সংবাদ শিরোনামঃ

গণআন্দোলনের ডাক ** সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও ব্যর্থতার কারণে দেশজুড়ে গণঅসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে ** বিচারপতিদের অভিশংসন, সম্প্রচার নীতিমালা গণতন্ত্রের ওপর ডেমোকিসের ছুরি ** ইরাকে পশ্চিমাদের হোলি খেলা ** অবিলম্বে গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন ** সরকার স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ভিত্তিমূলে আঘাত করছে ** বন্যাকবলিতদের দুর্দশা লাঘবে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ প্রয়োজন ** হীনম্মন্যতাবোধ এবং সেবাদাসদের দৌরাত্ম্য ** সাম্রাজ্যবাদ ও কাজী নজরুল ইসলাম ** পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে উদযাপিত হলো ঈদুল ফিতর ** উপমহাদেশে রেল দুর্ঘটনার শীর্ষে বাংলাদেশ, ক্ষয়ক্ষতিতে ভারত ** বন্যাপরিস্থিতির চরম অবনতি ** মুসলমানদের অনৈক্যের কারণেই ইসরাইল গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে **

ঢাকা, শুক্রবার, ৭ ভাদ্র ১৪২১, ২৫ শাওয়াল ১৪৩৫, ২২ আগস্ট ২০১৪

অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন
বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ভূ-খণ্ডগুলোর অন্তর্ভূক্ত কাপাসিয়ার সমগ্র অঞ্চল। কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদী উঁচু-নীচু, লাল-বেলে মাটির উপর দিয়ে অতিক্রম করে ভাটির দিকে মেঘনা নদীর তীর পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। পণ্ডিত-গবেষকদের ধারনা যে, দশ লাখ বছর পূর্বে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ভূ-খণ্ড হিসেবে কাপাসিয়ার ভীত রচিত হয়েছিল। পাঁচ লাখ বছর আগে প্রথম বরফ যুগে সমুদ্রের গর্ভ থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল এ অঞ্চলটি। বরফ যুগে সমুদ্রের পানি বরফ হয়ে আকাশে ওঠে যায় এবং বিশাল সামুদ্রিক হ্রদগুলো শুকিয়ে যায়। পণ্ডিতদের ধারণা যে, সে সময় সমুদ্রের পানি অত্যন্ত নিচে নেমে গিয়েছিল। বৈজ্ঞানিকদের অভিমত, এ বরফ যুগটির স্থায়ীত্বকাল ছিল ৮০ হাজার বছর। তার পর শুরু হয় বরফগলা লাল পানির প্রবাহ। এ বরফ তিনটি বরফ গলা যুগের লাল পানির প্রবাহে সৃষ্ট মাটির স্তরগুলোও লাল হয়ে যায়। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে এ প্রাচীন ভূ-খণ্ডটি গভীর অরণ্য ও বনভূমিতে পরিণত হয়।

দীর্ঘ সময়ের মধ্যে অসংখ্যবার এসব বনভূমির বিবর্তনও ঘটেছে। ভূ-তাত্ত্বিক স্তর বিন্যাসে জটিলতার দরুন এ অঞ্চলে ভূমির বিপর্যয় ঘটে। যার ফলে বনভূমির বিভিন্ন অংশ মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। চাপা পড়া বনভূমি হাজার হাজার বছরের ব্যবধানে পরিণত হয় কয়লায়। বিভিন্ন স্থানে পুকুর কিংবা কূপ খননকালে আজও এ অঞ্চলে কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়।

কাপাসিয়া উপজেলার সাহার বিদ্যাকোট (দরদরিয়া) গ্রামের পশ্চিম অংশে ভাঙ্গন কবলিত শীতলক্ষ্যা নদীপাড়ে লাল মাটির ১০/১২ হাত নিচে কয়লায় পরিণত একটি বড় আকারের বৃক্ষ আবিস্কৃত হয়। ১৯৭৮ সালে ঢাকা জাদুঘরের মহাপরিচালক ড. এনামুল হক ও প্রতœ অনুসন্ধানী শফিকুল আসগর কয়লায় পরিণত হওয়া বৃক্ষটি দেখতে আসেন এবং বৃক্ষটির কিছু অংশ উদ্ধার করেন। এ ব্যাপারে ড. এনামুল হক অভিমত প্রকাশ করেন যে, লক্ষাধিক বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে থাকায় বৃক্ষটি কয়লাকাষ্ঠে পরিণত হয়েছে।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাণীগঞ্জ-তারাগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গম স্থলে গড়ে উঠেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের অপরূপ লীলাভূমি বিশাল ধাঁধারচর। ধারণা করা হচ্ছে শত শত বছর পূর্বে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বড় বড় গাছপালা ভেঙ্গে নদীতে আছরে পড়ে এবং নৌকা-জাহাজ ডুবে শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপুত্রের মিলন স্থলে এসে কিছু অংশ আটকে যায়। এভাবে আটকে পড়া গাছপালা নৌকা ও জাহাজের স্থানে বালি জমে জমে কালক্রমে চরের সৃষ্টি হয়। গত কয়েক বছর পূর্বে ধাঁধার চরের উত্তর থেকে ড্রেজারের সাহায্যে বালি উত্তোলনের সময় পাইপের ভেতর দিয়ে বালি-পানির সাথে বড় বড় কয়লার টুকরো আসতে দেখা যায়। এলাকার লোকজন এসব কয়লা নিয়ে রান্নাবান্না করে এবং জ্বালানির প্রয়োজন মিটায়। ধারণা করা হচ্ছে, ব্রহ্মপুত্র নদ ও শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় আটকেপড়া বড় বড় গাছ চরের নিচে চাপা পড়ে কালক্রমে কয়লায় পরিণত হয়। দরদরিয়ায় মাটির নিচে সন্ধান পাওয়া কাঠ কয়লার সাথে ধাঁধার চর সংলগ্ন দুই নদীর মোহনায় পাওয়া কাঠ কয়লার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

২০০৪ সালে কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদী তীরবর্তী দস্যুনারায়ণপুর গ্রামের বিশাল এলাকা প্রত্যুষে হঠাৎ ২০/২৫ ফুট নিচে দেবে যায়। মাটিতে বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে দেবে যাওয়া মাটির নিচে অনুসন্ধান চালানো হয়। এ ব্যপারে তাদের অভিমত ছিল এখানে প্রচুর পরিমাণে পীট কয়লা রয়েছে।

১৯৭৬-৭৭ সালে উপজেলার বারাব বাজারের মসজিদের কূপ খনন করতে গিয়ে ২২ হাত মাটির নিচে একটি বড় নৌকার সন্ধান পাওয়া যায়। বারাব মসজিদটি শাখা বানার নদের ভরাটের মধ্যে অবস্থিত। কূপ খননকারীরা নৌকার অংশ বিশেষ উঠাতে গিয়ে সেখানে একটি বিরাট হিজল গাছের সন্ধান পায়।

১৯৬৮-৬৯ সালে বারাব গ্রামের ৩/৪ কিলোমিটর দক্ষিণ-পশ্চিমে পূর্ব লোহাদী গ্রামে জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে কূপ খনন করতে গেলে মাটির নীচে লালচে কালো রঙের ভারী পানির মতো এক প্রকার পানি পাওয়া যায়। এক সময় কূপ থেকে গ্যাসের মতো ধোঁয়া উঠতে দেখা গেলে ভয়ে গ্রামের লোকজন তাৎক্ষণিক কূপটি ভরাট করে ফেলে বলে জানা যায়।

১৯৮৫-৮৬ সালে চরখামের গ্রামের জনৈক ব্যক্তি পুকুর খনন করতে গেলে ৮/১০ ফুট মাটির নিচে পদ্ম ফুলের সারি সারি পাতা দেখা যায়। এলাবাসীর ধারণা, এখানে কোনো এক কালে খাল-বিল কিংবা নদীর অস্তিত্ব ছিল। যা কালক্রমে মাটি ভরাট হয়ে গেছে।

ভূ-তাত্ত্বিক বিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগর হানা দিয়েছিল স্থলভাগে। বার বার হানা দিয়ে বঙ্গোপসাগর আবার সরেও গিয়েছিল নিজ স্থানে। আমাদের কাপাসিয়া অঞ্চলে অসংখ্য খাল, বিল, নদী-নালা, জলমহল, উঁচু টেক-টিলা রয়েছে। এসবই সমুদ্রের উদগীরণের ফসল। লক্ষ লক্ষ বছর পূর্বে সমূদ্রের গর্ভ থেকে কাপাসিয়ার লাল মাটির ছোট ছোট পাহাড়ের মত টেক-টিলা-উঁচু ভূমি খণ্ডগুলো মাথা তুলে দাঁড়ায়। এসব উঁচু ভূমির আশপাশে বিস্তৃত ছিলো সমুদ্রের গভীর জলরাশি। এ বিশাল জলরাশির উপর বিক্ষিপ্ত অবস্থানে ছোট ছোট দ্বীপের মতো ভাসমান ছিলো এসকল উঁচু লাল মাটির টেকগুলি। তার পর লাখ লাখ বছর সমুদ্র ভরাট হয়ে অনেক দূরে সরে যায়। সমুদ্র দূরে সরে গেলেও রেখে যায় গভীর খাদ নামক সামুদ্রিক চিহ্ন। তার পর ধীরে ধীরে এক সময় গড়ে উঠে গভীর অরণ্য ভূমি-বন-জঙ্গল। এ ভূ-খণ্ড থেকে সমূদ্র অনেক দূরে সরে গেলেও কাপাসিয়া অঞ্চলে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যায় শতীলক্ষ্যা, বানার, ব্রহ্মপুত্রের মতো সু-সন্তান, খর¯à§à¦°à¦¾à§‡à¦¤à¦¾ নদ-নদী, বেলাইয়ের মতো বিল-ঝিল কিংবা অসংখ্য খাল ও জলমহাল।

শীতলক্ষ্যা, বানার ও ব্রহ্মপূত্র এই তিনটি নদ-নদী দ্বারা কাপাসিয়া বেষ্টিত। বানার নদী প্রসঙ্গে যতীন্দ্র মোহন রায় তাঁর রচিত ‘ঢাকার ইতিহাস’- গ্রন্থে বলেছেন(পৃষ্ঠা-৩২), “বানার ব্রহ্মপুত্রের পূর্বদিকস্থ প্রবাহের একটি শাখা নদী মাত্র; উহাই লক্ষ্যা নদীর উর্ধ্বতন প্রবাহ। কিন্তু পূর্বে তাহা ছিলোনা। বহুকাল পূর্বে ইহা একটি স্বতন্ত্র নদী ছিলো। তৎকালে উহার উৎপত্তি স্থান ছিলো মধুপুর জঙ্গলের মধ্যবর্তী গুপ্ত বৃন্দাবনের সন্নিকটে। লাখপুর-রাণীগঞ্জের নিকটে এ নদীর সহিত লক্ষ্যা নদীর সঙ্গম ঘটিয়াছিল। এগারসিন্ধুর দক্ষিণ পর্যন্ত ব্রহ্মপূত্রের নি¤œ প্রবাহ শুস্ক হইয়া গেলে এই নদী তদীয় জলস্রোতের একাংশ ভৈরব বাজার অভিমুখে প্রেরণ করে এবং অপরাংশ রক্তবর্ণ মৃত্তিকারাশি ভেদ করতঃ নতুন প্রবাহ সৃষ্টি করিয়া ব্রহ্মপূত্রের সহিত বানার নদীর সংযোগ সাধন করিয়া দেয়। এই পয়ঃপ্রনালী ¯à§à¦°à¦¾à§‡à¦¤à¦¬à§‡à¦— প্রবল থাকায় বানার নদীর উর্ধ্বতন প্রবাহ ইহার অংশীভূত হইয়া পড়ে। ফলে এগারসিন্ধু হইতে লাখপুর রাণীগঞ্জ পর্যন্ত সমূদয় নদীটি বানার নাম ধারণ করে।”

ষোড়শ শতাব্দীতে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাপাসিয়ার পূর্বাঞ্চল দিয়ে প্রবাহমান ব্রহ্মপূত্র নদটি ভরাট হয়ে যায়। বর্তমানে ব্রহ্মপূত্র নদটি তাঁর গতি পরিবর্তন করেছে এবং শীতলক্ষ্যা নদী অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে। জেগে উঠেছে অসংখ্য চর।

কাপাসিয়ার একমাত্র জলমহালের নাম ঘোরস্বাব জলমহল। এর আয়তন ১২১ একর(৪৯ হেক্টর)। ঘোরস্বাব এই জলমহালটি এক সময়ের শাখা বানার নদীরই চিহ্ন বলে জানা যায়। এ জলমহালটিতে এককালে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যেত বলে কথিত আছে। টোক শহর কাপাসিয়া উপজেলার উত্তর সীমান্তে বানার ও ব্রহ্মপূত্র নদের সংযোগ স্থলের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। বানার নামক অন্য একটি নদীর অবস্থান পাওয়া যায়। এটি টোক শহরের একটু পশ্চিম পার্শে¦ উলসরা পচুবাবু জমিদারের বাড়ির কাছ হতে বড় বানার নদী থেকে কাপাসিয়া উপজেলার মূল ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করে। বর্তমানে লোহাদীর উত্তর পার্শ্বে যে লোহার পুল দেখা যায় তা শাখা বানার নদীর উপরে অবস্থিত। কামারগাঁও বাজারের কাছে ঘোরস্বাব জলমহলটি শাখা বানার নদীর চিহ্ন। বর্তমানে তা জলমহালে পরিণত হয়েছে।

কাপাসিয়া উপজেলার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত ঐতিহাসিক টোক নগর অবস্থিত। ‘টোক’ ফার্সি শব্দ। টোক শব্দের অর্থ পোতাশ্রয়। পোতাশ্রয় হলো-সমূদ্রের তীরে জাহাজ রাখার নিরাপদ স্থান। ধারণা করা হয় যে, এক সময় টোক ছিল সমূদ্র বন্দর। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে টোক অঞ্চল দিয়ে কাপাসিয়ায় মুসলমানদের আগমন ঘটে। এককালে টোক সামুদ্রিক বন্দরের সাথে আরবীয় বনিকদের আসা যাওয়া ছিল। এ পথ দিয়েই আরব বণিক ও আউলিয়া, দরবেশদের আগমন ঘটে কাপাসিয়া অঞ্চলে। ব্যবসা ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এসে তারা এদেশীয়দের সাথে সামাজিক ও বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তাঁদের মাধ্যমে কাপাসিয়ায় ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন হয়। অপরদিকে কাপাসিয়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল তারগঞ্জ এলাকা দিয়ে শীতলক্ষ্যা নদী পথে ভারতের জৈনপুরের পীর ও আলেমগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে কাপাসিয়ায় আগমন করেন। ১৮৭০ সালের দিকে ভারতের জৈনপুরের পীর মাওলানা কেরামত আলী (র.) নদীপথে বর্জা (নৌকা) নিয়ে কাপাসিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন।

ব্রহ্মপূত্র, বানার, শীতলক্ষ্যা নদী ছাড়াও কাপাসিয়ায় পুরাতন লক্ষ্যা, আড়াল জুড়ি, পাথরদাড়া, আদিবানার, বড়ধারা নামে কিছু শাখা বা উপনদী রয়েছে। এসব নদীর পাশাপাশি কাপাসিয়ায় রয়েছে ৭৬টি খাল, ২০৪টি বিল, ১টি বাওর এবং অসংখ্য টেক-টিলা। এসবের অস্তিত্ব প্রমাণ করে লক্ষ বছর পূর্বে প্রাকৃতিক নিয়মেই সাগর গর্ভ থেকে সৃষ্টি হয়েছিল কাপাসিয়ার পুরো ভূ-খণ্ড।

এককালে সাগর গর্ভ থেকে জন্ম নেয়া কাপাসিয়া গ্যাসের উপর ভাসছে বলে অনেকের ধারণা। ইতোমধ্যে এর অনেক প্রমাণও পাওয়া গেছে। কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের বেলাসী গ্রামে, সিংহশ্রী ইউনিয়নের কুড়িয়াদী গ্রামে এবং বারিষাব ইউনিয়নের বর্জাপুর গ্রামে প্রচুর পরিমাণে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। ২০০৫ সাল থেকে কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গ্যাসের সন্ধানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স) অনুসন্ধান চালায়। অনুসন্ধানে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের তিনটি স্থানে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। বাপেক্সের ধারণা উল্লিখিত তিনটি স্থানে ৫০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ থাকতে পারে। তাছাড়া উপজেলার সনমানিয়া ইউনিয়নের আড়াল, চরসনমানিয়া, কড়িহাতা ইউনিয়নের চরখামেরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে বলে মানুষের ধারণা। বৃটিশ আমলে দূর্গাপুর ইউনিয়নের রাওনাট-বড়ব্রীজের পশ্চিম পার্শ্বে খালের জমিতে গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেলেও স্বল্প গ্যাস থাকায় এবং ব্যয়বহুল বলে উত্তোলনের ব্যবস্থা না করে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ লোহার পিলারের সাহায্যে চিহ্ন দিয়ে রাখেন। আজও ধানক্ষেতে সে পিলারের চিহ্ন দূর থেকে দেখা যায়।

কাপাসিয়া উপজেলার ভূমি সাধারণত বেলে মাটি, পলিমাটি, দো-আশ মাটি, কাদা মাটি দিয়ে গঠিত। ৪টি ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চল দিয়ে গঠিত কাপাসিয়া। এগুলো হলো মধুপুরের গড় অঞ্চল, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পলল ভূমি, মিশ্র মেঘনা মোহনা এবং নব্য বহ্মপুত্র পলল ভূমি। এ ৪টি অঞ্চল যথাক্রমে উপজেলার শতকরা প্রায় ৭২.৯, ৭.০, ১.৪ ও ১৩.৬ ভাগ এলাকায় বিস্তৃত। তার শতকরা ৫.১ ভাগ বসতবাটি, পুকুর, জলাশয় ও নদীনালা ইত্যাদি।

কাপাসিয়ার ভূমিকে সামগ্রিকভাবে ভাওয়াল ও মধুপুর গড় এলাকা বলা হয়। অধ্যাপক দারা-শামসুদ্দিন ভূ-তাত্ত্বিকগণের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন যে, ‘উত্তর বঙ্গের বরেন্দ্রভূমি, ঢাকা-ময়মনসিংহের গড় অঞ্চল এবং কুমিল্লার লালমাই উৎপত্তিগত দিক থেকে একই শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত। আনুমানিক দশ থেকে পনের লাখ বছর আগে সামুদ্রিক কিংবা জোয়ার ভাটার ফলে পরিবেশে কাদামাটির পলি সঞ্চিত হয়। সম্পূর্ণ ভাওয়াল-মধুপুর অঞ্চলটি বর্তমানে বিশাল চত্বরের আকার ধারণ করেছে। ভূ-তাত্ত্বিকগণ এর নাম দিয়েছেন ‘প্লাইসটেনিস চত্ত্বর’-যার অনুমানিক বয়স দশ লক্ষ বছর।”

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে কাপাসিয়া মহাস্থানগড় ও পাহাড়পুরের সমসাময়িক। সোনারগাঁও, বিক্রমপুর, সাভার ও ময়নামতির চাইতেও প্রাচীনতম জনপদ।

গাজীপুরের কাপাসিয়া-নরসিংদী দিয়ে বয়ে গেছে পুরাতন বহ্মপুত্র নদ। ১৭৭০সাল পর্যন্ত বহ্মপুত্রের প্রবাহ ময়মনসিংহ পেরিয়ে নরসিংদীর বেলাবর কাছে দক্ষিণ দিকে গিয়ে প্রাচীন সোনারগাঁ নগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিলো। সম্ভবত বড় ভূমিকম্প, বন্যা, প্লাবন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের কারণে কোন কোন সময়ে কাপাসিয়া ও তার আশ-পাশ অঞ্চলে ভূ-প্রকৃতির বড় রকমের উলট-পালট ও পরিবর্তন ঘটে। ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের ফলে এ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, মাটির নিচে চাপা পড়ে যায় অনেক ইতিহাস ও সভ্যতার নিদর্শন।

ধারণা করা হয় যে, শীতলক্ষ্যা-ব্রহ্মপূত্র নদের তীরবর্তী জনপদ হিসেবে কাপাসিয়া, মনোহরদী, বেলাব, শিবপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে ছিলো সু-সভ্য মানুষের বসবাস। এ অঞ্চলে এক সময় গড়ে উঠেছিল নগর সভ্যতা। প্রাচীন গ্রীসের এথেন্স ও স্পার্টার মতো গড়ে উঠেছিল নগর রাষ্ট্র। নরসিংদীর বেলাবো-মনোহরদীর ওয়ারী-বটেশ্বরে মাটির নিচে আড়াই হাজার বছর আগের এক সভ্যতা আবিস্কৃত হয়েছে। অনেকের ধারণা এ সভ্যতার সাথে কাপাসিয়ার টোক নগরের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। একসময় কাপাসিয়া এবং মনোহদী, শিবপুর, বেলাব অঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে ভৈরবের মেঘনা হয়ে এখানকার ব্যবসা বাণিজ্য সুদূর প্রাচ্যের জনপদ পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। ঐতিহাসিকদের ধারণা বহ্মপুত্র নদ হয়ে বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে চলত এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য।

মানুষের ধারণা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে ভূ-মধ্যসাগর অঞ্চলের সুদূর রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত ‘ওয়ারী বটেশ্বর রাজ্যের এবং টোক শহর তথা কাপাসিয়া অঞ্চলের যোগাযোগ ছিলো।’ হয়তো একদিন আবিস্কৃত হবে ওয়ারী-বটেশ্বরের মতো সমসাময়িক নগর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল কাপাসিয়ার টোক কিংবা কোন স্থানে।

লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তারাগঞ্জ কলেজ, সাধারণ সম্পাদক, কাপাসিয়া প্রেস কাব

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।