সংবাদ শিরোনামঃ

জনগণের আন্দোলন সফল হবেই ** কোকোর জানাজায় লাখো মানুষের আহাজারি ** সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজন সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ** বিরোধী দলের আন্দোলনে শঙ্কিত সরকার ** সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ-হরতাল চলছে ** সংহতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আরব নেতাদের ** দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত সরকার দেখতে চায় ** শওকত মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া না হলে সরকার পতনের আন্দোলন ** সংলাপেই সমঝোতা করুন ** আবারও দৃশ্যপটে ভারতের সেই ঝানু কূটনীতিক ** কান্নাভেজা চোখে ছেলেকে শেষ বিদায় জানালেন খালেদা জিয়া ** ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানদের অবদান ** জনপ্রতিরোধে রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ** কার্পেটিং জুট মিলের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারীদের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪২১, ৯ রবিউস সানি ১৪৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

স্মৃতির পাতায়

শহীদ মশিউর রহমান

॥ মু. লাবীব আহসান॥
হে প্রভু!! তুমি আমার অশ্রুকে শাসন করার ক্ষমতা দাও। আমার হৃদয়ের কান্না থামিয়ে দাও। কেননা আমি সাজাতে বসেছি ফুলের ডালি, যে ফুল কুঁড়িয়েছি তোমার মেহমান আমার প্রিয় ভাই শহীদ মশিউর রহমানের জীবন থেকে। স্মৃতির পাতায় যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখেছি, যার স্মৃতিগুলো সবসময় আমাকে তাড়া করে ফিরে, যার সংস্পর্শগুলো প্রতিনিয়ত হৃদয়ে ক্রন্দন তৈরি করে। তাকে আর কোনো দিন দেখা যাবে না, স্পর্শ করা যাবে না, শুধু হৃদয় নিয়ে অনুভব করা যাবে। আজও বিশ্বাস করতে পারি না তিনি আর আমাদের মাঝে নেই।

হক ও বাতিলের দ্বন্দ্ব চিরন্তন। যুগে যুগে সত্য ও মিথ্যার লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়ে সত্যের পতাকাকে সমুন্নত করেছেন অসংখ্য বীর সেনানী। সেই আমীর হামজা, খুবাইব, খাব্বাব, মালেক, সাব্বির, হামিদের পথ ধরে কালেমার পতাকা উড্ডীনের  এ মহৎ কাজকে বেগবান করতে গিয়ে জীবন দিয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহীদ তালিকায় ১৫৫তম স্থানে নিজের নাম লেখালেন প্রিয় ভাই শহীদ মশিউর রহমান।

রংপুরের ইসলামী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে মিঠাপুকুর এক অনন্য নাম। দেশের অন্যতম বৃহৎ এ উপজেলার সিংহভাগ মানুষের আবেগ, অনুভূতি ইসলাম ও মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বরাবরই। এ জমিনেই জন্ম নিয়েছেন শহীদ আতাউর রহমান হামিদীর মত রাহবার। যার রক্তের মাধ্যমেই শহীদী মিছিলের যাত্রা শুরু হয় এই জমিনে। এ যাত্রা চলছে অবিরাম গতিতে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের মশিউর ভাই।

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, পৃথিবীর ইতিহাসের পাতায় স্থান করার মতো এক ঐতিহাসিক দিন। বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ের প্রতিবাদে সর্বোচ্চ সংখ্যক শাহাদাতের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয় এ দিনে। তারই অংশ হিসেবে সাত সাতজন ভাইয়ের তাজা রক্তে লাল হয়ে যায় মিঠাপুকুরের সবুজ ভূখণ্ড। ঝরে যায় সাতটি ফুটন্ত রক্ত গোলাপ।

ঘটনার দিন সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে থাকে মিঠাপুকুরে। প্রিয় নেতার প্রতি এ অন্যায় মেনে নিতে পারেনি বিবেকবান তাওহীদি জনতা। তারা এর তীব্র প্রতিবাদের জন্য রাজপথে উঠতে গেলে আওয়ামী পুলিশ গুলি চালায় নিরস্ত্র জনতার উপর। রাজপথে ঢলে পড়ে মশিউর ভাইসহ সাতটি তাজা প্রাণ। আহত হয় অসংখ্য ভাই। মিঠাপুকুর পরিণত হয় এক আতঙ্কের জনপদে।

মশিউর ভাইয়ের সাথে আমার প্রথম পরিচয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ মিঠাপুকুরের হুলাশুগঞ্জ বাজারে এক অনুষ্ঠানে। তখন মশিউর ভাই দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন। জেলা সভাপতি তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন আর মশিউর ভাই একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমার চোখ অনেকটা কপালে উঠে গেল। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়তাম। জেলা সভাপতির সাথে কথা শেষে তার সাথে পরিচিত হলাম। জানতে পারলাম তার বাড়ি বৈরাতীতে। আমি তার আন্তরিকতা দেখে অবাক হলাম। মনে হতে লাগল তিনি আমার অনেক দিনের চেনা কোনো কাছের মানুষ। আমি তাঁকে বললাম, “ভাই এত দুর থেকে এসেছেন!” বললেন, “এটাই ইসলামী আন্দোলন। এখনো আমাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে, সবে তো শুরু।” আমি অবাক হলাম তাঁর ঈমানের প্রখরতা দেখে। একজন ভালো মানুষের সাথে পরিচিত হবার গৌরব নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরলাম। সেদিন থেকেই তার সঙ্গে ফোনে মাঝে মাঝে কথা হত। এরপর তার সাথে একসঙ্গে অনেকদিন একই থানায় কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। অনেকদিন তিনি উপশাখা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। মাঝে মাঝেই তিনি তাঁর উপশাখার কাজের অগ্রগতির কথা আমাকে বলতেন। তার দাওয়াতী কাজের কৌশল দেখে অবাক হতাম।

মশিউর ভাই প্রোগ্রামে অনুপস্থিত ছিলেন এমন দৃশ্য ছিলো বিরল। সব সময় দেখেছি আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রসারিতে। শাহাদাত বরণ করার আগের সময়গুলোতে তাকে প্রায়ই মন মলিন অবস্থায় প্রোগ্রামগুলোতে দেখতে পেতাম। পরে জানতে পারি, তিনি এক অসুস্থতায় ভুগছেন। একবার সাথী বৈঠকে তিনি একটু দেরি করে এসেছেন। তৎকালীন জেলা সেক্রেটারি শিমুল ভাই ছিলেন প্রোগ্রামের অতিথি। তিনি প্রশ্ন করলেন, “ভাই দেরি কেন?” মশিউর ভাই বললেন, “রাস্তায় কোনো যানবাহন না থাকায় হেঁটে আসতে হয়েছে।” আমরা অবাক হয়ে গেলাম যে কত বেশি ঈমানের অধিকারী হলে এতদূর রাস্তা হেঁটে প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে পারেন।

মশিউর ভাই শহীদ হওয়ার কিছুদিন আগে আমি তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। অত্যন্ত জীর্ণশীর্ণ একটা কুটির। তার বাড়িতে নাস্তা করলাম। ফেরার সময় তার মায়ের সাথে কথা হলো। তার মা আমাদের বললেন মশিউর ভাইকে নিয়ে তার ভয়ের কথা। জানালেন, “মশিউর প্রোগ্রামে যায় এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং ভালোই লাগে যে আমার ছেলে আর দশজন ছেলের মতো মেয়েদের সাথে কথা বলে রাত পার করে না, সে মহান মাবুদের দরবারে চোখের পানি ফেলে রাত অতিবাহিত করে। কিন্তু সে যদি প্রোগ্রামে গিয়ে আর ফিরে না আসে তাহলে আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো।” মশিউর ভাই পাশে দাঁড়িয়ে লাজুক মুখে তার মায়ের কথাগুলো শুনছিলেন। আমরা তার মাকে অভয় দিয়ে বললাম, “না খালা কোনো সমস্যা হবে না ইনশাআল্লাহ। আপনার ছেলে আপনার বুকেই থাকবে।” কিন্তু না আমাদের কথা সত্য হয়নি। মশিউর ভাই তার মায়ের কোলের চাইতে মহান মাবুদের আশ্রয়ে থাকতেই বেশি পছন্দ করলেন। আমরা এখন মশিউর ভাইয়ের মাকে কি জবাব দিব? যে পুলিশের গুলিতে মশিউর ভাই শাহাদাত বরণ করেছেন তার কাছেও কি এর জবাব আছে? তার কাছে এটা সামান্য একটা ছেলে খেলা হতে পারে, কিন্তু তার একটি গুলি কেঁড়ে নিয়েছে একটি পরিবারের সারাজীবনের স্বপ্নকে। উপহার দিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু পিতার কাঁধে সন্তানের লাশকে।

আজ মশিউর ভাইয়ের ভাগ্য দেখে  খুব বেশি ঈর্ষা হয় । একই সাথে সংগঠনের সাথী প্রার্থী হলাম, সাথী হলাম, মিছিলে প্রোগ্রামে, কর্মশালায় একসাথে থাকলাম কিন্তু তিনি গোপনে গোপনে মহান মালিকের দরবারে শাহাদাতের আর্জি পেশ করে রেখেছিলেন এটা কোনো দিনও বুঝতে দেননি। মশিউর ভাই চলে গেলেন মহান আল্লাহ মাবুদের সান্নিধ্যে আর আমি  পড়ে রইলাম প্রাত্যহিক সমস্যাসঙ্কুল জঞ্জালযুক্ত দুনিয়ায়।

খুনিরা মনে করেছে মশিউরের মতো তেজদীপ্ত ঈমানী শক্তির অধিকারী ছাত্র নেতাকে হত্যা করে দ্বীন বিজয়ের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেবে। কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষী-হত্যা করে, জুলুম নিপীড়ন করে কোনো আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যায়নি বরং এর মাধ্যমে তা ততোটাই বেগবান হয়েছে।

মিঠাপুকুরের দ্বীন কায়েমের অতন্দ্র প্রহরী প্রাণের স্পন্দন যতদিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত শহীদ মশিউরের সংগ্রামী জীবনের ইতিহাস স্বর্ণালী অক্ষরে অক্ষুণœ থাকবে। শহীদ মশিউরের প্রতি ফোঁটা রক্ত মিঠাপুকুরের সবুজ চত্বরে অভিশপ্ত ঘাতকদের প্রতি অভিশাপের তীর প্রতিনিয়ত নিক্ষিপ্ত হবে। সময়ের ব্যবধানে আবারো ছাত্র ছাত্রীদের পদচারণায় মুখোরিত মিঠাপুকুরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জাগতিক নিয়মে পিতা-মাতার স্বপ্ন নির্মাণে নিয়োজিত। কিন্তু তাদের মধ্যে চিরচেনা বন্ধু বৎসল শহীদ মশিউরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। মিঠাপুকুরের ছাত্র সমাজের অধিকার আদায়ে সদা তৎপর শহীদ মশিউরকে আর দেখতে পাওয়া যাবে না মিছিলে, মিটিংয়ে, আন্দোলন ও সংগ্রামের অগ্রসারিতে। নশ্বর এই মায়াময় পার্থিব জীবনে সমস্ত মায়াজাল ছিন্ন করে শহীদ মশিউর চলে গেছেন না ফেরার দেশে মহান প্রভুর ডাকে। শহীদ মশিউর ভাই আমাদের শিখিয়ে চলেছেন প্রতি মুহূর্তে, যুগ থেকে যুগান্তরে, কাল থেকে কালান্তরে, কত হৃদয়ের সোনালী ফ্রেমে আঁকা তার ইয়ত্তা নেই। এ আন্দোলন শহীদের এ ভার বয়ে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে। শহীদ মশিউর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার বৈরাতির নিভৃত পল্লীর জান্নাতের বাগানে বসে প্রতিমুহূর্তে অনুভব করবেন তাঁর রেখে যাওয়া কালজয়ী আদর্শের সাক্ষী প্রিয় মিঠাপুকুরকে। মনে রাখবেন, শহীদেরা মরে না, জন্ম দিয়ে যায় হাজারো আন্দোলনের।

লেখক : শিক্ষার্থী, একাদশ শ্রেণী, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর ও শহীদের সাথী।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।