ইসলামী সংস্কৃতির আলোকেই হোক ঈদ আনন্দ

শান্তিতে নেই কেউ, চোখে নেই নিদ, তবুও এলো খুশির ঈদ। ঈদের এই খুশির বার্তা হলো মু’মিন জীবনের অপরিসীম প্রাপ্তির সফলতা। রমজানের কঠোর সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত সফলতা হচ্ছে মহান প্রভুর পক্ষ থেকে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত। এ মাসেই আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মুত্তাকীদেরকে হিদায়াতের সহজ সরল সঠিক পথ দেখানো আর হক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য। এ মাসে আরো একটি বড় পুরস্কার হলো হাজার মাসের চাইতেও উত্তম একটি রজনী ‘লাইলাতুল কদর’। আলহাম্দুলিল্লাহ, এতো কিছু অর্জনের পর খুশি তো হতেই হয়, তাই তো ঈদ; ঈদ-উল ফিতর। যারা এসব প্রাপ্তিতে ব্যর্থ ঈদ কি তাদেরকে আনন্দ দিতে পারে! হাদিস থেকে জানা যায়, রমজান মাসের কোন এক জুমায় হজরত জিবরাইল (আ.) দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল অথচ গুনাহ ক্ষমা করাতে পারলো না, তার জন্য ধ্বংস; রাসূল (সা.) বললেন আমিন।’ তাছাড়াও প্রিয় রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যারা রমজানে সিয়াম পালন করেনি, তারা যেন আমার ঈদগাহে না আসে’।

সিয়াম ফরজ করার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘সম্ভবত: তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জন করতে পারবে’। তাকওয়ার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে, আল্লাহ তার উপায় বের করে দেন। আর তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন’। অর্থাৎ আল্লাহকে ভয় করে চললে একজন মু‘মিনের জীবনের সকল চাওয়া পাওয়া আল্লাহ তায়ালা পূরণ করেন।

রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা সেই তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জনে সফল হতে পেরেছি বলেই তো খুশির ঈদ। ধনী গরিব সকলেই এই প্রাপ্তিতে একাকার। এ মাসে সমাজের বঞ্চিতরা পাবে সাদাকাতুল ফিত্র। সাদাকাতুল ফিতর সকলকেই আদায় করতে হয়। ফলে বঞ্চিতরাও ঈদের খুশিতে সমান ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে।

তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাদের দেশের বড় একটি অংশ ঈদের আনন্দ উপভোগ  করতে পারছে না। দেশের হাজার হাজার পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই। ঐসব পরিবারের অনেক সদস্যকে বছরের পর বছর জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে, অনেক পরিবারের সদস্য গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছে, অনেক পরিবারের নিকটাত্মীয়কে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে, আর অনেক পরিবারের প্রধান ব্যক্তিকে কথিত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে শহীদ করা হয়েছে। তাদের পরিবারে এ ঈদেও আনন্দ উৎসব নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমাদের প্রার্থনা এসব শহীদদের পরিবারকে ত্যাগ সইবার ধৈর্য দান করো। আর তাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের জমিনে ইসলামী হুকুমতের পতাকাকে উড্ডীন করে দাও।

স্মরণীয় বিষয় হচ্ছে, ঈদ দুনিয়াবাসীর জন্য খুশির বিষয় হলেও আমাদের পরম আত্মীয় স্বজন অন্ধকার কবরবাসীর জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কারণ রমজান মাসের উছিলায় আল্লাহ কবরবাসীর আজাব মাফ করে দিয়েছিলেন। ঈদের দিন থেকে আবারো কবরের আজাব শুরু হয়ে যায়, তাই দুনিয়ানাবাসীর উচিৎ ঈদের আনন্দের মাঝেও কবরবাসীদেরকে ভুলে না যাওয়া আর তাদের জন্য দোয়া করা।

তবে আমাদের ঈদের খুশিতে আত্মহারা না হয়ে শালীনতা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। কোন অবস্থাতেই কোনো মুসলমানের ইসলামী সংস্কৃতির বাইরে নতুন কিছু আবিস্কার করা বৈধ নয়। সভ্যতা, ভব্যতা আর ইসলামী সংস্কৃতি বজায় রেখেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে হবে। আপন করে নিতে হবে সমাজের ধনী গরিব সকলকে। বঞ্চিত হবে না কোনো জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা শ্রেণী পেশার মানুষ। তবেই সার্থক হবে ঈদ আনন্দ। মহান প্রভুর নিকট এমনই কামনা। আমিন।