আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতিতে দেশের সর্বত্র গুম ও খুন বেড়ে গেছে

আবু মালিহা
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সর্বত্রই যেন হতাশাজনক চিত্র। কোথাও কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত হত্যা, খুন, গুম এগুলো যেন নিত্যনৈমিত্তিক দুর্ভাগ্যজনক অমানবিক চিত্রগুলো দেখতে হচ্ছে। দেশ আজ চরম অরাজক ও অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ক্রমশই দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যেন অনেকটা হায়েনা আগ্রাসী প্রতিহিংসার দাবানল জ্বালিয়ে। তবে, কেন? এ প্রশ্নের উত্তর তো আমাদেরই খুঁজে বের করতে হবে। দেশের এহেন দুঃখজনক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরার্ট ও ব্লেক বাংলাদেশ সফর করতে এসে বেশ কিছু মন্তব্য করে গেছেন এবং বলেছেন যে, দেশের ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে এক টেবিলে বসে বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হবে। নতুবা দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। বস্তুত এগুলো এক ধরনের বিদেশি পরামর্শকদের কূটনৈতিক সমঝোতা ভিত্তিক পরামর্শ। আদৌও তাতে সমাধানের কোনো ইঙ্গিত আছে কী না, তা একমাত্র রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাই ভালো বলতে পারবেন। ভিনদেশীদের কথা বাদই দিলাম। দেখতে হবে, আমাদের দেশের বর্তমান সরকার প্রধানের আন্তরিকতা এতে কতটুকু! শুধুই কী লোক দেখানো ভাঁওতাবাজি! এ প্রশ্ন দেশের সর্বস্তরের জন সাধারণের। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে যে, যেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকাই মুখ্য, সেখানে তারা আরো বেশি করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে আগুনে ঘি ঢেলে দিচ্ছেন। যেমনটি বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন যে, ‘পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়’। বাস্তবিকই আমরা সে ধরনের ভূমিকাই যেন সরকারি দল বা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দেখতে পাচ্ছি। গায়ে পড়ে মারামারি করার এ ধরনের রাজনীতির মানসিকতা দেশকে সত্যিকার অর্থে কোনো কল্যাণই দিতে পারে না। দেশের বিজ্ঞ রাজনীতিকরা এ বিষয়ে সরকারি এবং বিরোধী দলের প্রতি সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক নসিহত করে যাচ্ছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ইচ্ছে করেই যেন এ ধরনের গঠনমূলক সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত মন্ত্রীদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, দেশে কোনো সমস্যাই নেই। সমস্যা শুধু বিরোধী দল। তাদের ভাষায় ‘বিরোধী দল দেশের ভালো চায় না, তারা শুধু ধ্বংস চায়’। আর যত ভালো কাজ শুধু সরকারি দলই করে যাচ্ছে (?)। এ ধরনের মানসিকতা চিরন্তন! সরকারি দল কখনো নিজের দোষ দেখে না। আমরা জানি বর্র্তমানে দেশ চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে এবং হত্যা, খুন, গুম বিগত যে কোনো সময়ের চাইতে চরম নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এতদসত্ত্বেও সরকারি দল বলছে পূর্বেকার যে কোনো সময়ের চাইতে বর্তমান রাজনীতির অবস্থা অনেক ভালো। বস্তুত এ ধরনের বেসামাল পরিস্থিতিতেও যারা দেখতে পায় যে, আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি ও সামাজিক নিরাপত্তা, দুঃখজনকভাবে বলতে হয় তাদের মানসিক চিকিৎসা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নাই। প্রতিদিনই জাতীয় দৈনিকগুলো দেশের সর্বত্র গুম ও খুনের রিপোর্টগুলো তুলে ধরছে। তাই তো দুমূর্খজনরা বলে থাকেন যে, বর্তমান সরকারের দু’টি গুণ, ‘মানুষ গুম ও খুন’। অতঃপর বলতে চাই, সরকার যদি দেশের ভালো এবং নিজের ভালো চান, তবে যেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করে বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করুন। নতুবা দেশের জনগণের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সরকারের দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈর সরকারের পতন ঘটাতে বাধ্য হবে। আর যে কোনো সরকারের বাড়াবাড়ি কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। অতএব দেশের জনগণের জানমালের আর কোনো ক্ষতি সাধন না করে মহাজোট নামের আওয়ামী সরকারের উচিত জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে পরমত সহিষ্ণুতায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সত্যিকার অর্থে দেশের কল্যাণে কাজ করা।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট ও সহ-সভাপতি সিলেট লেখক ফোরাম।