সংবাদ শিরোনামঃ

সার্বভৌমত্ব এখন ঝুঁকির মুখে ** ত্রিমুখী লড়াই জমে ওঠেছে ** বাংলাদেশ ভারতের পানি আগ্রাসনের শিকার : মির্জা ফখরুল ** সারাদেশে জামায়াতের বিক্ষোভ ** জনবিচ্ছিন্ন সরকারের উদ্বিগ্নতা বাড়ছে ** মাওলানা নিজামী ও সাঈদীকে বিচারের নামে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলুন : নূরুল ইসলাম বুলবুল ** রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি : শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা ** বিজেপি নেতার খায়েশ : কান টানলে কিন্তু মাথাও আসবে! ** ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির ছোবলে যুব সমাজ ** ২২৬ এমপি কোটিপতি কর দেন না ৪২ জন ** সরকার জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতেই বিচারের নামে শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যার গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ** ঝিড়ি-ঝর্ণা, নদী-ছড়ার দূষিত পানি ব্যবহার করছে অধিবাসীরা **

ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪২১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৩৫, ২৫ এপ্রিল ২০১৪

এ কে এম শামছুল হক রেনু
২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা দিবসে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) পথ ধরে জনৈক বন্ধু সাংবাদিককে সাথে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট অভিমুখে রওয়ানা হই। কিন্তু মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী জাহাঙ্গীর গেইটের কাছে গিয়ে এমনিতেই থেমে যাই। মনে পড়ে যায়, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী জাহাঙ্গীরসহ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে জানা অজানা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্ম-ত্যাগের কথা।

স্মৃতিতে স্থান পায় শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা এবং পাকিস্তানিদের বারংবার মওলানা ভাসানীর বিদায় বার্তা আসসালামু আলাইকুম এবং তদুপরি ২৫ মার্চের নিঝুম রাতে হানাদার পাকবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের কথা।

তেমনিভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে ভেসে আসে দজ্জাল রবিাহিনী থেকে শুরু করে বিচারবহির্ভূত অনাকাক্সিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রবাহ। রবিাহিনীতো ৪২ বছর আগের ইস্যু। যা আজকের প্রজন্মের নিকট নাটক, সিনেমার কাহিনীর মতই লাগার কথা। লিখছি আর ভাবছি, পাপ বাপকেও ছাড়ে না বলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের লেখায় আইনের দৃষ্টিতে আগেভাগে স্থান পেয়েছে ঘাতক রবিাহিনী।

রবিাহিনীকে যদি এ লেখাতে নাও আনা হয় তথাপি ইতিহাস তো মা করবেনা ঘাতক রবিাহিনীকে। রবিাহিনীর গঠন যেমন ঐতিহাসিক, তেমনি ইতিহাসের আলোকেই আইনের দৃষ্টিতেই এ লেখায় রবিাহিনী।

রবিাহিনী মানেই অমানবিক, নিষ্ঠুর, নির্মম, বর্বরোচিত এবং ঠাণ্ডা মাথায় বিচারবহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যার সাথে আকন্ঠ জড়িত এ শতাব্দীর একটি হায়েনার দল।

৪২ বছর আগে এ দেশে রবিাহিনীর সৃষ্টি হয়। রবিাহিনীর অবর্ণনীয় অত্যাচার, সহিংসতা আজকের প্রজন্মের চোখে পড়েনি বলেই তা না জানারই কথা। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টের পরবর্তী সরকার এক অধ্যাদেশে রবিাহিনী বিলুপ্ত করে তাদের সেনাবাহিনীতে একীভূত করাসহ অন্যান্য সরকারি চাকরি ও পেশাতে স্থানান্তর করে। প্রত্য ও প্রচ্ছন্নভাবে পাকবাহিনীর নৃশংসতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের কথাও এ প্রজন্মের না জানারই কথা। কারণ এসব কিছুই ৪২-৪৩ বছর আগের ঘটনা। তারপর কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর কেউ যদি না জেনে না দেখে অহেতুক এমনিতেই সমালোচনার নিরিখে সমালোচনা এবং এসব ব্যাপারে কারো পে বিপে কথা বলে বা উকালতি করে তবে তা বাস্তবিকই বেমানান, অবান্তর ও অবাস্তবও বটে।

আজ যাদের বয়স ৫০ থেকে ৬০-৬৫ বছরের দ্বারপ্রান্তে তাদের মধ্যে কেউ যদি এ ব্যাপারে কোনো আলোচনা, সমালোচনা এবং পে বিপে আলোকপাত করে থাকে, তবে তা যে আঙ্গিকেই হোক অশোভনীয়, অশ্র“তি মধুর হলেও, বেমানান বলে মনে করা কারো পইে সমীচীন না হওয়ারই কথা। অন্য দিকে একজন লেখক কলামিস্ট যে দর্শনেরই অনুসারীই হোক লোক হিসেবে তার নিরপে দর্শনই তার ভূষণ। আর যদি গায়ে মানেনা আপনি মড়ল সেজে, ইতিহাসকে অবমূল্যায়ন করে এবং Documentory Evidence উপো করে, গায়ের জোড়ে, কোনো রাজনৈতিক দর্শন এবং দেশী বিদেশী প্রভুতোষণের জন্য কিছু বলে কয়ে এমনকি লিখে সত্যের অপলাপ করতে চায় বা সত্য মিথ্যার মিশ্রণ করতে চায়, তবে সে পর্যায়ের ব্যক্তি, গোষ্ঠী, রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিক, পেশাজীবীদের প্রতি কোনো ধরনের তীর নিপে না করে শুধু এতটুকুই বলব, ইতিহাস যেমনি কারো পে সাফাই গায় না, তেমনি বিপওে নহে। সুতরাং ইতিহাস পড়ে, দেখে, জেনে, শুনে তারপর বলা, চলা, কলম ধরাটাই শ্রেয়।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাসী এমন অনেক গুণীজন দেশের বরেণ্য রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবীদের লেখা পড়ে দেখেছি তাদের মধ্যে ফুটে উঠেছে বাস্তবতার সুন্দর চিত্র। এসব কিছুতে রয়েছে দেশ প্রেমের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি।

দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্যের আলোকে বলতে হয়, আমাদের আশেপাশে আজও ৭১ স্বাধীনতা বিরোধী রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই কিছু চিহ্নিত স্লোগান ও স্বাধীনতার স্বপ শক্তি বলে পরিচিত এমন রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে ভালো অবস্থানেই আছে। আবার পত্র পত্রিকায় অহরহ দেখা যায়, যারা আদৌ মুক্তিযোদ্ধা ছিল না তাদের মধ্যে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে চাকরিতে বিশেষ সুযোগ সুবিধা এবং ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনীদেরও পোষ্য কোটার সুযোগ পাইয়ে দিয়ে বহাল তবিয়তেই আছে। আবার দেখা গেছে অনেকেই অমুক্তিযোদ্ধা হলেও সরকারের ভালো জায়গায় বড় সাহেবদের পিএ, এপিএস হিসেবে ভালো অবস্থানেই রয়েছে।

আর যাদের জন্ম স্বাধীনতার পর এবং অনেক পর তাদেরকেও আমরা রাজনৈতিক ও বিভিন্ন কারণে স্বাধীনতা বিরোধী, পাক হানাদার বাহিনীর দালাল বলে কটা করতে দ্বিধা সঙ্কোচ করছি না। অথচ তাদের মধ্যে অনেকেই পাক বাহিনীর দালাল হওয়াতো দূরের কথা তাদের পিতামাতা পর্যন্ত পাকবাহিনী দেখেইনি।

গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব মুসা সাদিক ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় পাক হানাদার বাহিনী ও বিহারী কর্তৃক ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনসসহ অন্যান্য স্থানে প্রত্যদর্শী হিসেবে ২৫/৩/১৪ একটি জাতীয় দৈনিকে গণহত্যার যে সুবিন্যস্ত বর্ণনা তুলে ধরেছেন তা পড়ে কোনো সুস্থ বিবেকবান মানুষ যেমনি স্থির থাকতে পারে না, তেমনি লেখাটি পড়ে আমার অনুভূতিতেও তাই হয়েছে এবং আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই।

এতসব কিছুর পর স্বাধীন বাংলাদেশে আর কোনো বাহিনীর দ্বারা নির্লজ্জ, নিষ্ঠুর, বেলেল্লাপনা হত্যাকাণ্ড ঘটবে তা ভাবতেও অবাক হতে হয়। যা ভাবার মধ্যে আসে না। তারপরও তার চেয়ে ঘটেছে বেশি অনেক বেশি।

১৯৭২ সনে রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রবিাহিনী নামে একটি আধা সামরিক বাহিনী গড়ে উঠে। ভারতের দেরাদুনে মেজর জেনারেল এস.এস ওবানসিং, মেজর ভাহরা এবং মেজর রেড্ডির প্রত্য তত্ত্বাবধানে তখন রবিাহিনীর প্রশিণ পরিচালিত হয়। আর নবগঠিত রবিাহিনীর মহাপরিচালক হন নরসিংদীর কর্নেল নূরুজ্জামান। রবিাহিনী দেশের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা করেনি। যার দালিলিক ফিরিস্তি ছোট কলামে উপস্থাপন বাস্তবিক দুরূহ হবে ভেবে রবিাহিনীর কিছু সামান্য কর্মকাণ্ড সংপ্তি লেখায় উপস্থাপন করা হলো। ১৯৭৪ সনের ১৮ মে সেই সময়ে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় কিশোরগঞ্জ হাইস্কুলের ছাত্র নিবাসে (বর্তমানে বিয়াম স্কুল) রবিাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এ ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিল রবিাহিনীর “লিডার” আ. লতিফ। উক্ত ক্যাম্পে প্রতিদিন অনেক সম্ভাবনাময় যুবকদের ধরে নিয়ে নির্মম ও আমানবিকভাবে শৃগাল, কুকুর, গরু ছাগলের মতো প্রকাশ্যে বেঁধে টর্চার করা হতো এবং অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে শহরের আশেপাশে শোলমারা, বিন্নাটি, কালটিয়া, মারিয়া, বগাদিয়া, করমূলী, দানাপাটুলীসহ বিভিন্ন জায়গায় রাতে ফেলে আসা হত। এ কাজে তাদেরই দালাল হিসেবে জনৈক আলতাফ মাস্টার সহযোগিতা করতো।

বিশেষ করে জাসদ, ভাসানী ন্যাপ ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতারাই ছিল মূল টার্গেট। প্রতিপরে আক্রোশ চরিতার্থ করার মতো অনেক ঘটনাও অহরহ ঘটানো হতো।

১৯৭৪ সনের ২১ মে, পারিবারিক কাজে রিকশা দিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি সুখিয়া হয়ে পাকুন্দিয়া যাচ্ছিলাম। তখন আমি ভাসানী ন্যাপের অঙ্গ সংগঠন “জাতীয় ছাত্রদল” কিশোরগঞ্জ মহকুমা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তার পূর্বে ৭১-৭২ পর্যন্ত বাংলা ছাত্র ইউনিয়ন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল মহাবিদ্যালয় শাখার সভাপতি ছিলাম (ভাসানীপন্থী)। শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দেিণ মারিয়া যেতেই দেখি কিছু লাশ রাস্তার দুই পাশে। তারপর বিন্নাটি এবং কালটিয়ায় (বর্তমানে এস.আর আইডিয়াল কলেজ) আরো কিছু যুবকের লাশ শিয়াল, কুকুর, শুকুনে মরা গরু ছাগলের মতো টেনে হিঁছড়ে খাচ্ছে। বিচলিত হয়ে সুখিয়ার গ্রামের বাড়িতে যেতেই শুনি চরপলাশের দিনমজুর আব্দুর রহমানের ১৪ বছরের ছেলে তাহের ওরফে তাকুকে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে হত্যা করে রাস্তায় লাশ ফেলে রেখে এসেছে ওরা এবং তাদের তস্কররা। এসব কিছুর পর কুশাকান্দা খেজুর গাছের নীচে আরো কয়েকজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখি এবং শিয়াল কুকুরে টেনে হিঁছড়ে খাওয়ার দৃশ্যও দেখি। সে অমানবিক ঘটনা দুকথা লিখে বুঝানো বাস্তবিকই কঠিন।

এসব কিছুর প্রতিবাদের প্রোপটে ২৪ মে ১৯৭৪ কিশোরগঞ্জ শহরের বাসা থেকে ধরে নিয়ে আমাকে রবিাহিনীর আস্তানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সে ব্যাখ্যায় না গিয়ে এতটুকু বলব, মরণের পরে কবরের শাস্তির যে উল্লেখ রয়েছে, তার অংশ বিশেষ মনে হয় দেখা হয়ে গেছে।

এ ঘটনা শুনে আমার অভিভাবক শ্রদ্ধেয় বড় মামা আবদুছ ছোবান মেম্বার তৎকালীন পাটপ্রতিমন্ত্রী এবং এলাকার সংসদ সদস্য আছাদুজ্জামান খান এমপি, এডভোকেট এম এ কদ্দুছ, এডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান খান চুন্নু মিয়া, সাবেক এম সি এ এবং কিশোরগঞ্জের তদানীন্তন মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) আবদুছ ছাত্তার খানের সাথে যোগাযোগ করলে রবিাহিনীর আস্তানা থেকে ছাড়া পাই।

তখন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, বাজিতপুর, ময়মনসিংহের নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জে রবিাহিনী শত শত লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাজিতপুর থানার সম্মুখে মাহবুব নামীয় যুবককে নওয়াপাড়া থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে জবাই করে মাথা মুন্ডু বাজিতপুর থানার সম্মুখে টাঙ্গিয়ে রাখে। এসব কিছুর জন্য যারাই দায়ী দোষী হোক, ইতিহাস একদিন এসবের বাস্তবতা নিয়েই হাজির হবে। ইতিহাস সময়ের জ্বলন্ত সাী। ইতিহাস যেমনি কাহাকে মা করেনি, তেমনি কাহাকে আশ্রয় ও প্রশ্রয়ও দেয় না। ইতিহাস অমর, অব্যয়, অয়। যার যা প্রাপ্য, বিলম্বে হলেও সে প্রাপ্য থেকে কাউকেও বঞ্চিত করে না। ৪২ বছর পূর্বে ঐতিহাসিক কারণেই রবিাহিনীর পতন হলেও আবার নতুন করে নতুন আঙ্গিকে সূত্রপাত ঘটেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক অনুষ্ঠানে জানানো হয় ২০০৯ সনে ২২৯ জন, ২০১০ সনে ২৩৩ জন, ২০১১ সনে ১১ জন, ২০১২ সনে ৯১ জন, ২০১৩ সনে ৭১ জন এবং ২০১৪ সনের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত ৪৪ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) মতে ২০১৩ সনে আইন শৃঙ্খলার অবস্থা ছিল চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সময়।

তাদের প্রতিবেদনে বলা হয় সন্ত্রাসের নতুন রূপ হচ্ছে গুম বা গুপ্ত হত্যা। একটি জাতীয় পত্রিকার পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সনে এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছে ৫৩ জন। ২০১৩ সনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ৭২ জন। র‌্যাবের ক্রস ফায়ারে ২৪, পুলিশের ক্রস ফায়ারে ১৭, বিজিবির ক্রসফায়ারে ১ জন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে ২৬ জন, পুলিশ ও র‌্যাবের যৌথ নির্যাতনে ১ জনের মৃত্যু হয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবীতে হাইকোর্টে ২০০৬ সন থেকে এ পর্যন্ত ৩টি রিট দায়ের করা হয়েছে। এমনকি হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে ১টি রুল জারি করেছেন। বর্তমানে ৪টি রুল হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপোয় রয়েছে। প্রথম রিট করার পর রুলের শুনানি হয়নি এ পর্যন্ত। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্পর্কীত ৩১, ৩৩ (খ) ও ৩৫ (৫) ধারার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, আইনের আশ্রয় এবং আইনানুযায়ী কেবল যে কোনো স্থানে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অধিকার এবং বিশেষত আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি হতে পারে। দণ্ডবিধির ৯৬-১০৬ ধারা মোতাবেক আইন শৃংখলা বাহিনী নিজের বা অন্যের মালামাল রায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে। তবে সেটা তখনই যখন ওই জানমাল বেআইনিভাবে ধ্বংসের উপক্রম হয়। কোনো েেত্র আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিকল্প না থাকলেও শক্তি প্রয়োগ হবে, তবে যেখানে যতটুকু দরকার এর বেশি নয়।

আজকে দেশে কতটুকু আছে আইনের শাসন তা এক বিরাট প্রশ্ন। যে কারণে অনেকেই উদাহরণ টেনে বলে, আইনের শ্বাসতবাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। বিগত ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের ৬ মাস আগে থেকে দেশের যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল, তা কোনো সভ্য সমাজের উপযোগী ছিল না। বহু লোক মারা গেছে, শত শত লোক আহত হয়েছে এবং হাজার হাজার লোক গণগ্রেফতারের শিকার হয়েছে। কিন্তু এ জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে কারো কাছে জবাবদিহী করতে হয়নি।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে দেশে অহরহ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেই চলছে। আইনের শাসন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এক সাথে চলতে পারে না। একটি নিরপে কমিশনের মাধ্যমে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হওয়া উচিত বলে “অধিকার” মনে করে থাকে।

দেশের রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এবং অভিজ্ঞজনরা বলেন, রবিাহিনীর এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের যদি বিচারিক আদালতে নিরপে তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে বিচার অনুষ্ঠিত হতো, তবে সংক্রামক ব্যাধির মতো আজ আর সামনে এগিয়ে বর্তমান পর্যায়ে আসত না।

সচেতন দেশবাসীর কথা হলো, মতায় কে আসল, কে গেল, কে আসবে তা গণতান্ত্রিক রাজনীতির ব্যাপার, তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ল্েয নিরপে শাসন ব্যবস্থা ও বিচার বিভাগের মানকে সংবিধানের আদলে রেখে চলাটাই যথাযথ উত্তম ব্যবস্থা।              

লেখক : কলামিস্ট

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।