সংবাদ শিরোনামঃ

মাওলানা নিজামীর শাহাদাত ** আমার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে ** সাঁথিয়ায় শহীদ মাওলানা নিজামীর জানাজায় লাখো জনতা ** শহীদ নিজামীকে কান্না দোয়া শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চির বিদায় জানালো সাঁথিয়াবাসী ** বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চতুর প্রয়াস ** ইতিহাসে বিরল দৃষ্টান্ত : মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই ** গণমাধ্যম বিকাশে ভূমিকা রাখবে প্রেস কাউন্সিল ** ধামা চাপা যেন না পড়ে ** কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান ** নারীর ক্ষমতায়ন ** আমি খুনি নই ** মুক্তিকামী জনতার নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ** বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সঙ্কটের অন্যতম কারণ ইউক্যালিপট্যাস গাছ? **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩০ বৈশাখ ১৪২৩, ৫ শাবান ১৪৩৭, ১৩ মে ২০১৬

এডভোকেট সাবিকুন্নাহার মুন্নি
“পৃথিবী জুড়ে আজ কত অসহায়

মজলুম শোন ঐ কাঁদে

শোষণ নিপীড়ন বঞ্চনা যে,

মানুষের মতবাদে।

মজলুম শোন ঐ কাঁদে ॥”

বর্তমান বিশ্বে  Human Rights শব্দটি বহুল আলোচিত ও বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। মানবাধিকারের বিষয়টি স্বতঃসিদ্ধ ও অলঙ্ঘনীয় হলেও সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই এ নিয়ে চলছে বাক-বিতণ্ডা ও দ্বন্দ¡-সঙ্ঘাত। একদিকে মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে মতাধর শাসকরা দেশে দেশে জনগণের স্বীকৃত অধিকারগুলো পর্যন্ত অবলীলায় হরণ ও দমন করে চলছে। আর দুর্বল জাতিগুলোর সাথে সবল জাতিগুলোর আচরণ আজকাল মানবাধিকারকে একটি উপহাসের বস্তুতে পরিণত করেছে। পরিতাপের বিষয় হলো সবচেয়ে প্রভাবশালী বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘও মানবাধিকার সংক্রান্ত এ জটিলতার কোন নিরসন করতে পারেনি। জাতিসংঘ সনদে যে গুটিকয়েক বিষয়কে মানবাধিকার রূপে চিহ্নিত করা হয়েছে, বাস্তবে তাও মানতে অস্বীকার করছে ঐ সনদেই স্বারকারী সদস্য দেশসমূহ। তাদের হাতেই মানবতা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত, উপেতি, লাঞ্ছিত।

সম্প্রতি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ'র বর্বর পাশবিক বন্দী নির্যাতনের খবর তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। পাকিস্তানে নিযুক্ত আফগানিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুস সালাম যাইফ মার্কিন কুখ্যাত বন্দীশালা গুয়ান্তানামোতে ৪ বছর আটক থাকাকালীন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- “আমি মনে করি না মানবাধিকারের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের কোন রকমের শ্রদ্ধা আছে। তারা নিজেদের স্বার্থেই কেবল নীতি কৌশল গ্রহণ করে”। তিনি আরো জানান আফগানিস্তানে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করে ব্যাগে ভরে গুয়ান্তানামো বন্দীশালায় নেয়া হয়। ফার্গুসনে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের গুলিতে নিরীহ, নির্দোষ কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর মাইকেল ব্রাউনের নিহত হওয়ার ঘটনার কোন শাস্তি হয়নি মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা ড্যারন উইলসনের। গত আগস্টে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর পাশবিক হামলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইসরাইলীরা। অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্রে সজ্জিত হয়েই এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয়।

মানবাধিকার সংরণের কথা যত জোরালোভাবেই উচ্চারিত হোক প্রকৃতপে কেউ মানবাধিকার রায় নিষ্কণ্টক ভূমিকা রাখতে পারেনি।

একমাত্র ইসলামই মানবাধিকারের সমস্ত প্রশ্নের সুষ্ঠু নিষ্পত্তি করেছে বহু বছর আগেই। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মানুষের অধিকার সংরণের েেত্র ষষ্ঠ ও সপ্তম শতকে ইসলাম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসলাম একদিকে যেমন মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও সীমারেখা নির্দেশ করেছে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে, অন্যদিকে তার নিখুঁত বাস্তবায়নের মাধ্যমে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছে এক অনন্য উদাহরণ।

বস্তুত ইসলামে মানবাধিকার যেমন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষের দয়া অনুগ্রহের বিষয় নয় বরং জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রতি মহান আল্লাহর এক পরম অনুগ্রহ বিশেষ। তেমনি এর বাস্তবায়নও কারো খেয়াল খুশি বা ইচ্ছা অনিচ্ছার ব্যাপার নয় বরং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আল্লাহ নির্দেশিত একটি পবিত্র কর্তব্য বিশেষ। শাসক শাসিত নির্বিশেষে প্রতিটি মুসলমানের জন্যেই এ কর্তব্যটি অবশ্যই পালনীয়, ইসলাম এ কর্তব্য থেকে কাউকে রেহাই দেয়নি।

মানবাধিকার বা Human rights

‘Oxford dictionary' অনুযায়ী মানবাধিকার শব্দটি Human এবং (Rights) এ দুটো শব্দের সমম্বিত রূপ। Human অর্থ হচ্ছে Showing the better quality of people.

আর জরমযঃ বা অধিকার হলো আইনের ভাষায় কিছু মানুষের কিছু সুবিধাজনক অবস্থা যা নৈতিক বা আইনগত নিয়ম-নীতি দ্বারা সংরতি হয়। যার সাথে অন্যের কর্তব্য জড়িত থাকে।

উপরোক্ত অধিকার ও আইনগত অধিকারসমূহ প্রকৃতপে মানুষেরই অধিকার।

আর Human rights একত্রে অর্থ হচ্ছে Basic rights, মত freedom, equality, Justice etc.

এ পৃথিবীতে মানুষ কতগুলো স্বতঃসিদ্ধ বা জন্মগত অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দেশ, কাল, বর্ণ, ভাষা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের েেত্রই সে অধিকারগুলো সমানভাবে প্রযোজ্য। আধুনিক ভাষায় সে অধিকারগুলোকেই একসাথে বলা হয় Human Rights বা মানবাধিকার। এটা এমনি এক অলঙ্ঘনীয় অধিকার যা হরণ করার বা দমন করার অধিকার পৃথিবীর কোন শক্তিরই নেই।

মানবাধিকার বিষয়ক ধারণা (Concept of Human Rights) মানব পরিবারের সকল সদস্যের জন্য সার্বজনীন, সহজাত, অহস্তান্তরযোগ্য এবং প্রশংসনীয় অধিকার হলো মানবাধিকার। এসব অধিকারের মধ্যে পড়ে মানুষের শারীরিক, নাগরিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি নানা ধরনের অধিকার।

যেমন, কথা বলার অধিকার, মুক্ত ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার, কাজ করার, মতামত ব্যক্ত করার, শিক্ষা ও নাগরিকত্ব পাবার অধিকার প্রভৃতি। এটি মানবাধিকারের সাধারণ সংজ্ঞা।

আইনগতভাবে বলা যায় দেশীয় বা আন্তর্জাতিক আইনে যেগুলো মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত সেগুলোই মানবাধিকার। মূলত ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণায়' (The Universal Declaration of Human Rights-UDHR) বর্ণিত অধিকারগুলো বর্তমান বিশ্বে ‘মানবাধিকার' হিসেবে পরিচিত।

৩০টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত এ ঘোষণায় ২৫টি ‘মানবাধিকার' স্বীকৃত হয়েছে যার মধ্যে ১৯টি নাগরিক ও রাজনৈতিক এবং বাকি ৬টি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক।

১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের যে ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয় তাতে বলা হয়Ñ

মানুষ হিসেবে মানুষের কতগুলো অধিকার রয়েছে। যে অধিকারসমূহের মর্যাদা রা করা সকলেরই কর্তব্য। আর সে অধিকারসমূহ হলোÑ

স্বাধীনতার অধিকার, সাম্য ও সমতার অধিকার এবং মালিকানার অধিকার।

সদস্য দেশসমূহের কোন দেশের প্রতিনিধিই এ পুরো ঘোষণা পত্রের কোন অংশের সাথে দ্বিমত পোষণ করেনি। কারণ এটি ছিল শুধু সাধারণ নীতিমালা, ঘোষণা ও প্রকাশ। এতে কারো উপর কোন প্রকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি। এতে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয় যে, এটা একটা মানদণ্ড যা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।

UDHR এর সীমাবদ্ধতা

পৃথিবীর বহু বুদ্ধিজীবী ও মনীষীরা ‘মানবাধিকার' ঘোষণাকে “বিংশ শতাব্দীর বিরাট চ্যালেঞ্জ বলে অভিহিত করলেও সার্বিক বিচারে এই ঘোষণা ত্র“টিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে নিম্নোক্ত কারণে-

এই ঘোষণার যে সার্বজনীন অধিকারগুলোর কথা বলা হয়েছে তা কেবল রাষ্ট্র ও সরকারের মাঝেই সীমাবদ্ধ।

১. এই ঘোষণায় মানুষ হিসেবে একজনের উপর অপর মানুষের যে অধিকার রয়েছে সে বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। কারণ মানুষের একজনের উপর অপর জনের যে অধিকার তা সরকারের উপর নাগরিকের অধিকারের তুলনায় অনেক গভীর ও ব্যাপক। যা জাতিসংঘের ঘোষিত মানবাধিকার ঘোষণায় নেই। বস্তুত মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপারটিই মানব জীবনের সারনির্যাস। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের অধিকার ও কর্তব্যের কথা ব্যাপকভাবে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেছেন।

২. জাতিসংঘের বিশ্ব মানবাধিকারের ঘোষণার ত্র“টি ও অসম্পূর্ণতার দ্বিতীয় দিকটি হচ্ছে তাতে শুধুমাত্র অধিকারের কথা বলা হয়েছে। অথচ কর্তব্য ও দায়িত্বের কথা বিন্দুমাত্রও বলা হয়নি। আর অধিকারের ব্যাপারটিকেও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে- স্বাধীনতা, শান্তি, নিরাপত্তা, সাম্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও ধর্ম à¦ªà¦¾à¦²à¦¨Ñ à¦®à¦¾à¦¤à§à¦° এই কয়টির মধ্যে।

৩. তৃতীয় বিষয়টি হলো এই ঘোষণাটির কার্যকরণ শক্তি (Enforcement Power) বলতে কিছুই নেই। ঘোষিত অধিকারসমূহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সমষ্টিকে পাইয়ে দেবার কোন অবলম্বন এখানে নেই। ঘোষিত অধিকারসমূহ নিতান্তই নীতিগত ব্যাপার। তা কার্যকর না হলে অপরাধীকে শাস্তিদানের কোন মতাই জাতিসংঘের হাতে নেই।

ইসলামে মানবাধিকার

মানুষ এমন এক জীব যার মৌলিক অধিকার সম্পর্কে স্বয়ং মানুষের মধ্যেই বারবার প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ ছাড়া বিশ্বের অন্যসব প্রাণীর অধিকার প্রকৃতিগতভাবেই নির্ধারিত আছে এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা তা লাভ করেছে।

এক মানুষ আরেক মানুষের সাথে যে আচরণ করে, কোন জীব-জন্তু তার নিজ প্রজাতির সাথে তা করে না। একমাত্র মানুষই আল্লাহর দেয়া হেদায়াত উপো করেছে। যখন থেকে সে স্বেচ্ছাচারিতার সাথে কাজ করতে শুরু করেছে, তখন থেকেই সে তার আপন প্রজাতির উপর জুলুম উৎপীড়ন শুরু করেছে।

একথা স্পষ্ট ভাষায়ই বলা যায়, সাম্য, স্বাধীনতা, সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা বিশ্ব মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু তা পরিকল্পিত নীতিমালার ভিত্তিতে ও শুধুমাত্র সেক্যুলার বৈষয়িক বস্তুগত দৃষ্টি ভঙ্গিতে কখনেই সম্ভব হবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র মানুষের অধিকারের কথা বললেই চলবে à¦¨à¦¾Ñ à¦¨à¦¿à¦›à¦• মানুষের অধিকারই পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার নয়। মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ব প্রকৃতির অধিকারের কথাও ভাবতে হবে। তাহলেই পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকারের কথা বলা হবে। তা না হলে মানবাধিকারের ধারণা হবে সঙ্কীর্ণ ও একপেশে। এ ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিকোণ অত্যন্ত ব্যাপক ও সূক্ষ্মদর্শী। ইসলামে মানবাধিকারের তুলনায় সৃষ্টির আর সকল প্রাণীর অধিকার কিছুমাত্র কম গুরুত্বের নয়।

এেেত্র মানুষের স্রষ্টা মহান আল্লাহই মানুষকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি নবী রাসূলদের মাধ্যমে মানুষকে মানবাধিকার সম্পর্কে অবগত করেছেন। প্রকৃতপে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালাই মানুষের অধিকারসমূহ নির্ধারণ করতে পারেন। তাই তিনিই বিস্তারিতভাবে মানবাধিকারসমূহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

মানুষের উপর সৃষ্টিকূলের অধিকার

সৃষ্টিকূলের মধ্যে নিকৃষ্ট জীব-জন্তুরও অধিকার ইসলামে গুরুত্ব সহকারে স্বীকৃত। জন্তু জানোয়ারের মাঝে যেগুলো মানুষের খাদ্য নয় সেগুলোও মানুষের কাছে দয়া ও অনুগ্রহ পাওয়ার অধিকারী। কারণ সেগুলোও কোন না কোনভাবে মানুষেরই কল্যাণ সাধনে নিয়োজিত।

রাসূল (সা.) à¦¬à¦²à§‡à¦›à§‡à¦¨Ñ “প্রত্যেক তাজা অন্তরধারীর েেত্রই কল্যাণের দিক রয়েছে।”

রাসূল করীম (সা.) বলেছেনÑ

“একটি মেয়েলোক একটি বিড়াল বেঁধে রেখেছিল, তাকে খাবার দেয়নি, পানিও খাওয়ায়নি আর ছেড়েও দেয়নি। ফলে বিড়ালটি মরে গেল। একটি জীবকে তা যতই নিকৃষ্ট হোক- কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার অপরাধে সে জাহান্নামে নিপ্তি হবে।”

অপরদিকে এক ব্যক্তি একটি পিপাসাকাতর কুকুরকে কূপ থেকে কষ্ট করে পানি উঠিয়ে পান করিয়েছিলেন বলে কুকুর প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল। রাসূল করীম (সা.) à¦¬à¦²à§‡à¦›à§‡à¦¨Ñ “এ লোকটি এ কাজের জন্যই বেহেশতে যাবে। আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন।”

রাসূলে করীম (সা.) একটি লোককে গরুর পিঠে সওয়ার হতে দেখে বললেনÑ

“গরু যানবাহন হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ও তার পিঠে সওয়ার হওয়ার জন্যে সৃষ্টি হয়নি। তা সৃষ্টি হয়েছে চাষের কাজে (লাঙ্গল বা মই বা গাড়ি টানার) ব্যবহৃত হওয়ার জন্য।”

ইসলামের দৃষ্টিতে যেসব জন্তুর গোশত খাওয়া হালাল তা জবেহ্ করার ব্যাপারে বিশেষ দয়া প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রথমত: তা জবেহ করা যাবে শুধু খাওয়ার জন্য। এছাড়া নিছক ক্রোধ, আক্রোশ বা মালিকের সাথে শত্র“তা করার মতলবে হত্যা করা কঠিন গুনাহর কাজ বলে ঘোষিত হয়েছে।

মানবাধিকারের প্রাথমিক ধারণা এসেছে ইসলাম থেকেই

সাধারণভাবে ধারণা করা হয় যে, মানবাধিকার সম্পর্কিত জ্ঞান হলো ইউরোপ-আমেরিকার দার্শনিক ও বিপ্লবীগণের চিন্তাধারা ও বিপ্লবের ফসল। কিন্তু প্রকৃতপে তাদের এসব প্রচেষ্টার ভিত্তিতে গৃহীত সাম্প্রতিককালের পদপেসমূহের অনেক পূর্বে সপ্তম শতাব্দীতে ইসলাম মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সম্পর্কিত এক ফলপ্রসূ দিক নির্দেশনা উপস্থাপন করেছে। এ ব্যাপারে প্রফেসর Briffault মন্তব্য করেছেন-

The ideals of freedom for all human beings of human brotherhood, of the equality of all men before the law, of democratic government by consultation and universal suffrage, the ideals that inspired the French Revolution and the Declaration of Rights that guided the farming of the American Constitution and inflamed the struggle for independence in the Latin American countries were not inventions of the west. They find their ultimate inspiration and source in the Holy Quran.

আজ থেকে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে মানবাধিকার বিষয়ে আল-কুরআন ও রাসুলের কণ্ঠে ঘোষিত ঘোষণা শুধুমাত্র কাগজে বা মৌখিক ঘোষণাই ছিল না বরং রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সারা জীবনব্যাপী কথা কাজ ও অনুমোদনের মাধ্যমে তা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে এর সুস্পষ্ট প্রমাণ রেখে গেছেন।

আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল নির্দেশিত মানবাধিকারের এ পরিকল্পনা শুধু অবাস্তব ও আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র নয়। বরং মানুষের মেজাজ-প্রকৃতি ও তার মানসিক ঝোঁক-প্রবণতার সাথে পুরো মাত্রায় সামঞ্জস্যশীল। যে অধিকার না হলে মানুষের ব্যক্তিজীবন সুষ্ঠুরূপে অতিবাহিত হতে পারে না, যার অনুপস্থিতিতে মানুষের সামাজিক-সামষ্টিক জীবন অসম্ভব হয়ে পড়ে, অবিচার, শোষণ ও ভারসাম্যহীনতার কারণে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং যেগুলো স্বীকৃত ও বাস্তবায়িত হলে সে বিপর্যয় ও অচলাবস্থা থেকে সম্পূর্ণরূপে রা পাওয়া সম্ভব সেগুলোকেই মানবাধিকারের বিষয় নির্দিষ্ট করা হয়েছে।

এগুলো অনেকে প্রাকৃতিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

“Rights thought to belong to the individual under natural law as a consequence of his being human” (প্রাকৃতিক আইনের আওতায় প্রাপ্য মানুষের অধিকার)।

জাতিসংঘের ঘোষণায় মানুষই সর্বেসর্বা- আর এ মানুষগুলোর

আছে বিশেষ নৈতিক বিশ্বাসগত ও সাংস্কৃতিক পটভূমি যা দ্বারা সে চালিত হয়।

ইসলাম মানব প্রকৃতির এ দুর্বলতাকে অস্বীকার করেনি এবং অসম্ভব বলেও মনে করেনি। তাই ইসলাম আদর্শ ও নীতি হুবহু তাকে যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ তাগিদ দিয়েছে। এ পর্যায়ে কুরআনের বলিষ্ঠ বক্তব্য হচ্ছে- “লিমা তাকুলুনা মা-লা তাফআলুন”

“তোমরা কার্যত যা কর না তা মুখে কেন বল?”

“যা তোমরা কার্যত কর না, মুখে বল কিংবা করছি বলে মিথ্যা দাবি কর আল্লাহর নিকট তা ক্রোধ উদ্রেককারী গুনাহ।”

ইসলাম প্রদত্ত বিভিন্ন মানবাধিকার

১. আইনের দৃষ্টিতে সমতা  (Equality before law)

ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে সকল মানুষ সমান মর্যাদাসম্পন্ন। চাই সে পুরুষ কিংবা নারী হোক। পৃথিবীর সকল মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। সূরা হুজুরাতের ১৩নং আয়াতে মহান আল্লাহ à¦¬à¦²à§‡à¦¨Ñ “হে মানব জাতি, আমি তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠী ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যাতে করে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। তবে তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশি আল্লাহ ভীরু সেই সর্বাপো মর্যাদাবান।”

এ আয়াতে প্রথম যে কথাটি বলা হয়েছে তা হলো সমস্ত মানুষের জন্ম ও উৎস এক। সুতরাং বংশ, গোত্র ও বর্ণের ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করার কোন সুযোগ নেই।

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সর্বপ্রথম অনুচ্ছেদে একই কথা বলা হয়েছে- সকল মানুষের উচিৎ একে অন্যের সাথে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করা।

২. জীবনের মর্যাদা বা বেঁচে থাকার অধিকার  (Rights of Life and Prestige)

ইসলামে মানুষের জীবনকে অত্যাধিক মূল্য দেয়া হয়েছে। সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে- “একজন মানুষ যদি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে তাহলে সে যেন গোটা মানবতাকে হত্যা করলো।” শরীয়তে শুধুমাত্র বিচারকদের রায়ের মাধ্যমে কারো জীবন সংহার স্বীকৃত। সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৩নং অনুচ্ছেদে ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তার বিধান আছে।

৩. ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার (Rights of Personal Liberty)

ইসলামের একটি মৌলিক নীতি হলো অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তির স্বাধীনতা ুণœ করা যাবে না। ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়ে ইসলামী বিধান হলো- আইনের সুস্পষ্ট বিধান ছাড়া কাউকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার আটক বা বলপ্রয়োগ করা যাবে না। ইমাম মালিক লিখেছেন- In Islam no man may be imprisoned without justice। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার বা দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপ সমর্থনের সুযোগ থাকবে। এটি আধুনিক আইনের Principal of natural Justice এর অন্যতম উপাদান। পবিত্র কুরআনে সূরা বনি ইসরাইলের ১৫নং আয়াতে বলা হয়েছেÑ

“কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না”। ইসলামের এ নীতির ফলে ইনসাফের এমন একটি ধারণা পাওয়া যায় যাকে আইনের আধুনিক পরিভাষায় নিয়মতান্ত্রিক ও আইনানুগ পদপে (Judicial Process of Law) বলা হয়।

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকার নিয়ে সকল মানুষ জন্মগ্রহণ করে।

৪. অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার (Rights of Economic Security)

সম্পদ ভোগের ব্যাপারে সূরা বাকারার ১৮৮নং আয়াতে মহান আল্লাহ à¦¬à¦²à§‡à¦¨Ñ “হে বিশ্ববাসীগণ তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।” UDHR এর ১৭নং অনুচ্ছেদে এ সম্পত্তি অর্জন ধারণ ও হস্তান্তরের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। স্পষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে ইসলাম সম্পদ লাভের যেসব নিয়ম-নীতি ও পন্থা পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে তা ভঙ্গ করে কারো ব্যক্তিমালিকানার উপর হস্তপে করার অধিকার কোন ব্যক্তি বা সরকারের নেই।

৫. সংখ্যালঘুদের অধিকার (Rights of Minorities)  

ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান ইসলামে করা হয়েছে। সকলের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য, আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য। (সূরা কাফিরুন : ৬)

সূরা বাকারার ২৫৬নং আয়াতে বলা হয়েছে, “ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর-জবরদস্তি নেই”। মুসলমানরা কখনো তাদের দেশের অমুসলিম নাগরিকদের ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছে অথবা অত্যাচার করেছে ইসলামের ইতিহাসে এর সামান্যতম প্রমাণ পাওয়া যাবে না।

UDHR এর ১৮নং অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়েছে।

৬. গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা (Democratic Freedom)

ইসলামী রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের এবং বক্তব্য প্রকাশের (ঋৎববফড়স ড়ভ বীঢ়ৎবংংরড়হ) স্বাধীনতা রয়েছে। তবে “আল্লাহ তায়ালা কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।” (সূরা মায়েদা : ১৮৪)

এভাবে যুক্তিসঙ্গত বিধি নিষেধ সাপেে বক্তব্য প্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ইসলাম স্বীকার করে নিয়েছে।

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণায় ১৮নং অনুচ্ছেদে চিন্তা, বিবেক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ১৯নং অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেছে।

উপর্যুক্ত মৌলিক অধিকারগুলো ছাড়াও ইসলাম ব্যক্তি বা সমাজ জীবনের আরও যেসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অধিকারগুলো নিশ্চিত করার তাকিদ দিয়েছে সংেেপ সেগুলো হচ্ছেÑ

অম ও দুর্বলদের নিরাপত্তা লাভের অধিকার।

মহিলাদের মান-সম্ভ্রমের নিরাপত্তা লাভের অধিকার।

অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা লাভের অধিকার।

ন্যায় আচরণ লাভের অধিকার।

ভালো কাজে সহযোগিতা ও মন্দ কাজে অসহযোগিতার অধিকার।

জালিমের আনুগত্য অস্বীকার করার অধিকার।

রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অধিকার।

ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তার নিরাপত্তা লাভের অধিকার।

জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার।

সন্দেহের স্বীকার থেকে মুক্ত থাকার অধিকার।

বস্তুত: পনের শত বছর পূর্বে মহানবী (সা.) বিদায় হজে মানবাধিকারের যে ঘোষণা দিয়ে গেছেন আজকের মানবাধিকার ঘোষণা (UDHR) তারই Reannounce ছাড়া আর কিছুই নয়। আল কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে ইসলাম যেসব মানবাধিকার মানুষের জন্য নিশ্চিত করেছে সেগুলো সার্বজনীন শ্বাশত এবং চিরন্তন। যা সর্বাবস্থায় বন্ধু ও শত্র“ সবাইকেই এ অধিকার দিতে বাধ্য থাকবে। এ সমস্ত অধিকারগুলোর ঘোষণা দিয়েই ইসলাম ক্ষান্ত হয়নি বরং বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট দুটো পথও দেখিয়ে দিয়েছে।

১. রাষ্ট্রীয় আদালতে মামলা,

২. পরকালে অপরাধীর শাস্তি বিধান।

মানবাধিকার বাস্তবায়নে এ ধরনের চমৎকার ভূমিকায় মুগ্ধ হয়ে পাশ্চাত্য  গবেষক ও লেখক Bosworth Smith তার Mohammed and Mohammandanism গ্রন্থে বলেন- ইসলাম আগমনের সাথে সাথে পূর্বের সমাজে প্রতিষ্ঠিত সমস্ত অন্যায় ও অমানবিকতার মূলোৎপাটন যেমন হয়েছে তেমনি প্রতিটি মানুষের কলুষিত অন্তরকে ধুয়ে মুছে সাফ করে বিশুদ্ধতার ও মানবিকতার এক মহান আসনে আসীন করেছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি : মানবাধিকার পরিস্থিতির বর্তমানে চরম অবনতি হয়েছে বাংলাদেশে। মানবাধিকার শব্দটি শুধুই যেন আজ অভিধানেরই ভাষা। বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই। সাধারণ মানুষের উপর আজ যে অত্যাচার চলছে তা যেন মানবাধিকারের ন্যূনতম বিধি বিধানের ধারে কাছেও ঘেঁষছে না। তারা মানুষকে মারবে, কাটবে, আর প্রতিকার তো দূরের কথা সামান্য টুঁ শব্দটিও যেন কেউ করতে পারবে না। এমন একটি অন্ধকার সমাজে আমাদের বসবাস।

বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে এক মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী রাষ্ট্রে। এ সরকারের আমলে যতগুলো মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশে কেউ আজ নিরাপদ নয়। যারাই যখন এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন তাদেরকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সরকার বিরোধীদের দমনের ল্েয বাংলাদেশের মতাধর জনগোষ্ঠীর প্রায় প্রতিদিনই মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে ছাত্র-শিক, শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বসহ ধর্মপ্রাণ ছাত্রী ও নারীদের পর্যন্ত প্রকাশ্যে নির্যাতন করা হচ্ছে।

সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করেন। অথচ সংবিধানে বর্ণিত ও সংবিধান স্বীকৃত মানুষের কোন অধিকারকে তারা তোয়াক্কা করছেন না। সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সংবিধান বিরোধী কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না। সংেেপ কয়েকটি চিত্র তুলে ধরা à¦¹à¦²à§‹Ñ à¦¸à¦°à¦•à¦¾à¦°à§‡à¦° প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা লাভ তার সবচাইতে বড় অধিকার। কিন্তু বাংলদেশে এই অধিকারের কোন নিরাপত্তা নেই। বাসা থেকে ধরে নিয়ে গুম করা হচ্ছে, রাস্তা দিয়ে চলার সময় প্রতিপকে ধরে নিয়ে গুম করে দেয়া হচ্ছে, রাজনৈতিক দমন পীড়নের উদ্দেশ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে ক্রসফায়ারে নিহত হওয়ার খবর। স্বয়ং রাষ্ট্র মানুষের প্রাণসংহারে নিয়োজিত।

নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের ঘটনা সারা বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। কেউ খুন হলে তার প্রতিকারও হচ্ছে না। সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাে র কোন প্রতিকার আজও হয়নি।

বর্তমান সরকার নারী অধিকারের কথা ব্যাপকভাবে উচ্চারণ করে। অথচ নারীরাও এেেত্র নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে জাতীয় প্রেস কাবে আয়োজিত এক সভা থেকে সরকার নারী ও ছাত্রীদেরকে গ্রেফতার করে। মগবাজারের একটি বাসা থেকে ছাত্রীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসলামী বইপুস্তক রাখার অপরাধে জঙ্গি তৎপরতার সাথে তারা সম্পৃক্ত এই অজুহাত দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গর্ভবতী ছাত্রীও ছিল। ৫৪নং ধারায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং রিমান্ডের দাবি জানানো হয়। অত্যন্ত বিস্ময়ের বিষয় ৬ মাসের অন্তঃসত্তা একজন ছাত্রীকে আদালতে লিফট ব্যবহার করার সুযোগ না দিয়ে পুলিশ টেনে হিঁচড়ে তাকে আট তলায় উঠতে বাধ্য করে। জামিনযোগ্য ৫৪নং ধারায়ও এসব ছাত্রী ও নারীদেরকে পাঠানো হয় জেলহাজতে। সরকারের এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়।

খিলগাঁয়ের একটি বাসায় অনুষ্ঠিত সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে ছাত্রীদেরকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়।

কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজী, পর্দা করা ও ইসলামী বই পুস্তক রাখার অপরাধে নির্যাতন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বহিষ্কারের ঘটনা ঘটছে। প্রতিনিয়ত প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্য মানুষের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীরা যেভাবে তৎপর বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা এেেত্র নীরব। ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড যেভাবে নাড়া দিয়েছে, প্রতিনিয়ত এ ধরণের বহু ঘটনা সঙ্ঘটিত হচ্ছে। অথচ মিডিয়ায় তা স্থান পাচ্ছে না।

প্রখ্যাত সাংবাদিক কারানির্যাতিত মাহমুদুর রহমানের ভাষায় বলতে হয়, ‘মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই'। তাই তো প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে গণতন্ত্রের ধব্জাধারী শান্তির জন্য নোবেল বিজয়ী অং সাং সুচি পর্যন্ত সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে সরকারের সাথে একাট্টা। বৌদ্ধ ধর্মে ‘প্রাণী হত্যা মহাপাপ', অথচ তারই অনুসারীরা মুসলমানদের প্রাণের ন্যূনতম মর্যাদা দিতেও নারাজ। এভাবেই দেশে দেশে আজ মানবতা নির্মম রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রতিহিংসার শিকার। পাশ্চাত্য সভ্যতার এসমস্ত কাগুজে বুলি প্রতারিত করছে অসংখ্য অগণিত নিরীহ, নির্যাতিত মানুষকে। আজ কাঁদছে মানবতা, কাঁদছে দেশÑ

“দেখ মানবতা করে হাহাকার

মানবতা করে হাহাকার!”

লেখিকা : প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভানেত্রী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রীসংস্থা।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।