সংবাদ শিরোনামঃ

ভারতের নদী হত্যা অব্যাহত ** সরকার দ্রুত নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে ** সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ ** মোদি জিতলে ‘হারবে’ ভারত ** ১৮ দল আন্দোলনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ** বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ; বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য কোনো বিশেষ ধর্ম দায়ী হতে পারে না : সউদী রাষ্ট্রদূত ** বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ ** পহেলা বৈশাখে ‘ফিলদি রিচ’দের তাণ্ডব! ** বাংলা নববর্ষ ** সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় হতাশ কুষ্টিয়াবাসী ** আত্রাইয়ে ইটভাটায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে উৎপাদন, পরিবেশ হচ্ছে দূষিত ** ক্ষুধার জ্বালায় হনুমানগুলো কাতর **

ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪২১, ১৭ জমাদিউস সানি ১৪৩৫, ১৮ এপ্রিল ২০১৪

অতিপ্রাকৃত

খোন্দকার মাহফুজুল হক
রাত থেকেই ঝরছে।

টিপ টিপ বৃষ্টি। আকাশ মুখ ভার করে আছে। ভ্যাপসা গরম কিছুতেই কমছে না।

ড্রেস পরে রেডি হয়ে বসে আছি। নয়টায় একটা স্থানে পৌঁছার কথা। আমাকে বাড়ির সামনে থেকে নিয়ে যাবে। সে অপেক্ষায় আছি। এ সময় সেলুলার বেজে উঠলো।

আমি লাইন ইয়েস করলাম। সালাম পর্ব বিনিময় হলো। এর পর শুরু হলো মূল কথা।

ওপাশ : ভাই! আপনি কি আসবেন?

আমি : ইনশাআল্লাহ! কথা যেহেতু দিয়েছি। আসবো।

ওপাশ : ক’টার দিকে আসবেন?

আমি : জুমার পূর্বেই আসবো।

ওপাশ : আচ্ছা। আসেন।

আমি : আপনার শরীর এখন কেমন?

ওপাশ : আলহামদুলিল্লাহ। গত দু’তিনদিন থেকে ভালো।

আমি : আচ্ছা। আল্লাহ ভরসা। সাক্ষাতে কথা হবে।

ওপাশ : জ্বী। আসেন। সাক্ষাতে আপনাকে একটা বিষয় বলবো।

আমি : কি বিষয়?

ওপাশ : ভাই! এটা একটা অন্য ধরনের বিষয়। পৃথিবীতে যে কত কিছু ঘটে। না শুনলে বিশ্বাস করবেন না।

আমি : পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটে এর পেছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। অকারণে কোনো কিছুই ঘটে না।

ওপাশ : নারে ভাই! কিছু কিছু বিষয় আছে। যেগুলোর কোনো কারণ নাই।

আমি : তাই নাকি!

ওপাশ : হ্যাঁ। আমিও আগে সব বিষয় হালকাভাবে নিতাম। কিন্তু এখন নিতে পারি না।

আমি : আচ্ছা। তা হলে তো বিষয়টা আমাকে শুনতেই হবে।

ওপাশ : হ্যাঁ। আমি আপনি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।

আমি : জ্বী। রাখি তাহলে।

সালাম পর্ব শেষ করে সেলুলার পকেটে রাখলাম। আমার অপেক্ষার ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। তিনি এলেন। গাড়ি দাঁড় করালেন। আমি তার পেছনে গাড়িতে বসলাম। আমরা চললাম। আমাদের গন্তব্যে।

 

দুই.

দরজা খোলা

রুমে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। হুট করে ঢুকে পড়া যায়। কিন্তু তা করলাম না। কলিং বেলের সুইচে চাপ দিলাম। বেল শব্দ করে উঠলো। আমি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলাম। কলিং বেল বাজার শব্দ। বাইরে এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। আমার সাথেরজন রেইন কোট খুলে ফেললেন। আমি বৃষ্টি দেখছি।

আসসালামু আলাইকুম।

সালামের শব্দে আমি তাঁর দিকে তাকালাম। পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি উচ্চতা। সুঠাম স্বাস্থ্য। থুতনিতে হালকা দাড়ি। ফর্সা চেহারা। মুখে হাসি ধরে রেখে তিনি বললেন : মিরাজ ভাই। আসেন। ভেতরে আসেন।

আমি ওনার সালামের জবাব দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। আমার সাথের জনও ঢুকলেন।

চমৎকার করে সাজানো ড্রইং স্পেস। সেটাকে আরো মন মতো করে সাজানোর জন্য আর্কেটিং ওয়ার্ক করা হয়েছে। আমি এক পলকে সব দেখে ফেললাম। আমার সাথের জন তার সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলছেন। আমি তাদের কথা কান দিয়ে শুনছি মাত্র। মাথায় ঘুরছে অন্য বিষয়। কি ব্যাপার! মিরাজ ভাই মনে হচ্ছে অন্য মনষ্ক? তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন।

না. একটা বিষয় বলবেন বলেছিলেন। আমি বললাম। ও. হ্যাঁ, মনে পড়েছে। একটু বসেন। আমি চা নিয়ে আসি। কথাটা বলেই তিনি ভেতরে চলে গেলেন। একটু পরে ট্রেতে করে চা বিস্কিটসহ অনেকগুলো আইটেম হাতে ঢুকলেন। আমাদের সামনে রাখতে রাখতে বললেন, আপনার আপা সালাম বলেছে।

আমার সাথের জন সালামের জবাব দিলেন। তিনিসহ আমরা একসাথে চা নিচ্ছি। বাইরে বৃষ্টির গতি আরো বেড়ে গেছে।

তিনি কথা বলছেন।

মিরাজ ভাই।  বিষয়টা খুবই আশ্চর্যজনক।

তাই নাকি? আমি বললাম।

হ্যাঁরে ভাই! দুনিয়ায় যে কত কিছু ঘটে! বিশ্বাস না করে উপায় নেই।

আমি চুপ করে থাকলাম। কিছু বললাম না।

শুনেন। ঘটনা কারো কাছে বলি নাই। শুধু আপনাদের কাছে বলছি। তবে কথাটা আস্তে আস্তে বলবো। আকারে ইঙ্গিতে।

আমার সাথের জন বললেন, এ ধরনের কথা এভাবেই বলতে হয়।

আমি মুচকি হাসলাম। তার কথা শুনে।

হাসবেন না মিরাজ ভাই। আপনি শুনলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন। তিনি চিন্তিত কণ্ঠে বললেন।

আচ্ছা। হাসবো না। শুরু করেন। আকারে ইঙ্গিতে বললেই চলবে।

কথাটা বলেই আমি মনোযোগী শ্রোতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হলাম।

তিনি এবার শুরু করলেন।

 

তিন.

আপনারা তো আমার অসুস্থতার বিষয় জেনেছেন?

হ্যাঁ, একশব্দে বললাম।

কথা নাই বার্তা নাই। একশ’ চার ডিগ্রি জ্বর। পড়লাম বিছানায়। একেবারে ধম করে।

এরপর আপনার আপা শুরু করলো দৌড়াদৌড়ি। এই চেক সেই চেক। চেক ফেকে আমার জীবন অস্থির। আপনিও একদিন দেখলেন। ভাইটালে বসে আছি। দেখেছেন না? আমাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন।

হ্যাঁ। এক শব্দে বললাম।

 à¦†à¦®à¦¾à¦•à§‡ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে সবাই। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এর মধ্যে আরেক বিপদ।

কি সেটা? আমি বললাম।

আপনার আপা কথা নাই বার্তা নাই মাথা ব্যথায় অস্থির। বালিশ থেকে মাথা তুলতে পারছে না। আমার এ অবস্থা। তার এ অবস্থা। ছেলেগুলোর লেখাপড়া একেবারে বন্ধ। হায়রে বিপদ। কারে কমু বুঝতেই পারতেছি না!

হ্যাঁ আসলেই তো সমস্যা। তোমার কি মনে হয় মিরাজ? আমার সাথের জন বললেন।

আমি কোনো জবাব দিলাম না।

ও! তুমিতো বিয়ে করনি। বেগমের সমস্যাতো তোমার নেই। তুমি তো সেটা বোঝার কথা না।

আমি এবারও কিছু বললাম না। শুধু একটু হাসলাম।

এরপর শোনেন। একদিনের কথা। সন্ধ্যার পরে। হঠাৎ শুনলাম কিসের যেন আওয়াজ। একেবারে কাঁদার মতো। মা জানালা খুলে দেখলো। কালা কুত্তা। সিঁড়ি ঘরে বসে বসে কাঁদছে।

মা আমার কাছে এলো। মাথার পাশে বসলো। এরপর উঠে গেল।

কতক্ষণ পরে আবার এলো। এসে বললো, হুত! কুত্তারে খানাদানা দিলাম। কিচ্ছু খায় না। খালি কাঁদে। যাই ছাগল মানত কইরছি। আর ওপরে বড় বিপদ!

এরপর সকাল বেলার কথা, আমার শালি দরজা খুলেছে মাত্র। তখনই তার চোখে পড়লো, ঘরের সামনে একটা জলপাই গাছ। কথা নাই বার্তা নাই। মরি যার। পাতা সব ঝরে যাচ্ছে। চাইরদিকের সব গাছ ঠিক। শুধু জলপাই গাছ শেষ। বুঝেন অবস্থা।

সে এসে যখন আমাকে জানালো তখন আমি চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলাম।

দেখার তো কথা। আমার সাথের জন বললেন।

এরপর কি করলেন? আমি বললাম।

বলিছ। এর আগে আপনার জন্য আরেক কাপ চা আনি। আপনার আপা বইলছে। আমনে বার বার চা খান। ফ্লাক্সে আছে। নিয়ে আসি।

কথাটা বলে তিনি ভেতরে গেলেন। দু’ মিনিটের মাথায় ট্রে ভর্তি করে নিয়ে এলেন। চা এবং অন্যান্য।

তার যাওয়া আসায় আমার মুখে এক টুকরো হাসি এলো।

আমি তার হাত থেকে চা’র কাপ নিলাম। তাতে চুমুক দিলাম।

এরপর বললাম; জ্বী। বাকীটুকু বলুন।

হ্যাঁ। ভাই। এরপর একদিন আল্লাহর রহমত। হঠাৎ করে এক লোক এলো। দরজার কলিংবেল শুনে আমার শালি দরজা খুলে দিলো।

লোকটা দরজায় দাঁড়িয়ে একে একে সব বলতে লাগলো। মা সব শুনে লোকটাকে ভেতরে বসতে বললেন। এরপর আমি গেলাম। তিনি আমাকে দেখেই একে একে সব বলা শুরু করলো।

মূল সমস্যা কি তাবিজ বা বান মেরেছে বলেছে? আমি তার কাছে জানতে চাইলাম।

কিরে ভাই! আমনেতো একেবারে ঠিক ঠিক ধরলেন। তিনি আশ্চর্য কণ্ঠে বললেন।

কুকুর এবং জলপাই গাছে এটা করা হয়েছে। এটাও বলেছে?

হ্যাঁ!

একটাতে আপনার জন্য অন্যটাতে আপনার স্ত্রীর জন্য। বাই। আমনের কতা আর হেতেনর কতা এ রকম মিলছে কেমনে? আমনে কি হেতেনরে চিনেন নি।

না। তিনি কত টাকা নিয়েছেন?

আরে! টাকা পয়সা কিছু না।

হাদিয়া নেন নাই তো? আমি একটু হেসে বললাম। হ্যাঁ, কথাটা বলতে গিয়ে তার চেহারা কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল।

ভাই! আমাকে এবার ওঠতে হবে।

হ্যাঁ। আমাকেও উঠতে হবে। আমার সাথের জন বললো।

আপনি একটা কাজ করেন। আমাকে জলপাই গাছটা একটু দেখান। এর ফাঁকে আপার তৈরি আরেক কাপ চা খেতে মন চাচ্ছে। উনি ফ্লাক্স থেকে ঢেলে নিক। কথাটা বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম।

অবশ্যই খাবেন। আপনার আপা খুব খুশি হবে। তিনি কথাটা বলে ট্রে নিয়ে ভেতরে গেলেন।

ট্রে রেখে এসে আমাকে নিয়ে বাইরে এলেন। বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে। ভেজা পাতা থেকে তখনো পানি ঝরছে। তিনি একটা গাছের দিকে ইশারা করে বললেন, ঐটা। আমি গাছটা দেখলাম। একটাও পাতা নেই। শুধু শাখা প্রশাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দু’তিন বছর বয়সী একটা চারা গাছ।

আমি গাছটার কাছে যেতে উদ্যত হলাম। তিনি আমার হাত ধরে চুপি চুপি বললেন : আইজ রাইত বারোটা পর্যন্ত গাছের কাছে যাওয়া নিষেধ।

তাই নাকি? মুচকি হেসে বললাম।

হ্যাঁ ভাই! কিছু নিয়ম কানুনতো মানতে হয়। তাহলে ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। তিনি চুপি চুপি বললেন।

আচ্ছা।

ড্রইং রুমে এসে বললাম; চা হাতে আপা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

আমি এখন চা খাবো না। আমার সাথের জন বললেন। তিনি ভেতরে গেলেন আর এলেন। হাতে এক কাপ চা। আমি তার হাত থেকে চা’র কাপ নিলাম।

কাপের দিকে একবার তাকালাম। এরপর চুমুক দিলাম।

তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন; আপনার আপা একটা বিষয় জানতে চেয়েছে।

বলেন।

আপনি তাবিজ-তুমার বিশ্বাস করেন কি না?

আমি চা শেষ করলাম। খালি কাপটি টেবিলে রাখলাম। এরপর বললাম; কোনো অযৌক্তিক বিষয় আমি বিশ্বাস করি না।

আমার ঘটনাতো একেবারে কেমন এটাতো এখন বুঝতে পারছেন।

এটা নিয়ে আমি পরে আপনার সাথে কথা বলবো। আচ্ছা। কালকে আপনার কাছে আসি? তিনি বললেন।

না। আমি আসবো।

ভাই। তাহলে তো খুব ভালো হবে।

আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে।

ভাই। আমার বিপদ এখনো কাটে নাই? আপনিও তুকতাক জানেন তাহলে! তাহলে তো আমার চিন্তা দূর হয়।

আমি একটু হেসে বললাম; কাল এলে কথা বলবো। তখন দেখবেন। দেখে যদি মনে হয় কিছু জানি তাহলে যা জানি তা বলবেন। চলি আপা।

আচ্ছা। উঠি তাহলে। কাল ওর সাথে আমিও আসবো। দেখি ও কি জানে।

আমরা যখন বাসা থেকে বের হলাম তখন বৃষ্টি আকাশ ভেঙ্গে নামলো।

 

চার.

আকাশের মন খারাপ।

কোটি কোটি লিটার পানি ধরে রেখেছে। পর্যাপ্ত ঘনত্ব বিশিষ্ট বায়ু না পাওয়ার কারণে। পাওয়া গেলে পানিগুলো ছেড়ে দেয়া যাবে। মাটির দিকে পানিগুলো নেমে আসবে। মধ্যাকর্ষণ জনিত আকর্ষণে। বায়ুর ঘনত্ব এলোমেলো হওয়ার কারণে পানিগুলো নামবে এলোমেলো রূপে। কবিরা সে এলোমেলো পানি দেখে কবিতা লিখবে।

বৃষ্টি এলো কাশবনে

জাগলো সাড়া ঘাসবনে

বকের সারি কোথায় রে

লুকিয়ে গেল বাঁশবনে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে কি সব ভাবছি আমি। মনের ভাবনা মনের দেশে ঘুরে ফিরে। বাইরের জগতের কেউ সে ঘোরাফেরা দেখে না। দেখলে নির্ঘাত এ মুহূর্তে একটা বিশেষণ আমাকে দিয়ে বসতো।

আমি বসে আছি একটা ছাদ ঘরে। এক দরজা দুই জানালা বিশিষ্ট। কোনো ভেন্টিলেটর নেই। ঘর থেকে বাইরে জানালা দিয়ে তাকালে দেখা যায় একটা টাওয়ারের তৃতীয় তলার এক বারান্দা, এক জানালা। দরজা দিয়ে তাকালে দেখা যায় সারি সারি দালানের চূড়া।

কাশবন, ঘাসবন, বাঁশবন দেখতে হলে দেখতে হবে কল্পনায়। আমি প্র্যাকটিক্যাল ম্যান। ইমাজিন ম্যান নয়। কল্পনা কবিদের বিষয়। তারা তালগাছের পা দেখে। জেলের ভেতরে থেকে লোহার দরজা ভাঙে। পত্রিকা অফিসে বসে কাঁচা মটরশুটি খাওয়ায়। তাদের ক্ষমতাই আলাদা। আমি তাদের দলের না।

আমার এ মুহূর্তে ভাবনা হচ্ছে ক্ষিধা। দুপুরে ভাত খাইনি। কোথায় খাবো বুঝতে পারছি না। মরহুম খালেক নানার বিখ্যাত (!) হোটেলে খেতে পারি। পঁচা বাসি কিছু একটা গলা দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে পারলেই বাঁচি।

যার টেবিল সাজানোর লোক নেই তার সাজানো টেবিলে খাওয়ার আশা অবাস্তব আশা। আমি হচ্ছি সেই গ্রুপের সদস্য।

 à¦¤à¦¾à¦‡ তাকিয়ে আছি। আকাশের দিকে। মনে মনে আকাশের ডিরেক্টর কে রিকোয়েস্ট করছি। প্লিজ। অল্প সময় দিন আমাকে। চাইরটা ভাত খামু। ভিজে গেলে খেতে পারবো না। বিশেষ কারণে আমি ছাতা ব্যবহার করি না।

সেলুলারে রিং হচ্ছে।

পকেট হাতড়ে সেটা হাতে নিলাম। ইয়েস করে সালাম বিনিময় হলো। এরপর কথা চলছে। কথা বলছেন গতদিনের বক্তা।

ওপাশ : ভাই! আপনি কোথায়?

আমি : দোতলার ছাদে।

ওপাশ : সেটা কোথায়?

আমি : তিন তলার ছাদের নিচে।

ওপাশ : আরে ভাই! কি বলছেন। বুঝতে পারছি না। আপনি না আসার কথা।

আমি : হ্যাঁ। আসবো। বিকেলের দিকে।

ওপাশ : আরে না। এখনই চলে আসেন। আপনার সাথে চারটা ডাল ভাত খাবো।

আমি : ভাই! শুধু ডাল ভাত। মাছ, গোশত কিছু নেই?

ওপাশ : ভাই আসেন তো। যা পারি অল্পস্বল্প ব্যবস্থা থাকবে।

আমি : অল্প স্বল্প’র সাথে গল্প হলে একটু ভালো হয় না।

ওপাশ : কি সব বলছেন।

আমি : আকাশের মন খারাপ। মার লাগাতে পারে। ভয়ে ভয়ে আছি। বিকেলে আসবো ইনশাআল্লাহ।

ওপাশ : ভাই। আপনার অপেক্ষায় আছি।

আমি : মাপ চাচ্ছি ভাই। ঘণ্টা খানিকের একটা কাজ বাকি আছে।

ওপাশ : আপনার আপা আপনার কথা বলছিলো।

আমি : বিকেলে চা খাবো। উনাকে বলবেন।

কথা শেষ করে রাস্তায় নামলাম। মরহুম খালেক নানার হোটেলের ম্যানেজার তার ছেলে নিজাম মামা : তিনি আমাকে দেখে বললেন : কি ভাইগন্যা! ভাত খাইবা?

আমি বললাম, জ্বী মামা।

তিনি হাঁক ডাক শুরু করলেন। ভাগিনার প্রতি আরো বেশি খেয়াল করতে তিনি ক্যাশ থেকে নেমে এলেন। নিজে একটা প্লেট ধুয়ে এনে সামনে রাখতে রাখতে বললেন: আকাশের অবস্থা দেখি বাড়িত যাও নাই। না?

জ্বী মামা।

হোটেলে খাইতা হাইরবানি। কিয়া খাইবা ক?

আমি বললাম। তিনি নিজ হাতে সামনে এনে রাখলেন। পাশে বসলেন। এরপর বললেন : বিসমিল্লাহ বলি শুরু কর। খাইতে খারাপ লাইগলে কইবা। বদলাই দিমু।

আমি বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করলাম। তখনই বৃষ্টি শুরু হলো।

বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আমার তৃষ্ণা পেল। আমি পানির গ্লাস টেনে নিলাম। মুখের সামনে তুলে ধরলাম।

আমি পানি খাচ্ছি। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমার মনে হলো বৃষ্টির পানি খাচ্ছে গাছগুলো। শেকড় দিয়ে।

মানুষের মুখ একটা, গাছের দুইটা। একটা মাটির নিচে। একটা মাটির উপরে। নিচেরটা দিয়ে গাছ পানি খায়। আমার মতো ঢক ঢক করে নয়। চুক চুক করে। খাওয়া শেষে এক প্রকার ভিজেই ফিরলাম ছাদ ঘরে। গামছা দিয়ে মাথা মুছতে লাগলাম। চোখ থেকে চশমা খুলে টেবিলে রাখলাম। বৃষ্টির ঝাপটায় চশমা ঝাপসা হয়ে গেছে।  তখনই আমার মাথায় একটা বিষয় চলে এলো। একটা সমস্যার সমাধান আমি পেয়ে গেলাম।

বিকাল চারটার কাজের সব সমাধান এখন আমার মাথার মুঠোয়। সরি। মাথার নিউরনে।

আমি খুশি মনে চেয়ারে বসলাম। রিভলবিং চেয়ার, তাতে গা এলিয়ে দিলাম। পরম প্রশান্তিতে চোখ মুদে আসছে।

 

পাঁচ.

ড্রইং রুমে আমরা তিনজন। গতদিন যে তিনজন ছিলাম সে তিনজন। একজন আমি। দ্বিতীয়জন এ ঘরের অধিবাসী মাইনউদ্দিন ভাই। অন্যজন আমার সাথে আসা অধ্যাপক মামুদুল হক। তিনজনের মাঝে আমি কনিষ্ঠ।

মামুদ সাহেব বললেন; তুমি কি শিওর। তাবিজ তুমার বা তুক তাকের সাথে উনার ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই।

আমি চা’র কাপ টেবিলের উপর রাখলাম। এরপর বললাম: আমি সবগুলো বিষয় ব্যাখ্যা করে বলছি সিদ্ধান্ত আপনাদের কাছে।

ঠিক আছে। তোমার ব্যাখ্যা বল। মামুদ সাহেব বললেন। মাইন উদ্দিন ভাই। আপনার প্রেসক্রিপশনগুলো একটু আনবেন। আমি বললাম।

আনছি ভাই। তিনি ভেতরে গেলেন। এরপর হাতে করে সেগুলো নিয়ে এলেন। আমি সেগুলোর উপর চোখ রাখলাম। কিছু সময় ধরে। এরপর উনার সাথে কথা শুরু করলাম।

আমি : যেদিন থেকে আপনি অসুস্থ সেদিন থেকেই ডাক্তার দেখিয়েছেন?

তিনি : হ্যাঁ।

আমি : কোন ডাক্তার?

তিনি : স্থানীয় ডাক্তার।

আমি : তিনি আপনাকে একগাদা ওষুধ দিয়েছেন?

তিনি : হ্যাঁ। ইনজেকশনও দিয়েছেন।

আমি : আপনাকে কোনো টেস্ট করতে দেননি। তাই না?

তিনি : হ্যাঁ।

আমি : যার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে আপনার রোগ ধরা পড়েনি। প্রথমেই এন্টিবায়োটিক দেয়াতে আপনার ল্যাব টেস্ট এলোমেলো আসতে লাগলো। এ এলোমেলো অবস্থার কারণে আপনার আরোগ্য দীর্ঘায়িত হতে লাগলো। স্থানীয় ডাক্তার নরমাল ট্রিটমেন্ট দিয়েছিলো। অথচ আপনার হয়েছিলো শক্তিশালী ভাইরাসঘটিত ফিভার। যা টাইফয়েড নামে ডাক্তাররা চিহ্নিত করেন। এটার যখন ট্রিটমেন্ট শুরু হলো তখন আপনার শরীরের এন্টিবডি সেলগুলো অর্থাৎ শ্বেতকণিকা গুলো দুর্বল হয়ে পড়েছিলো।

ফলে আপনার সুস্থতা একটু দীর্ঘায়িত হলো। এছাড়া অন্য কিছু না।

তিনি : আপনার আপার বিষয় তাহলে কি?

আমি : উনি তো অসুস্থই হননি।

তিনি : কি বলছেন ভাই!

আমি : হ্যাঁ। মাথা ব্যথা উনার প্রায়ই হয় এবং এটা আপনিও জানেন।

তিনি : হ্যাঁ। কিন্তু ঐ সময় হঠাৎ এত বেশি হলো কেন?

আমি : মহিলাদের বিশেষ সময়ে কিছু শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়। এটা হরমোন ঘটিত। কেউ ব্যাথা কেউ মাথা ব্যথ্যায় ভোগে। এছাড়া মাসল সংকোচন প্রসারণও হয়। যেটা গ্রামে হাত পা জ্বালাপোড়া রূপে পরিচিত। এটাও ঐ বিশেষ সময়ে হয়। তা ছাড়া দুর্বলতাসহ অন্যান্য উপসর্গও দেখা দেয়। এগুলো একটা নেচারাল প্রবলেম। এটার সাথে সবাই মানিয়ে জীবন যাপন করে। আপনিও করেন। ঐ সময় আপনি নিজ সমস্যায় ডুবে থাকায় উনার বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারেননি। তাছাড়া আপনাকে নিয়ে উনি দৌড়াদৌড়ি বেশি করায় তখন উনার হেডেক একটু বেশি কষ্ট দিচ্ছিলো। তার মুভ করাটা কষ্টকর হচ্ছিলো। মন, শরীর এবং নেচারাল ডিজিজই উনার সমস্যার মূল কারণ ছিলো। তাবিজ বা বান মারা নয়। এটা আপনি উনার সাথে কথা বললে আরো ক্লিয়ার হবেন। অবশ্য তিনি এটা বুঝতে পেরেছেন বলেই আমার বিশ্বাস। কারণ তিনি এজন্য অল্টারনেটিভ প্ল্যান পূর্বেই করে রেখেছেন।

তিনি : তাই নাকি!

আমি : হ্যাঁ। ঘরের দেখাশোনার জন্য ছোট বোনকে নিজের কাছে এনেছেন।

তিনি : হ্যাঁ। ঐ সময় সে না থাকলে তো ...।

আমি : আপা খুব ভালো প্লানার। আপনি এদিক থেকে ভাগ্যবান।

তিনি : আরে ভাই! ওতো তাবিজ তুমার একদম বিশ্বাস করে না। আমার এ বিষয় নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে।

আমি : হ্যাঁ। বিজ্ঞান পড়–য়া কোনো মানুষ অন্ধ বিশ্বাসী হতে পারে না।

তিনি : কি আশ্চর্য। ওযে সাইন্সে পড়েছে এটা আপনি জানলেন কি করে?

আমি : উনার তৈরি চা খেয়ে। কথাটা বলেই আমি একটু হাসলাম।

তিনি : কি আশ্চর্য। চাতে কি সাইন্স আর্টস লেখা থাকে নাকি!

আমি : হ্যাঁ থাকে! যারা বোঝার শুধু তারাই বোঝে।

তুমি কি এটা বুঝিয়ে বলবে? মামুদ সাহেব দীর্ঘ সময় পরে বললেন।

আমি : ট্রাইটেশান নামে রসায়নে একটা লিকুইড মিক্সিং এক্সপেরিমেন্ট হায়ার লেভেলে আছে। এটা করতে গিয়ে হাত পাকা হয়ে যায় । সাইন্সের মেয়েরা পরবর্তীতে এটা চা তৈরিতে এপ্লাই করে। এটা তারা করে তাদের অবচেতন মনে। আর চা হলো সে রকম একটা লিকুইড মিক্সিং। কোনো একটার পরিমাণ এদিক সেদিক হলে চা’তে সেটা বোঝা যায়। অবশ্য বোঝার মতো মানুষও হতে হয়।

তিনি : ভাই! চমৎকার বিষয় জানলাম। কুকুরটার সমস্যা কি ছিলো?

আমি : বিশেষ সময়ে এ প্রাণী হঠাৎ উদয় হয়। বিশেষ কণ্ঠে আওয়াজ দেয়। নতুন নতুন স্থানে হানা দেয়। এখন সে সময় চলছে।

তিনি : জলপাই গাছ।

আমি : পানির অভাবে গাছটা মরে যাচ্ছে। গাছের গোড়া সিমেন্ট দিয়ে আপনি ঢালাই করে দিয়েছেন। একটা লোক লাগবে। গাছটাকে এখনো হয়তো বাঁচানো যেতে পারে। গাছ শেকড় দিয়ে পানি খায়। পাতা দিয়ে নয়।

তিনি : ভাই! তাবিজ তুমার তুক তাক এগুলো তাহলে কি?

আমি : সিদ্ধান্ত তো আপনাদের নেয়ার কথা। আমি না। তবে একটা বিষয় এখনো থেকে গেছে।

তিনি : কি সেটা?

আমি : লোকটা জানলো কি করে আপনাদের অবস্থা।

তিনি : হ্যাঁ। এটাতো একেবারে আজগুবি বিষয়।

আমি : না। আজগুবি না। আপনার মা লোকটাকে এনেছেন মাতৃপ্রাণ। খোদার পরেই তার স্থান। যদি বলা হয় বিষ খেয়ে ফেললে সন্তান সুস্থ হয়ে যাবে। মা নির্দ্বিধায় সেটা নিজ গলায় ঢেলে দেবেন। এই এক স্থানে পৃথিবী নিশ্চুপ। সকল সমীকরণ ব্যর্থ। নিজের জীবন সন্তানের হাতে তুলে দিয়ে নিজে কবরে যেতেও দ্বিধা করবে না।

তিনি সহ্য করতে পারছিলেন না। ছেলের যন্ত্রণা  তাঁর আকুল মন তখন যা শুনেছে তাই করেছে। মূলত পৃথিবীতে অতিপ্রাকৃত বলে যদি কিছু থেকে থাকে তাহলো মায়ের আর্তি। এছাড়া অন্য কিছু না।

তার আর্তি শুনে ঐ লোকটি কিছু করেনি। করেছে কেউ একজন। যিনি অন্তরালে থেকে সবকছিু করছেন। তিনি আপনার  শ্বেত কণিকা গুলোকে যুদ্ধের নির্দেশ দিলেন। তারা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ভাইসরাসগুলোকে খতম করতে লাগলো, আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে লাগলেন।

আমি কথা শেষ করলাম : একজন লোক এলো। গাছের গোড়া থেকে সিমেন্টের ঢালাই অপসারণ করলো। দেখা গেল নিচে পলিথিন স্তর। তার নিচে শুকনো খড়খড়ে বালু। শিকড়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে।

গাছের গোড়ায় এক গ্লাস পানি নিজ হাতে ঢেলে দিলাম।

শেষ কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

আকাশ ভর্তি মেঘের ছোটাছুটি। সন্ধ্যা সমাগত। হঠাৎ আমার শেষ বিকেলের আলো দেখতে মন চাইলো। আমার চাওয়া কেউ একজন শুনলেন। এক টুকরো মেঘ একটু সরে গেল। সে ফাঁক গলে আলোর ফোয়ারা ছুটলো প্রিজমেটিক কোণ সৃষ্টি করে।

আমি মনে মনে তাকে ধন্যবাদ দিলাম। শেষ বেলার আলোর ফোয়ারা আমার মাথা স্ক্যান করে নিলো। আমার মনে হলো মাথার অন্ধকার কঠিন অন্ধকার। এটা নিউরনগুলোকে ডেড করে দেয়।

ডেড নিউরনগুলোকে সচল করতে প্রয়োজন আলো। আলোর ফোয়ারা। যা দূর করবে অন্ধকার।

***

পাঁচ বছর পর।

আমি তাকিয়ে আছি। একটা জলপাই গাছের দিকে। ছোট ছোট জলপাই ঝুলছে।

আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন?

আমি চমকে উঠলাম। এদিক সেদিক তাকালাম। কেউ নেই। আমি আপনার সামনে।

কি আশ্চর্য। কে কথা বলছে। মনে মনে বললাম।

আমি জলপাই গাছ।

আমি মুখে একটুকরো হাসি ফুটিয়ে তুললাম।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।