রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৪র্থ সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১৯ এপ্রিল ২০২৪

সব বিরোধীদলের উপজেলা নির্বাচন বয়কট

বৈধতার সংকট তাড়া করছে সরকারকে

এ মেয়াদে দেড় বছর ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত
॥ ফারাহ মাসুম ॥
একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে স্বস্তি পাচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। দেশের ভেতরে-বাইরে বৈধতার সংকট তাদের তাড়া করে ফিরছে। অবৈধভাবে কারসাজি করে ক্ষমতায় আসতে এবং থাকতে গিয়ে এজন্য সহায়তাকারী একটি বিশেষ দেশের নির্দেশনায় কাজ করতে গিয়ে পাহাড়ে ভয়ানক নিরাপত্তা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের ভেতরে সব ধরনের নির্বাচন বয়কটের মুখে পড়ছে একের পর এক। অরাজনৈতিক ভিত্তিতে হওয়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধীদলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারে বলে শাসকদল প্রত্যাশা করেছিল। এজন্য দলীয় প্রতীক এ নির্বাচনে ব্যবহার না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, একতরফা সংসদ নির্বাচনের মতোই আরেকটি নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে সরকার। ফলে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলনসহ সব বিরোধীদল উপজেলা নির্বাচনও বয়কট করছে। এসব দলের প্রার্থী যারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারা নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন। এরপরও যদি কোনো নেতা নির্বাচনে অংশ নেন, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের সম্মুখীন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধীদলগুলো। এতে সরকারের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছে বৈধতার সংকট যেভাবে চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে, তাতে এক-দেড় বছরের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
পাহাড়ে নিরাপত্তা সংকট : পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক রহস্যজনক ঘটনা ঘটে চলেছে। বান্দরবানে কেএনএফের অবস্থানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৯টি দেশীয় বন্দুক ও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। নিরাপত্তা সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, গত ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে রুমা উপজেলার দুর্গম কেউক্রাড়াডং পাহাড়ের সুংসংপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী এ অভিযান পরিচালনা করে। আটক ৯ জনের মধ্যে চারজন কেএনএফের সদস্য ও অন্য পাঁচজন তাদের সহযোগী। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেনাবাহিনীর রুমা জোনে নিয়ে আসা হয়েছে। সুংসং, থাইক্ষ্যাং, স্লোপি এলাকাটিতে কেএনএফের একাধিক ঘাঁটি রয়েছে। এমন খবর পাওয়ার পর যৌথ বাহিনী সেখানে অভিযান চালায়। র‌্যাব জানিয়েছে, সন্ত্রাসী তৎপরতা দমন ও কেএনএফের সদস্যদের গ্রেফতার করতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর অংশ হিসেবে কেএনএফ সদস্যদের আঘাত করা হয়েছে।
এর আগে গত ২ ও ৩ এপ্রিল বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে কেএনএফ সদস্যরা দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে অস্ত্র, গুলি ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়। অপহরণ করা হয় রুমা সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে। এ ঘটনার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে বান্দরবানের দুর্গম এলাকাগুলোয় যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। এ অভিযানে সহস্রাধিক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য অংশ নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।
শান্তি আলোচনা চলাকালেই দুটি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা, টাকা ও অস্ত্র লুট করার পাশাপাশি ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করার জন্য পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে (কেএনএফ) দায়ী করছে সরকার। তারা বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসনের দাবি করে আসছে। কেএনএফ এ হামলা ও অপহরণের মধ্য দিয়ে যতটা না টাকা-অস্ত্র লুট করতে চেয়েছে, তার চেয়ে বেশি নিজেদের অবস্থান ও সক্ষমতার জানান দিতে চেয়েছে বলে উল্লেখ করেছে নিরাপত্তা সূত্রগুলো।
এসব সূত্র বলছে, পাহাড়ে এ হামলা সূক্ষ্ম পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে কেএনএফ। পুরোপুরি সফল হতে না পারলেও নিজেদের আবার আলোচনায় আনতে পেরেছে তারা, যা নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এ হামলার আগাম তথ্য কারও কাছে না থাকাকে চরম গোয়েন্দা ব্যর্থতা বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। পাহাড়ে যাদের অপারেশনাল সক্ষমতা রয়েছে, তাদের হাতেই আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি উঠছে।
পরপর দুদিন ব্যাংকে হামলা, অস্ত্র-টাকা লুট ও ম্যানেজার অপহরণের পর কেএনএফের সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা পরিষদের শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ২০২৩ সালের ২৯ মে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সঙ্গে কেএনএফের কয়েক দফা অনলাইনে ও দুই দফা সশরীরে বৈঠক হয়েছে। গত বছরের ৫ নভেম্বর ও গত ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত দুই দফা বৈঠকে দুটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়। এতে তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, লুটপাটসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কমিটি মনে করে, তাদের অতিসাম্প্রতিক ঘটনায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির শান্তি আলোচনা বৈঠকসহ সব ধরনের কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফের সঙ্গে কোনো ধরনের বৈঠক করবে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্র মতে, কেএনএফের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাথান লনচও বম। তার বাড়ি রুমার ইডন বমপাড়া। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রাবস্থায় পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ২০০৮ সালে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১৯ সালের দিকে এ নাম পাল্টে করা হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট। সংগঠনটি রাঙামাটি ও বান্দরবানের যে ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, এর মধ্যে আছে বান্দরবানের রুমা, থানচি, লামা, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলা; রাঙামাটির সাজেক উপত্যকা, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা। তাদের ঘোষিত রাজ্যে ৫ সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করতে পারবে। তারা হলো বম, খুমি, খিয়াং, পাংখোয়া ও লুসাই। পাহাড়ে এ পাঁচ সম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। কেএনএফের সশস্ত্র সদস্য হাজারের বেশি।
এদিকে ব্যাংক লুটে জড়িতদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা দেখছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। সবকিছুই করব, আগে সবকিছু জেনে নিচ্ছি। এর পেছনে কারা আছে, কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, কোনো ধরনের নাশকতা কিংবা কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা- এগুলো দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। আমরা কোনো ছাড় দেব না। কঠিন ব্যবস্থা নেব। এখানে ভূ-রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার আছে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের কাছে এখনো এ ধরনের কোনো তথ্য নেই। অনেক কিছুই হতে পারে কিন্তু না জেনে, তথ্য না পেয়ে আমরা বলতে পারছি না।
কেএনএফ এ হামলাকে নতুন করে দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। বান্দরবানের এ এলাকাগুলোয় সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার বলে উল্লেখ করে এ অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা বলেন, সার্বক্ষণিক নজরদারির জন্য যা যা করার দরকার, তাই সরকারকে করতে হবে। তারা যে রাস্তায় আসে, সেই রাস্তায় যায় না। ফলে সেভাবে প্রস্তুতি রাখা লাগবে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সেনাবাহিনীর বিকল্প নেই। আশপাশে কয়েকটি জায়গায় ক্যান্টনমেন্ট আছে। সেনাবাহিনী এ এলাকায় কাজ করে অভ্যস্ত। ফলে এখানে তাদের কাজ করা সহজ।
ফেসবুকে ও ইউটিউব পোস্টে কেএনএফ তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও শুরু থেকেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিয়ে আসছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি বা জেএসএসের প্রচার বিভাগের সদস্য দিপায়ন খীসা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, পাহাড়ের একটি বিশেষ প্রভাবশালী মহল এ কেএনএফকে আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছে। কথিত কেএনএফ ফেসবুক পেজে ঘোষণা দিয়ে তাদের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তাদের ফেসবুক পাতায় সামরিক পোশাক পরিহিত নারী পুরুষের ছবি ছাড়াও ট্রেনিং করার কিছু চিত্র দেওয়া হয়েছে। যদিও এসব ভিডিও বা ছবি তাদের নয় বলেই মনে করছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
১০ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৫ হাজার বম ও অন্য চারটি গোষ্ঠীকে নিয়ে এখন যে প্রচারণা ও অভিযান চলছে, তা নিয়ে অন্য একটি বিষয়ও রয়েছে। এ ক্ষুদ্র গোষ্ঠীগুলোর সাথে বৃহত্তর চাকমা সংখ্যাগুরুর স্বার্থগত সংঘাত অনেক পুরনো। শান্তিবাহিনী হিসেবে একসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই করা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তাদের তৎপরতা চালাত ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসে। আওয়ামী লীগের ’৯০-এর দশকের শেষ ভাগের সরকারের সময় সরকারের সাথে তাদের শান্তি চুক্তির সময়ও প্রতিবেশী দেশের মধ্যস্থতা ছিল। শান্তি বাহিনীর ওপর ভারতীয় প্রভাবের কারণে প্রথমে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ এবং পরে ইউপিডিএফ আলাদা হয়ে যায়। এ দু’পক্ষের সাথে সশস্ত্র সংঘাতও হয়। এখন যারা কেএনএফের সাথে জড়িত, তাদের অনেকেই তখন ইউপিডিএফের সাথে জড়িত ছিল। শান্তি বাহিনীর ওপর যেখানে ভারতের প্রভাব লক্ষণীয়, সেখানে ইউপিডিএফ ও কেএনএফের ওপর চীনা প্রভাব বেশি দেখা যায়। কুকি-চিন নৃতাত্ত্বিক ধারার জো সম্প্রদায়ভুক্তরা ভারতের মিজোরাম মনিপুর ও নাগাল্যান্ডে এবং মিয়ানমারের চিন স্টেটেও রয়েছে।
এ কারণে অনেক বিশ্লেষক এখন যে ব্যাংক ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটছে, তার পেছনে পাহাড়িদের ওপর পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও চীনের প্রভাব বিস্তারের নেপথ্য কোনো বিষয় সক্রিয় থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, তেমনটি ঘটে থাকলে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি বৃহত্তর শক্তির আঞ্চলিক দ্বন্দ্বের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অঞ্চলে সক্রিয় আরাকান আর্মি এবং কুকি-চিন বিচ্ছিন্নতাকামী সংগঠনগুলোর ওপর চীনের বিশেষ প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী এ শক্তির সাথে সংঘাতে নামলে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে, যেটি বাংলাদেশের জন্য একটি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক পরিণতি নিয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিন পার্বত্য জেলার অধিবাসীদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের ৪৩.৯%, মুসলিম ৪২.৬%,   হিন্দু ধর্ম  বিশ্বাসী ৯.২%,   খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসী ৩.৩% এবং  অন্যান্য  ধর্মের ১.১% মানুষ রয়েছে। সেখানকার মুসলিমদের নানাভাবে টার্গেট করে প্রচারণা চালানো হতে দেখা যায়।
ইসরাইলের ফ্লাইট অবতরণ নিয়ে প্রশ্ন
গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর যখন নির্বিচারে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, তখন ইসরাইলের তেলআবিব থেকে দুটি ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ইসরাইলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তেলআবিব থেকে সরাসরি ফ্লাইট ঢাকায় অবতরণ করার পরপরই এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঢাকার একাধিক পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত খবরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, গত ১১ এপ্রিল ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় রওনা হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশে অবতরণ করে একটি ফ্লাইট। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের এনসিআর-৮০৬ নম্বর ফ্লাইটটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ মডেলের এয়ারক্রাফট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। এটি একটি কার্গো উড়োজাহাজ, যা একসাথে ১০৮ টন মালামাল নিতে সক্ষম। ফ্লাইট দুটি অবৈধভাবে দেশে অবতরণ করেনি। সব ধরনের নিয়মকানুন মেনেই ফ্লাইট দুটি অবতরণের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ ফ্লাইটে কোনো যাত্রী বা মালামাল ছিল না।
তেলআবিব থেকে আসা সরাসরি ফ্লাইটের বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ইসরাইল থেকে ফ্লাইট আসার তথ্যটি সঠিক। তবে ফ্লাইটটি ফাঁকা ছিল। বাংলাদেশে নামানোর মতো কিছু ছিল না। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। এয়ারক্রাফটিও যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধন নেয়া। বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট (এএসএ) রয়েছে। তাদের ফ্লাইট অবতরণে কোনো বাধা নেই। মূলত ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট দুটি বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড গার্মেন্টস (আরএমজি) পণ্য নিয়েছে। এয়ারলাইন্স দুটি এ পণ্য শারজাহ এবং ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।
অন্যদিকে তেলআবিব থেকে সম্প্রতি দুটি ফ্লাইট সরাসরি ঢাকায় অবতরণ করার বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে গত ১৩ এপ্রিল শনিবার সংবাদমাধ্যমে একটি ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৭ এপ্রিল দুটি বিমান তেলআবিব থেকে উড্ডয়ন করে সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে ও কার্গো নিয়ে রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে এবং অপরটি গত ১১ এপ্রিল রাতে ঢাকায় অবতরণ ও মধ্যরাত সাড়ে ১২টায় কার্গো নিয়ে ঢাকা থেকে উড্ডয়ন করে। দুটি বিমানই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত এবং ওই দেশের বিমান সংস্থা ন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের।’
সিভিল এভিয়েশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বিমান চলাচল চুক্তি অনুযায়ী কার্গো ফ্লাইট দুটি ঢাকা এসেছিল। ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক নিয়ে ফ্লাইট দুটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ এবং ইউরোপের একটি গন্তব্যে গেছে। বাংলাদেশ ও ইসরাইলের মধ্যে কোনো বিমান চলাচল চুক্তি নেই এবং ইসরাইলের কোনো বিমান বাংলাদেশে অবতরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
ইসরাইল থেকে কোনো ফ্লাইট বাংলাদেশে অবতরণ করেনি বলাটা অসত্য বলে মনে হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত জাতীয় এয়ারলাইন্সের দুটি বিমান প্রকৃতপক্ষে তেলআবিব থেকে যে ঢাকায় এসেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রশ্ন উঠেছে- এখন কি তাহলে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো তৃতীয় দেশে নিবন্ধিত বিমান ও এয়ারলাইন্স যদি সিভিল এভিয়েশনের যুক্তি মেনে নিয়ে ঢাকা থেকে তেলআবিব পর্যন্ত সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না? কারণ এয়ারক্রাফট ও এয়ারলাইন্সগুলো অন্য দেশে নিবন্ধিত, ইসরাইলে নয়!
উপজেলা নির্বাচন বর্জন সব বিরোধীদলের
জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর আসন্ন উপজেলা নির্বাচনেও থাকছে না বিএনপি ও অন্য বিরোধীদলগুলো। নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশের অনুপস্থিতি এবং নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে থাকাসহ পাঁচটি সুনির্দিষ্ট কারণ বিশ্লেষণ করে বিএনপি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। গত ১৫ এপ্রিল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নির্বাচন বর্জন করার ব্যাপারে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দলের কেউ প্রার্থী হলে তার বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের যেসব প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন, তাদের তা প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, ১২ দলীয় জোট, ইসলামী আন্দোলন এবং বিরোধী জোটের অন্য শরিকরাও উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএনপি মূলত পাঁচটি বিষয় সামনে রেখে নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমত, দলের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আদলে উপজেলা নির্বাচন করবে সরকার। এজন্য দলীয় নেতাদের প্রতীক দেয়নি আওয়ামী লীগ। উন্মুক্ত মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মূলত দেশ-বিদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখাতে এ আয়োজন করা হলেও নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতে। সরকার যাকে ইচ্ছে তাকে নির্বাচিত করে আনবে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে তাতে ভোটের প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেয়া হবে। দ্বিতীয়ত, মাত্র তিন মাস আগে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে বিএনপি। সেই নির্বাচনে বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। সাধারণ মানুষের সেই সমর্থনে আঘাত দিতে চায় না বিএনপি। জনগণের মাঝে বিএনপির নৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তৃতীয়ত, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার ফলে নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যাবে না। এর ফলে উপজেলা নির্বাচনও নিষ্প্রভ হবে। দেশ-বিদেশে আবার বার্তা যাবে, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন ও গণতন্ত্র অর্থহীন। চতুর্থত, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মুখোমুখি হবে আওয়ামী লীগ। ফলে মাঠপর্যায়ে ব্যাপক সংঘর্ষ হতে পারে। আওয়ামী লীগের সেই সংঘর্ষের বিএনপি কোনো প্রতিপক্ষ হতে চায় না। পঞ্চমত, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল ও যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য অটুট রাখার বিষয়টিও বিবেচনায় নিয়েছে বিএনপি। সরকারবিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচন বর্জনের পক্ষে ছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়টি তাদের দলের আগের সিদ্ধান্ত। তারা সেই অবস্থানে অটল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন ও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে তাদের লাখ লাখ নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। ২৭ হাজারের বেশি কারাগারে গেছেন। ফলে তৃণমূলের কর্মীরা নতুন করে মামলা বা নির্যাতনের মুখোমুখি হতে চান না। উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে এ পরিস্থিতি অগ্রাধিকার পেয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের মতোই স্থানীয় নির্বাচনেও সুষ্ঠুু ভোটের পরিবেশ না থাকায় নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। ফলে জাতীয় নির্বাচনের মতোই কার্যত বিরোধীদলবিহীন নির্বাচন হতে যাচ্ছে উপজেলা পর্যায়েও।
সম্ভাব্য জয়ের পরিবেশ আছে এমন উপজেলাগুলোয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছিল জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এজন্য গণসংযোগ, সামাজিক কাজসহ নানাভাবে প্রচারে ছিলেন প্রার্থীরা। কেন্দ্রীয়ভাবেও প্রার্থীদের অবস্থান মূল্যায়ন করা হচ্ছিল। তবে জাতীয় নির্বাচনের মতোই স্থানীয় নির্বাচনেও সুষ্ঠু পরিবেশ নেই- এমন পর্যালোচনা থেকে শেষমেশ উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। গত ১৩ এপ্রিল কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে আমাদের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকার ভোটাধিকার হরণকারী সরকার। তাদের এ চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলেছে। তাদের প্রতি আস্থা আনার মতো কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। আমাদের প্রার্থীরা যদি নির্বাচনে যায়, তাহলে আগের মতোই মামলা-গ্রেফতারসহ নানা ধরনের হয়রানিমূলক কাজ করতে পারে বলে আমরা আভাস পেয়েছি। এছাড়া আমাদের ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে, তেমন পরিবেশও দেখা যাচ্ছে না। এ আস্থাহীনতার কারণেই আমরা প্রহসনের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরও অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আসলে সরকারের চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সুষ্ঠু ভোটের কোনো পরিবেশই আমরা দেখছি না। ফলে প্রার্থী দিয়েও কোনো লাভ নেই। স্থানীয় পর্যায়ে যারা প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের এখন থেকেই হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছিল। নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে না। প্রশাসনও একই রকম। তাদের প্রতিও জনগণের কোনো আস্থা নেই। এজন্য উপজেলা নির্বাচনে আমাদের কোনো প্রার্থী থাকছেন না, আপাতত দলীয় সিদ্ধান্ত এটাই।
সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪ উপজেলায় চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে অংশ নেননি।
১২ দলীয় জোটের একই সিদ্ধান্ত
উপজেলা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। জোটের শীর্ষনেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ১২ দলীয় জোট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইতঃপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। এখনো সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি এবং বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি আরো অবনতিশীল হওয়ায় আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তারা বলেন, এ সরকার ভোট, সংবিধান, ভিন্নমত প্রকাশ, বহুদলের অংশগ্রহণে নির্বাচনসহ মানুষের সহজাত অধিকারগুলোকে ধ্বংস করেছে। ১২ দলীয় জোট এ অবৈধ সরকারের অপরাজনীতি ও নির্বাচনী প্রহসনের অংশীদার না হওয়ার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারা আরো বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এক ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের অভ্যুদয় হয়েছে। আওয়ামী দখলদার শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের মসজিদ কমিটি থেকে শুরু করে যেকেনো পেশাজীবী সংগঠনের নির্বাচন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বার অ্যাসোসিয়েশনসহ সব জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।
সিপিবির বর্জনের ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়ে সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স এক বিবৃতিতে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের দাবিতে লড়াই গড়তে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নৈশকালীন ভুয়া ভোটের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রহসন সংঘটিত হয়েছে। দেশবাসী ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ। মানুষ ভোটের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। সেই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য কথায় ও কাজে নির্বাচন কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার উপজেলা নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা মানুষের হতাশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেড় বছরের মধ্যে নির্বাচন!
সরকারের পৃষ্ঠপোষক কূটনৈতিক অংশীদার চীনের সাথে প্রতিবেশী ভারতের একতরফা প্রভাবের কারণে সরকারের দূরত্ব তৈরি হতে শুরু করেছে। এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতি ও অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর তীব্র তারল্য সংকটের কারণে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। তিস্তা প্রকল্পসহ অন্য কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার কারণে চীনা অর্থছাড় একেবারে কমে গেছে। অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় নির্বাচনের আগে যে বাজেট সহায়তা বেইজিং দিয়ে আসছিল, তাও বন্ধ হতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে। এর ফলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে বেতন প্রদানে অনিয়ম দেখা দিতে শুরু করেছে এবং সরকারের অনেক বিভাগে চাকরিজীবীদের অবসর-উত্তর সুযোগ-সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সামাজিক গণমাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হচ্ছে।  
এ পরিস্থিতি সামনে আরো অবনতি ঘটতে পারে বরে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের প্রভাবশালী এক মন্ত্রী সম্প্রতি অনানুষ্ঠানিক আলাপে এ মেয়াদে এক থেকে দেড় বছর সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে উল্লেখ করেছেন। চট্টগ্রাম এলাকায় মন্ত্রীর এ কথাটি দলের নেতাকর্মীদের আলোচনার একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।