ড্যাবের আলোচনা সভায় সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে সরকার কালো আইন প্রণয়ন করেছে

স্টাফ রিপোর্টার : ড্যাবের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে বর্তমান সরকার একটা কালো আইন প্রণয়ন করেছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বক্তারা বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নির্বাচন উপযোগী সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

গত ২৩ মার্চ  সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। ড্যাবের সভাপতি ডা. একে এম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, ড্যাব এর সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. রফিক আল কবির লাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল কুদ্দুছ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল ইসলাম, ড্যাব এর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ড্যাব কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও আব্দুল সালাম প্রমুখ।

সভায় সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আন্দোলন করতে শক্তি লাগে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয় কর্মী বাহিনী লাগে। সবশেষে বুদ্ধি লাগে। এই বুদ্ধির বিচারেই আমরা বার বার হেরে যাচ্ছি। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের অংশগ্রহণ করাও আন্দোলনের অংশ। কারণ আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃবহালের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছি।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের মাধ্যমে বর্তমান সরকার একটা কালো আইন প্রণয়ন করেছে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্র হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে গণতন্ত্র। কারণ গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় আমরা যুদ্ধ করেছিলাম।

ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। আর গণতন্ত্র যদি না থাকে তাহলে কথা বলার সুযোগটা কোথায়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের দলিলে তিনটি চেতনার কথা বলা হয়েছিল। আজকে মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার কুতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে নিজেকে প্রশ্ন করলেই পাওয়া যাবে।

তিনি বলেন, যে দেশের মানুষের মানবিক মর্যাদা থাকে না সে দেশের কি মূল্য থাকে। দেশে গুম খুন অব্যাহত আছে। কিছুদিন আগে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে তুলে নেয়া হলো। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো তাকে আদালতে সোর্পদ করা কিন্ত তা তারা করেনি।  দেশের প্রধানমন্ত্রী কি এসব গুম হওয়া পরিবারের আর্তনাদ শুনতে পাননি প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী বলেন, আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু বর্তমান সরকার গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সিটি নির্বাচনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নির্বাচন উপযোগী সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সালাহ উদ্দিনের সন্ধান নিশ্চিত করে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের হাতে তুলে দেয়া সরকারের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারী ভোটারবিহীন নির্বাচন হলো। ৫৯টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পরেনি। নির্বাচন হয়নি ১৫৪টি আসনে। নির্বাচন কমিশন লীগ মাত্র ৫ পার্সেন্ট ভোটকে ৪০ পার্সেন্ট ভোট দেখিয়েছে। এ ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি বলেন, এ সরকার ভাগাভাগির সংসদ করেছে।

রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রহসনের নির্বাচনের চূড়ান্ত রূপই বর্তমান সময়। দেশের ইতিহাসে একতরফা নির্বাচনের সরকার কোনো দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, বর্তমান সরকারও পারবে না। যে বাহিনী মানুষকে নিরাপত্তা দেবে তারাই খুনের নেশায় মেতে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন, নির্যাতন, গ্রেফতারে মেতে উঠেছে। জান মালের কোনো নিরাপত্তা নেই, ক্রসফায়ারে মানুষ হত্যা নিত্য দিনের ঘটনা।

ডা. আজিজুল হক বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এ সরকারের পতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা অবশ্যই সফল হবো।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সারাদেশ আজ মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। খালে বিলে শুধু লাশ আর লাশ। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সাধারণ মানুষদের গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। দেশে চলছে দানবের শাসন।