সংবাদ শিরোনামঃ

তীব্রতর হচ্ছে আন্দোলন ** পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে ** শক্তি নয় সমাধান সংলাপে ** টানা অবরোধ হরতালে অচল দেশ ** সংলাপে বসতে বহির্বিশ্বের প্রচণ্ড চাপে বেকায়দায় সরকার ** অনুমতি ছাড়াই চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিযান ** আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করে সরকার টিকে আছে ** রাজনৈতিক দমন নিপীড়ন বন্ধ করুন ** আবারও দৃশ্যপটে বিদেশী কূটনীতিকরা ** অভিযান নামের নির্যাতন ** গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে ২০ দলীয় জোটের অবরোধে অচল দেশ ** আল মাহমুদের কবিতা কার প্রেমে, কার সান্নিধ্যে **

ঢাকা, শুক্রবার, ১০ মাঘ ১৪২১, ১ রবিউস সানি ১৪৩৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫

মোশাররফ হোসেন খান
কবি আফজাল চৌধুরীর কাব্যময়ী স্বপ্নাবেগ শাসনে ও সোহাগে ধাবমান ছিল একটি সুবৃহৎ কালব্যাপী। কবি হেঁটেছেন বটে, ক্লান্তিহীন পরিব্রাজকের মতো শিল্পের সুবিস্তৃত সীমানা। কখনো গ্রাহ্যত বাস্তবতায় ছিলেন প্রজ্ঞাপ্রবর অধ্যাপক, প্রশাসক, পরিবেশগত সামাজিক নানা অনুষঙ্গে। কিন্তু এখন মনে হয় সেও ছিল কবির নিজস্ব শিল্পস্রোতের সাময়িক বিশ্রাম। কিংবা বলা যায়, মৌলগত চারিত্রে তিনি ছিলেন সতত সজাগ। সূক্ষ্মতম ছেদ মনে হলেও দীর্ঘ বিচ্ছেদ কখনো তাঁর ঘটেনি শিল্পের সুষমা থেকে। সত্য বটে, সময়ের কঠিনতম যাত্রায় কবি যখন ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে উঠেছিলেন, তখনই তিনি বিশ্রামের জাজিমাটি বিছিয়ে নিয়েছিলেন সাহিত্যের তরু-তমালের নিচে। তাঁর সময়টি সামনে রাখলে অনুমান করতে কষ্ট হয় না যে, তিনি কেন ক্লান্ত হতে পারেন।

স্মরণ করা যাক ষাটের দশকের কথা। পঞ্চাশের কতিপয় কবি সব ভেঙেচুরে, সকল নীতিবোধকে তুচ্ছজ্ঞান করে, আদর্শ-ঐতিহ্যের শিখাটুকু নিভিয়ে বোধ ও বিশ্বাস দু’পায়ে দলে কবিখ্যাতির জন্যে ক্রমাগত ছুটছেন বেয়াড়া টাট্টু ঘোড়ার মতো। তাঁদের আধুনিকতার উগ্রতায় গোটা সাহিত্য সমাজটি মুষড়ে পড়ছে। চিরায়ত আলোকিত মূল্যবোধকে পাশ কাটিয়ে তাঁরা ক্রমশ ছুটছেন কৃত্রিম মুখোশ পরে বৈষয়িক বাণিজ্য বন্দরে। তাঁদের সম্মুখে বুদ্ধুদের কিংবা জীবনানন্দ, অমিয় কিংবা বিষ্ণুদেÑএই সকল ট্রচ্ছায়ার হাতছানি। ইউরোপিয়ান জৌলুসেও তাঁরা সদা কম্পমান। তাঁদের, এই পঞ্চাশের কবিদের তখন কেবল উপেক্ষার কাল। স্বদেশ, স্ব-ঐতিহ্য, নিজস্ব ভূমিÑনা কোনোটাই তাঁদের মন ও ময়দানে রেখাপাত করেনি। এই অবক্ষয় ও অরাজকতার মধ্যেই উদ্ভব ও উন্মেষ ষাটের দশকের।

ষাটের দশকের যে সকল কবি নোঙর ফেললেন, সঙ্গত কারণে তাঁরা পঞ্চাশের চেয়ে অতিমাত্রায় হয়ে উঠলেন উচ্ছৃঙ্খল ও উদ্দেশ্যহীন। তাঁদের তেজ ও তারুণ্য, অবিশ্বাস অবিমৃষ্যকারিতা, কবিতার পাটাতনে আছড়ে পড়লে বটে, কিন্তু খুব বেশি বুদ্ধুদের সৃষ্টি করলো না। তাঁদের প্রতিভা কিছুটা বিমর্ষ ও ফিকে হয়ে উঠলো বটে, কিন্তু অবাঞ্ছিত কোলাহল ও কলগুঞ্জন থামলো না। ফলে এক অস্বাভাবিক বিপরীত স্রোতে ষাটের সাহিত্যের মাস্তুল বারবার প্রকম্পিত হলো। সেই উদভট আর ততোধিক উৎকট ধূলিধূসর কালপ্রবাহে আমরা সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম এক অসামান্য সাহসী রাজপুত্রের উত্থান। তিনি চলমান স্রোতের বিরুদ্ধে এক তুমুল স্রোতের নির্মাণ প্রয়াসী।

উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যাভিসারী। অজস্র স্বপ্নের একক অভিযাত্রী। মরুঝড় কিংবা পথের প্রতিবন্ধকতা, নাÑকোনো কিছুই তাঁর জন্য ক্লান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারেনি। তিনি তখনো সেই ঘোরতর আঁধারে, সম্পূর্ণ একা-নি:সঙ্গ হেঁটেছেন বন্ধুর পথ ভেঙে, কিংবা পাহাড় কেটে পথ তৈরি করে। দু:সাহসীই বটে কোনোরকম পাশফেরা নয়, বাতাস বুঝে পাল ওড়ানোর মতো ধূর্তামিও নয়Ñবরং হাত না মানা এক নতুন বখতিয়ার খিলজী কিংবা ইবনে বতুতার পাগড়ির শিষ, তিনিই কবি আফজাল চৌধুরী। স্রোতের বিরুদ্ধে এত তুখোড় স্রোত।

আফজাল চৌধুরী, ষাটের ধ্যানমগ্ন এক কবি। আত্মিক ও আধ্যাত্মিক উভয়বিধ উৎকর্ষে সমান উজ্জ্বল। সুদৃঢ় পদক্ষেপ, সুনির্বাচিত ভাষাভঙ্গির প্রকাশ, সুমার্জিত রুচিবোধ, প্রাণস্পর্শী প্রজ্ঞাদীপ্ত বক্তৃতা-ভাষণ, কবিতা ও গদ্যে স্বশাসিত ও অনায়াস শব্দের খেলা, বিষয় অন্বয়ী রচনাপ্রবাহ এ সকল কিছুর মধ্যে তাঁর এক রাজসিক গতিময়তা-আমাদের কাল তো বটেই, বাংলা সাহিত্যের সুপ্রশস্ত প্রাঙ্গণে বহুকাল যাবৎ নির্ভুল সনাক্তযোগ্য রয়ে যাবে। আজ, ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে কবির কাজগুলোই বারবার ভেসে উঠছে, হৃদয় ও চোখের দীপ্তিতে। কবিতায় তো বটেই, তিনি নিজস্ব প্রতিভা, শক্তি ও কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাঁর প্রতিটি কর্মবাঁকে। সময় ও কাল তাঁকে দিয়ে বহু বিখ্যাত কাজ সম্পাদন করিয়ে নিয়েছে। যা মনে হয় না, আফজাল চৌধুরী ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সম্ভবপর হতো।

‘বার্নাবাসের বাইবেল’-এর কথা আমি কেন, বাংলা ভাষী প্রতিটি শিক্ষিত মানুষই স্মরণে রাখতে বাধ্য। অনুবাদে তাঁর যে দক্ষতা ও শক্তি তার প্রামাণ্য দলিল রয়ে গেল এই অনুবাদের মাধ্যমে। আফজাল চৌধুরী কবি ও পাণ্ডিত্যের দুই স্রোতমোহনার সম্মিলনে যে অসাধ্য সাধন করেছেন, তা এই জাতি ভুলতে পারে বলে মনে হয় না।

সম্পাদনার প্রসঙ্গটি এলেই অকস্মাৎ আমাদের স্মৃতির দুয়ারে এসে দাঁড়ায় আফজাল চৌধুরী সম্পাদিত ‘আফগানিস্তান : আমার ভালোবাসা’। ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রযোজিত ও আফজাল চৌধুরী [যদিও আর একজন কবির নাম সম্পাদনায় যুক্ত আছে, তবুও মূল কাজটি করতে হয়েছিল আফজাল চৌধুরীকেই] সম্পাদিত [নভেম্বর, ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘আফগানিস্তান আমার ভালোবাসা’ কেবল বিষয়গুণেই নয়, সম্পাদনার উৎকর্ষ ও সুনিপূণ কারুকার্যে সেটা ইতোমধ্যেই একটি আকরগ্রন্থে রূপ নিয়েছে এবং বাংলা সাহিত্যের একটি অপরিহার্য মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়েছে।

তার অগ্রজ ও ষাটের সঙ্গীরা যখন বুঁদ হয়ে আছেন খ্যাতি, মোহ, বৈষয়িক ও জাগতিক নগদ প্রাপ্তিতে তখন, সেই প্রহেলিকার মধ্যেও আফজাল চৌধুরী ধনুকের ছিলার মতো টান টান রেখেছিলেন তার আদর্শিক ও ঐতিহ্যিক শিরদাঁড়া। আত্মবিক্রয় ও যাবতীয় বিকৃতি থেকে যোজন দূরে তার অবস্থানকে নিশ্চিত রেখেছেন। একজন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন, সত্যানুসন্ধানী কবি ছাড়া শত সম্মোহনী হাতছানির কুহক থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে পারেন না। এজন্য কি বৈরী হয়ে ওঠেনি তার চারপাশ? হয়েছিল বৈকি। তা না হলে আমরা কেন লক্ষ্য করবো তার প্রতি এতোটা নিষ্ঠুর ও নির্মমতা!

নির্মম নিষ্ঠুরতাই বটে। তা না হলে বাংলা একাডেমিসহ আজকের রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ও সম্মাননায় যেখানে তস্য ব্যক্তিকেও অভিষিক্ত করা হচ্ছে, ঠিক সেখানে আফজাল চৌধুরীর মতো কবি ও ব্যক্তিত্ব, পণ্ডিত ও প্রতিষ্ঠান কেন অবহেলিত থাকবেন? শুধু কি এখানেই তিনি উপেক্ষিত? আমরা বেদনার সাথে লক্ষ্য করলাম, বাংলা একাডেমি থেকে ফেব্র“য়ারি, ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত ‘বাংলা একাডেমি লেখক অভিধান’Ñএ তার অনুপস্থিতি। কবি আফজাল চৌধুরী এইভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন। আমাদের সাহিত্যের বহুবিধ অনুষঙ্গে।

হতে পারে, সঙ্গতও বটে, আফজাল চৌধুরী অপ্রত্যাশিত এইসব গ্লানিতে ক্ষুব্ধ হতে হতে একসময় নিজেকে শুটিয়ে নিয়েছেন সাহিত্য পিচ্ছিল উপত্যকা থেকে। কিন্তু তার কবিতার কেন্দ্রীয় বিশ্বাস ও বিন্যাস থেকে তিনি কখনো অব্যাহতি নেননি। একজন সত্যনিষ্ঠ কবি কখনো বিশ্রাম নিতে পারেন না। দায় ও দায়িত্ব থেকে কখনো নিজেকে দূরে রাখতে পারেন না। সাহিত্যের সামাজিক দায়বদ্ধতার নিগূঢ়ে তিনি বাঁধা থাকেন, থাকতে বাধ্য হন। কবি আফজাল চেধুরীর সামগ্রিক প্রয়াস ও প্রাণান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সেই সত্যকে স্পর্শ করতে দেখেছি। আমরা জানলাম অনুযোগহীন এক সাবধানী উচ্চারণ :

কি-রূপ নি:সঙ্গ আজ মনে হয় নিজেকে এ পার্থিব প্রবাসে

চারপাশে এতো ভীড়, ক্রস্ত-চাপ, বিরতিবিহীন কর্মযোগে

কোথায় আমার নিজ স্থায়ী কক্ষ, কোথায় সে অন্তিম শয়ান?

কি আমার পরিণতি, বিজয়ী না শহীদের রক্তাপ্লুত লাশেÑ

যাত্রাশেষ?Ñজানি না তা। বুঝি না এ ভঙ্গুর দেহটি চিররোগে

ক্ষয়ে যাবে, নাকি হবে জনারণ্যে সমাদৃত নন্দিত প্রয়াণ?

কি হবে, কি হবে ওহে, বলে দাও কোন যোগাযোগ

আমার শুরু ও শেষ, কোথায় কোথায় মুক্তি, কোন্ বিনিয়োগে?

হে সত্য, তোমার রূপ এখনও প্রচ্ছন্ন এই জীবন বিন্যাসে

হে জীবন, পারিনি তো তোমার দারুণ ক্ষতে যথাযোগ্য ত্রাণ

স্নেহে বিছিয়ে দিতে। সূর্যোদয় লক্ষ্য বটে এই সন্ধ্যাকাশে।

এখনও প্রান্তিক দূর্গে যুদ্ধ চলছে; কুরবান হয়েছে এই জান

এইটুকু বলতে পানি-জীবন ব্যয়িত নয় কেবল সম্ভোগে

কেবল কৈবল্য যপে অঙ্ক কষাকষি নয় যোগে ও বিয়োগে।

[প্রান্তিক দূর্গে যুদ্ধ : সামগীত দু:সময়ের]

প্রকৃত অর্থেই কি আফজাল চৌধুরী ‘পার্থিব প্রবাসে’ যন্ত্রণাদগ্ধ হচ্ছিলেন, নাকি ছিলেন নিজ গৃহে পরবাসী? বিষয়টি অমীমাংসিত প্রশ্নসাপেক্ষ। তবুও এই সত্য আজ অনেক বেশি স্বীকৃত যে, কবি আফজাল চৌধুরী তার সময়কালে ছিলেন আদর্শের ক্ষেত্রে এক আপোষহীন কবি ব্যক্তিত্ব। তার ইন্তিকালের পর, আজ মনে হচ্ছে, তার সেই কবি ব্যক্তিত্বই মূলত বিজয়ের মুকুট অর্জনে সক্ষম হয়েছে।                          à¦²à§‡à¦–ক : কবি

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।