সংবাদ শিরোনামঃ

সাঁড়াশি অভিযানের আড়ালে প্রতিপক্ষ দলন ** ঈদের পরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ২০ দল ** বাজেট বৈষম্যমূলক-অসহনীয়, ব্যবসাবান্ধব নয় ** সিয়ামের প্রকৃত শিক্ষাকে ধারণ ও বাস্তব জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** বিরোধী রাজনীতিকদের চাপে রাখার কৌশল ** নিরপরাধ নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে নির্মম তামাশা মেনে নেয়া যায় না : ছাত্রশিবির ** দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম-গঞ্জে ** নেপথ্য খলনায়কদের আড়াল করতেই ক্রসফায়ার! ** সমাজে বিভক্তির কারণেই মৃত্যুর পরেও সম্মান পাননি মনিরুজ্জামান মিঞা : ড. এমাজউদ্দিন ** ‘অভিযান ছিল লোক দেখানো, বাণিজ্য হয়েছে পুলিশের’ ** ক্রসফায়ার : একটি ধারাবাহিক গল্প ** ক্রসফায়ার নয়, আদালতের মাধ্যমেই দোষীদের শাস্তি দিতে হবে ** টাকার ‘সাগর’ এবং অর্থমন্ত্রী ** রোজার তাৎপর্য ** একটি পারিবারিক বৈঠকের কিছু কথা ** ঈদকে ঘিরে ব্যস্ত কুষ্টিয়ার বুটিকস কারিগররা ** ‘বিশেষ’ অভিযান শেষ হলেও বন্ধ হয়নি গণগ্রেফতার ** সারাদেশে বিভিন্ন সংগঠনের ইফতার মাহফিল **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ আষাঢ় ১৪২৩, ১৮ রমজান ১৪৩৭, ২৪ জুন২০১৬

 ‘হাতি ঘোড়া গেলো তল...’ বলে এদেশে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদবাক্য রয়েছে। এর অর্থ নিশ্চয়ই বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং দলীয় নেতা-উপনেতাদের মধ্যকার জনাকয়েকের নাম উল্লেখ করলেও পাঠকরা বুঝতে পারবেন। ২০০৮ সালের ‘ডিজিটাল’ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন পর্যন্ত বেশ কয়েকজন খুব ‘নাম-ডাক’ অর্জন করেছিলেন। ডাকসাঁইটেদের সে তালিকায় ছিলেন ‘ম খা’ নামে বেশি পরিচিত ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীরও, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী যাকে ‘রাজাকার মন্ত্রী’ বলে ব্যঙ্গ করতেন। আদালতে দণ্ডিত মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও তো সময়ে সময়ে কম  দেখাননি। আজকাল তাদের নামই কিন্তু শোনা যায় না। আলোচিত আওয়ামী নেতাদের মধ্যেও একমাত্র মাহবুব-উল আলম হানিফ ছাড়া বাকিরা প্রায় হারিয়ে গেছেন। এই হানিফকেও রীতিমতো চাপের মুখে রেখেছেন জাসদ থেকে ‘চান্স’ পাওয়া মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। দু’জনের বাড়ি একই এলাকা কুষ্টিয়ায় বলে জনাব হানিফকে মোটামোটি কোণঠাসা অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। মন্ত্রী ও নেতাদের মধ্যে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেই শুধু নিয়মিতভাবে টিভি ও সংবাদপত্রের খবরে দেখা যায়। তিনি ব্যস্ত রয়েছেন ফ্লাইওভার নামের বাহারী সব উড়াল সেতু নিয়ে!

সেদিক থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পর একজন মন্ত্রীর নাম বলতেই হবে, যিনি প্রথম থেকে আজ পর্যন্তও যথেষ্ট দাপটের সঙ্গে ‘টিকে’ আছেন। তিনি অর্থমন্ত্রী জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লক্ষ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করার কারণে শুধু নয়, এডিপি বাস্তবায়নে ও জিডিপির লক্ষ্য অর্জনে ক্রমাগত ব্যর্থতা এবং বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে দফায় দফায় ধরণা দিয়ে খালি হাতে ফিরে আসার মতো লজ্জাকর অসাফল্যের কারণেও দেশে-বিদেশে তার ‘নাম-ডাক’ ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য অনেক কীর্তি ও বক্তব্যের জন্যও সময়ে সময়ে আলোড়ন তুলেছেন অর্থমন্ত্রী। এই তো বছর তিন-চারেক আগে শেয়ার বাজারের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীকে ‘ধান্দাবাজ’ ও ‘কিছু লোক’ বলে তামাশা করার মাধ্যমে ‘তাক’ লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ঝামেলাও কম পাকাননি জনাব মুহিত। তদন্ত রিপোর্ট থেকে শেয়ার কেলেঙ্কারির খলনায়কদের নামগুলো ‘ডিলিট’ করতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণকে স্তম্ভিত করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, জড়িতদের নাম প্রকাশ করা হলে সরকার ‘বেকায়দায়’ পড়তে পারে। এ থেকে তখন বুঝতে বাকি থাকেনি যে, শেয়ারবাজার আসলে কারা লুণ্ঠন করেছিল। আঙুল শুধু সরকারের দিকে ওঠেনি, ক্ষমতাসীনদের অনেকের নামও মুখে মুখে আলোচিত হয়েছিল। বলা হয়, মূলত অর্থমন্ত্রীর কথা ও কাজের কারণেই দেশের শেয়ারবাজারের সর্বনাশ ঘটেছিল, রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। এরপর এসেছিল পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক লুণ্ঠন ও দুর্নীতির মতো আরো অনেক বিষয়।

এসবের দুর্নাম ঘুঁচতে না ঘুঁচতেই এবার একই অর্থমন্ত্রী হঠাৎ বিচিত্র কিছু কথা শুনিয়েছেন জাতীয় সংসদের অভ্যন্তরে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটের ব্যাপারে প্রথমবারের মতো অভিযোগও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। গত ৭ জুন সংসদ অধিবেশনে একজন ‘নির্বাচিত’ এমপির উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি যথারীতি নাটকীয়তারও আশ্রয়  নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ওই এমপির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ‘কিছু ক্ষেত্রে’ যে লুটপাট হয়েছে তা কেবল ‘পুকুর চুরি’ নয়, ‘সাগর চুরি’। উল্লেখ্য, সম্পূরক বাজেট সম্পর্কিত আলোচনায় ওই এমপি বলেছিলেন, ডেসটিনি ও হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পরপর সম্প্রতি ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও ফাঁস হয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে,  বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রকৃতপক্ষে পচন ধরেছে। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দেশ থেকে পাচার হয়েছে প্রায় পৌনে তিন লাখ হাজার কোটি টাকা। এসব ঘটনাকে ‘পুকুর চুরি’ না বলে ‘সাগর চুরি’ বলা যায়। শুনে অর্থমন্ত্রী মুহিতও দেরি করেননি, একাত্মতা ঘোষণা করেছেন ওই এমপির বক্তব্যের সঙ্গে। বলেছেন, আসলেও একে শুধু ‘পুকুর চুরি’ বলা যায় না, বলতে হয় ‘সাগর চুরি’। অর্থমন্ত্রী চাতুরিও কম করেননি। কথার মারপ্যাঁচে বুঝিয়ে দিয়েছেন, সব কিছুর দায়দায়িত্ব সরকার বা তিনি নিজে নিতে রাজি নন। কারণ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে’ লুটপাট হয়েছে, সব ক্ষেত্রে হয়নি!

লক্ষণীয় যে, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে’ লুটপাট হয়েছে কথাটা বলার মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে নিজের ও সরকারের দায়দায়িত্ব এবং অপরাধ আড়াল ও অস্বীকার করারই চেষ্টা করেছেন। অথচ জনাব মুহিতের আমলে বিশেষ করে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। অর্থমন্ত্রী নিজেই সংসদে জানিয়েছেন, সরকারি ও বেসরকারি ৫৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থের পরিমাণের সঙ্গে খেলাপি ব্যক্তিদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এক লাখের বেশি ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছেন। নিজেদের পক্ষে তাদের যুক্তির শেষ না থাকলেও তথ্যাভিজ্ঞদের অভিমত হলো, এসব আসলে খোঁড়া যুক্তি। বাস্তবে খেলাপি ঋণের প্রতিটি ক্ষেত্রে সরাসরি জড়িত রয়েছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। এই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও নেতারা প্রভাব খাটিয়ে ঋণের ব্যবস্থা যেমন করেছেন তেমনি আবার বাঁচিয়ে দিয়েছেন শাস্তিমূলক  ব্যবস্থার কবল থেকেও। ফলে ঋণের অর্থ না দিয়েও পার পেয়ে গেছেন ও যাচ্ছেন খেলাপিরা। মূলত সে কারণেই বেড়ে চলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। এভাবে বেড়ে যাওয়াকে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক ‘বিরল’ বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা দরকার, বর্তমান সরকারের আমলে খেলাপি ঋণের ব্যাপারেও যথারীতি রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকই এগিয়ে রয়েছে। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে ‘হল-মার্ক’ ধরনের নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি সুপারিশের আড়ালে ক্ষমতাসীনদের চাপের কারণেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে বলে মনে করছেন তথ্যাভিজ্ঞরা। ব্যাংক কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি না থাকার সুযোগে ব্যাংকিং খাতের চরম অব্যবস্থাপনার কথাও বলেছেন তারা। এভাবে চলতে থাকলে দেশের ব্যাংকিং খাত তথা সমগ্র অর্থনীতিই মুখ থুবড়ে পড়বে বলে তথ্যাভিজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার খবর অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হলেও এতে অবশ্য বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। কারণ, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ রয়েছে অথচ বিভিন্ন অর্থখাতে দুর্নীতি-অনিয়ম ঘটবে না এমন অবস্থার কথা কল্পনা করা যায় না। এ যে শুধু কথার কথা কিংবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অভিযোগ নয় তার প্রমাণ তো নিয়মিতভাবেই পাওয়া যাচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে শেয়ারবাজারের লাখো হাজার কোটি টাকা লোপাট করা থেকে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসবের মতো অনেক ঘটনারই উল্লেখ করা যায়। কারণ, প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য হলো, ‘হল-মার্ক’, ‘ডেসটিনি’ ও ‘বিসমিল্লাহ’সহ প্রতিটি কেলেঙ্কারিতে ক্ষমতাসীনদের রথি-মহারথিরাই জড়িত রয়েছেন। বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদগুলোর দিকেও লক্ষ্য করা যেতে পারে। শরীর থেকে এখনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ধ à¦¯à¦¾à§Ÿà¦¨à¦¿Ñ à¦à¦®à¦¨ কিছু যুবক-যুবতিকেই পরিচালনা পরিষদগুলোতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল, যারা ব্যাংকিং-এর ‘অ, আ, ক, খ’ সম্পর্কে কিছু জানেন কি না তা নিয়ে পর্যন্ত প্রশ্ন রয়েছে। তাদের প্রধান ‘যোগ্যতা’Ñ à¦¸à¦¬à¦¾à¦‡ ছাত্রলীগের নেতা বা নেত্রী ছিলেন। এসব পরিচালকও জবরই দেখিয়ে ছেড়েছেন, যার প্রমাণ দেয়ার জন্য ‘হল-মার্ক’ কেলেঙ্কারিই যথেষ্ট। এই একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক একাই চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ওদিকে রথি-মহারথিদের হুকুম তামিল করতে হয়েছে বলে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও ধার্মিক হিন্দুদের মতো ‘উপোস’ করতে রাজি হননি। তারা খেয়েছেন যেমন, গিলেছেনও তেমনই। এভাবে সবার অংশগ্রহণেই সর্বনাশের পর্যায়ে এসে গেছে দেশের ব্যাংকিং খাত।

কিন্তু ডেসটিনি ও হল-মার্ক থেকে সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি পর্যন্ত অসংখ্য অপরাধ সংঘটিত হলেও কোনো একটির বিষয়েই সরকারকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দেশের ভেতরে প্রবল জনমতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সরকার বড়জোর লোক দেখানো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিগুলোর কোনো কোনোটি কিছুটা তদন্ত করলেও তাদের মাঝপথে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যাকালে সাবেক অর্থ উপদেষ্টাসহ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেংকারি এবং শেয়ার বাজারসহ আর্থিক খাত থেকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ৩০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। অপরাধ অনেক বড় ও ভয়ঙ্কর হলেও এসব ঘটনায় দু’-চারজন মাত্র অফিসার বা কর্মচারীকে অপসারণসহ কিছু বিভাগীয় ব্যবস্থার বাইরে শাস্তিমূলক এমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, যার ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ চেষ্টাকে প্রতিরোধ ও প্রাতিহত করা সম্ভব হতে পারে। প্রভাবশালী হিসেবে বর্ণিতজনদেরও কোনো একজনের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালীদের কারো বিরুদ্ধে কোনো মামলা পর্যন্ত দায়ের করেনি সরকার। এজন্যই একের পর এক নতুন নতুন কেলেঙ্কারি ঘটেছে, যার সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে প্রাধান্যে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি। কিন্তু এ ব্যাপারেও সরকারকে তথা অর্থমন্ত্রীকে কোনো ব্যবস্থাই নিতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, আওয়ামী ঘরানার লোক হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেই পার পেয়ে গেছেন সাবেক আওয়ামী গভর্নর আতিউর রহমান। অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত ইশারা-ইঙ্গিতে ব্যঙ্গ করা ছাড়া কিছুই করেননি তার ব্যাপারে। অথচ অনুসন্ধানে জানা গেছে, সবই জানা ছিল ওই গভর্নরের। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীও জেনেছিলেন যথাসময়েই। কিন্তু তারপরও অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছিলেন দুই দুটি সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর। এই বিলম্বের সুযোগ নিয়েই সরে পড়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আওয়ামী গভর্নর। তাকেও আজ পর্যন্ত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি।

জনমনে ভীতি ও উদ্বেগ বাড়ার কারণ হলো, সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অযোগ্যতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘুষ-দুর্নীতি বেড়ে চলেছে বলেই দেশকে ক্রমাগত বিপদের মুখে পড়তে হয়েছে। এখনো বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারেনি সরকার। একই কারণে বৈদেশিক সহায়তাও কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। কোনো দেশের সঙ্গেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নীত হয়নি বলে লাফিয়ে কমে যাচ্ছে রফতানি আয়। এসবের সরাসরি প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতির ওপর। সর্বাত্মক ব্যর্থতা সত্ত্বেও ক্ষমতাসীনদের মধ্যে পরিবর্তিত হওয়ার কিংবা বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মানতেই হবে, এভাবে কেবলই ‘সাগর চুরি’ ধরনের নাটকীয় সংলাপ উচ্চারণের আড়ালে দায়দায়িত্ব এড়িয়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা বা সমৃদ্ধি অর্জন করা যাবে না। এজন্য সবচেয়ে বেশি দরকার সকলের আস্থা ফিরিয়ে আনা। বিশেষ করে ঘুষ-দুর্নীতির অবসান ঘটানো ছাড়া যে এই আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় সে কথাটা অর্থমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীনরা যত তাড়াতাড়ি বুঝতে পারবেন ততই মঙ্গল। এখানে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ভয়াবহ চুরির ঘটনা উল্লেখ করা দরকার, যার ফলে বিশ্বজুড়ে প্রচণ্ড তোলপাড় শুরু হয়েছিল। প্রথমে তথাকথিত হ্যাকারদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভীত ও স্তম্ভিত হওয়ার মতো অনেক তথ্য। জানা গেছে, সমগ্র এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল দেশী-বিদেশী একটি শক্তিশালী চক্র। তারা সুচিন্তিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার উধাও করে দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নাড়ি-নক্ষত্র পর্যন্ত জেনে নিয়েছিল তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়েই বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তঃব্যাংক লেনদেন নেটওয়ার্ক সুইফটে হানা দিয়েছিল গোষ্ঠীটি। শুধু তা-ই নয়, চমৎকার কৌশলে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং ফিলিপাইনের ব্যাংক শাখার সিসি ক্যামেরাও বন্ধ করে দিয়েছিল তারা, যাতে চুরির ঘটনাপ্রবাহের কোনো মুহূর্তের কোনো তথ্যই ক্যামেরায় ধরা না পড়ে। সব মিলিয়েই প্রমাণিত হয়েছে, ঘটনায় বিদেশীদের সঙ্গে দেশী কিছু এমন ব্যক্তিও জড়িত ছিল, যাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যাপারে বিস্তারিত জানা রয়েছে। এটা একটি দিক। ঘটনাপ্রবাহের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়টি হলো, টাকা সরিয়ে ফেলার এবং জানাজানি হওয়ার পরও দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নীরবতা অবলম্বন করেছে। কর্তৃপক্ষ এমনকি সরকারকেও কিছু জানায়নি। অর্থমন্ত্রী তো বটেই, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও সে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের ওপর ক্ষুব্ধ à¦¹à§Ÿà§‡à¦›à§‡à¦¨Ñ à¦¯à¦¦à¦¿à¦“ বলা হচ্ছে, সবই নাকি লোক দেখানোর জন্য! মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। সেদিনই অর্থমন্ত্রী ‘কিছু একটা’ করার ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে গভর্নর আতিউর রহমান প্রথমে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার পরদিন হঠাৎ নাটকীয়ভাবে পদত্যাগ করে সরে পড়েছেন। পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে কোনো কিছুই জানাননি তিনি। 

এভাবে সব মিলিয়েই দেশের আর্থিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শেয়ার মার্কেটের পর হল-মার্ক ও ডেস্টিনিসহ একের পর এক কেলেঙ্কারির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ চুরি পর্যন্ত ঘটনাবলীর পর্যালোচনায় দেখা যাবে, এসবের কোনো একটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং প্রতিটিতেই জড়িত রয়েছে এমন কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী, সরকার তথা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে যাদের বিশেষ সম্পর্ক প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি বলা হয়েছে, বংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনায় মন্ত্রী ও এমপিসহ ক্ষমতাসীনদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কারণ, তাদের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া এত বড় একটি অপরাধ সংঘটিত করা সম্ভব হওয়ার কথা নয়। অন্য একটি কথাও বলা দরকার। সে কথাটা হলো, গভর্নর আতিউর রহমান ঘটনার দায় এড়াতে পারেন না। প্রথমত, সরকারের গুণগান গেয়ে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে দফায় দফায় চাকরির শর্ত ভঙ্গ করলেও তিনি কেন বিষয়টি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী এবং দায়িত্বশীল অন্য কাউকেই কিছু জানাননি বরং রহস্যময় নীরবতা অবলম্বন করেছেন সে প্রশ্ন উঠেছে সঙ্গত কারণেই। ব্যাংকিং বিভাগসহ অর্থ মন্ত্রণালয়কেও তিনি অন্ধকারেই রেখেছিলেন। এজন্যই পদত্যাগ করে সরে যাওয়াটাই গভর্নরের পক্ষে যথেষ্ট হতে পারে না। তাকে বরং জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা দরকার। একই সঙ্গে দরকার রহস্য উন্মোচনের লক্ষ্য নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত করা। এই তদন্তে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যাতে অংশ নিতে পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তদন্তের ফলাফল নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠতে না পারে। সরকার যদি এ ব্যাপারে কোনো রকম শৈথিল্য দেখায় কিংবা কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি বা বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যদি তথ্য আড়াল করার বা তদন্ত প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালানো হয় তাহলে ধরেই নেয়া হবে যে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা একেবারে অমূলক নয়।

সচেতন সকল মহলই মনে করেন, এ ধরনের চুরি ও অর্থপাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক শুধু নয়, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও উন্নয়নশীল একটি রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ভীতিকরও। এভাবে চলতে থাকলে দেশের উন্নয়ন চেষ্টা বাধাগ্রস্ত না হয়ে পারে না। বাস্তবে সর্বাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছেও এবং এখনো হচ্ছে। তাছাড়া বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়ার ফলে দেশের ভেতরে কোনো বিনিয়োগ হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে না চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও। বলা বাহুল্য, সবকিছুর পেছনে রয়েছে সরকারের স্বজনপ্রীতি এবং দলকেন্দ্রিক নীতি ও কর্মকাণ্ড, যার কারণে আতিউর রহমানের মতো দলবাজ ও ধান্দাবাজ লোকজন বড় বড় পদে নিযুক্তি পেয়েছেন। একই কারণে বড় ধরনের বিভিন্ন কেলেংকারী এবং চুরি ও অর্থের পাচার ঘটতে পারছে, যার ফলে ব্যবসা ও বিনিয়োগে আগ্রহীদের মধ্যে ভীতি-আতংক কেবল বেড়েই চলেছে। শিল্প-বাণিজ্যসহ অর্থনীতির প্রতিটি খাতেও সঙ্কট ক্রমাগত আরো মারাত্মক হয়ে উঠছে। সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে এমনকি রাষ্ট্রের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়েও। এজন্যই কেবলই ‘সাগর চুরি’র মতো নাটকীয় সংলাপ উচ্চারণের মধ্য  দিয়ে অর্থমন্ত্রী এবং অন্য রথি-মহারথিদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে না। সব জেনে-বুঝেও অর্থমন্ত্রী সম্ভবত সে চেষ্টাই শুরু করেছেন। কারণ, সর্বশেষ এক ঘোষণায় জনাব আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, তিনি নাকি জীবনেও আর নির্বাচনে দাঁড়াবেন না! প্রশ্ন উঠেছে, তেমন দরকার কি বার্ধক্যের ভারে প্রায় ন্যুব্জ হয়ে পড়া অর্থমন্ত্রীর আদৌ রয়েছে? ‘কামাই’ কি তার যোগ্যতা ও দরকারের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে যায়নি?

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।