্যানন্দের অধিকারী হয়েছিলেন। আমরা তা করিনি ব’লেই আমরা কুরবানি শেষ ক’রেই চিড়িয়াখানা যাই তামাশা দেখতে। আমি বলি, ঈদ ক’রে যারা চিড়িয়াখানায় যায়, তা’রা চিড়িয়াখানায় থেকে যায় না কেন?

এমনি ত্যাগের ভিতর দিয়ে জনগণকে যারা আপন করে নিতে পারবে ত’ারাই হবে জনগণের নায়ক।”

 à¦¯à¦¾à¦°à¦¾ মানবতার কল্যাণের জন্য, নির্যাতিত জনতার মুক্তির জন্য নিজদের অর্থ সম্পদ কুরবানি করতে নারাজ তারা সওয়াব অর্জনের ল্েয যত বেশি পশু কুরবানি করুক , তা তাদের কাজে আসবে না। কারণ তাদের কুরবানি ভোগের, ত্যাগের নয়। কবি তাই বলেন,

“শক্তিমান পুরুষই কওমের, জাতির, দেশের, বিশ্বের ইমাম হন- অধিনায়ক হন। অনন্ত দিক যাকে ধরতে পারেনি, সেই পরম দিগম্বরের করুণা পাবে এই সব দিগি¦à¦¦à¦¿à¦• জ্ঞানশূন্য লোভীর দল? যে জাতির পবিত্র কুরআনের প্রথম শিা-“আল হামদুলিল্লাহে রাব্বিল আলামিন”- সমস্ত প্রশংসা মহিমা যশঃখ্যাতি আল্লাহর প্রাপ্য, আমার à¦¨à§ŸÑ à¦¸à§‡à¦‡ আয়াত দিনে শতবার উচ্চারণ ক’রেও যারা ভোগের পাঁকে পড়ে রইলেন কর্দম- বিলাসী মহিষের মত তারা আর যাই à¦¹à§‹à¦¨Ñ à¦†à¦²à§à¦²à¦¾à¦¹à¦° ও তাঁর রসুলের কৃপা পাননি।”

কুরবানিকে কেন্দ্র করে কবি যে সব বাণী উচ্চারণ করেছেন সংস্কৃতি জগতের আর দ্বিতীয় কোনো পুরুষ তা করেননি। এমন সেনানী যখন আহবান করেন, “কোথায় শম্শের, কোথায় সে বাজু, সেই দরাজ দস্ত? বাঁধো আমামা., দামামায় আঘাত হানো আর একবার তেমনি ক’রে। যে কওম যে জাতি চলেছে গোরস্তানের পথে, ফেরাও তাকে সেই পথে- যে পথে চলে তারা একদিন পারস্য সাম্রাজ্য রোম সাম্রাজ্য জয় করেছিল, আঁধার বিশ্বে তৌহিদের বাণী শুনিয়েছিল। তোমাদের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসুক তোমাদের à¦‡à¦®à¦¾à¦®Ñ à¦¦à¦¾à¦à§œà¦¾à¦“ তাঁর পতাকা তলে তহরীমা বেঁধে। বলো , আল্লাহু আকবার, হাকো হায়দরী হাক, সপ্ত আসমানে চাক্ হয়ে ঝরে পড়–ক খোদার রহমত, নবীর দোওয়া। চাঁদ সেতারা গলে’ পড়–ক কল্যাণের পাগলÑঝোরা।” তখন অন্যদেরকে কি তরল আনন্দ মদিরা রসে ডুবে থাকা শোভা পায়?

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।