সংবাদ শিরোনামঃ

মার্কিন-ভারত প্রক্সি-যুদ্ধ! ** জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি ** শাহবাগের কথায় রায় দেয়া হলে ট্রাইব্যুনালের আর প্রয়োজন কি? ** রাজনৈতিক অপশক্তি প্রতিরোধে মানুষ চায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ** ফ্যাসিবাদকে সহায়তা দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয় ** কন্যা পররাষ্ট্রনীতিতে পিতার পথ পরিত্যাগ করেছেন ** ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি ** তালায় কপোতা খনন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৪১৯, ৪ রবিউস সানি ১৪৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

শরীফ আবদুল গোফরান
বাংলা ভাষার সংরক্ষণ ও ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য যেমন অপরিসীম গুরুত্বের দাবিদার তেমনি বাংলা সাহিত্যের অন্তরালে লুকিয়ে আছে আমাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের স্মৃতিময় কাহিনী। হাজার বছরের অধিক সময়ের বাঙালি সমাজ, তাদের জীবনবোধ, ধর্ম, নৈতিকতা ও জীবন সংগ্রামের ছবি জীবন্ত হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের পাতায় পাতায়। জন্মলগ্ন থেকে বাংলা সাহিত্য কাল পরিক্রমায় আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বাংলা আজ পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষাগুলোর একটি। পৃথিবীর উন্নত ভাষা ও সাহিত্যের মতোই বাংলা আজ সমৃদ্ধ, জীবন্ত ও মর্যাদার আসনে সমাসীন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলা ভাষার আদি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সরকারি কাজে তার সীমিত ব্যবহার ব্রিটিশ পূর্ব মুসলিম শাসনামলেই ঘটে। সম্ভবতঃ ১৩৫১ সালে লোয়ার ও আপার বেঙ্গল তথা বঙ্গাল ও গৌড় মিলিয়ে একটি একক দেশ গঠন করার সময় থেকে মুসলিম শাসকগণই বাংলাভাষার এমন অচিন্ত্যনীয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেন। মুসলিম অভিজাত শ্রেণীর এক অংশ দীর্ঘকাল অব্যাহতভাবে বাংলা ভাষার চর্চা করে এসেছেন। (ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি স্মারক : পৃষ্ঠা ৯৯)

এক সময় বহিরাগত যুদ্ধবিজয়ী শাসক শ্রেণী নিজেরা এবং তাদের সাথে আগত ফার্সি ভাষীরা এই উপমহাদেশের ভাষা-সংস্কৃতির সাথে পরিচয় লাভে উৎসুক হন। তাই তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ত্রয়োদশ শতাব্দীর খ্যাতনামা ইসলামী তাত্ত্বিক কাজী রুকন উদ্দিন সমরকন্দি সংস্কৃত ভাষায় লিখিত হিন্দু যোগ শাস্ত্র ‘অমৃতকুণ্ড’ প্রথমে ফার্সি এবং পরে আরবিতে অনুবাদ করেন। অতঃপর মুসলিম লেখকরা এগিয়ে আসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনায়। বাংলায় বসবাসকারী বাংলা ভাষী জনগণকে আরব পারস্যের সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে শাহ মোহাম্মদ সগীর পারস্য কবি ফেরদৌসী, জামী, আনসারী প্রমুখ বর্ণিত নবী ইউসুফ জুলেখার প্রেম সম্পর্কিত একটি মিসরীয় কাহিনীর ভিত্তিতে রচনা করেন ‘ইউসুফ-জুলেখা’ প্রণয়োপাখ্যান। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম রোমান্টিক কাব্য। এ সময় বাংলার স্থানীয় সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্য প্রবহমান ছিল। ফলে মুসলিম লেখক শাহ মোহাম্মদ সগীর বাংলাভাষী পাঠকদের মনোরঞ্জনের লক্ষ্যে বাংলা সংস্কৃতির আদলেই বাংলার বারো মাসের অনুসরণে জুলেখার বারমাসী লিখেন। এই কাব্যের বিধূপ্রভা বাঙালি মেয়ে। তিনি এই কাব্যে মিসরীয় কাহিনীকে বাংলার ছাঁচে ঢেলে পরিবেশন করে বাংলার বিষয় যোগ করে বাংলারই কাব্য করে তোলেন। শাহ মোহাম্মদ সগীরের আগে কিংবা সমসাময়িককালে অথবা স্বল্পকাল পরে সাররিদ খান রচনা করেন ‘বিদ্যাসুন্দর’ কাব্য। এই বিদ্যাসুন্দর কাব্য বাংলারই একটি প্রণয়োপখ্যান। বিদ্যাসুন্দর কাব্যের তিনি দ্বিতীয় এবং প্রথম মুসলিম কবি। (প্রথম কবি দ্বিজ শ্রীধর)।

দৌলত উজীর বাহরার খানের লায়লী-মজনু একটি প্রণয় কাহিনী। আরবে কল্পিত হলেও কোনো আরব দেশে এই কিংবদন্তী চালু নেই। এছাড়া আরবে কল্পিত দেখালেও কবি এই কাব্যে আরবি-ফার্সি শব্দ পরিহার করে বাংলা শব্দ ব্যবহার করেছেন সচেতনতার সাথে।

ষষ্ঠদশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবি এবং সর্বাধিক প্রভাবশালী কবি ছিলেন সৈয়দ সুলতান। তিনি ছিলেন একজন পীর। কিন্তু তিনি রামায়ণ, মহাভারত, বেদপুরান, আত্মস্থ করে তার ভিত্তিতে নবী-বংশ রচনা করেন। অমুসলমানদের ইসলামী সাহিত্য সম্পর্কে কুরআন-কিতাব সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা এবং জ্ঞানদান করার লক্ষ্যেই তিনি হরিবংশ পুরান অনুসরণ করে নবী বংশ লিখেন। ফলে সৈয়দ সুলতানের লেখাতেই প্রথম সংস্কৃতি, আরবি, ফার্সি এবং বাংলা-এর  সমন্বয় ঘটে। তাঁর শিষ্য মোহাম্মদ খান ও অন্যান্যরা বাংলা সাহিত্যকে আরো এগিয়ে নিয়ে যান। (তথ্য : মধ্যযুগের মুসলিম শাসকেরাই বাংলা সাহিত্যের স্থপতি কাজী জাফরুল ইসলাম)।

বাংলায় মুসলিম শাসন প্রবর্তনকালে বাংলার ব্রাহ্মণদের কাছে সংস্কৃত ছিল দেব ভাষা এবং বাংলাসহ অন্যান্য ভাষা ছিল শূদ্রের (নীচ) ভাষা। সংস্কৃত ছাড়া অন্য ভাষায় ধর্মীয় বই লেখা নিষিদ্ধ ছিল এবং শূদ্রদের ধর্মীয় বই ছুঁতেও দেয়া হতো না। এছাড়া ব্রাহ্মণরা বাংলা সাহিত্যকে এই বলে অভিশপ্ত করতো যে, যারা অষ্টাদশ পুরান ও রামায়ণ বাংলায় শোনে তারা রৌরব নামক নরকে যাবে। এ কারণে চর্যাপদের পর সুদীর্ঘকাল, হিন্দু রাজত্বের সময়ে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা হয়নি। মুসলিম শাসনামলেই বাংলায় সাহিত্য রচনা শুরু হয়। (খাঁটি বাংলা ভাষায় চন্ডীদাস কর্তৃক শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন রচনাকালে বাংলায় [গৌড়ে] ছিল মুসলিম শাসন)। এ সময় হোসেন শাহের উদার পৃষ্ঠপোষকতায় ও পরোক্ষ সাহায্যে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনায় এগিয়ে আসেন মুসলমান লেখকরা। ফলে ষষ্ঠদশ শতাব্দীর মধ্যেই অসংখ্য মুসলমান সাহিত্যিকের অভ্যুদয় ঘটে। তাদের হাতে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠে।

বাংলা সাহিত্যের সপ্তদশ শতাব্দীর দু’জন শ্রেষ্ঠ কবিই হচ্ছেন মুসলমান। তারা হলেন কাজী দৌলত ও আলাওল। তাদের সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র কিন্তু বাংলাদেশ ছিল না, ছিল আরাকান। সুলতানী আমলে শাসকেরা এমনকি স্থানীয় সামন্ত শাসকেরা বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ দিতেন, পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। সুলতানী শাসনের পতনের যুগে বহু সংখ্যক আমির-ওমরাহ, সুফি সাধক, ভাটি অঞ্চল সিলেট ও চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করেন।  পরে সিলেট-চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহু মুসলমান আরাকানে গিয়ে রাজ অমাত্যের স্থান দখল করেন। বাংলায় মোগল শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পর যাঁরা মোগল শাসক হিসেবে বাংলায় আসতেন তারা সময় শেষে ফিরে যেতেন, বসতি স্থাপন করতেন না। তাই বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রতি তাদের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঐ সময় বহুসংখ্যক সাহিত্যিক নিজস্ব উদ্যোগে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন। চট্টগ্রাম-সিলেটের যেসব ব্যক্তি রোসাঙ্গ রাজ-অমাত্য হয়েছিলেন তাদের উৎসাহে সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকান হয়ে উঠেছিল বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র। সেখানেই কাজী দৌলত ও আলাওলের উদ্ভব ঘটে। এই দুই কবি বাংলা সাহিত্যে সংস্কৃত, বাংলা, আরবি, ফার্সি, হিন্দি সুসঙ্গতভাবে যুক্ত করেন।

ফলে এ কথা সঙ্গতভাবে বলা যায় যে, মধ্যযুগের মুসলিম শাসকরাই বাংলা সাহিত্য চর্চার দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছিলেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় মধ্যযুগের মুসলিম শাসক ও লেখকরা যেভাবে বাংলা ভাষার সংরক্ষণ করেছেন বলা যায় তারাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্থপতি।

দীর্ঘ সাড়ে পাঁচশ বছরের মুসলিম শাসনের পর ক্রুসেডের পতাকাধারী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বৈদেশিক সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনকামী ব্রাহ্মণ্যবাদীদের শত বছরের আঁতাত ও ষড়যন্ত্রের ফলরূপে প্রতিষ্ঠিত হলো ইংরেজ রাজত্ব। এতে ইঙ্গ-ব্রাহ্মণ শাসনে বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষক মুসলমানদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সকল পথ রুদ্ধ হলো। তাদের সাংস্কৃতিক জীবন নিমজ্জিত হলো ঘোর অন্ধকারে।

১৭৯৩ সালে উইলিয়াম কেরী নামে এক ইংরেজ কলকাতায় এসে হুগলির শ্রীরামপুরে খ্রিস্টান মিশনে যোগ দেন। এই উইলিয়ামের নামেই ১৮০০ সালে কলকাতায় স্থাপিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। ১৮৩২ সালে গঠিত হয় কমিটি অব পাবরিক ইনস্ট্রাকশন। তারই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংস্কৃত কলেজ।  ফোর্ট উইলিয়াম আর খ্রিস্টান মিশনের মাধ্যমে ফরস্টার ম্যান, উইলিয়াম কেরী প্রমুখ ইংরেজ রাজনীতিক এক শ্রেণীর বর্ণ হিন্দুর সহায়তায় বাংলা ভাষা সংস্কারের নামে দেশের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা বাদ দিয়ে সংস্কৃত নির্ভর এক তথাকথিত ‘বিশুদ্ধ বাংলা গদ্য সৃষ্টির চেষ্টায় মেতে উঠে।’ এ থেকেই সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা মায়ের ভাষা বই-পুস্তক থেকে নির্বাসিত হলো। হরফ থাকলো বাংলা কিন্তু সেই বাংলা হরফের আদলে জনগণের ওপর মৃত সংস্কৃতের লাশ চাপিয়ে দেয়া হলো। এভাবে ইঙ্গ-ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্র সফল হলো। হিন্দু পণ্ডিতেরা বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের আওতায় নিয়ে এলেন। তারা এ ভাষাকে হিন্দু সভ্যতার বাহন করে তুললেন। অথচ মুসলমানরা বাংলা সাহিত্যের মূল নির্মাতা এবং তারাই বাংলা ভাষার প্রকৃত পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এ সময় মুসলিম সমাজের লেখকগণ সাধারণ মানুষের মুখের ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টির একটি দুর্বল ধারা অব্যাহত রাখলেন। পলাশীর বিপর্যয় না হলে যে লোকজ ভাষা এ দেশের হিন্দু-মুসলমানদের সাহিত্যের ভাষা হবার কথা ছিল, ইঙ্গ-ব্রাহ্মণ্য ষড়যন্ত্রের কারণে মুসলিম লেখকদের সে ভাষার রচনাগুলো আখ্যায়িত হলো ‘বটতলার পুঁথি, নামে। এ সময় থেকেই বাংলা ভাষা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়লো। শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামী ইতিহাস।

১৮৫৭ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিধ্বস্ত হবার পর বাঙালি মুসলিমদের ইংরেজ বিরোধী আপসহীন লড়াইয়ে ছেদ পড়ে নতুন করে আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে মুসলিম নেতৃবৃন্দ নিজ সমাজের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নতুনভাবে প্রবেশ করলেন সাহিত্য ক্ষেত্রে। বিংশ শতকের প্রথম দিকে জন্ম হলো কলকাতায় ‘বঙ্গীয় মোসলেম সাহিত্য পরিষদ’। তখন থেকেই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হয়। এ আন্দোলনের সাথে আমাদের আবেগ-অনুভূতি প্রবলভাবে জড়িয়ে আছে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ প্রদেশব্যাপী রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

সরকার জনগণের এ দাবিকে নস্যাৎ করার জন্য একই দিন ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করল এবং জারি করল ১৪৪ ধারা। কিন্তু তাতেও মানুষের ক্ষোভকে থামানো যায়নি। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বাধা আসে পুলিশের। বিুব্ধ ছাত্র-জনতাকে দমন করতে পুলিশ মিছিলের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে ছাত্র মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে ৩ জন ছাত্রসহ ৪ ব্যক্তি নিহত হন, ১৭ জন আহত হন এবং গ্রেফতার হন ৬২ জন। পুলিশের গুলিতে  যারা শহিদ হন তারা হলেন রফিক উদ্দিন আহমদ (মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র), আবদুল জব্বার (গ্রামের কর্মচারী), আবুল বরকত (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এমএ কাসের ছাত্র), মোহাম্মদ সালাউদ্দিন (ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের এমএ কাসের ছাত্র) এবং আবদুস সালাম (শুল্ক বিভাগের পিওন, আহত অবস্থায় ৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন)। ২২ তারিখ নিহতদের গায়েবানা জানাজা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর লক্ষাধিক মানুষের এক বিশাল শোভাযাত্রা ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে। এ ঘটনার পর ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষমতার ভিত নড়ে উঠে। এ দেশের মানুষ বুঝতে পারে পাকিস্তানি শাসকদের হাতে তাদের ভাষা, স্বাধীনতা ও মান-মর্যাদা নিরাপদ নয়। তাই ধীরে ধীরে ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। এরই ফলে ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ন’ মাসের স্বাধীনতা লড়াইয়ে মানুষ অর্জন করে মহান স্বাধীনতা। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ফল হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেলাম তা আজ আমাদের পরম পাওয়া। তাই ভাষা আন্দোলনের বীর সেনানীরা আমাদের সবার কাছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্র। আমরা তাদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।

আমাদের এ মহান ভাষা আন্দোলন এবং তারই পথ ধরে স্বাধীনতা অর্জন বিশ্বের দরবারে আমাদের গৌরবকে অনেক উচ্চে তুলে ধরেছে। আমরা আরো বেশি গর্বিত হয়েছি যখন আমাদের ভাষা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্বের কাছেও স্বীকৃতি লাভ করেছে। বাংলা এখন ‘আন্তর্জাতিক ভাষার’ স্বীকৃতি পেয়ে গৌরবের আরেক ধাপে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর এ মহান কাজে যারা অবদান রেখেছেন তারাও বাংলাদেশী, এ জাতির কাছে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বর, জাতিসংঘের ইউনিসেফের এক বৈঠক বসে প্যারিসে। সভার ১৮৮ জন সদস্যের সমর্থনে আমাদের ভাষা সেদিন অমর মর্যাদা লাভ করে। এর আগে বিশ্বের ২৮টি দেশে বাংলাভাষাকে জাতিসংঘে উত্থাপনে সমর্থন জানায়। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পাবার পেছনে কানাডা প্রবাসী একদল বাংলাদেশী নাগরিকের অবদান ছিল সীমাহীন। তাদের সংগঠনের নাম ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ মুভমেন্ট’। এর নেতা ছিলেন জনৈক রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া যারা জড়িত ছিলেন তারা হলেন জ্যাসন মেরিন, সুসান হভগিল, ড. কেলভিন চাও, বিনতে মারটিনস, করুণা জোসি, নাজনিন ইসলাম, আবদুস সালাম প্রমুখ। আজ বাংলা ভাষার যে মর্যাদা নিয়ে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছি তাকে অর্থবহ করতে হলে ভাষার মান উন্নয়নে আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে। মনে রাখা দরকার বাংলা ভাষা এখনও দেশের রাষ্ট্রীয় কাজকর্মে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। অথচ সিয়েরা লিয়েনের সরকারও বাংলাকে ভালোবেসে তাদের দেশের অন্যতম ভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে। আমাদের সরকার বাংলাভাষার উন্নয়নে সঠিক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।