রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৭ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১০ মে ২০২৪

॥ মা সু ম  খ লি লী ॥
সৌদি আরব ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র্রের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রথম বিস্তারিত প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ প্রকাশ করে। এরপর গার্ডিয়ান, রয়টার্সসহ অন্যান্য গণমাধ্যম এ নিয়ে খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। মধ্যপ্রাচ্য সফরকারী আমেরিকান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও সৌদি পররাষ্ট্র্রমন্ত্রী ফয়সল বিন ফারহান দুই দেশ এ ধরনের একটি চুক্তির কাছাকাছি বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ চুক্তি স্বাক্ষরের অনেক তাৎপর্যপূর্ণ দিকের একটি হলো এর সাথে তৃতীয় দেশ হিসেবে ইসরাইলের সম্পৃক্ততা। শেষ পর্যন্ত তিন দেশের সমন্বয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা চুক্তি সম্পন্ন হলে মধ্যপ্রাচ্যে এর বিরাট প্রভাব থাকতে পারে।
চুক্তির ইসরাইল কানেকশন
মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রূপান্তরমূলক পরিকল্পনার একটি বড় অংশ ছিল সৌদি আরব এবং ইসরাইলকে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে দেখা। এটি ঘটানোর জন্য ওয়াশিংটন মনে করে যে, একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তিসহ অন্যান্য বিষয়ের সাথে রিয়াদকে সম্পৃক্ত করতে হবে। অন্যদিকে সৌদির ইচ্ছানুযায়ী ইসরাইলকে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সাহায্য করার জন্য অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ইসরাইলের একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রকাশ্যে এ ধরনের শেষ খেলার বিরোধিতা করে দ্রুত এ দরকষাকষির পরিসমাপ্তি ঘটানো কঠিন। এমনকি হামাসের বিরুদ্ধে বর্তমান যুদ্ধের সময়ও এটি করা সহজ নয়। তবে প্রতিরোধ গোষ্ঠীর যুদ্ধের ক্ষমতাকে নিঃশেষ করার জন্য ইসরাইলের দক্ষিণ গাজার রাফা আক্রমণ, যা এ যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে। একই সাথে এটি যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিবিনিময়ের আশাকে নষ্ট করবে এবং ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনি জনগণের সৃষ্ট দুর্ভোগকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। এর অর্থ হচ্ছে গাজা যুদ্ধ বন্ধ আর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র তৈরির বিষয়টিকে এজেন্ডার বাইরে ঝুলিয়ে রাখা।
নেতানিয়াহুর অনমনীয়তা ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি
যখনই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের কথা এসেছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার বিরোধিতা করার সুযোগ খুব কমই মিস করেছেন। বরাবরের মতো তিনি এককভাবে চলমান যুদ্ধের মাধ্যমে ক্ষুব্ধ ইসরাইলি জনসাধারণকে সন্তুষ্ট করে তার রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন। তিনি তা করছেন এটা জেনে যে, এ শুটিং বন্ধ হয়ে গেলে ৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থতার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। যদিও হামাসের টিকে থাকার ক্ষমতা, শহুরে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ এবং ইসরাইলের সামরিক অভিযান শেষ করার জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় তার জন্য আরও বেশি অধরা হয়ে উঠছে।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পথে ইসরাইলের অনড় দাঁড়িয়ে থাকায় মনে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব তাদের নিজস্বভাবে সমীকরণে অনেকখানি এগিয়েছে। এখন একটি ‘প্ল্যান বি’ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, যা চুক্তি থেকে আপাতত ইসরাইলকে বাদ দেয়া হতে পারে। এটি হবে একটি মার্কিন প্রতিরক্ষা চুক্তি, যেখানে সৌদি বেসামরিক পারমাণবিক শক্তি উন্নয়নে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তির বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সৌদি আরবে সফরকালে গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘আমরা গত কয়েক মাস ধরে একসাথে জোরালোভাবে কাজ করেছি। আমাদের নিজস্ব চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরব এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কাজটি একসাথে করছে, সম্ভবত এটি সম্পূর্ণ হওয়ার খুব কাছাকাছি।’ তার মার্কিন প্রতিপক্ষ সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান এর প্রতিধ্বনি করে বলেছেন যে, ‘আমরা একটি চুক্তি সম্পাদন করার খুব কাছাকাছি’।
কেন ওয়াশিংটন ও রিয়াদ এ সময় ইসরাইলকে ছাড়াই এগোতে চায়, তা পুরোপুরি বোধগম্য। এর কারণ হতে পারে ইসরাইল যদি কখনোই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে রাজি না হয়, তবুও একটি দ্বিপাক্ষিক মার্কিন-সৌদি চুক্তি যেন অন্তত হয়। প্রকৃতপক্ষে সৌদি আরবের সাথে এ মেগাডিল নিয়ে দ্বিপক্ষীয় ঐকমত্যের সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে ইসরাইল সৌদি স্বীকৃতির চূড়ান্ত পুরস্কার পাবে। কিন্তু এর বাইরে রিয়াদকে চীন থেকে নিজেকে দূরে রাখা, শক্তি উৎপাদনে সহযোগিতা করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিতে যৌথভাবে বিনিয়োগ করার বিষয়ও রয়েছে।
কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বাইডেন তার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে সৌদি আরবের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিতে পৌঁছাতে পারতেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সেপ্টেম্বরে বাহরাইনের সাথে এ ধরনের ব্যাপক নিরাপত্তা একীকরণ এবং সমৃদ্ধি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে ‘প্রধান ন্যাটো মিত্র’ মর্যাদাও দিতে পারে, যা বাহরাইন উপভোগ করছে। এ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন অস্ত্রের চালান ত্বরান্বিত এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতাও বাড়াতে পারে।
তবে সৌদি আরব জোর দিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া বা ফিলিপাইনের সাথে ওয়াশিংটনের চুক্তির মতো একটি সরকারি প্রতিরক্ষা চুক্তির ওপর। কারণ এটি দেশটির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়, আনুষ্ঠানিক এবং টেকসই নিশ্চয়তা দান করবে। সৌদিরা বাহরাইন যা পেয়েছে, তার চেয়ে উচ্চাভিলাষী বেশি কিছু চায়। তারা এটিতে কংগ্রেসের অনুমোদন এ কারণে চায় যে, তা না হলে একটি নতুন মার্কিন প্রশাসনের রাষ্ট্রপতির পরিবর্র্তিত মনোভাবে সহজেই চুক্তিটি বাতিল হয়ে যেতে পারে।
ইরান-চীন ফ্যাক্টর
অনেকের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ওয়াশিংটনের সাথে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তির জন্য রিয়াদের চাপের পুরো বিষয়টি হলো ইরানের সাথে যুদ্ধ প্রতিরোধ করা অথবা সেটি ঘটলে ইরানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমেরিকান সুরক্ষা পাওয়া। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এটি পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির গ্যারান্টি দেওয়া। এজন্য প্রয়োজন রয়েছে কংগ্রেসের অনুমোদনের। তবে কংগ্রেসে ইসরাইল লবি বা আইপেকের যে প্রভাব তাতে ইসরাইলের সাথে সৌদি স্বাভাবিকীকরণ ছাড়া আমেরিকান আইনসভা দেশটির সাথে একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তি অনুমোদনের সম্ভাবনা কম। আর শেষেরটি না হলে সৌদি আরব সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে, ইরানকে উসকানি দেওয়ার চেয়ে তার সাথে বোঝাপড়ার মধ্যে থাকাই ভালো।
 শেষ পর্যন্ত এটিও হতে পারে যে, রিয়াদ ও ওয়াশিংটন আরও সীমিত চুক্তি করবে এবং এআই, সেমিকন্ডাক্টর, স্বায়ত্তশাসিত সিস্টেম আর সম্ভবত বেসামরিক পারমাণবিক শক্তিসহ প্রতিরক্ষা ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ে তাদের সহযোগিতা বাড়াবে। তবে এটি এমন রূপান্তরমূলক চুক্তি হবে না, যা বাইডেন আমেরিকান জনসাধারণের কাছে বিক্রি করার আশা করে অথবা সৌদি আরব সত্যিকারভাবেই তার প্রতি প্রলুব্ধ হতে পারে। আর এটি সৌদিদের চীনের সাথে তাদের সহযোগিতাকে প্রদর্শনযোগ্যভাবে সংযত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে না। দুই দেশের মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সংযোগের কারণে এটি হবে একটি চ্যালেঞ্জিং প্রস্তাব। এটি কেবলমাত্র আরেকটি ন্যূনতম দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হবে, উভয় পক্ষের কৌশলগত প্রভাব বা সুবিধাগুলোর কোনোটিই এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে না।
উপসাগরীয় এবং বিদেশি কূটনীতিকদের মতে, পরিকল্পনার সেই অংশে চীনের অস্ত্র কেনা বন্ধ করা এবং দেশে বেইজিংয়ের বিনিয়োগ সীমিত করার বিনিময়ে সৌদি আরবকে রক্ষার জন্য আনুষ্ঠানিক মার্কিন গ্যারান্টির পাশাপাশি সৌদি আরবের আরও উন্নত মার্কিন অস্ত্রের অ্যাক্সেসের আহ্বান জানানো হতে পারে। মার্কিন-সৌদি নিরাপত্তা চুক্তিতে রিয়াদের সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ উদীয়মান প্রযুক্তিগুলো ভাগ করে নেওয়ারও আশা করা হচ্ছে।
চুক্তির পথ জটিল হচ্ছে
যতদিন নেতানিয়াহু এবং তার সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, ততদিন ত্রিমুখী চুক্তিটি  বাস্তবায়িত হতে পারা কঠিন, অন্তত যেভাবে এটি কল্পনা ও প্রকাশ করা হয়েছে সেভাবে প্রায় অসম্ভব। মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতি এবং মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে বিবেচিত সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মাধ্যমে নেতানিয়াহু যে ধরনের কৌশলগত সাফল্য অর্জন করতে পারে, তা তার এখনই খুব প্রয়োজন। কিন্তু তিনি এমন এক ইসরাইলি মন্ত্রিসভার সভাপতিত্ব করেন, যার অনেক সদস্যের ফিলিস্তিন ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গি তার নিজের চেয়েও চরম এবং সৌদিদের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শর্ত মেনে সম্পর্ক তৈরিতে তারা দেয়াল হয়ে দাঁড়ায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, শর্তগুলো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নেতানিয়াহু একটি বৃহত্তর চুক্তিতে যোগদানের জন্য যে শর্তগুলোর মুখোমুখি হবেন, তাতে গাজার যুদ্ধ বন্ধ করা এবং ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রত্বের একটি পথ গ্রহণে সম্মত হওয়া অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ উভয়টিই নেতানিয়াহু অবিচলভাবে এখনো পর্যন্ত প্রতিরোধ করে চলেছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা আশা করেন যে, নেতানিয়াহু সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের ঐতিহাসিক সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইবেন না, তবে ইসরাইলের সবচেয়ে ডানপন্থী সরকারকে পতনের হাত থেকে রক্ষাসহ তিনি যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন, সে সম্পর্কে তিনি সচেতন থাকবেন। বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারককে মার্কিন সামরিক সুরক্ষা ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিককরণের সাথে একটি বিস্তৃত চুক্তি দীর্ঘকালের দুই শত্রুকে একত্রিত করবে এবং রিয়াদকে এমন সময়ে ওয়াশিংটনের সাথে আবদ্ধ করবে যখন চীন এ অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে মার্কিন ও সৌদি আলোচকরা আপাতত দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, যা একসময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কাছে উপস্থাপিত একটি বৃহত্তর প্যাকেজের অংশ হবে। যাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে রিয়াদের সাথে ঐতিহাসিক সম্পর্কের জন্য ছাড় দেবে কিনা। কারণ সৌদি আরব অবিলম্বে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধে একটি স্থায়ী ও টেকসই যুদ্ধবিরতির দিকে অগ্রসর হওয়া এবং একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে দৃঢ় পদক্ষেপের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এ শর্তের বাইরে গিয়ে ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়া সৌদি আরবের পক্ষে বাস্তব কারণেই এ সময়ে সম্ভব নয়।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে ত্রিমুখী আলোচনায় বাইডেনের সহযোগীরা মূলত যা কল্পনা করেছিলেন, তা ছিল ইসরাইলের সাথে স্বাভাবিককরণের বিনিময়ে মার্কিন নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে সৌদিদের জন্য। এখন বাইডেন প্রশাসন রিয়াদের সাথে একটি পৃথক ট্র্যাকে আলোচনা করছে এবং একটি ‘গ্র্যান্ড দর কষাকষি’ এর প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে চাইছে, যাতে নেতানিয়াহুকে যোগদান বা মিস করার সিদ্ধান্ত নিতে ছেড়ে দেবে।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র মিলার বলেছিলেন যে, মার্কিন-সৌদি চুক্তি, ইসরাইলের সাথে সম্ভাব্য স্বাভাবিককরণ এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রত্বের পথ এর মতো বিস্তৃত প্যাকেজের উপাদানগুলো একসাথে যুক্ত করা হবে। কেউ এসব ছাড়া এগিয়ে যেতে চায় না। এটা স্পষ্ট নয় যে, সম্পূর্ণ ন্যাটো-শৈলীর চুক্তির কাছাকাছি সৌদি আরবের জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা গ্যারান্টির  বিষয়টি চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কিনা, যার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। পারমাণবিক সহযোগিতা সংক্রান্ত যেকোনো চুক্তির জন্যও ক্যাপিটল হিলের অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে।
নড়বড়ে বাইডেন শিবির ও সৌদি অভিপ্রায়
চুক্তি নিয়ে বাইডেন শিবিরে এখন নড়বড়ে হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। যেসব মার্কিন কর্মকর্তা গত সপ্তাহে অনড় ছিলেন যে মার্কিন-সৌদি চুক্তিগুলো সৌদি-ইসরাইল স্বাভাবিকীকরণের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেছিলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোয় তারা এ বিষয়ে অ-প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে উঠেছে। ব্লিংকেনের রিয়াদ সফরের অন্যতম লক্ষ্য ছিল মার্কিন-সৌদি চুক্তি চূড়ান্ত করা, যা প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রায় সম্পূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। তবে তারা এখন স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে কোনো চূড়ান্ত অগ্রগতি হয়নি।
জানা যাচ্ছে, মার্কিন-সৌদি চুক্তির পারমাণবিক অংশ রিয়াদকে পরিশোধিত ইউরেনিয়াম পাউডারকে গ্যাসে পরিণত করার জন্য একটি রূপান্তর প্লান্টের অনুমতি দিতে পারে, কিন্তু সৌদি আরবকে প্রাথমিকভাবে তার নিজের ভূখণ্ডে ইউরেনিয়াম গ্যাস সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। পারমাণবিক বোমা তৈরির ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট এ বিষয়টিও একটি প্রধান বাধা হতে পারে। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান, অতীতে ঘোষণা করেছিলেন যে, রিয়াদ পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করবে যদি ইরান তার নিজস্ব পরমাণু শক্তির বিকাশ ঘটায়।
যতটা জানা যাচ্ছে তাতে, সৌদি পক্ষ থেকে ন্যূনতম যা প্রয়োজন, তা হলো দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার করার মতো কিছু- যেটি অনুচ্ছেদ ৫ [ন্যাটো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ধারা]-এর সংক্ষিপ্ত রূপ তবে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষার জন্য আরও কঠোর, আনুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি।
চুক্তির তৃতীয় অংশে সৌদি আরবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ডেভেলপমেন্ট টুলে ব্যবহৃত কম্পিউটার চিপগুলোর মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার বিষয় রয়েছে, যা এ অঞ্চলের হাই-টেক হাব হওয়ার সৌদি আকাক্সক্ষার একটি মূল উপাদান।
খসড়া চুক্তির তিনটি অংশই সৌদি নিরাপত্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সহায়তা প্রদান করে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তির দিকে অগ্রগতির জায়গায়, সৌদি রাজতন্ত্র ইরানের প্রভাব সম্প্রসারণকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় এবং বিশেষ করে চীনের সাথে ওয়াশিংটনের ‘মহাশক্তির প্রতিযোগিতায়’ মার্কিন বিজয় হিসেবে একটি বিশুদ্ধ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি উপস্থাপন করছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় রিয়াদ চীন থেকে অস্ত্র কেনার পরিমাণ ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে চলেছে। কারণ এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তার কৌশলগত বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের মার্চে বাইডেন প্রশাসনকে অবাক করে দিয়েছিল যখন সৌদি আরব ও ইরান ঘোষণা করেছিল যে, তারা সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য একটি চীনা মধ্যস্ততা চুক্তিতে সম্মত হয়েছে।
এ কারণে কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন, ‘যদি চুক্তিতে চীন ও ইরানের ব্যাপারে নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিনিময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এতে কী আছে- এমন কোনো কিছু সৌদি আরবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে এ নিয়ে আপত্তি ওঠাবে কংগ্রেস। যা বলা হয়েছে, তা হোয়াইট হাউসের জন্য যথেষ্ট হলেও এটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই মার্কিন সিনেটের জন্য যথেষ্ট হবে না। আর সিনেটের অনুমোদন ছাড়া মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রতিশ্রুতি স্বল্পস্থায়ী হতে পারে। সহজভাবে বলা যায় ইসরাইল এতে না থাকলে সিনেট তাতে অনুমোদন দেবে না আর সিনেট অনুমোদন না দিলে এটি হবে একটি নন-স্টার্টার উদ্যোগ।
সৌদি আরব দীর্ঘকাল ধরে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাসহ উন্নত মার্কিন অস্ত্রে অধিকতর প্রবেশাধিকার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার বিকাশের জন্য ব্যবহৃত উন্নত চিপগুলোর ওপর মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার চেষ্টা করেছে। একটি অন্তর্বর্তী দ্বিপাক্ষিক চুক্তিকে রিয়াদের ওপর চীনের কৌশলগত প্রভাব সীমিত করার একটি উপায় হিসেবে দেখা যেতে পারে, যতক্ষণ না ভবিষ্যতে ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনিদের জন্য ছাড় দিতে প্রস্তুত হয়।
বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে কাতারকে প্রধান নন-ন্যাটো মিত্রের মর্যাদা দিয়েছে এবং গত বছর বাহরাইনের সাথে একটি বিস্তৃত কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, মানামাকে বুদ্ধিমত্তা ভাগ করে নেওয়া, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। সেই সময়ে হোয়াইট হাউসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেষোক্ত চুক্তিটিকে এ অঞ্চলের জন্য একটি ‘মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।
তবে সৌদি আরবের জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা গ্যারান্টি এবং বড় অস্ত্র হস্তান্তর সম্বলিত যেকোনো চুক্তির জন্য কংগ্রেসের কাছ থেকে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে আর এমবিএস-এর ফুল-সাইকেল পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের দাবি পূরণ করা মার্কিন নিরস্ত্রীকরণ ও অপসারণ উদ্বেগের জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকির অন্তর্ভুক্ত। ইসরাইলের জন্য সৌদি স্বীকৃতির অনুপস্থিতি রিপাবলিকান সিনেটররা এ চুক্তিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপর্যাপ্ত বলে মনে করছেন।
মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম তার এক্স-পোস্ট এ লিখেছেন, ‘ইসরাইল-সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং ফিলিস্তিনি ফাইলের বিষয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত না করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির পক্ষে (প্রয়োজনীয় ৬৭ এর তুলনায়) খুব কম ভোট হবে।’
সৌদি কর্মকর্তারা অন্তত প্রকাশ্যে এমন কোনো ইঙ্গিত দেননি যে, ক্রাউন প্রিন্স সম্পূর্ণ মার্কিন প্রতিরক্ষা গ্যারান্টি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি পূরণ করে মীমাংসা করতে ইচ্ছুক। আর সেটিই যদি চূড়ান্ত সৌদি নীতি হয়, তাহলে এ মুহূর্তে দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় কোনো চুক্তিই যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা কম। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিতে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন যদি আসে, তাহলেই কেবল বিষয়টি ভিন্ন হতে পারে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।