সংবাদ শিরোনামঃ

সার্বভৌমত্ব এখন ঝুঁকির মুখে ** ত্রিমুখী লড়াই জমে ওঠেছে ** বাংলাদেশ ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার : মির্জা ফখরুল ** সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ ** জনবিচ্ছিন্ন সরকারের উদ্বিগ্নতা বাড়ছে ** মাওলানা নিজামী ও সাঈদীকে বিচারের নামে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ** বিজেপি নেতার খায়েশ : কান টানলে কিন্তু মাথাও আসবে! ** ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির ছোবলে যুব সমাজ ** ২২৬ এমপি কোটিপতি কর দেন না ৪২ জন ** সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতেই বিচারের নামে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ** ঝিড়ি-ঝর্ণা, নদী-ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করছে অধিবাসীরা **

ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪২১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৩৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৪

আমাদের সাংস্কৃতিক বিকাশ

মনসুর আহমদ
মুসলমানদের জীবনে দুটি উৎসব অত্যন্ত খুশি নিয়ে আসে। একটি ঈদুল ফিতর, অন্যটি ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতর আসে রমজানের এক মাস সিয়াম সাধনার শেষে। একজন মুসলমান আল্লাহর হুকুম মেনে রমজানের গোটা মাস তাঁর ইবাদতে কাটিয়ে দিতে পারার আনন্দই তাকে ঈদের দিনে পবিত্র আনন্দে উদ্বেলিত করে তোলে। সে এ দিনে মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে বাকি মাসগুলো আল্লাহর আনুগত্যে নিজকে শপে দিতে, এ জন্যই মুসলিম নারী-পুরুষ ঈদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে শান্তি কামনা করে। ঈদুল আজহা আসে গোটা জাহানের মুসলমানদের আল্লাহর পথে তাদের প্রিয় জীবন কোরবানি করার জোশ জাগাতে, খোদাদ্রোহী নমরুদের অগ্নিকুণ্ডকে গুলবাগিচা বানাতে, মরুর বুকে একটি নবীন জাতির চারা রোপণ করে সেখানে খানায়ে কাবা নির্মাণ করতে,  বিশ্ব মানবের তৃষ্ণার্ত হৃদয়কে শীতল করার জন্য আবে জম জম বহাতে। এ ঈদের সাথে জড়িত ত্যাগের স্মৃতি, বিদ্রোহ-জিহাদ ও মুসলিম জাতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিনির্মাণের স্মৃতি।

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, মুসলিম সংস্কৃতিরও অংশ। যেহেতু ‘সংস্কৃতি একটি কল্যাণময় সত্য ও বাস্তবতা। মানুষের প্রয়োজন পরিপূরণে তার প্রয়োগ অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সংস্কৃতি মানুষকে একটি আপেকি ও দৈহিক বিস্তৃতি ও বিশালতা দান করে। তার ফলে ব্যক্তিসত্তা লাভ করে সংরণ ও প্রতিরার অনুভূতি। পরন্তু ব্যক্তিত্বের সে বিস্তৃতিতে রয়েছে গতিময়তা। তা মানুষকে এমন অবস্থায় সাহায্য করে যখন তার অন্তঃসারশূন্য ও রিক্ত দেহ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে যায়।’ মুসলিম জাতিসত্তার বিস্তৃতি ও মজবুতির জন্য মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ হওয়া প্রয়োজন। তাই মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ সাধনের প্রয়োজনে এ দুই পবিত্র ঈদকে কেন্দ্র করে সংস্কৃতি চর্চাকারীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

পৃথিবীর বিভিন্ন বিখ্যাত ও মহান সাহিত্য- সংগীত সৃষ্টির পেছনে রয়েছে তাদের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও ধর্মীয় চেতনা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সংস্কৃত সাহিত্যে রামায়ণ ও মহাভারতের কথা। ‘এই দুই মহাকাব্যই ভারতবর্ষের মূর্তবিগ্রহ। বৈজ্ঞানিকরা অনেক জিনিসেরই নির্যাস তৈরি করতে পারেন। কিন্তু মানুষের বা জাতির প্রাণের নির্যাস তৈরি করতে তারা এখনও শেখেননি। বাল্মিকি ও ব্যাস নামক দুই মহাকবি বা মহাবৈজ্ঞানিক যে ভারতবর্ষের প্রাণের নির্যাস তৈরি করতে পেরেছেন এ বিষয়ে সন্দেহের বিন্দু মাত্র স্থানও নেই।’ ধর্ম-সাহিত্যরূপে রামায়ণ ও মহাভারত এই দুই মহাকাব্য যে শুধু প্রায় তিন হাজার বছর যা ভারত বর্ষের আপামর সাধারণকে আনন্দ দিয়েছে তা নয়, কবিদের প্রাণেও প্রেরণা যুগিয়েছে, ফলস্বরূপ ভারত বর্ষ কালিদাসের ‘রঘুবংশ’ ও ‘শকুন্তলা’ প্রভৃতির মতো শ্রেষ্ঠ কাব্য পেয়েছে। মধুসূদন আধুনিক বাংলা কাব্যের জন্মদাতা এবং হিন্দু ঐতিহ্যের রূপকার হতে পেরেছেন রামায়ণ মহাভারতের কাহিনীকে নতুন রূপ ও আঙ্গিকে পরিবেশন করে।

কাব্য সুন্দরকে করে সুন্দরতর ও অসুন্দরকে করে সুন্দর। কবির সমাজ সচেতনতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সুস্থতা তার কাব্যকে করে মহিমান্বিত এবং মানুষের জন্য এক অপূর্ব আবেহায়াত। আমরা দেখি ইরানের ধ্র“পদী ঐতিহ্য ও সাহিত্যের পুনরুত্থান প্রয়াসের সার্থক অভিব্যক্তি ঘটেছিল মহাকবি ফেরদৌসীর শাহনামা প্রণয়ন উপল।ে ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের মহাবিকাশ ঘটানের এই স্পৃহাকে সূফীবাদ সুকৌশলে তওহিদী অভীপ্সা চরিতার্থ করার পথ দেখিয়েছে এমনভাবে, যার দৃষ্টান্ত ইসলামের দেড় হাজার বছর ইতিহাসে অনন্য। কবি সাহিত্যিকদের পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তাদের সৃষ্টিকে সুন্দর করে, কালজয়ী করে। যে কারণে দৃষ্টিভঙ্গির পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতাই ফরিদ উদ্দীন আত্তারের রূপক কাব্যে, রূমীর মসনবীতে, হাফিজের দেওয়ানে, জামী, নিজামীর প্রেম মধুর আখ্যানে এসে ফেরদৌসির উত্তুঙ্গ আর্যাভিমান আশিকের ব্যক্তিত্ব নিয়ে মাশুক আরবকে চিরদিনের মতো ব লগ্ন করে নিয়েছে। আর আশিক-মাশুকের এই গভীর লীলাতেই বিম্বিত হয়েছে ইসলামী রসলোকের শাশ্বত সৌন্দর্যলোক। 

২

মুসলিম মানসের স্বাতন্ত্রবোধ ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতিচেতনা সৃষ্টিতে পুঁথি সাহিত্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুঁথি সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম সম্পদ ‘মকতুল হোসেন’, ‘জঙ্গ নামা’, ‘শহীদে কারবালা’, ‘কাছাছুল আম্বিয়া’, ‘হাতেম তাই’, ‘আমীর হামজা’ প্রভৃতি ধর্মীয় ভাবধারা উজ্জীবিত ও ধর্মমূলক কাহিনী কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।

শেক্সপিয়ারের পর ইংল্যান্ডের যে কবি বিশ্বজনীন স্বীকৃতি ও সম্মানের সুউচ্চ শিখরে আরোহণ করেন এবং এক অয় গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হন, তিনি হলেন জন মিল্টন। ধর্মচিন্তার দিক থেকে প্রোটেস্ট্যান্ট মিল্টন রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা ‘কমাস’। কমাসে তিনি দেখিয়েছেন যে, অটল আল্লাহ ভক্তি ও আল্লাহতে বিশ্বাস ও মানুষের আত্মশক্তিকে শতগুণে বাড়িয়ে দেয় এবং আশ্চর্য পূর্ণতা দান করে তার আত্মাকে, সেই ভক্তি ও বিশ্বাসের বলে মানুষ যেকোনো জাগতিক বিপদ থেকে নিজের মুক্তি নিজেই রচনা করে নিতে পারে। মিল্টন বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর অমর কাব্য ‘প্যারাডাইস লস্ট’ রচনা করে। এ কাব্যের প্রধান চরিত্রগুলি হলো ঈশ্বর, ঈশ্বর পুত্র, দেবদূতগণ, শয়তান রাজ, বিদ্রোহী দেবদূতগণ, মানব জাতির আদি পিতা, মাতা আদম ও ঈভ। মানবতাবাদী মিল্টন এই কাব্যে একটি রূপকের মাধ্যমে ঈশ্বর, মানবাত্মা ও শয়তানের ত্রিকোণাত্মক সম্পর্কটিকে সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করছেন। উদাহরণ না বাড়িয়ে সংেেপ বলা চলে যে, শিল্পী- সাহিত্যিকদের সৎ ইচ্ছা ও ধর্মীয় অনুভূতি সংমিশ্রণে সব দেশে, সব কালে আদর্শ শিল্প- সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব। ইরান তার একটি বাস্তব নমুনা।

সিনেমা বা চলচ্চিত্রকে যে কত চমৎকার ভাবে সৃজনশীল ও গঠনমূলক কাজে ব্যবহার করা যায়, ইসলামী বিপ্লবোত্তর ইরানী চলচ্চিত্র তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহর দেয়া স্বভাব নিয়মকে কিছুমাত্র বিকৃত না করে এবং ইসলামী চৌহদ্দীর মধ্যে থেকেই ইসলামী ইরান তার চলচ্চিত্র শিল্পে এক ইতিবাচক বিপ্লব ঘটিয়েছে, যা মানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছে।

দুই ঈদকে কেন্দ্র করে শিল্প, সাহিত্য সংগীত ইত্যাদি জগতে মুসলিম সংস্কৃতি বিকাশের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এ দুই ঈদকে কেন্দ্র করে বর্তমানে মুসলিম সংস্কৃতি বিনাশ সাধন ও বিদেশী অপসংস্কৃতির সয়লাব বইয়ে দিচ্ছেন সংস্কৃতি চর্চাকারীরা। তাদের সৃষ্টিতে ঈদ ও মুসলিম ইতিহাস -ঐতিহ্যের কোনো চিহ্ন বর্তমান থাকে না। ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নির্মিত হচ্ছে টেলিফিল্ম ‘আকাশ জোড়া মেঘ’। সেখানে থাকছে অতুল প্রসাদের গান ‘আমি অকৃতি অধম জেনেও তুমি’, রবীন্দ্র সংগীত ‘দিবস ও রজনী আমি যেন তার আশায় আশায় থাকি’ ও ডলি সায়ন্তনীর কণ্ঠে ‘জীবনও তোমার বিকশিত করো’ গান। ফিল্মটিতে অভিনয় করছেন চার প্রজন্মের ১০ জন অভিনয় শিল্পী। ঈদে প্রচারিত হবে সাদিয়া ইসলাম মৌ অভিনীত ‘খাতার ভেতরে চ্যাপ্টা গোলাপ ফুল’ ও ‘মনে পড়ে রুবি রায় নাটক’। মোশাররফ করিম ও মম অভিনীত ‘লাভ ব্যাংক’, নতুন জুটি ইমন-সাহারা অভিনীত প্রেমের ছবি ‘আমার পৃথিবী তুমি’ ইত্যাদি ঈদে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত‘ দেবদাস’ চলচ্চিত্রটি। সুবোধ ঘোষের মূল গল্প ‘দুঃসহধর্মিণী’ অবলম্বনে রচিত হচ্ছে শহীদুজ্জামান ও তাপ্রণ অভিনীত টেলিফিল্ম ‘পুতুলের ঘর, ঘর পুতুল’। ঈদের অনুষ্ঠান মালায় প্রচারের জন্য একটি কোরিয়ান প্রেমের গল্প অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে টেলিফিল্ম ‘জ্যোস্নাময়ী’। ঈদকে কেন্দ্র করে অতীতের মতো বাজারে আসছে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, নাটক গান ইত্যাদি। প্রকাশিত হচ্ছে গল্প, উপন্যাস, গান ও কবিতা ভরপুর বিভিন্ন সাময়িকী। ব্যতিক্রম ব্যতীত এর কোনটিতেই পাওয়া যায়না ঈদের রস, মুসলিম ঐতিহ্য চেতনা বা মুসলমানিত্বের কেনো আলামত।

অবস্থার এমন পাটাতনে দাঁড়িয়ে মনে পড়ে নজরুল ইসলামের কথা। তিনি লিখেছেন, ‘জ্ঞানে বিজ্ঞানে শিল্পে- সঙ্গীতে-সাহিত্যে মুসলমানের বিরাট দানের কথা হয় তারা জানেই না, কিম্বা শুনলেও আমাদের কেউ তাদের সামনে তার সত্যিকার ইতিহাস ধরে দেখাতে পারেনা বলে বিশ্বাস করে না; মনে à¦•à¦°à§‡Ñ à¦“ শুধু কাহিনী। হয়ত একদিন ছিল, যখন হিন্দুরা মুসলমানদের অশ্রদ্ধা করত না। মুসলমানদের মধ্যে শিল্পী সাহিত্যিক জন্ম না নেয়ার কারণ উল্লেখ করে খুব আফসোস করে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ বাঙ্গালী মুসলমানদের মধ্যে একজনও চিত্র-শিল্পী নাই, ভাস্কর নাই, সঙ্গীতজ্ঞ নাই, বৈজ্ঞানিক নাই, ইহা অপো লজ্জার আর কি আছে? এই সবে যাহারা জন্মগত প্রেরণা লইয়া আসিয়াছিল, আমাদের গোঁড়া সমাজ তাহাদের টুটি টিপিয়া মারিয়া ফেলিয়াছে ও ফেলিতেছে।’

৩

জাতির এমন দুঃসময় এগিয়ে এলেন নজরুল ইসলাম। তিনি তার কবিতায় মুসলিম ঐতিহ্যের রূপ প্রকাশ করতে লাগলেন নতুন রস- ভঙ্গিতে। ‘অগ্নি-বীণা’য় ছাপা হলো ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘মোর্হরম’, ‘আনোয়ার’, ‘রণভেরী’, ‘কোরবানি’। জিঞ্জির কাব্যে ছাপা হলো ‘খালেদ’, ‘সুবহ উম্মেদ’, ‘ঈদ্ মোবারক’, ‘আমানুল্লাহ’, ‘উমর ফারুক’ ইত্যাদি কবিতা।

‘ঈদ মোবারক’ কবিতায় নজরুল ইসলাম ইসলামের সাম্যবাদী রূপকে ফুটিয়ে তুললেন সুন্দরভাবে।

বললেন :

আজি ইসলামী ডঙ্কা গরজে ভরি’জাহান,

নাই বড় ছোট Ñসকল মানুষ এক সমান,

রাজা প্রজা নয় কারো কেহ।

.. ..

করো আঁখি জলে কারো ঝাড়ে কিরে জ্বলিবে দীপ?

দু’জনার হবে বুলন্দ নসীব, লাখে লাখে হবে বদ নসীব

এ নহে বিধান ইসলামের।

ঈদুল আজহার তাৎপর্য সংেেপ বর্ণনা করতে তিনি বলেন, ‘দু’ দিন বাদে কোরবানি ঈদ আসছে। ঈদের নামাজ আমাদের শিখিয়েছে, সত্যিকার কোরবানি করলেই মিলবে নিত্যানন্দ। আমরা গরু-ছাগল কোরবানি করে খোদাকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছি। তাতে ক’রে আমরা নিজেদেরই ফাঁকি দিচ্ছি। আমাদের মনের ভেতরে যে-সব পাপ, অন্যায়, স্বার্থপরতা ও কুসংস্কারের গরু-à¦›à¦¾à¦—à¦²Ñ à¦¯à¦¾ আমাদের সৎবৃত্তির ঘাস খেয়ে আমাদের মনকে মরুভূমি করে ফেলেছে, আসলে কোরবানি করতে হবে সেই সব গরু-ছাগলের। হজরত ইব্রাহিম নিজের প্রাণ তুল্য পুত্রকে কোরবানি করেছিলেন ব’লেই তিনি নিত্যানন্দের অধিকারী হয়েছিলেন। আমরা তা করিনি ব’লেই আমরা কোরবানি শেষ ক’রেই চিড়িয়াখানায় যাই তামাশা দেখতে। আমি বলি, ঈদ ক’রে যারা চিড়িয়াখানায় যায়, তা’রা চিড়িয়াখানায় থেকে যায় না কেন?’

নজরুল এ কথার মধ্য দিয়ে ঈদ আনন্দ উপভোগের প্রকৃত পন্থার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কবি ঈদ আনন্দ উপভোগের জন্য যে গান রচনা করেছেন তার সমতুল্য গান এখন পর্যন্ত আর কেউ রচনা করেছেন বলে জানা নেই। পশ্চিম আকাশে ঊষার রক্তিম আভায় রঞ্জিত মেঘের কোলে ঈদের সরু চাঁদ দেখার সাথে সাথে চারদিকে অনুরণিত হয়ে ওঠে, ‘ও মন, রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ।’এ গানটি ছাড়া যেন ঈদ উৎসব মোটেই জমে ওঠে না। ছন্দের মধুময়তা ও বাণীর গভীরতার দিক দিয়ে এমন সুন্দর গান দ্বিতীয়টি আর রচিত হয়নি। কবির মনে গভীর ঐতিহ্য চেতনাবোধ ও নিখাদ ধর্মীয় অনুভূতি প্রেরণাই তাঁকে এমন গান রচনা করতে যোগ্য করেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে মুসলিম ঐতিহ্য ও ধর্মীয় অনুভূতি বোধে উজ্জীবিত কাব্য, উপন্যাস, গান, নাটক রচনা করা যে সম্ভব তার নজীর রেখেছেন কবি নজরুল ইসলাম। ১৩৬৫ সালের ৭ বৈশাখ তারিখের à¦ˆà¦¦Ñ à¦¸à¦‚à¦–à§à¦¯à¦¾ দৈনিক ‘ ইত্তেফাক’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল কবির ‘ঈদ’ নাটকটি। ৫টি চরিত্রের ছোট্ট নাটকটি জাতিকে উপহার দিয়ে আদর্শ নাটক রচনার একটি মডেল রেখে গিয়েছেন কবি। নাটকটি শুরু ও শেষ হয়েছে গান দিয়ে, মাঝে রয়েছে একটি গান। গান তিনটির দিকে নজর দিলেই নাটকটির বৈশিষ্ট্য সহজেই অনুধাবন করা সম্ভব। নাটকটির প্রথম গান:

বিদায় -বেলায় সালাম লহ মাহে রমজান রোজা।

(তোমার) ফজিলতে হাল্কা হল গুণাহের বোঝা।।

ভোগ-বিলাসী মনকে আন্লে পরহেজগারীরর পথে,

দুনিয়া দারী করেও মানুষ যেতে পারে জান্নাতে;

কিয়ামতে তোমার গুণে ত্রাণ করবেন  বদরুদ্দোজা।

৪

নাটিকাটির দ্বিতীয় গান:

নাই হ’ল মা বসন ভূষণ এই ঈদে আমার।

আল্লাহ আমার মাথার মুকুট, রসুল গলার হার।

নামাজ রোজার ওড়না শাড়ী

ওতেই আমায় মানায় ভারী,

কল্মা আমার কপালের টিপ

নাই তুলনা তার।।..

শেষ গানটি:

এল ঈদুল- ফেতর এল ঈদ ঈদ ঈদ।

সারা বছরে যে ঈদের আশায় ছিল নাক নিঁদ।।

রোজা রাখার ফল ফলেছে দেখরে ঈদের চাঁদ,

সেহরী খেয়ে কাট্লে রোজা, আজ সেহেরা বাঁধ।

ওরে  বাঁধ আমামা বাঁধ।..

এ ছোট্ট নাটিকাটির প্রতিটি সংলাপে ছড়িয়ে রয়েছে সিয়ামের তাৎপর্য ও সৌন্দর্য। ঈদের আনন্দ শুধু মাত্র ভোগের আনন্দ নয়, ত্যাগের আনন্দ। এ সত্যই কবি প্রকাশ করছেন বিভিন্ন সংলাপে। যেমন- ‘ আমরা যে ীর -সন্দেশ বা পোলাও -কোর্মা মসজিদে পাঠাই, তা কি আল্লাহ খান ? ঐ ীর- সন্দেশই, ফিরণীই শিরণি হয়ে ফিরে আসে আমাদের কাছে। আমাদের অশুদ্ধ দেহ- মনের দান আল্লাহর নামে নিবেদিত হয়ে শুদ্ধ হয়ে ফিরে আসে। এ আল্লাহ্র পরীা। তাঁর রহম ও রহমত, কৃপা ও কল্যাণ পেতে হলে আমাদের দেহ-মনকে মাঝে মাঝে উপবাসী রাখতে হয়। এই উপবাসে দেহ -মনের ভোগের তৃষ্ণা যখন চলে যায়, তখনই ঈদের অর্থাৎ নিত্য আনন্দের চাঁদ, পরমোৎসবের চাঁদ ওঠে।’

ইসলামী ঐতিহ্য ও ঈমানী চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবির পইে এমন সৃষ্টি সম্ভব। ইতালির মহাকবি দান্তে যদি সমাধির পরপারের জগতের একটি কাল্পনিক দৃশ্যের উপর ভিত্তি করে একটি মানুষের জীবন ও নিয়তির, তার আলো ও পথ নির্দেশের প্রয়োজনে, জাগতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি সমূহের প্রতি কর্তব্যের রূপক অঙ্কন করে  বিখ্যাত হতে পারেন, তা হলে ঈদের তাৎপর্য, নমরুদ ও ইবরাহিমের সত্য কাহিনী, ইসমাইল ও হাজেরার একটি নতুন জাতি বিনির্মাণের কাহিনী নিয়ে কাব্য নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণ কি সত্যিই অসম্ভব?

শিল্প একটা আত্মিক সত্য; আত্মার সাথে তার সম্পর্ক নিবিড়, গভীর। তা ধর্মবিশ্বাসের রসে সিক্ত হয়ে বিশ্বমানবতাকে সেই সব যান্ত্রিক বন্ধন থেকে মুক্ত করতে পারে, যা আমাদের বর্তমান জীবনকে বেঁধে রেখেছে। শিল্প মানবাত্মার মুক্তির নেয়ামত হতে পারে যদি তাকে ইসলাম নির্ধারিত জীবন- ল্েযর অনুকূলে প্রয়োগ করা হয়। আর তা হলেই শিল্প একটি কল্যাণকর মাধ্যম হতে পারে- পরিণত হতে পারে জনগণের শিল্পে।

লেখক : সাহিত্যিক ও কলামিস্ট

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।