সংবাদ শিরোনামঃ

আইনের ব্যাপকতা ও বাধ্যবাধকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন ** সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চায় ** আওয়ামী লীগে প্রবল সাংগঠনিক বিপর্যয়; শীর্ষ নেতৃত্বে বিভাজন অত্যাসন্ন ** ঢাবি জাবি রাবি চবি’র চার ভিসি অবৈধ! ** নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ** জাসদই তাহলে মুজিব হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল! ** সংবাদপত্রের পাতা থেকে ** ৮০০ রাইস মিলের চালের দুনিয়া এখন খাজানগর গ্রাম ** আইনের শাসন পরিপন্থী অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে হবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** আদর্শ জননীরূপে একজন নারী **

ঢাকা শুক্রবার ৩০ চৈত্র ১৪১৮, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৩৩, ১৩ এপ্রিল ২০১২

সৈয়দ আশরাফ আলী

বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশী তথা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের প্রতিটি শহরে-নগরে, গ্রাম-গঞ্জে বাংলা নববর্ষ আনন্দ-উল্লাসে উদযাপিত হয়। তবে, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমরা মুসলমানরা অনেকেই মনে করি যে, বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা উচিত নয়। এটি বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ। এর চেয়ে অধিকতর ভ্রান্ত কোনো ধারণা হতে পারে না। বাংলা নববর্ষ সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপিত হলে তার মধ্যে ইসলাম- বিরোধী কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বাংলা সনের জন্ম দিয়েছে মুসলমানরাই। মহানবী (সা.) এর মহান স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক হিযরত-ভিত্তিক হিজরী সন অবলম্বনেই এই বাংলা সন প্রণীত হয়েছে। আর, পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে যে, এই সনের জনক কোনো অমুসলিম নন। এর জন্ম দিয়েছেন একজন মুসলমান বাদশাই।

খ্রিস্টান পোপ গ্রেগরী প্রণীত ‘ইংরেজি’ ক্যালেন্ডারের ঘঊড ণঊঅজ’ঝ উঅণ যদি ধুমধামের সাথে উদযাপন করা যায়, তাহলে মুসলমান বাদশাহ ও জ্যোতির্বিদ প্রণীত বাংলা সনের নববর্ষ উদযাপনে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকবে কেন?

বাংলা সনের ইতিহাস ঘটনাবহুল ও বৈচিত্র্যময়। জন্মলগ্ন থেকেই বাংলা সন তারুণ্যদীপ্ত হয়ে ওঠে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলা সনের শৈশব উত্তীর্ণ হয়নি। জন্মের অব্যবহিত পরেই  তার বয়স হয় ৯৬৩ বৎসর। অর্থাৎ বাংলা সনের প্রথম বৎসরটি যখন শেষ হয় তখন সে ৯৬৪ বৎসরের এক সবল, স্বাস্থ্যবান ‘তরুণ’।

আজগুবি বা হেঁয়ালি মনে হলেও এ দাবি কিন্তু ইতিহাস সমর্থিত। শুধু তাই নয়, বাংলা সনের প্রবর্তন যিনি করেন তিনি কোনো বাংলাভাষী বা বাংলাদেশী নন। তিনি ছিলেন বিশ্বখ্যাত চেঙ্গিস খান ও মহাবীর তৈমুর লং-এর সুযোগ্য বংশধর বিশ্ববিখ্যাত মোগল সম্রাট আকবর দি গ্রেট। সুদূর দিল্লীতে রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত থেকেই তিনি এ দেশে বাংলা সন প্রবর্তন করেন।

‘সন’ ও ‘তারিখ’ দুটিই আরবি শব্দ। প্রথমটির অর্থ হল ‘বর্ষ’ বা ‘বর্ষপঞ্জী’ এবং অন্যটির অর্থ ‘দিন’। ‘তারিখ’ বলতে আবার ইতিহাসও বোঝায়। ‘সাল’ হচ্ছে একটি ফারসী শব্দ, যার অর্থ হলো বৎসর। বাংলা সনের সূত্রপাত হয় আরবি হিজরী সনের ওপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ ইসলামী সনের ওপর ভিত্তি করেই একজন মুসলমান বাদশাহ কর্তৃক বাংলা সনের প্রবর্তন। স্বভাবতই, যারা ইতিহাসকে স্বীকার করেন না বা যারা ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ, তারাই মনে করেন যে, বাংলা সন অমুসলিমদের দ্বারা প্রবর্তিত একটি বর্ষপঞ্জী।

‘ইংরেজি’ তথা ‘গ্রেগরীয়ান’ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, সর্বশ্রেষ্ঠ ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মক্কা থেকে মদিনায় ঐতিহাসিক হিজরত অবলম্বন করে প্রবর্তিত, এই হিজরী সন শুরু হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই তারিখ থেকে। বাংলা সনের মূলে হিজরী সন বিদ্যমান বিধায় হিজরী সালকেই সুকৌশলে বাংলা সনে রূপান্তরিত করা হয়।

মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তারই নির্দেশে ৯৯৮ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সনের প্রবর্তন হয়। বাদশাহ আকবর ৯৬৩ হিজরীতে অথাৎ ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে (১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে) দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। এই ঐতিহাসিক ঘটনা চিরন্তণীয়  করে রাখার জন্য ৯৬৩ হিজরী অবলম্বন করেই বাংলা সন চালু করা হয়। অর্থাৎ ১, ২, ৩-এভাবে হিসেব না করে মূল হিজরী সনের চলতি বছর থেকেই বাংলা সনের গণনা শুরু হয়। ফলে জন্ম বছরেই বাংলা সন ৯৬৩ বৎসর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। উল্লেখ্য, হিজরী সনের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। মহানবী (সা.) স্বয়ং আনুষ্ঠানিকভাবে হিজরী সন চালু করেননি। এটি প্রবর্তন করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে।

হিজরী সনের ক্ষেত্রে যে রকম হিজরতের দিন ও মাস (১২ রবিউল আউয়াল) সুনির্দিষ্টভাবে অবলম্বন না করে শুধুমাত্র সালটিকেই (৬২২ খ্রিস্টাব্দে) সংরক্ষণ করা হয়, বাংলা সনের ক্ষেত্রেও তেমনি সম্রাট আকবরের রাজ্যাভিষেকের দিন ও মাস (১৪ইং ফেব্রুয়ারি) অবলম্বন না করে শুধু বৎসরটি (৯৬৩ হিজরী) সংরক্ষিত হয়।

হিজরী সনের প্রথমদিন হলো পহেলা মহররম। বাংলা সনে তা পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখ করা হয়। ৯৬৩ হিজরীতে মহররম মাস ও বৈশাখ মাস একই সঙ্গে আসে। ফলে, তদানীন্তন শকাব্দের প্রথম মাসটি গ্রহণ না করে হিজরী সনের প্রথম মাস  মহররমের অর্থাৎ বৈশাখ মাসকেই বাংলা সনের মাস হিসেবে পরিচিহ্নিত করা হয়।

বাংলা সনের সৃষ্টি হয় ফসল তোলার সময় লক্ষ্য করে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে সৌর বৎসর অবলম্বনে এই নতুন সন গণনা শুরু হয়। তাই, প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ‘ফসলি সন’ নামে অভিহিত হতো। ‘বাংলা’র জন্য উদ্ভাবিত বলে এটি পরবর্তী পর্যায়ে ‘বাংলা সন’ নামে পরিচিহ্নিত হয়। উল্লেখ্য, একইভাবে ভারতের উড়িষ্যা ও মহারাষ্ট্র প্রদেশে যথাক্রমে ‘বিলায়তী’ ও ‘সুরসান’ নামে আঞ্চলিক সনের সৃষ্টি হয়। এসব সনেরও উৎস-সন হিসেবে হিজরী সনকেই গ্রহণ করা হয়।

সম্রাট আকবরের আমলে সুবা-এ-বাংলা (বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা) মোগল শাসনের আওতাভুক্ত হয়। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এক জটিল সমস্যা দেখা দেয়। প্রজাদের দেয়া খাজনা ফসলের মাধ্যমে আদায় করতে হলে বছরে একটি সময় নির্দিষ্ট থাকা আবশ্যক। কিন্তু সে কালের রাজকীয় সন অর্থাৎ হিজরী সন চন্দ্র সন হওয়ায় প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না। ফলে, সম্রাট আকবর একটি সৌরভিত্তিক সন প্রচলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। উল্লেখ্য, চান্দ্র বৎসর ৩৬৫ দিনের না হয়ে ৩৫৪ দিনের হয়ে থাকে। ফলে, চান্দ্রভিত্তিক আরবি মাস বৎসরের সৌরভিত্তিক ঋতুর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো সামঞ্জস্য বহন করে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বাংলাদেশে পবিত্র রমজান এখন পুরোপুরি না হলেও প্রায় শীতকালে উদযাপিত হয়। কিন্তু ১৫-১৬ বৎসর পূর্বে এটি প্রচণ্ড ও দুর্বিষহ গ্রীষ্মের সময় উদযাপিত হতো।

সম্রাট আকবরের নির্দেশে প্রচলিত হিজরী সনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজ-জ্যোতিষী আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী বহু ভাবনা-চিন্তার পর সনসমূহের উদ্ভাবন করেন তাদেরই একটি হচ্ছে “ফসলি সন’’ বা ‘বাংলা সন’। পূর্বেই উল্লিখিত হয়েছে যে, ফসলের মওসুমের কথা বিবেচনায় রেখে এই নতুন সনের প্রবর্তন হয় বলে এর নাম ‘ফসলি সন’ হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলের নাম অনুযায়ী ‘ফসলি সন’ পরিবর্তিত রূপ ধারণ করে এবং বাংলাদেশে তা ‘বাংলা সন’ নামে অভিহিত হয়।

একটি কথা অবশ্য স্মরণে রাখতে হবে যে, হিজরী সনভিত্তিক হলেও, ‘বাংলা সন’ ও ‘হিজরী সন’ আদৌ একই ধরনের নয়। ‘হিজরী সন’ হচ্ছে চান্দ্র সন এবং ‘বাংলা সন’ সৌর সন। ফলে, একই সময়কাল থেকে যাত্রা শুরু করলেও (৬২২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুলাই তারিখে) ‘হিজরী’ ও ‘বাংলা’ সন দুটির বয়সে কিছুটা পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে এই পার্থক্য এসে দাঁড়িয়েছে ১৪ বছরে। হিজরী সনের হিসেব অনুযায়ী এ বছরটি হলো ১৪৩৩ হিজরী। কিন্তু বাংলা সনের হিসেবে এটি হচ্ছে ১৪১৯। এই ১৪-১৫ বৎসরের পার্থক্য অতি স্বাভাবিক। কারণ চান্দ্র বৎসর এবং সৌর বৎসরের সময়কাল সমান নয়। দুটির মধ্যে পার্থক্য প্রায় এগারো দিনের। সৌর বৎসর হয় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ সেকেন্ড। চান্দ্র বৎসরের স্থিতি হলো ৬৫৪ দিন ৮ ঘণ্টা ৫৩ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড-এর। চান্দ্র বৎসরের সময়কাল সৌর বৎসর অপেক্ষা প্রায় ১১ দিন কম হওয়ার ‘হিজরী সন’ ‘বাংলা সন’ অপেক্ষা ১১ দিন প্রতিবৎসর এগিয়ে যায়। ফলে ৯৬৩ থেকে ১৪১৯ বাংলা সনের মধ্যে হিজরী সন এগিয়ে গেছে ১৪ বৎসরেরও বেশি। স্বভাবতই, পহেলা বৈশাখ, ১৪১৯ সনের এই পার্থক্য হচ্ছে ১৪৩২-১৪১৮=১৪ বৎসর।

বাংলা সন মূলত : ইসলামী হিজরী সনের উপর নির্ভরশীল হলেও শকাব্দের নিকটও সে কিঞ্চিৎ ঋণী। বাংলা সনে আমরা বর্তমানে দিন ও মাসের যে নামগুলো ব্যবহার করি সেগুলো শকাব্দ থেকেই গৃহীত। সপ্তাহের নামগুলো রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ ইত্যাদি গৃহীত হয়েছে গ্রহপুঞ্জ ও সূর্য থেকে। মাসের নামগুলো, যেমন বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ ইত্যাদি আমরা পেয়েছে নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে।

বর্তমান ভারতের জাতীয় সন হচ্ছে শকাব্দ। রাজা চন্দ্রগুপ্ত ৩১৯ অব্দে গুপ্তাব্দ প্রবর্তন করেন। এই সন পরে ‘বিক্রমাব্দ’ নামে অভিহিত হয়। এই ‘অব্দ প্রথমে শুরু হতো চৈত্র মাস থেকে। পরবর্তী পযায়ে কার্তিক মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে পরিচিহ্নিত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ১৫ সালে ভারতে শক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। শক সনের স্মারক হিসেবে ৭৮ খ্রিস্টাব্দে শাকাব্দ চালু করা হয়। সৌরভিত্তিক শকাব্দের রবিমার্গের দ্বাদশ রাশির প্রথম মেঘ অন্তর্গত পূর্ণচন্দ্রিকাপ্রাপ্ত প্রথম নক্ষত্র বিশাখার নামানুষারে বৎসরের প্রথম মাসের নাম রাখা হয় বৈশাখ। বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন যে, নাক্ষত্রিক নিয়মে বাংলা সনের মাসগুলোর নাম নিম্নেবর্ণিত নক্ষত্রসমূহের নাম থেকে উদ্ভত হয়েছে :

মাসের নাম সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রের নাম

বৈশাখ      বিশাখা

জ্যৈষ্ঠ       জ্যেষ্ঠা

শ্রাবণ       শ্রাবণা

ভাদ্র        ভাদ্রপদা

আশ্বিন      আশ্বিনী

কার্তিক    কার্তিকা

অগ্রহায়ণ    অগ্রহায়ণ

পৌষ        পৌষা

মাঘ        মঘা

ফাল্গুন      ফাল্গুনী

চৈত্র        চিত্রা

‘ফসলি সন’ যখন প্রবর্তিত হয়, তখন কিন্তু ১২ মাসের নাম ছিল : কারওয়াদিন, আরদিভিহিসু, খারদাদ, তীর, আমরারদাদ, শাহরিয়ার, মিহির, আবান, আয়ুব, দায়, বাহমান ও ইসকান্দার মিয। পরবর্তী পর্যায়ে সেগুলো বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ইত্যাদিতে রূপান্তরিত হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলা সনের প্রথম মাস কোনটি ছিল সে বিষয়ে কিঞ্চিৎ মতানৈক্য রয়েছে। অধিকাংশ ঐতিহাসিক অভিমত প্রকাশ করেন যে, অগ্রহায়ণ হলো অগ্রাধিকার বিধায়, অতীতে আমাদের নববর্ষের দিন ছিল পহেলা অগ্রহায়ণ। অর্থাৎ ‘হায়ণ’ বা বৎসরের প্রারম্ভে যায় যে মাস তার প্রথম দিন ছিল আমাদের নববর্ষের দিন। কিন্তু ৯৬৩ হিজরীতে যখন ‘ফসলি সন’ বা ‘বাংলা সন’ শুরু করা হয়, তখন হিজরী সনের প্রথম মাস মহররম বৈশাখ মাসের সঙ্গে মিশে যায়। ফলে, এ দেশে ১লা বৈশাখই  ‘নওরোজ’ বা ‘নববর্ষ’ হিসেবে পরিচিহ্নিত হয়। উল্লেখ্য, ‘ইংরেজি’ তথা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রেও প্রথমে ১লা মার্চ ছিল ‘নিউ ইয়ারস ডে’। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে পহেলা জানুয়ারি সে সম্মানজনক স্থান দখল করে নেয়।

সম্রাট আকবরের সময় মাসের প্রতিটি দিনের জন্য পৃথক পৃথক নাম ছিল। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে এ জটিল প্রথা পরিহার করে সপ্তাহের সাতটি দিনের জন্য সাতটি নাম নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ব্যবহৃত ঐ সাতটি নামের সঙ্গে রোমান সাপ্তাহিক নামগুলোর সাদৃশ্য সহজেই পরিলক্ষিত হয়। অনুমিত হয় যে, বাদশাহ শাহজাহানের দরবারে আগত কোনো ইউরোপীয় (সম্ভবত পর্তুগিজ) মনীষীর পরামর্শক্রমে মূলত গ্রহপুঞ্জ থেকে উদ্ভূত নিম্নবর্ণিত নামগুলোর প্রচলন করা হয় : (১) রবি (সূর্য)- ঝঁহ বা সূর্য থেকে, (২) সোম (চন্দ্র) গড়হধহ অর্থাৎ গড়ড়হ থেকে, (৩) মঙ্গল গধৎং বা মঙ্গল গ্রহ থেকে, (৪) বুধ গবৎপঁৎু বা বুধ গ্রহ থেকে, (৫) বৃহস্পতি ঔঁঢ়রঃবৎ বা বৃহস্পতি গ্রহ থেকে, (৬) শুক্র ঋৎরমম  (বা ঠবহঁং ) থেকে এবং (৭) শনিবার ঝধঃঁৎহ বা শনি গ্রহ থেকে।

১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাস্থ বাংলা একাডেমি কর্তৃক বহুভাষাবিদ জ্ঞানতাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর তত্ত্বাবধানে বাংলা সনের যুগোপযোগী সংস্কার সাধিত হয়। অধিবর্ষের (খবধঢ় ণবধৎ) ব্যবস্থাসহ দিন ও তারিখাদির অনিয়ম সংশোধন করে নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় :

(১) মোগল আমলে বাদশাহ আকবরের সময়ে হিজরী সন ভিত্তিক যে বঙ্গাব্দ প্রবর্তন করা হয় তা থেকে বছর গণনা করতে হবে। (২) বাংলা মাস গণনার সুবিধার্থে বৈশাখ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত প্রতি মাস ৩১ দিন হিসেবে এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত ৩০ দিন পরিগণিত হবে।

সংশোধিত এই বাংলা সন এ দেশ কিন্তু সহজে গ্রহণ করেনি। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলো যে  রকম গড়িমসি করেছিল, বাংলা একাডেমি কর্তৃক সংশোধিত ‘বাংলা সন’ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশেও কিন্তু কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখা যায়। ফলে, সংশোধনের প্রায় দুই যুগ পর ১৯৮৮ সালের ১৯ জুন তারিখে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘বাংলা সন’-এর সংশোধিত রূপ স্বীকৃত হয়।

সন হিসেবে ‘বাংলা সন’ নিঃসন্দেহে অতীব কার্যকর ও বিজ্ঞানসম্মত বলে বিবেচিত হয়। এর কারণ হলো এটি একই সঙ্গে চান্দ্র (খঁহধৎ) ও সৌর (ঝড়ষধৎ) পদ্ধতির সার্থক উত্তরাধিকারী। এর প্রথমাংশ, অর্থাৎ ৯৬৩ বৎসর, সম্পূর্ণরূপে হিজরী সনভিত্তিক তথা চন্দ্র সন। পরবর্তী অংশ, অর্থাৎ ৯৬৩ থেকে অদ্যবধি, সৌরভিত্তিক। ফলে, বিশ্বে সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত ‘ইংরেজি’ তথা ‘গ্রেগরিয়ান’ ক্যালেন্ডারের সঙ্গে ‘বাংলা সন’ সামঞ্জস্য রেখে চলে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, ৯৬৩ বাংলা বর্ষে পহেলা বৈশাখ হয়েছিল ১১ই এপ্রিল, ১৫৫৬ তারিখে। এ বৎসর, অর্থাৎ ১৪১৮ বাংলা সনে, পহেলা বৈশাখ আমরা পাচ্ছি ১৪ই এপ্রিল। অর্থাৎ ১৪১৮-৯৬৩=৪৫২ বছরে পার্থক্য হয়েছে মাত্র ৩ দিন। আর, ভবিষ্যতে সে পার্থক্য এর চেয়ে একদিনের অধিক কখনও হবে না। বিজ্ঞানসম্মত এবং মুসলমান কর্তৃক প্রবর্তিত হিজরী ভিত্তিক এই ‘বাংলা সন’ নিঃসন্দেহে আমাদের গৌরব।

লেখক: সাবেক মহাপরিচালক বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।