সংবাদ শিরোনামঃ

জনগণের আন্দোলন সফল হবেই ** কোকোর জানাজায় লাখো মানুষের আহাজারি ** সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজন সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ** বিরোধী দলের আন্দোলনে শঙ্কিত সরকার ** সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ-হরতাল চলছে ** সংহতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আরব নেতাদের ** দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত সরকার দেখতে চায় ** শওকত মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া না হলে সরকার পতনের আন্দোলন ** সংলাপেই সমঝোতা করুন ** আবারও দৃশ্যপটে ভারতের সেই ঝানু কূটনীতিক ** কান্নাভেজা চোখে ছেলেকে শেষ বিদায় জানালেন খালেদা জিয়া ** ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানদের অবদান ** জনপ্রতিরোধে রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ** কার্পেটিং জুট মিলের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারীদের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪২১, ৯ রবিউস সানি ১৪৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

॥ মনসুর আহমদ॥
একটি দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মৌলিক প্রয়োজন সুশাসন ও সুবিচার। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে  রাষ্ট্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার এই মৌলিক উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন সেখ সাদী তাঁর বোঁস্তা কাব্যে। তিনি বলেন:

“চেরাগে কে বেওয়াহ ্জনের্ব ফরুখত্,

বছে দিদাহ্ আশি কে শহ্রে বছুখ্ত্।

ওয়াজাঁ বহ্রাহ্ ওয়ার র্তর্দ  আফাকে কিস্ত ্।,

কে দর ্ মুলকে রানি বাইন্ছাফ ্ জিস্ত্।”

অর্থাৎ -বিধবা মেয়ে লোক যে দুঃখের বাতি জ্বালায়, তুমি প্রায়ই দেখে থাকবে যে, সে আগুনে গোটা দেশ জ্বলে যায়। যে ব্যক্তি ন্যায় বিচার দিয়ে রাজ্য শাসন করে, তার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কে?  একই কথা তিনি গুলিস্তাঁয়  বলেছেন :

“ না কুনাদ্ জওরে পেশা সুলতানী

কে নাইয়ায়েদ্ জে গোরগে চুঁ পানি,”

-অর্থাৎ অত্যাচারী কখন বাদশাহী করতে পারে না।  কেননা, চিতাবাঘ কখনও রক্ষকের কাজ করতে পারে না। 

সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন নাগরিক কল্যাণধর্মী আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন। আইন প্রণয়ন করতে হবে নাগরিদের মানসিক প্রবণতা এবং অন্তরের আবেগের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে। শাসন ক্ষমতায় যারা আসেন তারা যাদি নিজেদের ইচ্ছা মতো আইন প্রণয়ন করেন তবে সে আইনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি আসতে পারে না। রুশোর মতে সাধারণের ইচ্ছার প্রকৃতি জনসংখ্যা এবং তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের উপর  নির্ভরশীল বলে কোনো একটি বিশেষ শাসন ব্যবস্থা সব স্থানের এবং সবকালের উপযুক্ত  হতে পারে না। অবস্থার  পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের যৌক্তিকতা বিচার  করতে হবে। প্রায় একই ধরনের কথা বলেছেন মন্তেস্কু। তিনি মানুষের চরিত্র ও সামর্থ্য অনেকটা জলবায়ুর  প্রভাবে গড়ে ওঠে বলে বিশ্বাস  করেন। মানুষের মানসিক প্রবণতা এবং অন্তরের আবেগ যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ুতে ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে, সেহেতু সেই প্রবণতা ও আবেগ অনুযায়ী আইন প্রণয়ন বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন তিনি। কিন্ত আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের সরকারের কর্মকর্তারা এই রাজনৈতিক সত্যকে অস্বীকার করতে চান। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাঁরা সেই ধর্মকে গায়ের জোরে রাষ্ট্র থেকে বিদায় করে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা প্রতিষ্ঠার  চক্রান্ত করলে দেশের শান্তি তো বিঘিœà¦¤ হবেই।

যারা বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করার স্বপ্নে বিভোর তাদের স্মরণ রাখা উচিত যে এ দেশে  ইসলাম প্রচার বিনা রক্তপাতে সম্পন্ন হয়নি।  প্রথম যুগে যে সকল সুফী ও মুজাহিদ বাংলায় ইসলাম প্রচারে শাহাদত বরণ করেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজন  হলেন   শায়খ অনোয়ার শহীদ,  শায়খ বদরুল ইসলাম শহীদ, শাহ ইসমাইল গাজী, খাজা আনোয়ার শাহ শহীদ, মওলানা শাহ আবদুর রহীম  শহীদ। তাঁদের রক্ত বৃথা যায়নি। তাদের কারণে স্বাধীন সুলতানী যুগে বাংলার মুসলিম রাজ্য  সমগ্র বাংলাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে। বাংলার এই স্বাধীনতা একাধারে দুইশত বছর চালিয়েছিল। এ সময় ‘ইসলামী শাস্ত্র ও ইসলামী আইনের মাধ্যমেই শাসনকার্য পরিচালিত হইত । বিভিন্ন শিলালিপি এবং মুদ্রায় প্রাপ্ত সুলতানদের উপাধি দৃষ্টে মনে হয় যে সুলতানেরা ইসলামের বিধি বহির্ভুত কোনো আইন প্রণয়ন করিতেন না।  তাহা ছাড়া মুসলমান ও ইসলামের উন্নতি সাধন সুলতানদের দায়িত্বে ছিল বলিয়া মনে হয়।’  [বাংলাদেশের ইতিহাস]

  ১৭৫৭ সালে সিরাজদ্দৌলার পতনের পর থেকে উনবিংশ শতকের শেষ পর্যন্ত দেড় শতাব্দী যাবত মুসলমানদের জীবনে নেমে এসছিল চরম দুর্দিন। হিন্দু ও ইংরেজদের  অত্যাচার মূলক শাসনের প্রতিবাদে শুরু হয় ফকীর আন্দোলন। একদিকে বৃটিশ এবং অপরদিকে অত্যাচারী হিন্দু জমিদার মহাজনদের উপর্যুপরি অত্যাচার ও নিষ্পেষণের প্রতিবাদে বাংলায় ফরায়েজী আন্দোলন ও সাইয়েদ তিতুমীরের আন্দোলন প্রচণ্ড আকার ধারণ করে। সাইয়েদ নিসার আলী ওরফে তিতুমীর হিন্দু জমিদারদের অন্যায় উৎপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা পরবর্তীকালে মুসলমানদের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় আজাদীর পথে আলোকবর্তিকার  কাজ করেছে। এ সব শহীদানদের রক্তের সাথে যারা বেইমানী করে বাংলার জমিন থেকে ইসলামকে বিলীন করতে চায় তাদের  হাতে এদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে আশা করা আকাশ কুসুম কল্পনা মাত্র। কিন্তু যারা বর্তমানে শাসন ক্ষমতায় আসীন তারা যে আইন প্রণয়ন করেন তার মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সক্রেটিস বলেছেন, আইন প্রণেতা ও পরিচালক হতে হবে জ্ঞানীদেরকেই। এথেনীয় তরুণ সমাজকে প্রকৃত জ্ঞানে সুশিক্ষিত করার প্রয়াসের কারণে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে জীবন দিতে হলো। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, সক্রেটিসের কথা আজও সত্য। সক্রেটিস জ্ঞানী বলতে যাদেরকে বুঝিয়েছেন বর্তমান আইন প্রণেতাগণ সে ধরনের জ্ঞানী নয় বলেই তাদের রচিত আইন সুশাসন প্রাতিষ্ঠায় ব্যর্থ হচ্ছে।

বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার মুসলমান সুলতানদের কয়েক শতাব্দীর দেশ শাসনের  ইতিহাস উপেক্ষা করে কার স্বার্থে ইসলামী বিধি বিধান উপেক্ষা করে  দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করে দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করছেন তা ভাবনার বিষয়। দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজে বেশ আগ্রহী এ সরকার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি, অর্থনীতি, ধর্ম- সংস্কৃতির প্রতি হুমকি ও ভারতের সাথে  বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন চুক্তি   যেমন- ফরাক্কা চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তিসহ জাতীয় স্বার্থ বিরোধী বিভিন্ন  ধরনের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে সরকার। এ সবের  বিরোধিতা করে আসছে জামায়াতে ইসলামীসহ দেশপ্রেমিক নাগরিক সমাজ।

বর্তমান সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে হাতে ছুরি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিপক্ষের লোকদেরকে হত্যা করতে খুঁজে বেড়ায়। প্রকাশ্য দিবালোকে যারা বিশ্বজিৎকে হত্যা করে, যারা অস্ত্র উঁচিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর রণাঙ্গণে পরিণত করে, যারা প্রতিদিন দলাদলি করে  নিজ দলের কর্মীদের হত্যা করে দেশটিকে নরকে পরিণত করে চলছে, যখন তারা কোর্ট ও রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে রাস্তায় রাস্তায় জাতীয় পতাকা মাথায় আটকিয়ে ভিন্ন মতের অনুসারীদের নিধন যজ্ঞের আন্দোলন করে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে চলছে, তখন তাদের বিরূদ্ধে কোনো এ্যাকশন নেয়া তো দূরের কথা বরং তাদেরকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে।

স্বৈরতান্ত্রিকতা আওয়ামী সরকারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গে ও প্রতিষ্ঠানে যেভাবে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে তা কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কল্পনা করা যায় না। সে সময় দেশে আইনের শাসন বলতে কিছুই ছিল না। দুস্কৃতিকারী,  সমাজ বিরোধী ও অপরাধ জগতের সাথে সাথে জড়িত ক্রিমিন্যাল ব্যাক গ্রাউণ্ডের বহু অযোগ্য ব্যক্তিকে সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ বারে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী সরকার আরও জঘন্য কাজ করেছে। বিতর্কিত ব্যক্তিদের বিচারপতি পদে নিয়োগ, ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয় ক্যাডার নিয়োগ ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তি দানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সরকারের স্বৈরাচারী আচরণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন, বিচার পতিদের অভিশংসন ক্ষমতা সংসদের হাতে গ্রহণও বিভিন্ন চ্যানেল বন্ধ করে আওয়মী লীগ একনায়কত্বকে পাঁকাপোক্ত করতে চায়। অপরদিকে বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ কল্পে নানা অজুহাত তুলে তাদের অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করছে।

দেশের শতশত অশান্তির কারণের মূল উচ্ছেদ না করে বাংলাদেশেকে কলঙ্ক মুক্ত করার নামে শক্তিশালী ইসলামী দলের নেতা কর্মীদের উপরে নির্যাতন চালিয়ে দেশকে নরকে পরিণত করার খেলায় মেতে উঠেছে সরকার। বঙ্কিম চন্দ্র যেমন ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতের মাধ্যমে হিন্দু জাতির পুনর্জাগরণের প্রেরণা সৃষ্টি করেছেন, তেমনি মুক্তি যুদ্ধের প্রেরণার নামে ধর্মনিরপেক্ষ রাম বাম দলের নেতারা তথাকথিত স্বাধীনতা বিরোধী (?) ইসলাম পন্থীদের বিরুদ্ধে একটি উন্মাদনা সৃষ্টির প্রচেষ্টায় লিপ্ত। এই উন্মাদনাকে দেশের সাধারণ মানুষের ইচ্ছা বলে প্রচার করার চক্রান্ত করছে।

ইসলাম পন্থীদেরকে দমন নাগরিকদের সাধারণ ইচ্ছা নয়। রুশোর মতো কোনো ইচ্ছা সাধারণ ইচ্ছা কিনা  বিচার করতে হলে দেখা দরকার সে ইচ্ছাটি সমগ্র জনগণের বা তার কোনো অংশের কিনা।  ইচ্ছা যেখানে সমগ্র জনগণের সে ইচ্ছাই সাধারণের ইচ্ছা আর সে-ই হলো সার্বভৌম।  আর ইচ্ছা যদি সমগ্র জনগণের না হয় সে ক্ষেত্রে তা হলো বিশেষ ইচ্ছা বা প্রশাসনিক ইচ্ছা বা ডিক্রি। যুদ্ধাপরাধীদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানোর যে মহোৎসবে সরকার মেতে উঠেছে তা নাগরিকদের সাধারণ ইচ্ছা নয় বরং প্রশাসনিক ইচ্ছা বা ডিক্রি। তারা এই প্রশাসনিক ইচ্ছাকে চরম অন্যায়  ভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য  বিচারকে বাহন হিসেবে গ্রহণ করছে। এই বিচারিক কার্যক্রম যে ত্রুটিমুক্ত নয় সে ব্যাপারে বিশ্বব্যাপি প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অন্তর্জাািতক সংস্থা বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচার পদ্ধতিকে পক্ষপাত মূলক আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে।   যেমন-

ইউরোপীয় ইউনিয়ন

বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে ফাঁসির আদেশের তীব্র বিরোধিতা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে ইইউ আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার প্রথমে পদক্ষেপ হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি  শিথিল করতে হবে। ইইউর হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ফেদেরিকা সোঘেরিনি বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর আমা নিবিড় নজর রাখছি। যে কোনো অবস্থায় এবং যে কোনো মামলায় আমরা শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। এর আগে ৫ নভেম্বর বুধবার  ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি প্রধান পিয়ের্ েমায়ইউদো সাংবাদিক সম্মেলনে একই কথা বলেছেন। বুধবারে আরো বিবৃতি দেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক্সটার্নাল এ্যাকশনের মুখপাত্র  মাজা কোসি জানসিক।  এতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নীতিগত ভাবে সব ধরনের অবস্থাতেই মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তির বিরুদ্ধে।

নো পিস উইদাউট জাস্টিস

 à¦¨à§‹ পিস উইদাউট জাস্টিস নামের খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংস্থা ৬ নভেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন, গত ৩ নভেম্বর প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশের আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করেছে। সর্বশেষ এই রায়টি ট্রাইব্যুনালের আরো একটি বিতর্কিত রায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের প্রতিবাদ ও উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করে এই বিচারকাজ পরিচালনা করছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘আই এইচ আরসি’

মাত্র পাঁচ দিনে বিরোধী ইসলামিক দলের ৩ জন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মৃতুদণ্ড দেয়ার তীব্র সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইসলামিক হিউম্যান রাইটস কমিশন (‘আই এইচ আরসি’)।  তারা বলেন, পরপর এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী দল দমনে কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

হাউজ অব লর্ডস

যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ হাউজ অব লর্ডসের সদস্য  লর্ড কার্লাইল বাংলাদেশে মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের রায় এবং উদ্ভুত পরিস্থিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনের আহ্বান জানান। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের  মামলায় জামায়াত নেতা মুহম্মদ কামরুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডর রায় কার্যকর করার বিষয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ৯ নভেম্বরের দেয়া এক বিবৃতিতে  নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এই  সংস্থাটি বিচার প্রক্রিয়াকে খুবই ত্রুটিপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেছে।

 à¦¸à§à¦Ÿà¦¿à¦«à§‡à¦¨ র‌্যাপের আহ্বান

বিচার প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন থাকায় কামারুজ্জামানের ফাঁসি স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্টের বৈশ্বিক ফৌজদারি অপরাধ দপ্তরের যুদ্ধাপরাধ  বিষয়ক অ্যাম্বেসেডর -এট-লার্জ  স্টিফেন জে র‌্যাপ সোমবার (১০ নভেম্বর)এক বিবৃতিতে এ  আহ্বান জানিয়েছেন ।

বিএইচআরসি

মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ অবিলম্বে স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে বার হিউম্যান  রাইটস কমিটি(বিএইচআরসি)। গত ১১ নভেম্বরের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান সকল মামলা বিষয়েই বিএইচআরসি ইতঃপূর্বে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।  কেননা এই বিচার কার্যক্রমগুলোতে মোটেও আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা হচ্ছে না।

দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার সৎ নিয়ত থাকলেএ সব সংস্থার পরামর্শ গ্রহণ করে ন্যায় বিচারের পথে অগ্রসর হতে হবে। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।  

একটি স্বাধীন দেশ সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে বিভাজিত হয়ে  আর একটি নতুন দেশ বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ায় নাগরিক মাঝে কিছু এলোমেলো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। এই এলোমেলো অবস্থাকে সামলিয়ে গোটা জাতিকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে দেশের বুদ্বিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নন্দিত পুরুষ শেখ মুজিবর রহমানকে কিছু পরামর্শ প্রদান করেন। তাদের পরামর্শের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালের অপরাধের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার প্রেস নোট জারী করেন। সাধারণ ক্ষমার আওতার বাইরে রাখা হয় হত্যা, ধর্ষণ,  লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ এই চার ধরনের অপরাধীকে। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায়  ছাড়া পেয়ে যায় ৩০ হাজার বন্দী। সব চেয়ে বিস্ময়ের ব্যপার ’৭৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ’৭৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত উক্ত চার অপরাধের বিপরীতে একটি মামলা কোথাও রুজু হয়নি। অবস্থার এমন পটভূমিতে ’৭৬ সালের জানুয়ারিতে দালাল আইন বাতিল করা হয়। 

আজ যে সব জামায়াত নেতাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের কারও বিরুদ্ধে দালাল আইন বাতিল হওয়া পর্যন্ত সময়ে কোথাও একটি মামলা রুজু হয়নি। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয় যে এসব নেতা পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করে ছিলেন তা  হলেও তো তারা সাধারণ ক্ষমায় পার পেয়ে গেছেন। আর যুদ্ধাপরাধী বিষয়টি তো শেখ মুজিবর রহমান নিজেই নিষ্পত্তি করে গেছেন ১৯৫ জন পাকিস্তানি সৈনিককে মুক্তি দিয়ে। তাই যুদ্ধাপরাধী, মানবতা বিরোধী বা দালাল আইনে জামায়াত নেতাদের বিচার প্রহসন ইসলাম বিরোধীদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার প্রয়াস মাত্র, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। হিউম্য্ান রাইটস ওয়াচ -এর এশীয় অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড অ্যাডামস বলেন, “এটা ঠিক যে যুদ্ধকালীন সময়ে যারা বর্বরতার সাথে জড়িত ছিল এবং যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত লোক চক্ষুর বাইরে ছিল।”  à¦•à¦¿à¦¨à§à¦¤à§ অভিযুক্ত একজন জামায়াত নেতাও লোক চক্ষুর বাইরে ছিলেন না। কিন্তু চক্রান্ত করে  প্রশাসনিক ইচ্ছা বা ডিক্রিকে বাস্তবায়নের জন্য তারা আজ মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে। আজ জাতির এই দুঃসময়ে মনে পড়ে: 

“কওমী ঝাণ্ডা ঢাকা প’ড়ে গেছে স্বৈরাচারের কালো ছায়ায়,

পাপের নিশানি রাজার নিশান জেগে ওঠে আজ নভঃনীলায়,

মুমিনের দিল জ্বলেছে বে-দিল জালিম পাপীর অত্যাচারে

নিহত শান্তি নিষ্কলঙ্ক শান্তিপ্রিয়ের রত্তধারে,

হেরার রশ্মি কেঁপে কেঁপে ওঠে ফারানের রবি অস্ত যায়।

কাঁদে মুখ ঢেকে মানবতা আজ পশু শক্তির রাজসভায়।” [শহীদে কারবালা- ফররুখ আহমদ]

দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দলমত নির্বিশেষে  সকলের প্রতি ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাসূল (সা.)-এর কথা না হয় বাদ দিলাম, কম পক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলার পথ ধরে এগুতে হবে।‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মানব ‘ম্যান্ডেলা’ কি যুদ্ধাপরাধীদের সাথে শান্তির পথে এস ভুল করেছিলেন?  বিশ্বের বড় বড় ‘স্কয়ারে ম্যান্ডেলার ভাস্বর্য । কারণ ম্যান্ডেলা মডেলই একমাত্র পরীক্ষিত  সমাধান। তিনি চাইলে আমাদের চেয়েও বড় ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারতেন ; কিন্তু করেননি। তিনি সবার চেয়ে জ্ঞানী।’ 

আজ তাই শাসকদেরকে অন্ধ না হয়ে প্রতিহিংসার পথ পরিহার করতে হবে। বাংলা দেশে শান্তির সম্ভাবনার  পথ পেতে  চাই দেশে সুবিচার প্রতিষ্ঠার পথ উন্মোচন ও ম্যান্ডেলার আদর্শে উদার ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।