বেশি নম্বর না দেয়ায় ৪৭ শিককে শাস্তি

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীার খাতায় বেশি নম্বর না দেয়ার অভিযোগে ৪৭ পরীককে কালো তালিকাভুক্ত করে শাস্তি দিয়েছে ঢাকা শিা বোর্ড। তারা আগামী ৫ বছরের জন্য বোর্ডের কোনো খাতা দেখার সুযোগ পাবেন না। এ সংক্রান্ত একটি আদেশ গত মাসে বোর্ড থেকে জারি করা হয়েছে। তবে বোর্ড কর্তৃপ বলছে, এসএসসি পরীায় সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন না করায় তাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তি। অন্যদিকে শাস্তি পাওয়া একাধিক পরীক জানান, পরীার খাতায় বেশি নম্বর না দেয়ায় বোর্ড অসন্তুষ্ট হয়। এ কারণে বোর্ড এ শাস্তি দিয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, ‘তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। এসএসসি’র খাতা পুনঃনিরীণের সময় তারা বড় ধরনের ভুল করেছেন এই প্রমাণ আমাদের কাছে সংরতি আছে। তাদের ভুলের ব্যাখ্যা চেয়ে তলব করেও সঠিক ব্যাখ্যা পাইনি। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা। আমাদের শিার্থীদের প্রতি কেউ যদি সুবিচার করতে না পারে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’ সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের এসএসসি পরীায় খাতায় পুনঃনিরীণের সময় এ ত্রুটি ধরা পড়ে। এগুলো বোর্ড যাচাই বাছাই করে প্রমাণ পায় তারা বোর্ডের নির্দেশনা সঠিকভাবে না মেনে খাতা মূল্যায়ন করেন। অভিযোগে বলা হয়, শাস্তি পাওয়া এসব পরীকের একই খাতা অন্য পরীককে দিয়ে দেখানোর পর সব খাতায় নম্বরের ব্যবধান বেড়ে যায়। খাতাগুলো যাচাই-বাছাইয়ে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এই পরীকরা খাতায় সঠিক মূল্যায়ন করেননি। পরীকরা অভিযোগ করে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে হাজার হাজার খাতা মূল্যায়নে ভুলত্রুটি হতেই পারে। তবে কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে ৫ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো পরীকই নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

এদিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য বোর্ডের কাছে আবেদন করেছে অনেকেই। এজন্য কেউ নিজের নাম উল্লেখ করে কথা বলতে রাজি হননি।

২০১৪ সালের এসএসসি’র ১৬টি বিষয়ে মোট ৪৭ শিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি ও সামাজিক বিজ্ঞানে ৯ জন, পদার্থ বিজ্ঞানে ৮ জন, রসায়নে ৫ জন, গণিত ও হিসাববিজ্ঞানে ৩ জন, কম্পিউটার শিায় ২ জন এবং বাংলা, ইসলাম ধর্ম, ভূগোল, সাধারণ বিজ্ঞান,  জীববিজ্ঞান, ব্যবসায় পরিচিতি, ব্যবসায় উদ্যোগ ও বাণিজ্যিক ভূগোলে ১ জন করে পরীক রয়েছেন।

সামাজিক বিজ্ঞানের একজন পরীক অভিযোগ করেন, ‘আমাদের কয়েক দিনের মধ্যে কয়েক হাজার খাতা দেখতে হয়। সে েেত্র নম্বর দেয়ার েেত্র সামান্য ভুলত্রুটি হতেই পারে। এ জন্য ৫ বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করে দিয়ে বোর্ড কর্তৃপ সকল পরীককে বুঝাতে চান নম্বর কম দিলে খাতা পাওয়া যাবে না।’এ বিষয়ে ঢাকা শিা বোর্ডের পরীা নিয়ন্ত্রক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ্র বলেন, ২০১৪ সালে এসএসসি পরীার খাতা পুনঃনিরীণের এসব পরীক সঠিকভাবে খাতা দেখেননি। এবার প্রায় ৭৫ হাজার পুনঃনিরীণের আবেদন পড়েছিল। এর মধ্যে ছোট ভুলের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু বড় এবং অস্বাভাবিক ভুল যারা করেছে তাদের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৪৭ জনকে আগামী ৫ বছরের জন্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এ কাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শিার্থীদের দিকে তাকিয়ে সকল পরীককে সতর্ক করার জন্য আমরা অপারগ হয়েই এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। যাচাই-বাছাইয়ের পর যে ভুল অমার্জনীয় তাদের বিরুদ্ধেই এ ব্যবস্থা। এতে অন্যরা খাতার ব্যাপারে যতœà¦¶à§€à¦² হবেন।

২০১৪ সালে এসএসসিতে বেশি নম্বর দেয়ার বোর্ডের নির্দেশনা ছিল। এ বছর এসএসসি ও সমমান পরীার উত্তরপত্রে বেশি নম্বর দিতে লিখিত নির্দেশ দেয়া হয়েছিল পরীকদের। প্রধান পরীক ও পরীকদের আলাদাভাবে বোর্ডের প থেকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

কোনো শিার্থী ২৮ নম্বর পেলেও তাকে পাস নম্বর ৩৩ দিতে বলা হয়। এছাড়া এ+ও এ গ্রেডসহ বিভিন্ন গ্রেড পাওয়ার েেত্র উত্তরপত্র সহানুভূতির সঙ্গে মূল্যায়ন করতে বলা হয়। মৌখিকভাবেও দেয়া হয় নির্দেশনা।

বোর্ড থেকে পরীকদের বলা হয়- কোনো শিার্থী ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৮ পেলেই তাকে পাস নম্বর ৩৩ দিতে হবে। এছাড়া, মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয় কোনো শিার্থী ২৫ বা ২৬ পেলেও তাকে ২৮ দিয়ে পাস করিয়ে দিতে। এছাড়া কোনা বিষয়ে ৩৮ পেলে ৪০, ৪৮ পেলে ৫০, ৫৮ পেলে ৬০, ৬৮ পেলে ৭০ এবং ৭৮ পেলে ৮০ করতে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করতে বলা হয়।

গত ১৭ মে এসএসসি ও সমমান পরীার ফল প্রকাশিত হয়। এবার ৮টি সাধারণ বোর্ডসহ ১০টি বোর্ডে পাস করে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৩৩১ জন। পাসের হার ৯১.৩৪ ভাগ। রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। এক বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়েছে ৫১ হাজার ৫০ জন। আরটিএনএন।