সংবাদ শিরোনামঃ

মাওলানা নিজামীর শাহাদাত ** আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে ** সাঁথিয়ায় শহীদ মাওলানা নিজামীর জানাজায় লাখো জনতা ** শহীদ নিজামীকে কান্না দোয়া শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চির বিদায় জানালো সাঁথিয়াবাসী ** বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চতুর প্রয়াস ** ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত : মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই ** গণমাধ্যম বিকাশে ভূমিকা রাখবে প্রেস কাউন্সিল ** ধামা চাপা যেন না পড়ে ** কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান ** নারীর ক্ষমতায়ন ** আমি খুনি নই ** মুক্তিকামী জনতার নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ** বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সঙ্কটের অন্যতম কারণ ইউক্যালিপট্যাস গাছ? **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ বৈশাখ ১৪২৩, ৫ শাবান ১৪৩৭, ১৩ মে ২০১৬

মনসুর আহমদ
বঙ্গে ত্রয়োদশ শতকের শুরুতে বখতিয়ার খিলজীর নদীয়া বিজয়ের পর লখনৌতে প্রথম আনুষ্ঠানিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ বখতিয়ার খিলজী বুঝতে সম হয়েছিলেন যে, এদেশে মুসলিম শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য রাজনীতিক শক্তি ও প্রতিপত্তির সাথে সাথে সাংস্কৃতিক পরিপুষ্টি ও প্রতিরার প্রয়োজন। তাই তিনি মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবন লালন ও পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্থানে মসজিদ, মাদরাসাহ ও খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। তাকে অনুসরণ করে তাঁর ওমরাহগণও দেশের সর্বত্র এ সব জনহিতকর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

 à¦¬à¦–তিয়ার খিলজী প্রথমে যে মুসলমান সমাজ গঠন করেছিলেন তাতে এ দেশীয় নও মুসলিমদের পাশাপাশি ছিল তুর্কিস্তান, ইরান ও আফগানিস্তান থেকে আগত বাসিন্দাগণ। এদের সমন্বয়ে প্রথম মুসলিম সমাজ গঠিত হয়োছিল। মসজিদ ছিল সমাজের কেন্দ্রবিন্দু।

 à¦¤à§à¦°à§Ÿà§‹à¦¦à¦¶ শতকের লখনৌতে মুসলিম শাসন কর্তাগণের সাথে দিল্লি, বাগদাদ, মক্কা মদীনাসহ মধ্য এশিয়ার মুসলিম অধ্যুষিত শহর ও এলাকার যোগাযোগ ছিল। এর ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে মুসলিম সমাজের সুষ্ঠু পরিগঠন সম্ভবপর হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রটির আদর্শ, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য ও প্রাণশক্তির ছিল নিজস্ব দুর্বলতা। অন্যদিকে ছিল মুসলিম সমাজের নবাগত স্থানীয় সদস্যদের আকিদা - বিশ্বাস, চিন্তা-ভাবনা ও চরিত্র গঠনের সতর্কতার অভাব। প্রথমদিকে আগত তুর্কি আফগান, পাঠান, ইরানী মুসলমানগণ ইসলামী শিক্ষা দীক্ষায় যথেষ্ট উন্নত ছিল না। অন্যদিকে নতুন মুসলমান যারা হচ্ছিল তারা সবাই স্থানীয়। তাদের কিছু অংশ ছিল পৌত্তলিক হিন্দু সমাজের অন্তর্গত। ফলে আগত নও মুসলমানদেরকে নিয়ে গঠিত সমাজে ইসলাম এদেশেরই একটি ধর্মে পরিণত হয় এবং মুসলমান সমাজ এ দেশের একটি স্থায়ী ও স্থিতিশীল সমাজে পরিণত হয়, এবং ঘটে সাংস্কৃতিক বিপর্যয়।

এই সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের মূলে ছিল তিনটি মৌলিক কারণ।

প্রথমটি হচ্ছে -হিন্দু জাতি ও হিন্দু ধর্মের প্রকৃতি, সূফীবাদের গঠনাকৃতি এবং তৃতীয়টি হলো মোগল শাসকদের কার্যকলাপ।

ইসলামের আগমনকালে হিন্দু পৌত্তলিক ধর্ম ও সংস্কৃতি ছিল ভারতবর্ষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়। ইসলামের আগমনের পর এ হিন্দু ধর্মের সাথে তার প্রত্য সংগ্রাম বাধে। ইসলাম তার বিপরীতে যথার্থ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারেনি। ফলে পৌত্তলিকবাদী দর্শন ও সাংস্কৃতিক বেড়াজালে মুসলিম সমাজ আটকে পড়ে। বাংলার মুসলমান বিপথগামী হলো। প্রতিবেশী হিন্দুর প্রভাবে ও অনুকরণে বহু কুসংস্কার ও শরিয়ত বিরোধী প্রথার তারা অনুসারী হয়ে পড়ল।

বহু হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান প্রচ্ছন্নভাবে মুসলমানদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং কালক্রমে তাদের ধর্মের অঙ্গীভূত হয়ে ওঠে। অনেক নও মুসলিম দুর্বলতা ও অশিক্ষার করণে পূর্বের দেবদেবীর পূজায় ও কুসংস্কার পালনে অভ্যস্ত থাকে ; আবার অনেকে সুবিধা মতো সেগুলোকে ইসলামী জেওর পরিয়ে ধর্মীয় মর্যাদায় উন্নীত করতে থাকে। মা- বরকত, ওলা বিবি, শীতলা বিবির পূজা দেয়া, শিন্নি দেয়া (হরি লুটের মতো) তবররুক (প্রসাদ) বিতরণ করা মুসলমান সমাজে প্রচলিত হয়ে যায়। কুরআনের আয়াত লিখিত বা কিংবা হিন্দু ধর্মের মন্ত্র লিখিত তাবিজ কবচ পরার প্রথা, কলেরা বসন্ত মহামারীর সময় হিন্দুর অনুকরণে মাটির পাত্রে এসব আয়াত বা মন্ত্র লিখে বাড়ির দরজায় টাঙ্গান, তেল পড়া, নুন পড়া, পানি পড়া, কালোজিরা পড়া প্রভৃতি খাওয়ার রেওয়াজ মুসলমানদের মধ্যে বেশ চালু হয়ে পড়ে।

ইসলামের উপরে হিন্দুধর্মের এই প্রভাব ল্য করে এক জন ইংরেজ লেখক বলেছেন: “যদিও হিন্দুরধর্ম বিশ্বাসের অঙ্গে মুসলমানের ধর্ম বিশ্বাসে তফাৎটা দিন থেকে রাত্রির পার্থক্যের মতো ,তবুও হিন্দু ধর্ম অন্য যে ধর্মের সংস্পর্শে এসেছে , সেটিকে আশ্চর্য ভাবে নিজের রঙে রাঙিয়ে তুলেছে। ... এ রকম অবস্থা ভারতে বহু েেত্রই দেখা গিয়েছিল এবং ইসলামের পরিচ্ছন্ন সহজ সরল ধর্মবিশ্বাসে বহু শতাব্দীর হিন্দু প্রভাবে মালিন্য জন্মে ছিল। (মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ।)

এ কথা ঠিক যে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের সাথে সূফী ও আলেমগণের নাম অঙ্গাঙ্গী বিজড়িত। আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে সূফী ও আলেমগণ বাংলায় আগমন করেন। বাংলায় ইসলাম প্রচারের ইতিহাসে তাঁদের অবদান অপরিসীম।

যে সূফীসাধকগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন, পরবর্তীতে এই সূফী সাধকদের নামে কিছু ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রভাবিত মহাযানী বৌদ্ধ সম্রাট কণিষ্কের আমলে আফগানিস্তান, সমরকন্দ, বোখারা ও বলখ প্রভৃতি এলাকায় বৌদ্ধ ধর্ম বিস্তার লাভ করেছিল। এজন্য মুসলিম সূফীদের একটি অংশ ওসব এলাকার বৌদ্ধ ভিু ও ইরানের জরথ্রুষ্টবাদী যোগী সন্ন্যাসীদের সাধন পদ্ধতি দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়ে পড়ে।

ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যায়  ১২ শত খ্রিষ্টাব্দের দিকে সুলতান আলী মর্দান খিলজীর সময় কাজী রুকনুদ্দীন সমরকন্দী বাংলাদেশে আগমন করেন। তাঁর সংস্পর্শে আসে ভোজর ব্রাহ্মণ । তিনি ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। ভোজর ব্রাহ্মণ কাজী রুকনুদ্দীনকে অমৃতকু নামে এক খানা সংস্কৃতি গ্রন্থ উপহার দেন। কাজীসাহেব আরবী ও ফার্সী ভাষায় তার অনুবাদ করেন। অমৃতকু ছিল গুরু গোরনাথের অনুসারীদের ধর্মীয় গ্রন্থ। এ গ্রন্থে যোগ চর্চা ও রিপু দমনের উপায় বর্ণিত হয়েছে এবং জীবন মরণের বিভিন্ন রূপ এবং সৃষ্টি জ্ঞান সংক্রান্ত দর্শন শাস্ত্র আলোচিত হয়েছে। এই অমৃতকু সূফী সমাজে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং ত্রয়োদশ শতকের পর সূফীদের চিন্তা ও সাধনা পদ্ধতিতে ভারতীয় দর্শন প্রবলভাবে অনুপ্রবেশ করে।  

এ ভাবে দেখা যায় সূফীদের মধ্যে একটি দল সৃষ্টি হয় যারা শরিয়তের বাইরের কোন পদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারে কোন ইতঃস্ততা করেননি। বাংলাদেশের সূফীদের এই দ্বিতীয় দলটির সংখ্যাই অধিক এবং এর আধিক্য মুসলিম সংস্কৃতির বিপর্যয়ে বিরাটভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।

বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের বিপর্যয়ের মূলে তৃতীয় যে শক্তি কাজ করেছে, সেটি হলো তুর্কি ও মুঘল শাসকদের কার্যকলাপ। ইসলামের মধ্যে তুর্কিদের আগমন ঘটেছে অনেক পরে, যে কারণে তারা রাজতন্ত্রে যেমন পরিপক্কতা অর্জন করেছিলেন ইসলামে তেমনটি ছিল না। মুঘল শাসকদের েেত্র এ কথাটিতো আরো ভয়ানক সত্য। মোঘল আমলের শুরুতেই ইসলাম সম্পর্কে মুসলমানদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা চলে। মোঘল সম্রাট আকবরের আমলেই বাংলাদেশ মোঘল শাসনাধীনে আসে। মুঘল শাসনের সাথে সাথে আকবরের বিভ্রান্ত চিন্তা বাংলায় পৌঁছে যায়। সম্রাট আকবর দ্বীনে ইলাহী প্রচার করার সাথে সাথে হিন্দুদের বন্ধুত্ব অর্জনের ল্েয নিজে কপালে চন্দন টিপ ও গলায় রুদ্রারে মালা পরতে লাগল। হিন্দুরা দেশে মূর্তিপূজার অবাধ অধিকার লাভ করল। অন্য দিকে মুসলমানরা বহুধর্মীয় সুযোগ সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো। বাদশাহের হেরেমে নিয়মিত অগ্নিপূজা ও মূর্তিপূজা চলতে লাগল। বাদশাহ নিজে হিন্দু ললনার পানি গ্রহণ করলেন।

“শুধু তাই নয়, আকবরের এই নীতি “স্বাধীন মুসলিম বাংলার গোড়া হইতেই সুলতানদের বাঙালি রমনী বিবাহের সূত্র ধরিয়া বাংলা ভাষা মুসলিম রাজ অন্তপুরে প্রবেশ করিতে থাকে। তাহার উপরে গৌড়ের হেরেমে বাঙালি পরিচালিকা নিযুক্তিতেও এই ভাষা বাদশাহদের (সুলতানাতের) পরিবারে ধীরে ধীরে ছড়াইয়া পড়িতেছিল।” শুধু ভাষাই নয়, ভাষার পাশাপাশি হিন্দু সংস্কৃতি সুলতানদের পরিবারে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার সুলতান- সুবেদারগণ ইসলামী সংস্কৃতি রণে আগ্রহী ছিলেন না। মুঘল সুবেদারদের মধ্যে একমাত্র শায়েস্তা খান ইসলাম প্রচারের ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। পরবর্তীতে একমাত্র মুর্শিদকুলী খা নকে দেখা যায় ইসলাম প্রচার , ইসলামী বিধি বিধান কঠোরভাবে পালনে তৎপর। নওয়াব মুর্শিদ কুলী খানের মৃত্যুর পর থেকে ইংজেদের হাতে মীর কাশিমের পরাজয় পর্যন্ত দীর্ঘ ৩৮ বছর মুসলমান শাসকগণ এমন কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সম হয়নি যা অন্য জাতির নিকট আদর্শ বলে গৃহীত হতে পারে। ফলে মুসলিম সংস্কৃাত বিরাট হুমকির মুখে পতিত হয়। যে হুমকির মুখ থেকে আজও বাংলা দেশে মুসলিম সংস্কৃতি রা পায়নি। মুসলিম সংস্কৃতি বিপর্যয়ের এসব মৌলিক কারণের সাথে যোগ হয়েছে বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির ভয়াবহ দাবানল। এসব কিছুর প্রতি সুনজর দিয়ে জাতিকে সামনে চালায়ে নিতে তৌহিদী জনতার বিশেষ করে দেশের শাসককুলের অতি সাবধান ও যতœà¦¬à¦¾à¦¨ হওয়া প্রয়োজন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।