সংবাদ শিরোনামঃ

সিটি নির্বাচন হতে যাচ্ছে একতরফা! ** কামারুজ্জামানের কবর জিয়ারতে শেরপুরে হাজারো মানুষের ঢল ** আওয়ামী লীগ মরিয়া ** শহীদী কাফেলায় মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ** গণতন্ত্রহীনতায় অরক্ষিত অর্থনীতি ** সরকার সিটি নির্বাচনকে পুরোপুরি রাজনৈতিককরণ করেছে ** অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা হোক ** পহেলা বৈশাখের ‘লীলা’ ** আমার সন্তানের কি দোষ ** ফারাক্কা বাঁধের কারণে সাতক্ষীরার ২৭টি নদী এখন মরা খাল ** যাদের কাছে কোনো পুঁজি নেই তারাই সমালোচনা করে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চায়: মনজুর আলম **

ঢাকা, শুক্রবার, ১১ বৈশাখ ১৪২২, ৪ রজব ১৪৩৬, ২৪ এপ্রিল ২০১৫

স্টাফ রিপোর্টার : কাঠগড়া বাজার জামে মসজিদের মাইকে ক্রমাগত ‘ডাকাত ডাকাত’ চিৎকার। বাজারের গলিপথগুলো দিয়ে পিঁপড়ার মতো দৌড়ে আসছে মানুষ। আর অস্ত্র তাক করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে পালাচ্ছে ছয় ডাকাত। মাঝে মধ্যে কাঁধের ব্যাগ থেকে বোমাও ছুঁড়ছে তারা। গত ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার দিনেদুপুরে রাজধানীর অদূরে প্রাণঘাতী ব্যাংক ডাকাতির পরের দৃশ্য এটি। এ ডাকাতির ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন।

ডাকাতদের হামলায় ব্যাংকের ভেতরে ব্যবস্থাপকসহ তিনজন এবং ডাকাতদের প্রতিহত করতে গিয়ে গুলি-বোমায় চারজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া জনতার পিটুনিতে মারা গেছে অজ্ঞাতপরিচয় এক সন্দেহভাজন ডাকাত। ধরা পড়েছে দুজন। সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত  ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা থেকে পৌনে তিনটার মধ্যে ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে পোশাক কারখানা অধ্যুষিত আশুলিয়ার কাঠগড়ায়। বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের কাঠগড়া শাখায় গুলি করে-কুপিয়ে টাকা লুট করে পালানোর সময় জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়ে ডাকাতেরা।

ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কর্মজীবনে এ রকম ভয়াবহ, দুর্ধর্ষ প্রাণঘাতী ডাকাতির কথা মনে করতে পারেন না।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. ওয়ালিউল্লাহ (৪৫), নিরাপত্তাকর্মী (গানম্যান) বদরুল (৩৮), গ্রাহক ও ছাপাখানার ব্যবসায়ী পলাশ (৪৮) ব্যাংকের ভেতরেই ডাকাতদের হামলায় মারা যান। ওয়ালিউল্লাহকে কুপিয়ে ও গুলি করে এবং বদরুলকে কুপিয়ে ও পলাশকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ডাকাতদের ধরতে গিয়ে ব্যাংকের পাশের চটপটি বিক্রেতা মনির হোসেন (৬০) ও বাজারের ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান (৪০) হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান। ডাকাতদের গুলি ও বোমা হামলায় ১৮ জন গুলি ও স্পি­à¦¨à§à¦Ÿà¦¾à¦°à¦¬à¦¿à¦¦à§à¦§ হয়ে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে সন্ধ্যায় বাজারের দর্জি জমির উদ্দীন (২৫) ও নূর মোহাম্মদ (৪৫) মারা যান। এ ছাড়া পালানোর সময় গণপিটুনিতে এক ডাকাত নিহত হয়েছে, তার পরিচয় মেলেনি।

চিকিৎসাধীন ১৬ জনের মধ্যে সাইফুল নামে এক ডাকাত রয়েছে। এনাম হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আহত প্রায় সবারই পেটে ও পায়ে গুলি-স্পি­à¦¨à§à¦Ÿà¦¾à¦°à§‡à¦° আঘাত রয়েছে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিশমাইল এলাকা থেকে ডান দিকে জিরাবোর দিকে পাঁচ কিলোমিটার গেলেই আশুলিয়ার কাঠগড়া বাজার। সড়ক থেকে বাজারের ভেতর দিয়ে ৫০০ গজ ভেতরে হাজী নজুমুদ্দিন সুপার মার্কেট। এই মার্কেটের দোতলায় গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর থেকে এখানে ব্যাংকটির কাঠগড়া শাখা কার্যক্রম শুরু করে। ডাকাতির খবর পেয়ে ব্যাংকের ভেতরে আসতেই সিঁড়ির মুখে দুটি নীল রঙের বোমা পড়ে থাকতে দেখা যায়। কংক্রিটের সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠতেই টাইলসের মেঝেতে কয়েকটি স্যান্ডেল আর কালচে জমাট বাধা রক্ত। এরপর ব্যাংকে ঢোকার ফটক। ব্যাংকের কলাপসিবল ফটক লাগিয়ে ভেতরে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। বাইরে থেকে দেখা গেল ফটকের মুখেই থকথকে রক্ত। এখানেই ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী ও ব্যবস্থাপককে কুপিয়ে ফেলে রেখে হত্যা করা হয় বলে ব্যাংকের একজন কর্মী জানান।

ব্যাংকের কর্মী, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গত মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ব্যাংকটির ভেতরে ঢোকে তিন ডাকাত। অন্য তিনজন ব্যাংকের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের কয়েকজনের কাঁধে ব্যাগ ছিল। ব্যাংকে ঢুকেই ডাকাতদের একজন অতর্কিতে ব্যাংকের ফটকে বসে থাকা নিরাপত্তাকর্মী বদরুল ইসলামকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। একই সময় অন্য ডাকাতেরা ব্যবস্থাপক ওয়ালিউল্লাহর কাচ ঘেরা কক্ষে ঢুকে টেবিলে একটি বোমা রাখে। তারা ব্যবস্থাপকের কাছে চাবি চেয়ে অন্য সবাইকে মেঝেতে শুয়ে পড়তে বলে। ব্যবস্থাপক এ সময় দৌড় দিয়ে বের হতে চাইলে ফটকের কাছেই ডাকাতেরা ব্যবস্থাপককে ধরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মেঝেতে ফেলে রাখে। এরপর ক্যাশ থেকে টাকা নিয়ে ব্যাগে ভরে বের হওয়ার চেষ্টা করে। ব্যাংকের ভেতরে তারা কয়েকটি ফাঁকা গুলিও ছোঁড়ে।

এ সময় ডাকাতির খবর পেয়ে ব্যাংকের উল্টোদিকের মসজিদের মাইক থেকে ডাকাতদের প্রতিরোধ করার আহ্বান জানানো হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ শত শত মানুষ তখন ব্যাংকের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়। ডাকাতেরা তখনো ব্যাংকের ভেতরে। বের হতেই জনতার প্রতিরোধের মুখে ডাকাতেরা বোমা ফাটিয়ে ও গুলি ছোঁড়ে তিনটি মোটরসাইকেলে করে পালাতে থাকে। এখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপর জনতা গাড়ি নিয়ে একটি মোটরসাইকেলের পিছু নেয়। তিন ডাকাত মোটরসাইকেলটি নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দিকে যেতে থাকে। দেড় কিলোমিটার দূরেই আমতলা এলাকায় গাড়ি দিয়ে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে মোটরসাইকেল আরোহী ডাকাতদের ফেলে দেয় জনতা। সেখানেও দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ডাকাতেরা। এরপর সেখানেই একজন ডাকাতকে ধরে ফেলে গণপিটুনি দেয় জনতা। দুজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। এদের একজন আড়াগাঁও এলাকায় ধরা পড়ে গণপিটুনিতে নিহত হন। এখানে মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগ থেকে পুলিশ ৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা উদ্ধার করে। ব্যাগে আরও দুটি বোমা পাওয়া যায়। র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল পরে সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, এগুলো গ্রেনেড জাতীয় বোমা। তবে দেশেই তৈরি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্পি­à¦¨à§à¦Ÿà¦¾à¦° রয়েছে, যা অনেক বিধ্বংসী।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকের ভেতরে গুলি-বোমা এবং ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেছে ডাকাতরা। সেখানে বোমা বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রাথমিক ধারণা, তিনটি মোটরসাইকেলে মোট নয়জন ডাকাত এসেছিল। এদের মধ্যে তিনজন ব্যাংকের ভেতরে ঢোকে। তিনজন মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন চালু রেখে সড়কে অপেক্ষা করছিল। আর তিনজন ব্যাংকের ফটকে দাঁড়িয়ে ছিল। পুলিশ এদের ব্যবহৃত একটি বাজাজ ডিসকোভার ১০০ সিসির মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে।

ব্যাংকের ক্যাশ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, তিন-চারজন ডাকাত ব্যাংকের ভেতরে ঢুকেই নিরাপত্তাকর্মীকে কুপিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। বড় বন্দুক থাকলেও তা ব্যবহারের সুযোগ পাননি নিরাপত্তাকর্মী। এরপর ব্যবস্থাপকের কক্ষে ঢুকে বোমা দেখিয়ে ভল্টের চাবি চায়।

ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ সহকারী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, ডাকাতেরা তিন মিনিটের মতো ব্যাংকের ভেতরে ছিল। ডাকাতদের ধরতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী আবদুস সালাম হাসপাতালে বলেন, তিনিসহ শত শত মানুষ ধাওয়া করলে ডাকাতেরা গুলি-বোমা ফাটাতে থাকে। এ সময় তিনিও গুলিবিদ্ধ হন।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল বলেন, কিছু যুবক ব্যাংকে হামলা চালিয়ে টাকা লুটের চেষ্টা করে। কিন্তু ভল্টের চাবি না পেয়ে ব্যবস্থাপক ও নিরাপত্তাকর্মীকে কুপিয়ে কিছু টাকা নিয়ে পালানোর সময় জনতার ঘেরাওয়ের মুখে পড়ে। এরপর তারা গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে বেশ কয়েকজন মানুষ আহত হয়েছে। পাঁচজন ডাকাতের হামলায় মারা যান। গণপিটুনিতে এক ডাকাতের মৃত্যু হয়েছে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।