দেশটা ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে

দেশটা ক্রমশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে

হুমায়ুন ফরীদি
তারেক মাসুদ আর মিশুক মুনীর ছিলেন সৃষ্টিশীল ব্যক্তিত্ব। এই মর্মান্তিক মৃত্যু শুধু যে বাংলাদেশের জন্য তি তা না; এটা গোটা পৃথিবীর জন্যই তি। আর এই ধরনের তি কখনো পূরণ করা যায় না। একজন তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীর হতে গেলে যতটা জ্ঞান দরকার, যতটা বুদ্ধিমত্তা দরকার, যতটা মননশীলতা দরকার, যতটা শিা দরকার সেটা অর্জন করতে অনেক দিন লাগে।

যোগাযোগ মন্ত্রণালয় কী করছে জানি না। সড়কগুলো কবে ঠিক হবে জানি না। শুধু ভোট পাওয়ার জন্য রাজনীতি আর দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনীতি এক কথা নয়। আমাদের দেশটাকে রাজনীতিবিদরা যখন যথার্থভাবে ভালোবাসবেন, যখন যথার্থভাবে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জেগে উঠবে, তখনই এই সংস্কারগুলো করা সম্ভব। দেশটা ক্রমে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। সেটা শুধু একা আমার জন্য না, আমার একার কথা আমি ভাবছি না একটা সম্প্রদায় হিসেবে আমি ভীত হয়ে পড়েছি। দেশটা চলছে কীভাবে?

আর্সেনিক সমস্যা, পল্যুশন সমস্যা, সাউন্ড পল্যুশন এসব সমস্যা যারা করছে এবং দুর্নীতি করছে, যারা অপরাধ করছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। মৃত্যুদণ্ড  হওয়া উচিত। কয়েকটা মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলেই কিন্তু এসব বন্ধ হয়ে যাবে।

খাওয়ার মধ্যে বিষ, সবজি ও ফলমূলে কার্বাইড, মাছের মধ্যে ফরমালিন এগুলো যারা করে তাদের কেন বড় ধরনের শান্তি দেয়া হয় না? সরকারের খাজাঞ্চিখানায় আমাদের ট্যাক্স যাচ্ছে না? এই ট্যাক্স দিয়ে আমরা কী পাচ্ছি সরকারের কাছ থেকে? রাস্তায় বেরুলে পুলিশ বা র‌্যাব মেরে ফেলবে। তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?

আমার এক বন্ধু চলে গেছে বিদেশে। আমি তাকে বললাম, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তুই দেশ ছেড়ে চলে গেলি! ও আমাকে অদ্ভুত একটা কথা বলেছিল। ও বললো, এই দেশটার জন্য যুদ্ধ করি নাই, বন্ধু। যেই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম সেটা এই দেশ না। এই দেশটা কুৎসিত হয়ে গেছে, এই দেশটা বেঁচে থাকার জন্য অমানবিক এবং বিশ্রী। এরকম অসভ্য একটা পরিবেশে আমি কেন থাকবো? আমি তো সভ্য মানুষ।

আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আছে যে আমরা হচ্ছি সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। কিন্তু কোথায়, কোথায় আমরা শ্রেষ্ঠ? আমরা তো শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারি না। আমাদের দেশের যিনি নোবেল পুরস্কার পেলেন তাকে আমরা অপমান করি। কল্পনা করা যায়?

এই দেশের শিকরা, আল্লাহর পরই যাদের অবস্থান, তারা ছাত্রীদের উপর যৌন নিপীড়ন করে।

সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো সঠিক জায়গায় সঠিক মানুষটি নাই। অধিকাংশ েেত্রই সব অযোগ্য মানুষ মতা নিয়ে বসে আছে। একটা মূর্খলোক কী দেবে মানুষকে? সে মানুষকে কোন পথ দেখাবে? সে তো নিজেই অন্ধ। তার তো জ্ঞান নাই। এই অবস্থায় আমার প্রশ্ন আমরা এখন কী করবো?

(লেখক হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনেতা। এটি ছিল তার সর্বশেষ লেখা।)