সংবাদ শিরোনামঃ

বিভাজন নয় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করুন ** ভিা চাই না কুত্তা সামলাও ** দেশ বড় ধরনের খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হবে ** রিপোর্টের সাথে বক্তব্যের কোনো মিল নেই ** খোল নলচে না পাল্টালে রাজনৈতিক বিতর্ক বাড়বে ** অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি রাষ্ট্রপ ** সরকারের প্রতি জনআস্থা কমছে ** সংঘাতের পথে পা বাড়িয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়েছে সরকার ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** বিশ্বের দেশে দেশে ভাষা : বাংলা ভাষার তাত্ত্বিক দর্শন এবং ভাষা চর্চা ** সাংবাদিকরা হত্যার টার্গেট কেন? ** দেশটা ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে ** ভাষা আন্দোলনের শহীদদের চিরদিন এ জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে ** মিয়ানমার-বাংলাদেশ সরাসরি চালু হতে যাচ্ছে নৌ ও বিমান যোগাযোগ সেতুবন্ধনে নয়া সম্ভাবনার দ্বার **

ঢাকা শুক্রবার ১২ ফাল্গুন ১৪১৮, ১ রবিউস সানি ১৪৩৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২

বিশ্বের দেশে দেশে ভাষা

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
পৃথিবীতে কত ভাষা আছে? তিন হাজার না তার চেয়ে বেশি? পৃথিবীর এই হাজার হাজার ভাষা আর তাদের অসংখ্য উপভাষাগুলোর উদ্ভব কি একটি আদিম ভাষা থেকে? ঐ সব প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষা কোনগুলো, তাদের বয়স কত, কোন আদিম ভাষা কখন কোন অঞ্চলে কোন মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল? এসব প্রশ্নেরও সঠিক উত্তর আমরা দিতে পারব না, কারণ অনেক অনুসন্ধান করেও সব কথা জানা যায়নি। কত ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কে জানে? আর তার সাথে সাথে কত মানুষের কত চিন্তা, কত ভাবনা, কত অভিজ্ঞতা? সভ্যতার যেমন উত্থান আছে, পতন আছে, ভাষারও হয়তো তেমনি। কিন্তু অনেক সভ্যতা, অনেক জাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে অথচ তাদের ভাষা ধ্বংসে হয়ে যায়নি, আশ্চর্যজনকভাবে অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার স্মৃতিকে বহন করে টিকে আছে কোনো কোনো ভাষা, তবে একটি ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলে একটি জাতিও ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

একটি ভাষা বলতে আমরা কি বুঝি? ভাষা বলতে আমরা বুঝি ছোট বা বড় একটি জনসমষ্টির ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যম বা মৌখিক যোগাযোগের বাহনকে। পুঁথির ভাষা তো মুখের ভাষাকে ধরে রাখারই প্রয়াস মাত্র। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় এমন অনেক ছোট ছোট ভাষাগোষ্ঠী আছে যাদের সদস্য সংখ্যা কয়েকশতের বেশি নয় এবং দ্রুত ঐসব ভাষা অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে বা মৃত ভাষায় পরিণত হতে চলেছে। আবার এমনও দেখা যায় যে ক্ষুদ্র একটি অঞ্চলের ভাষা পৃথিবীর বিরাট অংশ জুড়ে আধিপত্য করছে। à¦¯à§‡à¦®à¦¨Ñ à¦®à¦¾à¦°à§à¦•à¦¿à¦¨ যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ইংল্যান্ডের ভাষার একক আধিপত্য। ভাষার পৃথিবী এক আশ্চর্য পৃথিবী কারণ ভাষার কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক, ধর্মীয়, জাতীয় সীমারেখা নেই, একই ভাষা বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জাতির মাতৃভাষা হতে পারে আবার একটি ভাষা কেবল একটি দেশের একটি জাতির, একটি ধর্মের মানুষের ভাষাও হতে পারে।

ভাষা ও জাতীয়তা সর্বদা একাত্ম নয় তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা সম্পর্কিত হতেও পারে। যে জাতি বিজাতি দ্বারা বিজিত ও শাসিত সে জাতির ভাষা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বঞ্চিত। অনেক সময় সে ভাষা বিদেশি শাসক দ্বারা অবদমিত অথচ হয়তো সেই অবহেলিত ও নিষ্পেষিত ভাষাই ঐ জাতির সংস্কৃতি এবং জাতীয় অধিকারের প্রতীক। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যা আমরা দেখেছি। অন্য দেশেও এমন ঘটনা ঘটেছে। দেশ বিভাগের সময় পোল্যান্ড এবং রুশ জারের অধানে ফিনল্যান্ড ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঐতিহাসিক ঘটনা। আবার একই ভাষা একাধিক জাতির জাতীয় ও মাতৃভাষা হতে পারে। স্প্যানিশ বিজয়ের ফলে দক্ষিণ আমেরিকার বহু রাষ্ট্র এবং মধ্য আমেরিকার মেক্সিকোতে স্প্যানিশ ভাষা সে মর্যাদা পেয়েছে। একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার অধীন একটি রাষ্ট্রে আবার একাধিক ভাষা রাষ্ট্রীয় বা সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করতে পারে, সুইজারল্যান্ডে ফরাসি, জার্মান ও ইটালীয় ভাষা, বেলজিয়ামে ফেমিশ এবং ফরাসি ভাষা, কানাডায় ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা সে মর্যাদার অধিকারী।

ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মধ্যে সীমারেখা কিন্তু সর্বদা স্পষ্ট নয়, ঊনবিংশ শতাব্দীতে নরওয়ে ডেনমার্কের অধীনে ছিল বলে ডেনো-নরওয়েজিয়ান নামে যে সাহিত্যিক ভাষাটি গড়ে উঠেছিল, তা ঐ দুই দেশের সাহিত্যকর্মেই ব্যবহৃত হতো, বিশ্ববিখ্যাত নাট্যকার হেনরিক ইবসেন যে ভাষায় তার বিখ্যাত নাটকগুলো রচনা করেছিলেন। আজও একজন সুদক্ষ ডেনমার্কবাসী একজন নরওয়েজিয়ানের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে পারেন। নরওয়ে ডেনমার্ক থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করলে দুই দেশের ভাষার বিকাশ ঘটে স্বাধীনভাবে ফলে আধুনিক নরওয়ে ও ডেনমার্কের ভাষা আলাদা কিন্তু ভাষা দুটি বিবর্তনের ইতিহাসে যথার্থই স্বতন্ত্র কি না সে প্রশ্ন উঠতে পারে। বেলজিয়ামের জার্মানভাষীদের ফেমিশ এবং হল্যান্ডের ডাচ ভাষা নিয়েও একই প্রশ্ন তোলা চলে। একজন ফেমিশভাষীর পক্ষে হল্যান্ড গিয়ে কথাবার্তা চালাতে কোনো অসুবিধে নেই। স্পষ্ট রাজনৈতিক সীমারেখা থাকা সত্ত্বেও ঐসব ক্ষেত্রে ভাষাতাত্ত্বিক সীমারেখা অস্পষ্ট।

একই অঞ্চলে একই ভাষার মধ্যে ভৌগোলিক বৈচিত্র্য উপেক্ষণীয় নয়, ভাষার এই বৈশিষ্ট্যকেই আমরা উপভাষা বলে থাকি। বিস্তীর্ণ ভূ-খণ্ডে সম্প্রসারিত একটি ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক পার্থক্য কখনো-কখনো ব্যাপক। স্কটল্যান্ড ও গ্রেট ব্রিটেনের ভাষার কথা ধরা যাক। স্কটল্যান্ডের একটি স্থানীয় ও নিজস্ব সাহিত্যিক ভাষা আছে, এ ভাষা ইংল্যান্ডের শিষ্ট ইংরেজি ভাষা থেকে পৃথক। চতুর্দশ শতক থেকে বর্তমান কাল অবধি বহু বিশিষ্ট সাহিত্যিক ঐ ভাষা ব্যবহার করে আসছেন; ঐ ভাষার নিজস্ব অভিধানও রয়েছে। স্কটিশ উচ্চভূমিতে প্রাচীন কেল্টিক ভাষার অস্তিত্বের কারণেই স্কটল্যান্ডের ভাষায় ঐ পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। ইংল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান প্রভাবের ফলে অ্যাংলো-স্যাক্সন উপভাষাগুলো তাদের আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য লাভ করেছিল। এখন প্রশ্ন হলো স্কটিশ ভাষা কি একটি স্বতন্ত্র ভাষা না ইংরেজি ভাষার অন্তর্গত একটি উপভাষা? উত্তরাঞ্চলের ভাষার সঙ্গে ইংল্যান্ডের অন্যান্য অঞ্চলের ভাষার গভীর যোগসূত্র থাকা সত্ত্বেও তাদের পার্থক্য উপেক্ষণীয় নয়। রবার্ট বার্নস বা আলেকজান্ডার গ্রে’র কবিতায় ঐ বিশেষ ভাষার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বস্তুত, ভাষা এবং উপভাষার মধ্যে সীমারেখা টানা সর্বদা সম্ভবপর নয়। যখন একই ভাষা কিছু পার্থক্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন মানুষের মুখের ভাষারূপে গৃহীত হয় তখন ভাষাগত ঐক্যের কথা বলা চলে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ভাষার সঙ্গে দেশ, কাল, জাতি, ধর্ম, রাষ্ট্র বা অঞ্চলের সঙ্গতি থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। উপরি-উক্ত পটভূমিকায় আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করবো।

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা : ইউরোপের প্রায় সমগ্র এবং এশিয়ার অনেকটা জুড়ে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠী প্রচলিত। খ্রিস্টের জন্মেরও কয়েক হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া থেকে উদ্ভূত হয়ে যে ভাষা একদিকে ইউরোপে এবং অন্যদিকে পারস্য ও ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক অবস্থায় পারস্য ও ভারতবর্ষে আগত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার দুটি শাখার মধ্যে এতই সাদৃশ্য ছিল যে তাদের ইন্দো-ইরানীয় বলা হতো। পরে ঐতিহাসিক কারণে কালের বিবর্তনে পারস্য ও ভারতবর্ষে আগত ভাষার স্বাধীন ও স্বতন্ত্র বিকাশ ঘটে। ইরানীর শাখার আধুনিক বিবর্তন ফারসি, ভারতবর্ষে আগত ইন্দো-ইউরোপীয় বা ইন্দো-ইরানীয় ভাষার নাম ইন্দো-আর্যভাষা। আর্য-ভাষার প্রাচীন রূপ বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষায়, মধ্যরূপ পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ ভাষায় আর আধুনিক রূপ পাঞ্জাবি, সিন্ধি, রাজস্থানি, মারাঠি, গুজরাটি, সিংহলি, হিন্দি-উর্দু বা হিন্দুস্তানি, উড়িয়া, বাংলা, আসামি ইত্যাদি ভাষা।

প্রাচীন ভারতবর্ষের ভাষার সঙ্গে আশ্চর্য সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় লিথু ও লেটিশ নামক একজোড়া উত্তর-মধ্য ইউরোপীয় ভাষার, এই দুটি ভাষা নিয়ে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর বেল্টিক শাখা গঠিত। বেল্টিকের প্রতিবেশী শাখা স্লাভিক, এই স্লাভিক শাখার ভাষাগুলো পূর্ব ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়ানো। পোলিশ, চেক, স্লোভাক ভাষা নিয়ে পশ্চিম স্লাভিক, বুলগেরীয়, সার্বো-ক্রোশীয় নিয়ে দক্ষিণ স্লাভিক বা বলকান রুশ ভাষা নিয়ে পূর্ব স্লাভিক উপশাখা গঠিত। রুশ ভাষা স্লাভিক ভাষাগুলোর মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত। ইন্দো-ইরানীয় ও আর্য, বেল্টিক এবং স্লাভিক শাখা নিয়ে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর শত শাখা। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হেলেনিক, পুরাতন এথেন্স নগরীর সভ্যতার ভাষা এটি এ-ভাষারই অন্তর্গত। হেলেনিক শাখার গ্রিক ভাষা দীর্ঘদিন পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের যোগাযোগের বাহন ছিল। সাহিত্য ও সভ্যতার বাহন হিসেবে গ্রিক ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। ইতালিক ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর আর একটি উল্লেখযোগ্য ভাষা, গ্রিসের মতো প্রাচীন ইতালির ভাষাও বিভিন্ন উপভাষার সমন্বয়, যার একটি ওসকান আর একটি উমব্রিয়ান; কিন্তু ইতালীয় উপভাষাগুলোর মধ্যে লাতিন আর সব উপভাষাকে ছাড়িয়ে কেবল ইতালিতেই নয় সমগ্র বিশ্বে সঙ্গত করণেই খ্যাতি অর্জন করেছে। লাতিন কেবল অমর সাহিত্য সৃষ্টির ভাষা হিসেবেই নয় সঙ্গে সঙ্গে বিশাল রোমক সাম্রাজ্যের সরকারি ও সামরিক ভাষা হিসেবেও অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। প্রাচীন বা কাসিকাল লাতিন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ভাষারূপে আর চলিত লাতিন সাধারণ সৈনিক, ব্যবসায়ী ও উপনিবেশ স্থাপনকারীদের ভাষা হিসেবে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ঐ ভাষাই কালের বিবর্তনে বর্তমানকালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাতীয় ভাষায় পরিণত হয়। রুমানীয়, ইতালীয়, ইতালি, পর্তুগিজ, স্পেন, ফ্রান্স-এর ভাষা রোমান্স শাখাভুক্ত; আধুনিক রুমানীয়, ইতালীয়, পর্তুগিজ, স্প্যানিস এবং ফরাসি ভাষা যার নিদর্শন। স্প্যানিস ভাষা আবার দক্ষিণ বা লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আর পর্তুগিজ ভাষা ব্রাজিলে বিস্তারিত।

ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর জার্মানিক শাখাও বহুল বিস্তৃত। আইসল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইটজারল্যান্ড, জার্মানি ও অস্ট্রিয়াতে এই শাখার ভাষাগুলো জাতীয় ভাষা। ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর বেল্টিক শাখা এক সময়ে চেকোস্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, দক্ষিণ জার্মানি, উত্তর ইতালি, ফ্রান্স এবং বিট্রিশ দ্বীপপুঞ্জে চালু ছিল। আজও এ ভাষার স্বাক্ষর পাওয়া যায় আয়ারল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলে, স্কটল্যান্ডের উত্তর উচ্চ ভূমিতে, ওয়েলস্-এ আর ফ্রান্সের ব্রিটানিতে। ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর দুইটি শাখা আলবেনীয় এবং আরমেনীয় আজও জীবিত ভাষা কিন্তু হিট্টি আজ একটি মৃত ভাষা।

ফিনো-উগ্রিক এবং বাস্ক : ইউরোপের ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠী বহির্ভূত ফিনিশ, ইস্টোনীয় এবং হাঙ্গেরীয় ভাষা ফিনো শাখাভুক্ত আর ল্যাপিস, পারসিয়ান ও উত্তর সাইবেরিয়ার স্যামোয়েড ভাষা উগ্রিক শাখাভুক্ত। বাস্ক ভাষা স্পেন ও ফ্রান্সে প্রচলিত।

সেমেটিক-হামিটিক : সেমেটিক ভাষা পুরাতন বিশ্বের আশিরীয় এবং ব্যাবিলনীয় সভ্যতার বাহন ছিল। বাইবেলের পুরাতন টেস্টামেন্টের ভাষা হিব্রু সেমেটিক শাখার। আরবি ভাষাও সেমেজিক শাখাভুক্ত, পবিত্র কোরআন শরীফের, ইসলাম ধর্মের এবং বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে আরবি ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। হামিটিক ভাষা প্রাচীন মিসরের আর আধুনিক হামিটিক ভাষা উত্তর ও মধ্য আফ্রিকায় প্রচলিত। ইথিওপিয়ার আবিসিনিয়ার ভাষা এ শাখাভুক্ত।

আল্টাইক এবং পোলিও-সাইবেরীয় : মধ্য এশিয়ার আল্টাই পার্বত্য অঞ্চল থেকে উদ্ভূত এ গোষ্ঠীর শাখা তুরস্কের তুর্কি ভাষা এবং মঙ্গোল তুঙ্গুজ ভাষা। সাইবেরিয়ার উত্তর পূর্বের ইয়াকুত ভাষা, সাইবেরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের কাজাক, উজবেক এবং তুর্কমেন ভাষাও এ শাখার সঙ্গে সম্পর্কিত।

সিনো-টিবেটান : চীনা ভাষা এ গোষ্ঠীর প্রধান শাখা, পৃথিবীর বৃহত্তম জনগোষ্ঠী চীনা ভাষাভাষী। চীনা ভাষাকে অবশ্য অনেকে একটি মাত্র ভাষা না বলে কয়েকটি ভাষা বলেছেন কারণ চীনের এক অঞ্চলের মানুষ আরেক অঞ্চলের ভাষা বুঝতে পারেন না। তবে চৈনিক লিখন প্রণালি চীনা ভাষার ঐক্য ও যোগসূত্রের বাহন। তিব্বতি ও বার্মি ভাষা চীনা ভাষার সঙ্গে বংশগতভাবে সম্পর্কিত, এসব ভাষার শাখা-প্রশাখা ভারতীয় উপমহাদেশ ও চীনের মধ্যবর্তী ভূখণ্ডে বা ইন্দো-চীনে প্রচলিত। কোরীয় ভাষার সাদৃশ্য রয়েছে তিব্বতি ও বার্মি ভাষার সঙ্গে জাপানি ভাষার লিখন প্রণালি চীনা লিখন প্রণালির মতোই যদিও জাপানি ভাষার ইতিহাস পৃথক। মালয়-পলিনেশীয় ভাষা মাদাগাস্কার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, নিউজিল্যান্ড ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিস্তৃত। অস্ট্রেলিয়ার আদিম অধিবাসীদের ভাষা আবার ভিন্ন বংশজাত। ভারতে আর্য ভাষা বহির্ভূত ভাষা গোষ্ঠী হলো দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠী, তামিল, তেলেগু, কানাড়া, মালায়ালাম এ শাখার ভাষা। ককেশাস ভাষা ককেশাসের পার্বত্য অঞ্চলে প্রচলিত, জর্জিয়ান ভাষা এ শাখাভুক্ত।

আফ্রিকার ভাষা : উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে পূর্ব আফ্রিকার গিনি উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলের বহু ভাষা সুডানিজ-গিনি শাখাভুক্ত। আরো দক্ষিণ ভাগে প্রচলিত বান্টু শাখা, যে শাখার ভাষাগুলো মধ্য আফ্রিকার বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়ানো। দক্ষিণ আফ্রিকার আঞ্চলিক ভাষাগুলো খোইন নামে পরিচিত, এর দুটি শাখা-একটি বুশম্যান অপরটি হটেনটট।

আমে রেড ইন্ডিয়ান ভাষা : পশ্চিম গোলার্ধের প্রাচীন ভাষাসমূহকে ইদানীং আমে রেড ইন্ডিয়ান ভাষা বলা হচ্ছে। উত্তর আমেরিকার কানাডার উত্তর থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে পশ্চিমী উপনিবেশ স্থাপনের পূর্বে আদিবাসীদের বা রেড ইন্ডিয়ানদের মধ্যে প্রচলিত অসংখ্য ভাষা মোটামুটিভাবে ছয়টি শ্রেণীতে বিন্যস্ত। এস্কিমো-এলিউশিয়ান শাখা এলিউশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, উত্তর কানাডা এবং গ্রিনল্যান্ডে প্রচলিত। এলগোনকুইন-ওয়াকাশ শাখা- দক্ষিণ কানাডা ও উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ ভূভাগে ছড়ানো ছিল। হোকা-সিউ শাখা- উত্তর আমেরিকা থেকে মেক্সিকো পর্যন্ত বিস্তৃত। না-দেনে শাখা-পশ্চিম কানাডা ও আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের ভাষা। পেনুশিয়া শাখা-ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ওরিগন এবং ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের ভাষা। উটো-আজটেক শাখা-পশ্চিম আমেরিকা, মধ্য মেক্সিকো এবং পানামা পর্যন্ত সম্প্রসারিত।

উপরোল্লিখিত রেড ইন্ডিয়ান ভাষাগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল উটো-আজটেক ভাষা গোষ্ঠী। এ গোষ্ঠীর নাহুয়াটল ভাষা আজটেক সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রভাষা ছিল। দক্ষিণ মেক্সিকো ও মধ্য আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ভাষা ছিল মায়া-সোকো, মায়া সভ্যতার ভাষা। আরওয়াক শাখা এন্টিলেসে প্রচলিত ছিল এবং এ শাখার ভাষা এক সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশ জুড়ে ছিল। কারিব ছিল আমাজনের উত্তরাঞ্চলের ভাষা আর কিচুয়া পেরুর ইন্কা সভ্যতার ভাষা। আজটেক, মায়া এবং ইন্কা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সমৃদ্ধ প্রচীন সভ্যতা।

পৃথিবীর ভাষাসমূহের উপরি-উক্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণী থেকে বোঝা যায়, এ বিশ্বে বিচিত্র ও অসংখ্য ভাষা প্রচলিত, কতো ভাষা বিলুপ্ত আবার কতো ভাষা বিস্তৃত ভৌগোলিক অঞ্চলে বিপুল মানবগোষ্ঠীতে প্রাসারিত। ভাষা বিস্তারের প্রধান উপায় যেমন এক ভাষাভাষী জাতি কর্তৃক অপর ভাষাভাষী অঞ্চল বিজয় তেমনি ভাষা বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ এক ভাষাভাষী জাতির কাছে অপর ভাষাভাষী জাতির পরাজয়। বিজয়ী এবং বিজিত জাতির রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল বিজয়ী ও বিজিত জাতির ভাষার পারস্পরিক সম্পর্ক ও বিবর্তন, বিশেষত বিজিত ভাষার ভবিষ্যৎ। বর্তমানে বিভিন্ন পাশ্চাত্য উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভ করে তাদের উপেক্ষিত, অনাদৃত, অবহেলিত ভাষাসমূহকে দ্রুত উন্নত করার কাজে ব্যাপৃত। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে বর্তমানে জাতীয় ভাষাগুলো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক হিসেবে আদৃত হয়েছে। এসব দেশে বোধগম্য কারণেই ভাষা জাতীয় স্বাধীনতা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মর্যাদাবোধের প্রতীক। বাংলাদেশেও বাংলা ভাষা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীন বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদাবোধের প্রতীক।

ভাষার বয়স : ভাষার বয়স কত? ভাষা ব্যবহারকারী মানুষের বয়স কত? ভাষা ও মানুষের বয়স কি এক? এসব প্রশ্ন যেমন মৌলিক উত্তরও তেমনি জটিল। এ সব প্রশ্নের কোনো সহজ বা সংক্ষিপ্ত উত্তর নেই। ভাষা ও সভ্যতার ইতিহাস পরস্পর সম্পর্কিত। মানুষের প্রাক্- ইতিহাস নির্ণয়ে প্রাতœà¦¤à¦¾à¦¤à§à¦¤à§à¦¬à¦¿à¦• গবেষণা খুবই কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়েছে, প্রতœà¦¤à¦¾à¦¤à§à¦¤à§à¦¬à§à¦•à¦¿ নিদর্শনের মাধ্যমে মানুষের দৈহিক বিবর্তনের প্রমাণপঞ্জি পাওয়া গিয়াছে কিন্তু ভাষার প্রাক্-ইতিহাসের প্রত্যক্ষ প্রতœà¦¤à¦¾à¦¤à§à¦¤à§à¦¬à¦¿à¦• নির্দশন কেবলমাত্র লিখন-প্রণালি আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ের পাওয়া যায়। পাথর, পোড়ামাটি প্রভৃতির গাত্রে উৎকীর্ণ যেসব লেখা পাওয়া গেছে তার প্রাচীনতমগুলোর বয়স পাঁচ হাজার বছরের বেশি নয়, অথচ ভাষার বয়স অনেক বেশি, ভাষার উদ্ভব পাঁচ হাজার বছরের অনেক আগে হয়েছিল। সুতরাং ভাষার লিখিত রূপের প্রাচীনতম নিদর্শন থেকেও ভাষার উদ্ভব বা বিবর্তনের পূর্ণ সাক্ষ্য- প্রমাণ পাওয়া যায় না। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় পণ্ডিতরা তাদের সমকালীন কথ্য এবং প্রাচীন লিখিত ভাষাসমূহের পূর্বইতিহাস পুনর্গঠনের এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তারা ঐতিহাসিক  ও তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের সাহায্যে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সমর্থ হন যে ইউরোপের অধিকাংশ এবং নিকট প্রাচ্য ও ভারতবর্ষের অনেক ভাষা পরস্পর সম্পর্কিত, ঐ সম্পর্ক ভাষাগুলোর সাংগঠনিক সাদৃশ্যের ভিত্তিতে স্থির করা হয়েছিল। ফলে তারা যে একটি অভিন্ন প্রাচীন ভাষা থেকে উদ্ভূত তা বোঝা যাচ্ছিল; ঐ প্রাচীন ভাষার তারা নাম দিয়েছিলেন ‘ইন্দো-ইউরোপীয়’। যে ভাষা আর আজকে বলা হয় না বা যার কোনো লিখিত রূপ পাওয়া যায়নি। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা বংশের ইতিহাস এভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল। এই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে অনেকেই মনে করেছিলেন যে একই পদ্ধতি অবলম্বন করে মানব জাতির আদি ও প্রাচীন ভাষাগুলোর উদ্ভব ও বিবর্তনের ইতিহাস পুনর্গঠন করা যাবে এবং সম্পর্কিত সমস্যাগুলোরও সমাধান হবে। কিন্তু পরবর্তী গবেষণাসমূহ প্রমাণ করেছে যে, ভাষার প্রাচীনতম লিখিত নিদর্শনের ওপরে ঐ পদ্ধতি প্রয়োগ করে দশ হাজার বছরের বেশি পুরাতন ইতিহাস পাওয়া সম্ভব নয়। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার ইতিহাসও চার হাজার বছরের বেশি পুরোনো নয় আর ভাষার বয়স দশ হাজার বছরের চেয়ে অনেক বেশি।

আজকের পৃথিবীতে প্রায় চার হাজারেরও বেশি ভাষায় কথা বলা হয়। উত্তর আমেরিকার ছোট ছোট রেড ইন্ডিয়ান উপজাতি থেকে শুরু করে ইউরোপ, আমেরিকা,  আফ্রিকা ও এশিয়ার সমস্ত বড় বড় জাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথিবীর ঐ চার হাজার ভাষা অনেকগুলো ভাষাবংশে শ্রেণীবদ্ধ, যার প্রতিটিতে দুই থেকে শতাধিক পর্যন্ত ভাষা অন্তর্ভুক্ত। সম্পর্কিত ভাষাগুলো এক একটি প্রতœà¦­à¦¾à¦·à¦¾à¦° বিবর্তিত রূপ যে প্রতœà¦­à¦¾à¦·à¦¾ এখন অবলুপ্ত বা যার কোনো লিখিত নিদর্শন নেই। বংশগতভাবে সম্পর্কহীন বহু সংখ্যক ভাষাগোষ্ঠীর অস্তিত্ব মানব সমাজের ভাষার বৈচিত্র্যের পরিচায়ক এবং এ সম্ভাবনার দ্যোতক যে মানুষের প্রাক্-ইতিহাসের আদি পর্বেই ভাষার উদ্ভব। বস্তুত, ভাষা উদ্ভবের ইতিহাস পুনর্গঠনের অত্যাধুনিক পদ্ধতিও মানব সমাজের আদি ভাষা বা ্আদিম ভাষাগুলোর ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ আভ্যস প্রদানে সক্ষম নয়।

বর্তমানে শতাব্দীতে ভাষা বিশ্লেষণ কেবলমাত্র সভ্য জাতিদের ভাষাগুলোর মধ্যেই অবশ্য সীমাবদ্ধ নয়, বহুসংখ্যক অনুন্নত উপজাতি ও আদিবাসীদের ভাষাও বিশ্লেষিত হয়েছে। ফলে ভাষার বিবর্তন সম্পর্কে পূর্বধারণার পরিবর্তন ঘটেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পণ্ডিতদের ধারণা ছিল যে, অনুন্নত জাতি বা উপজাতিদের অর্থাৎ আদিবাসীদের ভাষা তাদের জীবনযাত্রার মান এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির মতোই অনুন্নত। সুতরাং তাদের জীবনযাত্রার প্রণালি থেকে যেমন মানবসভ্যতার আদিম স্তরের পরিচয় পাওয়া যায় তেমনি তাদের ভাষা থেকেও ভাষা বিবর্তনের আদিম স্তরের সন্ধান পাওয়া যাবে। কিন্তু আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনির আদিবাসীদের ভাষাসমূহের বিশ্লেষণ থেকে ভাষার ইতিহাসের আদিম বা প্রতœà¦¸à§à¦¤à¦°à§‡à¦° কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি বরং সন্দেহাতীতরূপে প্রমাণিত হয়েছে যে ঐ সব অনুন্নত আদিবাসীদের ভাষাসমূহ অন্যান্য উন্নত জাতিদের ভাষার মতোই পরিপূর্ণরূপে বিকশিত। আজকের পৃথিবীতেও যেসব মানবগোষ্ঠী একান্তই আদিম রয়ে গেছে যাদের জীবন যাত্রায় ব্যবহৃত উপাদান কাষ্ঠ, অস্থি এবং প্রস্তরখণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং যারা পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভিক্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছে তাদের ভাষাও উন্নত ও সুসভ্য জাতির ভাষা ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, রুশ, চীন বা জাপানির মতোই উন্নত ও মানব মনের ভাবের আদান-প্রদানে সক্ষম।

এখন এটা স্পষ্ট অনুধাবন করা গেছে যে, ভাষার জন্ম বা উদ্ভবের ইতিহাস এবং সম্পর্কিত সমস্যাবলি কেবল ভাষার প্রাচীন নির্দশন বা বিভিন্ন প্রতœà¦­à¦¾à¦·à¦¾à¦° তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমেই সমাধান করা যাবে না। সমস্যাটি কেবল ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নয় বরং মানুষের প্রাণী-তাত্ত্বিক ও সভ্যতার বিবর্তনের আলোকে বিচার করতে  হবে। প্রতœà¦¤à¦¾à¦¤à§à¦¤à§à¦¬à¦¿à¦• আবিষ্কার ও নিদর্শন থেকে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, মানুষ এবং প্রাণীজগতে তার নিকটতম আত্মীয় ‘এনথ্রপয়েড’ অথবা মানবসদৃশ ‘এইপ’ বা দানবের পূর্বপুরুষ একই, যে সম্ভাব্য পূর্বপুরুষ এই পৃথিবীতে কয়েক লক্ষ বছর আগে বসবাস করত। ‘মানব’ এইপ-এর পৃথক অস্তিত্বের বয়সও অন্তত ত্রিশ-চল্লিশ লক্ষ বছর পুরোনো। সম্প্রতি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রতœà¦¤à¦¾à¦¤à§à¦¤à§à¦¬à¦¿à¦• নিদর্শন থেকে অন্তত বিশ লক্ষ বছর আগেকার হমিনিড নামক যে প্রাণীর অস্তিত্ব আবিষ্কৃত হয়েছে যা শারীরিক বৈশিষ্ট্যে আধুনিক মানবের চেয়ে অসম্পূর্ণ হলেও (বিশেষত ছোট মগজের কারণে), প্রাণীটি ‘এইপ’-এর চেয়ে অনেক অগ্রসরমান বা মানবের অনেক কাছাকাছি। এই হমিনিড যদিও ‘হোমাজেনাস’ এরই অন্তর্ভুক্ত তবুও মানুষের পূর্বপুরুষ ‘স্যাপিয়েন’ থেকে তা আলাদা। উল্লিখিত ‘হমিনিড’ বা ‘হমিনাইড’ বা ‘হমিনয়েড’ রা সভ্যতার কিছু প্রাথমিক উপাদান আয়ত্ত করতে পেরেছিল তারা পাথরের হাতিয়ার তৈরি ও ব্যবহার করত। পূর্ব আফ্রিকায় আবিষ্কৃত কিছু প্রস্তর উপাদান থেকে মনে হয় যে সভ্যতার আংশিক বিবর্তন বিশ লক্ষ বছর আগে শুরু হয়েছিল, কিন্তু সভ্যতার পূর্ণ বিকাশ ‘হমিনিড বা হমিনাইড স্পেসিজ’-এর আবির্ভাবের পূর্বে ঘটেনি, যার বয়স দশ লক্ষ বছরের মতো। পূর্ণাঙ্গ সভ্যতার বিকাশ ভাষার অস্তিত্ব প্রমাণ করে; ভাষা ছাড়া সভ্যতার বিকাশ কল্পনা করা যায় না, ভাষাই হচ্ছে সভ্যতার সম্প্রসারণ ও বিকাশের পূর্বশর্ত, ভাষা হচ্ছে সভ্যতার প্রবহমানতার বাহন। সম্ভবত ভাষার উদ্ভব বা শুরু হয়েছিল পূর্বোল্লিখিত ‘হমিনিড’ দের মধ্যে বিবর্তনের ইতিহাসে যাকে বলা যায় ‘প্রাক্ভাষা’ তবে প্রকৃত ভাষার বিকাশ ঘটেছিল পরবর্তী স্তরের হমিনিডদের মধ্যে সভ্যতার বিকাশ মুহূর্তের সময় থেকে। যদিও এ কথা মনে রাখতে হবে যে আদি হমিনিডদের সভ্যতার মতো ভাষাও একেবারেই প্রাথমিক স্তরের ছিল যা অনেকটা জীব-জন্তুর আওয়াজ বা ডাকের মতো।

প্রতœà¦¤à¦¾à¦¤à§à¦¤à§à¦¬à¦¿à¦• প্রমাণাদি থেকে ভাষা উদ্ভবের ঐ সময়কাল (দশ লাখ বছর আগে) অনুমান করা সম্ভব হলেও তার থেকে ভাষার বিবর্তনের ইতিহাস পুনর্গঠন করা সম্ভব নয়। ঐ সমস্যা সমাধানে মানুষের ভাষাকে জীব-জন্তুর ভাষা বা যোগাযোগের মাধ্যমের সঙ্গে সামগ্রিকভাবে তুলনা করে বিচার করতে হবে। সম্ভবত আদি হমিনিডদের ভাষা মূলত আহ্বান বা ডাকের পুনরাবৃত্তির মতো ছিল যাকে আমরা ‘বদ্ধ ভাষা’ বলতে পারি। অন্যদিকে মানুষের ভাষা হলো ‘মুক্ত ভাষা’ এ ভাষা এমন একটি ব্যবস্থা যা সংখ্যাহীন কথার সৃষ্টি করতে পার, যে কথার হয়তো কিছুটা শেখা কিন্তু বাকিগুলো সম্প্রদায়ে ব্যবহৃত কথার সাদৃশ্যে সৃষ্ট। মানুষের ভাষার অভিনবত্ব এই যে সে কথা সৃষ্টি করতে পারে এবং বুঝতে পারে মানুষ নিত্য নব কথা তৈরি করতে পারে, যে কথা কখনো বলা হয়নি বা শোনা যায়নি। মানুষের ভাষার এই সৃষ্টিশীল দিকটি জীব-জন্তুদের আহ্বানাত্মক ভাষায় নেই, এটি মানুষের ভাষার প্রথম বৈশিষ্ট্য। মানব ভাষার দ্বিতীয় বিশেষত্ব অতীত ও ভবিষ্যতের অর্থাৎ যা বর্তমানে ঘটছে না বা বর্তমানে যার অস্তিত্ব নেই সে বিষয় নির্দেশ ক্ষমতা। মানুষের যখন জন্ম হয়নি বা যখন সে থাকবে না তখনকার কথাও সে বলতে পারে। সে কথার মধ্য দিয়ে কিংবদন্তি, কাহিনী, ঘটনা, চরিত্র, অপ্রাকৃত সব বিষয়ের সৃষ্টি করতে পারে, যা হয়তো কখনো ঘটেনি বা কখনো ঘটবে না তেমন বিষয়ও সে কথার মধ্য দিয়ে বলতে পারে। প্রাণিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষই দৈহিক উপস্থিতি বা অস্তিত্ববিহীন বিষয় ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে।

ভাষার অপর বৈশিষ্ট্য শিখতে হয় এবং তা শেখান হয়। মানব শিশু জন্ম মুহূর্তে বিশেষ কোনো ভাষাভাষী নয়, সে বড়দের কথা শোনে আর অনুকরণ করে একটি ভাষা শিখতে শুরু করে যেটিকে তার মাতৃভাষা বলা হয়, পরে সে ক্রমে ক্রমে ঐ ভাষার সংগঠনটি আয়ত্ত করে ফেলে এবং ঐ ভাষার অন্তর্নিহিত সূত্রসমূহের প্রয়োগে ভাষাটির পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করতে পারে। অন্যদিকে জীব-জন্তুদের আহ্বান বা ডাক একটি বদ্ধভাষা, যার প্রত্যেকটি ডাক ধ্বনি বা তাৎপর্যের দিক থেকে নির্দিষ্ট। মানুষের প্রাক্- ইতিহাসে হমিনিডরা হয়তো প্রয়োজনে একাধিক ডাককে মিলিয়ে ব্যবহার করতে শুরু করে, এখনো জীব-জন্তুর মধ্যে এমন মিশ্র বা সমন্বিত ডাক শোনা যায়। যদি ধরে নেয়া যায় যে শুরুতে কেবল দশটি ডাক প্রচলিত ছিল এবং ক্রমে তারা তিনটি করে ডাক মিলিয়ে ব্যবহার করতে থাকে, তাহলে ডাকের সংখ্যা বেড়ে শতের কাছকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। ডাকগুলোও লম্বা হয়ে যায়। ঐ মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট প্রত্যেকটি নতুন ডাকের দুটো অংশ একটা মূল আর একটা মিশ্রণ। এভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক অর্থবহ ডাক থেকে মিশ্রিত বা সমন্বিত ডাক ও সম্প্রসারিত অর্থ সৃষ্টির অভ্যাসের মধ্যেই মানব ভাষার মুক্ত প্রকৃতির মূল নিহিত, যখনই নির্দিষ্ট ও সীমিত সংখ্যক ডাক সংবলিত ভাষার  বদ্ধ ব্যবস্থা মিশ্রণ ও সমন্বয়ের ফলে মুক্ত ও সৃজনশীলতায় রূপান্তরিত হলো তখন থেকেই তা প্রত্যক্ষাতীত বিষয় নির্দেশের ক্ষমতা অর্জন করল আর তখন থেকেই তা হলো ভাবের আদান-প্রদান বা যোগাযোগের বাহন।

এভাবেই সৃষ্টিশীলতা, সভ্যতার সম্প্রসারণ ও দূরাগত বিষয় নির্দেশের বিবর্তনে হমিনিড গোষ্ঠীর সীমিত সংখ্যক ডাক সংবলিত ভাষা প্রাক্-ভাষায় রূপান্তরিত হয়। প্রাক্-ভাষা ক্রমশ জটিলতায় পরিবর্তমান হয়ে দ্বৈত কাঠামো লাভ করে প্রকৃত ভাষার পথে অগ্রসর হতে থাকে। প্রকৃত উন্মুক্ত ভাষার বিকাশ কিন্তু পুরাতন বদ্ধ ভাষার ছাঁচের মধ্যেই ঘটেছে। হমিনিডদের ডাক ব্যবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্য আধুনিক মানুষের কণ্ঠশ্রুতি ব্যবস্থার মধ্যে এখনো পাওয়া যায়, তবে এটা আর এখন ভাষার অংশ নয়, ভাষার অতিরিক্ত তবে সহগামী। হমিনিডরা যেমন তাদের ডাকের গাম্ভীর্য, আওয়াজ এবং দৈর্ঘ্যরে মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে পারত মানুষ কথা বলার সময়েও তেমনি তার কথাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মানুষ কখনো জোরে বা চড়া করে কথা বলে কখনো বা বলে আস্তে নরম করে। গলায় স্বর মানুষের কথা বলার সময় চড়া ও খাদে ওঠা-নামা করে। কথার মধ্যে আবার নানা রকম ভাষার বাইরের শব্দ বা ধ্বনি ব্যবহৃত হয়, এসব অতিরিক্ত উপাদানগুলো যে কেবল ভাষার অংশ তা নয় এগুলোর ইতিহাস ভাষার চেয়ে প্রাচীন, এগুলো মানুষের পূর্বপুরুষদের বদ্ধ ভাষার স্মৃতিবহ ও উত্তরাধিকার। কিন্তু ভাষার বয়স মানুষের বয়সের সমান না হলেও তা সভ্যতার সমবয়স্ক কারণ ভাষাই হলো সভ্যতার পূর্বশর্ত, ভাষাই হলো সভ্যতার সম্প্রসারণের মাধ্যম, কাজেই মানব ভাষা হলো মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক, ভাষা ও সভ্যতার বয়স এক। বর্তমান শতাব্দীর খ্যাতিমান ভাষা-দার্শনিক নোয়াম চমস্কি। ষাটের দশকে চমস্কির ভাষা সম্পর্কিত মতবাদ শুধু চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেনি বরং শতাব্দীর প্রথমার্ধের ভাষা সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণা ও মতবাদের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তনও আনয়ন করেছে। আলোচ্য নিবন্ধটি সংক্ষেপে চমস্কীয় ভাষাদর্শনের রূপরেখা তুলে ধরার প্রয়াসমাত্র।

(চলবে)

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।