সংবাদ শিরোনামঃ

জনগণের আন্দোলন সফল হবেই ** কোকোর জানাজায় লাখো মানুষের আহাজারি ** সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজন সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন ** বিরোধী দলের আন্দোলনে শঙ্কিত সরকার ** সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ-হরতাল চলছে ** সংহতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে আরব নেতাদের ** দেশের মানুষ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত সরকার দেখতে চায় ** শওকত মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়া না হলে সরকার পতনের আন্দোলন ** সংলাপেই সমঝোতা করুন ** আবারও দৃশ্যপটে ভারতের সেই ঝানু কূটনীতিক ** কান্নাভেজা চোখে ছেলেকে শেষ বিদায় জানালেন খালেদা জিয়া ** ভারতবর্ষে শিক্ষা বিস্তারে মুসলমানদের অবদান ** জনপ্রতিরোধে রাজধানী ঢাকার সাথে সারাদেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ** কার্পেটিং জুট মিলের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারীদের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মাঘ ১৪২১, ৯ রবিউস সানি ১৪৩৬, ৩০ জানুয়ারি ২০১৫

মিজানুর রহমান
সম্প্রতি একটি মিথ্যা মামলার সুবাদে আমার জেলখানায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাই কোর্টের আগাম জামিন শেষে ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে নিম্ন আদালতে হাজিরা দিই। আমার আইনজীবী এডভোকেট আশরাফুল আলম বিজ্ঞ আদালতের কাছে আমার জামিন প্রার্থনা করেন। জামিনের ব্যাপারে আমি বেশ আশাবাদী ছিলাম। কারণ যেদিন যেসময়ের ঘটনায় আমার নামে মামলা হয়, সেদিন সেসময়ে আমি আমার কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলাম। এডভোকেট সাহেব মাননীয় আদালতে ঘটনার দিন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকার প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়ন পত্র ও হাজিরা খাতার ফটোকপি দাখিল করেন। তার মক্কেল জামিন পাওয়ার যোগ্য এই মর্মে বিনয়ের সাথে যথেষ্ট যুক্তিতর্ক পেশ করেন। কিন্তু বিজ্ঞ বিচারক মহোদয় জামিন না মঞ্জুর করেন। ছোট  ভাইয়ের জামিন না করাতে পেরে এডভোকেট আশরাফ ভাই বেশ কষ্ট পান। পরে কাঠগড়ার সামনে এসে আমাকে বিভিন্নভাবে সান্ত¡à¦¨à¦¾ দেয়ার চেষ্টা করেন। এদিকে  জামিন না পাওয়ায় বিচারকের প্রতি আমার সাময়িক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য তা প্রশমিত হলো এই ভেবে- পুলিশ যখন প্ররোচিত হয়ে অন্যায়ভাবে আমার নামে মামলা দিতে পারল, তখন বিচারক মহোদয় জামিনের পক্ষে উপস্থাপিত  কাগজপত্রাদি দেখে সন্তুষ্ট না হওয়াই স্বাভাবিক।

আমি গণিতের ছাত্র। আদালতের আইন-কানুন ভালো বুঝিনা। বিচারক মহোদয় আইন অনুযায়ী-ই বিচার করেছেন। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। আর আমিতো রাষ্ট্রের একজন অতি সাধারণ নাগরিক মাত্র। পাঠক সাধারণত জেলখানায় যাওয়াটা কেউ সৌভাগ্য মনে করে না।  কিন্তু আমি লেখার শুরুতে জেলখানায় যাওয়াকে সৌভাগ্য বলেছিলাম, তার স্বপক্ষে দু’একটি কথা না বললেই নয়। আমার জানা মতে ৩৭ বছরের এই দীর্ঘ জীবনে কাউকে কোনোদিন একটি চড়-থাপ্পড়ও মারিনি, অপরাধমূলক কোনো ব্যবসা বাণিজ্য কখনও করিনি, ভবিষ্যতে এমন কোনো কাজ করার পরিকল্পনাও নেই- এছাড়া বাজে কোনো নেশাও নেই যার জন্য পুলিশের হাতে পাকড়াও হয়ে জেলে যেতে হবে।  কাজেই ভবিষ্যতে জেলে যাওয়ার কোনো সুযোগ সৃষ্টি হতো বলে আমার মনে হয় না। তাই জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে করা মামলায় যদি আমাকে জড়ানো না হতো, তা হলে জেলে যাওয়া আমার কপালে হয়তোবা জুটতো না।

ঝিনাইদহ জেলখানায় ৭ দিন ছিলাম।  এই ৭ দিন জেলে থেকে বুঝলাম, এখানে না আসলে শিক্ষার একটি অংশ অপূর্ণ থেকে যেত। এ কারণে জেলে যাওয়াকে সৌভাগ্য বলেছিলাম। পাঠক, এতক্ষণে হয়তো আমার ওপর বেশ বিরক্ত হয়ে পড়েছেন এই ভেবে যে শিরোনাম কি আর লিখছি কি। হ্যাঁ এবার ডলার সম্পর্কে লিখব। জেলখানার  নিয়ম অনুযায়ী প্রথম রাতে বন্দীদের আমদানি ওয়ার্ডে রাখা হয়। পরের দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে রফতানি করা হয়। প্রথম রাতে আমরা আমদানিতে থাকি। পরদিন  ভোর বেলায় আমার সাথে অন্যান্য বন্দীদের কেইস টেবিলে হাজির করা হয়। এখানে জেলার ফাইল ও সুপার ফাইল করা হয়। জেলার সাহেব  আসার আগে ৩২ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি আব্দুর রশীদ ভাই আমাদের জেলখানার বিভিন্ন নিয়ম কানুন শিক্ষা দিলেন। জেলার আসলে কিভাবে সাবধান হতে হবে, কিভাবে সালাম দিতে হবে তাও শেখালেন। রশিদ ভাই কেন জানি আমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করলেন। নিজেকে একজন শিক্ষক ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতেই তিনি বললেন, স্যার দেখলেনতো আপনাদের মতো সম্মানীয় মানুষদেরও  জেলে আসতে হচ্ছে। একটু থেমে রশিদ ভাই বলেন, আমরা যারা জেলে আছি সবাই কিন্তু অপরাধী না। অধিকাংশই ষড়যন্ত্রের শিকার। রশিদ ভাই অনুরাগের সুরে বলেন, আমাদের যখন বেড়ি পরিয়ে কোর্টে নেওয়া হতো, তখন সাধারণ মানুষ আমাদেরকে মস্তবড় সন্ত্রাসী ভেবে খুব ঘৃনার দৃষ্টিতে দেখতো। সে সময় খুব খারাপ লাগতো। তারপর কোনো ধরনের বন্দীদের বেড়ি পরানো হয় তা সবিস্তারে বর্ণনা করেন।  এরপর রিহার্সেল হলো- জেলার সাহেব আসলে কীভাবে বসতে হবে এবং কীভাবে সাহেবকে সালাম দিতে হবে তার। জেলার সাহেব আসলেন। আমরা রশিদ ভাইয়ের শেখানো সব কিছু অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম। জেলার সাহেব নিজের চেয়ারে বসে টেবিলে রাখা গ্লাসের পানিতে চুমুক দিয়ে স্ট্রের ওপরে রাখা সিগারেটটা ধরালেন। ভোরের কুয়াশা আর সিগারেটের ধোঁয়া একসাথে মিশে কুণ্ডলী পাকিয়ে উত্তরে হাওয়ার ধাক্কায় আমাদের গায়ে আছড়ে পড়ল। জেলার সাহেবের সিগারেট টানা দেখে আমাদের সাথে থাকা এক আসামিকে ফিসফিস করে বলতে শুনি, যাক জেলে  মনে হয় বিড়ি-সিগারেট খাওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এক ঘণ্টার মধ্যে জেলার ফাইল ও সুপার ফাইলের কাজ শেষ হলো। এরপর আমাদেরকে নিজ নিজ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হলো। ওয়ার্ডের মেড বিডিআর সদস্য শৈলকূপার জিল্লুর রহমান আমাদেরকে রিসিভ করলেন। ওয়ার্ডের একজন বন্দী কম্বল ভাজ করে দেড় হাত চওড়ার একটি বেড তৈরি করে দিলেন। রাতে জানতে পারলাম যে বন্দী আমার বেড তৈরি করে দিয়েছে তাকে এক প্যাকেট স্টার সিগারেরট দিতে হবে। দুই একদিন যেতেই বুঝলাম সিগারেট হলো জেলখানার ডলার। এটিই হলো জেল খানার একমাত্র বিনিময় মাধ্যম। ভিন দেশে যেমন বাংলাদেশী টাকার কোনো মূল্য নেই, তেমনি জেলখানায় নগদ টাকার কোনো মূল্য নেই। পৃথিবীর যেকোনো দেশে যেমন ইউ এস ডলার বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়, জেলখানায় তেমনই সিগারেটকে বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই সিগারেটের বিনিময়ে জেলখানায় সব কিছু মেলে। কয়েদীদের তৈরি বিভিন্ন প্রকারের সোপিচ, ব্যাগ, চুড়ি, নকশা করা কলম সব কিছুই সিগারেটের বিনিময়ে পাওয়া যায়। এমনকি সিগারেটের বিনিময়ে নিজের বিভিন্ন কাজ কর্ম অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়া যায়। এক ওয়ার্ড থেকে পছন্দের অন্য ওয়ার্ডেও যাওয়া যায় এই সিগারেটের বিনিময়ে। শুধু তাই নয়- এই সিগারেটের বিনিময়ে গাজা  থেকে শুরু করে নেশার ট্যাবলেট, স্প্রিট এমনকি মরণ নেশা ইয়াবাও পাওয়া যায়। এসব কথা অবশ্য বন্দীদের কাছে শুনেছি। একদিন  জেলে বেশ হুলস্থুল পড়ে গেল। সবাই আতংকিত। কিছু একটা ঘটেছে বুঝতে পারলাম। পরে জানতে পারলাম কয়েকজনের কাছ থেকে গাজা উদ্ধার করা হয়েছে। জেল অভ্যন্তরে এসব মাদকদ্রব্য কিভাবে ঢোকে তা অন্য আরেক দিন লিখব। পরিশেষে জেলের কিছু ভালো দিক তুলে ধরে শেষ করতে চাই। জেলখানায় মাদরাসা ও প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন কারিগরী কাজ শেখার ব্যবস্থা আছে। যে কেউ ইচ্ছা করলে জেল থেকে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা অর্জন করা ছাড়াও কারিগরী কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। জেলখানায় প্রবেশের সময় প্রবেশদ্বারের ওপরের দেওয়ালে  “রাখিব নিরাপদ, দেখাইব আলোর পথ” এই লেখাটা পড়েছিলাম। ভিতরে অল্পকিছুদিন থাকলেও এটুকু অনুধাবন করতে পেরেছি- এই শ্লোগানের যথার্থতা তার জীবনেই শুধু প্রতিফলিত হবে, যে কিনা সত্যিকারে ভালো হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। লেখক : সাংবাদিক

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।