সংবাদ শিরোনামঃ

মার্কিন-ভারত প্রক্সি-যুদ্ধ! ** জামায়াতের মিছিলে পুলিশের গুলি ** শাহবাগের কথায় রায় দেয়া হলে ট্রাইব্যুনালের আর প্রয়োজন কি? ** রাজনৈতিক অপশক্তি প্রতিরোধে মানুষ চায় বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ** ফ্যাসিবাদকে সহায়তা দিয়ে দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব নয় ** কন্যা পররাষ্ট্রনীতিতে পিতার পথ পরিত্যাগ করেছেন ** ট্রাইব্যুনাল বাতিল করে জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি ** তালায় কপোতা খনন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত **

ঢাকা, শুক্রবার, ৩ ফাল্গুন ১৪১৯, ৪ রবিউস সানি ১৪৩৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

আশরাফ জামান
॥ এক॥

রুক্ষ মাঠ, চৈত্রের রৌদ্দুর।

আগুনে পোড়া যেন ক্ষেতের ঘাস। অনাবৃষ্টিতে পুড়ে গেছে ফসলের মাঠ। এ এলাকায় এমনিতে ধান হয় না। বৃষ্টি যে বছর ভালো হয় সে বছর রবিশস্য মোটামুটি হয়। ধলেশ্বরী নদী এ সময় শুকিয়ে যায়। পুকুর, ডোবা-নালা এখানে খুব কম। বাংলাদেশের এ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। জেলা শহর এখান থেকে পুবে আট মাইল দূরে।

ভোর বেলা দল বেধে কাঁধে কোদাল, ডালি, দা-খন্তা নিয়ে বের হয় এখানকার পুরুষ মানুষেরা। দিন মজুরি করে। মেয়ে মানুষেরা ঘরের কাজ করে। ঘরে বসে তারা বোনে, বাঁশ দিয়ে তৈরি করে ঝাড়, খালই, ডালি, কুলা এগুলো। পুরুষ মানুষেরা সেগুলো শহরে নিয়ে বিক্রি করে বাড়তি পয়সার আশায়। এটা তাদের উপজীবিকা। তবুও তাদের  সংসার চলতে চায় না।

ছিটকীবাড়ী, চাকতা, পাইক মুড়িল, পোড়াবাড়ী, চারাবাড়ী, কাতুলী, হুগরা এ গ্রামগুলোতে এদের বাস। তবে পোড়াবাড়ী, চারাবাড়ীতে কিছু সংখ্যক হিন্দু পরিবার আছে যাদের পেশা পুরুষানুক্রমে চলে আসছে মিষ্টি বানানো। দেশবিখ্যাত চমচম। অবশ্য তার জৌলুস অনেকটা কমেছে। দেশে এখন চলছে অভাব-দুর্ভিক্ষ। ১৯৭৪ সাল। মাত্র আড়াই বছর আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ আস্বাদন করতে পারেনি এ সকল মানুষেরা।

চাকতা গ্রামের একটি ছোট্ট পরিবারের কর্তা কালু শেখ। দু’টি ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী জমিলাকে নিয়ে তার দুঃখের সংসার। মেয়েটি চার বছরের আর ছেলেটি এক বৎসর বয়সের। মায়ের হাড্ডিসার দেহ থেকে দুধ পায় না শিশুটি।

গাঁয়ে কাজ নেই, জমিতে ফসল নেই। এ এলাকায় এখনো পানি সেচের ব্যবস্থা হয়নি যার ফলে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয় না। মরুভূমির উষর বালুকারাশি ছড়িয়ে আছে মাঠে।

শহরে কাজের আশায় ছুটে কালু। প্রায়ই কাজ পায় না। শহরের মানুষের মধ্যেও অভাব পড়েছে। চালের দাম বেড়েছে। দু’ টাকা সেরের চাল লাফ দিয়ে চার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মরিচ-লবণ, সোডা-সাবান উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। যে লবণ ছিল পঞ্চাশ পয়সা সের তা এখন দশ টাকা সের। লবণের সঙ্গে ভেজাল মেশাচ্ছে চিনি।

কালুর চিন্তা দু’টি সন্তানের জন্য। নিজের জন্য বা জমিলার জন্য ভাবে না। তারা দু’দিন না খেয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বাচ্চা শিশুরা পারে না। জমিলার বানানো কুলা, ডালিও এখন বিক্রি হয় না।

শহরে চাউলের কুড়া, কলাইর ভূষি দু’পয়সা সেরে পাওয়া যায়। ওগুলো মাঝে মাঝে কিনে নিয়ে যায় কালু। চাপড়ি বানিয়ে দেয় জমিলা। কিন্তু বাচ্চারা ওগুলো খেতে পারে না। খেলে পেটে অসুখ হয়।

ছোট বাচ্চাটির জন্য একটু আটা নিতে পারলে অন্তত তা দিয়ে রুটি বা চাপড়ি বানিয়ে খাওয়াতে পারে। দুধ তো কতদিন হয় দিতে পারেনি।

শিশু দু’টি ুধায় সারাক্ষণ কাঁদে। অসুখ বিসুখে রুগ্ন কঙ্কালসার দেহ।

পর পর দু’দিন ধরে শহর থেকে খালি হাতে ফিরে আসে কালু। গাঁয়ে কাজ নেই শহরে গিয়েও কাজ পায় না। দু’টো কুলা নিয়ে গিয়েছিল সারাদিন ঘুরে তাও বেচতে পারেনি।

॥ দুই॥

এক সময় সন্ধ্যা নেমে আসে। খালি হাতে বাড়ি ফিরতে আজ লজ্জা হয় কালুর। শিশু দু’টি দু’দিন ধরে না খাওয়া। ঘরে এক ফোটা দুধ নেই, চাল নেই। জমিলা কি করছে কে জানে? প্রচণ্ড ুধার আগুন পেটে জ্বালিয়ে হাঁটতে থাকে, চলতে পারে না। দু’তিনটি বাড়িতে ভিক্ষের জন্য হাত পেতেছিল কালু। মহিলাদের ধমক শুনেছে।

-যাও, জোয়ান মানুষ ভিক্ষা কর। কাজ করতে পার না?

কালু প্রতিবাদ করেনি লজ্জা পেয়েছে। মৃদু স্বরে বলেছে, কাজতো কেউ দেয় না বুজী।

সারাদিন একমুঠো খাবার সংগ্রহের আশায় বাড়ি বাড়ি ঘুরলো জমিলা। শেষে তালুকদার বাড়ি থেকে সন্ধ্যায় আধাসের পরিমাণ আটা পেলো। তালুকদার গৃহিণী দিয়ে মায়া করে। বাড়ি ফিরে তা দিয়ে চারটি চাপড়ি তৈরি করলো। রান্নাঘর থেকে চাপড়ি নিয়ে শোবার ঘরে ফিরে দেখে শিশু দু’টি মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ভাবলো, থাক একটু ঘুমাক, এতটুকু খাওয়ায় তো পেট ভরবে না? যতক্ষণ ঘুমায় ততক্ষণ শান্তি। জমিলা স্বামীর অপেক্ষায় বসে থাকে। স্বামী ফিরলে চারজনে চারটি চাপড়ি খাবে।

একটু পরেই খালি হাতে ঘরে ফিরলো কালু। ঘরে ঢুকে বললো, নারে বৌ খাবার আনবার পারলাম না।

জমিলা বললো, যাও হাত মুখ ধুইয়া আহ।

গামছা হাতে কুয়ার পারে চলে যায় কালু। ঘরে ফিরলে একটি চাপড়ি স্বামীকে দিয়ে জমিলা উঠানে চলে যায়।

দু’দিনের অভুক্ত কালু। পেটে প্রচণ্ড ুধা। খেতে বসে ভুলে যায় স্ত্রী সন্তানের কথা। অন্য থালা থেকে তখন একটি একটি করে সবকটা চাপড়ি খেয়ে ফেলে এক নিমেষে।

হাতমুখ ধুয়ে ঘরে ফিরে এসে জমিলা বাচ্চা দু’টিকে টেনে তুলে। দু’দিন পর তাদের মুখে তুলে দেবে সামান্য খাবার।

॥ তিন॥

খাওয়া শেষ করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ঢেক তুলে কালু বলে, বউরে খুব খিদা লাগছিলো তাই সবটি চাপড়ি আমি খাইয়া ফালাইছি।

তার মানে?

কেঁদে ফেলে জমিলা। সর্বনাশ, এইটা কি কও আবুলের বাপ? তুমি কেমন কইরা দুইটা মাছুম বাচ্চার মুখের খাবার খাইয়া ফালাইলা? দুইদিন ওরা যে পানি ছাড়া কিছু খায় নাই।

মুহূর্তে চোখে রক্ত উঠে জমিলার। সে থালা বাটি যা সামনে ছিল তা দিয়ে ঢিল ছুড়লো স্বামীর দিকে। এক নিমেষে নিচে রাখা বটি দিয়ে প্রচণ্ড বেগে আঘাত করলো কালুর গলায়।

রুগ্ন দুর্বল কালু মেঝেতে পরে গেল।

রাগে দুঃখে জমিলা চিৎকার করতে থাকে।

তুমি বাচ্চা দুইডারে না খাওয়াইয়া নিজে খাইতে পারলা? নে তরে জনমের খাওয়া খাওয়াইয়া দিলাম।

মাটিতে পরে গোংড়াতে লাগলো কালু। মেঝেতে বয়ে যেতে লাগলো রক্ত ধারা। শিশু দু’টির ভয়ার্ত চিৎকারে মুহূর্তের মধ্যে ছুটে এলো আশেপাশের প্রতিবেশী নারী-পুরুষেরা।

একটু পরে কালুর দেহ নিস্তেজ হয়ে পড়ে রইলো।

উঠানে নারী পুরুষের ভিড় জমতে লাগলো। ঘরে রক্তের বন্যা কুপির আলোতেও বুঝা গেল।

পালানোর চেষ্টা করলো না জমিলা। শুধু চিৎকার করে বলছিল আমি ইচ্ছা কইর‌্যা মারি নাই। আমি আমার স্বামীরে ভালোবাসি। বাচ্চা দুইডার কষ্ট যে সইতে পারি নাই।

রাতেই থানায় খুনের খবর চলে গেলো। থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ভোর হতে হতেই পুলিশ দল নিয়ে হাজির। এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উপস্থিত হন।

চেয়ারম্যান তমিজ সাহেব জমিলাকে বলেছিলেন, তুমি কিছু কইও না আমরা দারোগারে বইলা কালু আত্মহত্যা করছে রিপোর্ট দিতে কমু।

কিন্তু জমিলা তাতে রাজি হয় নাই! সে বলেছে, আমি পাপের শাস্তি ভোগ করমু।

প্রতিবেশী রহিমাকে বলে ভাবী। আপনের পায়ে পড়ি আমার বাচ্চা দুইডারে দেইখো। আমার ফাঁসি হয় তাতে দুঃখ নাই। ওগো চাইরড্যা ভাত দিয়া বাঁচাইয়া রাইখো।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।