রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ১ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ৮ চৈত্র ১৪৩০ ॥ ১১ রমজান ১৪৪৫ হিজরী ॥ ২২ মাচ ২০২৪

॥ মো. হাসিম আলী ॥
‘দাওয়াহ’ ও ‘তাবলিগ’ উভয়ই আরবি শব্দ। শব্দদ্বয় ভাবার্থের দিক দিয়ে প্রায় কাছাকাছি। উভয় শব্দের ব্যবহারই পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পাওয়া যায়। ‘দাওয়াহ’ অর্থ ডাকা, আহ্বান, আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ, প্রচার, প্ররোচিত করা, অনুপ্রাণিত করা, উৎসাহিত করা ইত্যাদি। এর সমার্থক শব্দ হলো ওয়াজ, নসিহত, তাবলিগ, এরশাদ, জিকর, বাশারাত, ইনযার, হিস্সু, ইবাদত, দোয়া। বিশিষ্ট দাওয়াহ বিজ্ঞানী ড. আব্দুর রহমান আনওয়ারী বলেন, “যে আহ্বান ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টি কর্তৃক গৃহীত বিজ্ঞান সম্মত ও শিল্প সঞ্জাত উপায়ে নির্দিষ্ট বিষয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করা, মেনে নেয়া এবং তাদের বাস্তব জীবনে চর্চার ব্যবস্থা করে দেওয়ার পদ্ধতিগত সকল প্রচেষ্টা ও কার্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাই দাওয়াহ।” এ সম্পর্কে আরেক দাওয়াহ বিজ্ঞানী ড. এ কে এম নুরুল আলম বলেন, “দাওয়াহ হলো- সুনির্দিষ্ট পয়গাম বা লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পনা মাফিক বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে আকৃষ্ট করার নিমিত্তে আহ্বান করা বা আবেদন পেশ করা।” তবে দাওয়াহ গবেষকগণ অনেক ক্ষেত্রে ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ’ করাকে দাওয়াহ নামে অভিহিত করেছেন।
মোটকথা, ‘দাওয়াহ’ ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। যেকোনো পথ বা মত কিংবা যেকোনো বিষয়ের প্রতি দাওয়াহ হতে পারে। কিংবা যেকোনো বিষয় গ্রহণ করার ব্যাপারে অনুপ্রাণিত করার অর্থে হতে পারে। আবার সে বিষয়টি ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে; কিংবা কল্যাণকর হতে পারে বা ক্ষতিকরও হতে পারে। যেমন আল কুরআনে এসেছে, “হে আমার কওম! কী হলো যে, আমি তোমাদের আহ্বান করি মুক্তির দিকে অথচ তোমরা আমাকে আহ্বান করছো জাহান্নামের দিকে।” (সূরা আল মু’মিন : ৪১)। এমনিভাবে হজরত ইউসুফ আ.-এর ভাষায় আল কুরআনে উল্লেখ হয়েছে: “হে আমার প্রভু! নারীরা আমাকে যে উদ্দেশ্যে আহ্বান করছে (প্ররোচিত করছে), তার চেয়ে জেলখানা আমার কাছে অধিক প্রিয়।” (সূরা ইউসুফ : ৩৩)। ইসলামিক স্কলারদের মতে, দাওয়াহ বলতে ইসলামের চিরকল্যাণকর ও সুমহান আদর্শের দিকে আহ্বানই দাওয়াহ। যেমন ড. রউফ শালাবী বলেন, “দাওয়াহ হলো সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন, যার দ্বারা মানবসমাজকে কুফরি অবস্থা হতে ঈমানী অবস্থায়, অন্ধকার হতে আলোয় এবং জীবনে সংকীর্ণতা হতে পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনের প্রশস্ত অবস্থায় রূপান্তরিত করা হয়।” আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আহমদ গালুশ বলেন, “মানুষকে ইসলামের দিকে নিয়ে আসার জন্য কার্যগত বা বাচনিক সকল প্রচেষ্টার অপর নাম ইসলামী দাওয়াহ।” এখানে বাচনিক বলতে আলাপ-আলোচনা, ওয়াজ, নসিহত, কথোপকথন, বক্তৃতা-বিবৃতি, পাঠদান, দারস ইত্যাদি উদ্দেশ্য, আর কার্যগত বলতে দাঈ কর্র্তৃক চারিত্রিক তথা আচরণগত নমুনা পেশ, আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য চর্চা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সমাজসেবা, জিহাদ, লেখালেখি ইত্যাদি উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে তাবলিগ অর্থ প্রচার করা, পৌঁছানো। তাবলিগ হলো কোনো বাণী, আকিদাহ-বিশ্বাস, শিক্ষা-সংস্কৃতি বা আদর্শকে অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়া। যার নিকট পৌঁছানো হবে, ইতোপূর্বে তার নিকট ঐ বাণী বা ঐ আদর্শের কথা পৌঁছে থাকতে পারে- আবার নাও পৌঁছাতে পারে। আবার সত্য হিসেবে সে ঐ বাণী বা আদর্শ গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানও করতে পারে। এতে তাবলিগের কোনো ক্ষতির কারণ নেই। কারণ তাবলিগের অর্থ ও কাজই হলো পৌঁছে দেয়া। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে রাসূল! পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি তা না করেন, তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না।” (সূরা আল মায়েদা : ৬৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, “স্পষ্টভাবে প্রচার করাই আমাদের দায়িত্ব।” (সূরা ইয়াসিন:১৭)। বিদায় হজের ভাষণে রাসূল সা. বলেছেন, “একটি আয়াত হলেও, তা আমার পক্ষ থেকে (অন্যের নিকট) পৌঁছে দাও।” (তিরমিযী)।
‘দাওয়াহ’ ও ‘তাবলিগ’ শব্দদ্বয় কখনো কখনো একটি বিশেষ অর্থে একটি অপরটির সম্পূরক হয়ে দাঁড়ায়। আবার কখনো কখনো উভয়টিই একটি পর্যায়ে এসে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের নিরিখে একাকার ও সংমিশ্রিত হয়ে যেতে পারে। তাই বলে বিনাবিচারে দুটি বিষয়কে সমার্থক মনে করাও সমীচীন নয়। কেননা উভয়টির মধ্যকার শব্দগত ও তাৎপর্যগত পার্থক্য অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাবলিগ শুধুমাত্র পৌঁছানোর নাম। কিন্তু দাওয়াহর কার্যক্রম শুধু পৌঁছানোর নাম নয়। এর রয়েছে বিভিন্ন কলা-কৌশল, পরিকল্পনা ও বিধিবদ্ধ পদ্ধতি। দাওয়াহর ক্ষেত্রে তাবলিগ বা পৌঁছানোর পর যারা সমর্থক হয়, তাদেরই প্রশিক্ষণ দিয়ে সমাজে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করতে হয়। এ কারণে দাওয়াহ বিষয়ে অধিকাংশ লেখকের মতে, ইসলামী দাওয়াহর ৩টি পর্যায় রয়েছে। যথাÑ ক. তাবলিগ বা পৌঁছানো, খ. তারবিয়াত বা প্রশিক্ষণ, গ. সমাজে বাস্তবায়ন ও বিরোধীদের মোকাবিলা। এ কারণে দীনের প্রচার-প্রচারণা তথা তাবলিগের কাজ একসময় নিঃশেষ হয়ে গেলেও দাওয়াতে ইলাল্লাহর কাজ কখনো নিঃশেষ হয় না। দাওয়াহর আবেদন চিরস্থায়ী। দীনের প্রচার কাজ পৃথিবীর আনাচে-কানাচে; এমনকি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেলেও দাওয়াহর কাজ নিঃশেষ হবে না। মোটকথা, দাওয়াহ হলো আল্লাহর পথে আহ্বানের অতিশয় হিকমতপূর্ণ উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন নিরন্তর চলমান এক কর্ম প্রচেষ্টার নাম; এর বহুবিধ উপায়-উপকরণ, প্রক্রিয়া-পদ্ধতি ও কলা-কৌশল রয়েছে। আর তাবলিগের প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে সেই অসংখ্য পদ্ধতির মধ্য থেকে একটি পদ্ধতির নাম। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, তাবলিগ ব্যতীত দাওয়াহ যেমন স্থবির হয়ে গতি হারিয়ে ফেলে, তেমনি দাওয়াহবিহীন তাবলিগ অন্তঃসারশূন্য।
দাওয়াহ ও তাবলিগের গুরুত্ব: ইসলামী দাওয়াহ ও তাবলিগের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-
ফরজ ইবাদত: অধিকাংশ ইসলামিক স্কলারদের মতে, দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ ফরজ। কেউ বলেছেন প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর ক্ষমতা ও যোগ্যতা অনুসারে ‘ফরজে আইন’ তথা সবার প্রতি ফরজ। আর মুসলিম উম্মাহর ওপর ‘ফরজে কেফায়া’ অর্থাৎ উম্মাহর কিছু লোক এ কাজে সম্পৃক্ত থাকলে অন্যরা দায়মুক্ত হয়ে যাবে। তবে সর্বসম্মত কথা হলো- দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ সাধারণভাবে ফরজে কেফায়া। পরিবেশ ও পরিস্থিতির আলোকে তা ফরজে কেফায়া হতে ফরজে আইন হতে পারে। যেমন দেশ বহিঃশত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হলে দাওয়াহ সবার জন্য ফরজে আইন হয়ে যায়। এছাড়া দাওয়াতের জন্য বিশেষভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি যেমন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণ, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমাম, খতিব, শিক্ষক, প্রশিক্ষকদের জন্যও দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ ফরজে আইন হিসেবে গণ্য হবে।
নবীওয়ালা কাজ : দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ মূলত নবী-রাসূলগণেরই কাজ। প্রত্যেক নবী-রাসূলই স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “তারা (নবীগণ) আল্লাহর বাণী প্রচার করতেন এবং তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় করতেন। তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।” (সূরা আহযাব : ৩৯)। কিন্তু নবী-রাসূলগণ যেহেতু চিরঞ্জীবী নন, তাই স্বভাবতই তাদের উম্মতের ওপর এ কাজের দায়িত্ব অর্পিত হয়ে থাকে। যেমন বলা হয়েছে, “আলেমগণ নবীদের উত্তরাধিকারী।”
শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি: দাওয়াহ ও তাবলিগ তথা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করা মুসলিম জাতির শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক। আল্লাহ বলেন, “তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি, মানবজাতির কল্যাণের জন্য (তোমাদের) উত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১১০)।
সফলতার মূলমন্ত্র: মানুষকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে আহ্বান করা এবং অন্যায় ও অসত্য থেকে দূরে রাখা ইহকালীন ও পরকালীন সফলতার মূলমন্ত্র। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণকর কাজের দিকে আহ্বান জানাবে, মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)।
মুসলিমদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং ঈমানের পরিচায়ক: ভালো কাজে উৎসাহিত করা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা মজবুত ঈমানের পরিচায়ক। এটি মুসলিমদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন, “মুমিন পুরুষ ও মুমিন স্ত্রীলোক পরস্পরের বন্ধু ও সাথী। তারা যাবতীয় ভালো কাজের নির্দেশ দেয়, সব অন্যায় ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে।” (সূরা তাওবা: ৭১)। উল্লেখ্য, অত্র আয়াতে দাওয়াতে ইলাল্লাহর কাজকে সালাত ও যাকাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ রুকনের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহর প্রশংসা লাভ এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্তির কারণ : যেমন আল্লাহ বলেন, তারা সকলে একরকম নয়। কিতাবীদের মধ্যে একদল আছে অবিচলিত; তারা রাতে নামাযে রত অবস্থায় আল্লাহর আয়াত পাঠ করে। তারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস করে, সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে এবং সৎকাজে প্রতিযোগিতা করে, আর তারাই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আলে ইমরান : ১১৩-১১৪)।
আল্লাহর রহমত লাভের মাধ্যম: দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর অফুরন্ত রহমত ও করুণা লাভে ধন্য হতে পারে। (সূরা তাওবা : ৭১)।
অভিশম্পাত থেকে মুক্তির উপায় : দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ আল্লাহর অভিশম্পাত থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ বলেন, “বনি ইসরাঈলদের মধ্য থেকে যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তাদের প্রতি দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের ভাষায় অভিশাপ দেয়া হয়েছে। কেননা তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল। তারা পরস্পরকে পাপ কাজ থেকে বিরত রাখা পরিহার করেছিল। অত্যন্ত জঘন্য কর্মনীতিই তারা অবলম্বন করেছিল।” (সূরা মায়েদা: ৭৮-৭৯)। এছাড়া রাসূল সা. পূর্ববর্তী উম্মতের একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা জিবরাঈল আ.-কে এ নির্দেশ দিলেন যে, অমুক জনপদকে উল্টিয়ে ধ্বংস করে দাও, জিবরাঈল আ. আরজ করলেন, হে আল্লাহ! ঐ জনপদে তোমার এক বান্দা আছে, সে কোনোদিন তোমার নাফরমানি করেনি। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করলেন, ‘সে ব্যক্তিকেসহ ঐ এলাকা ধ্বংস করে দাও। কেননা আমার নাফরমানি যখন হচ্ছিল, তখন তার বিরুদ্ধে এ ব্যক্তির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি।”
মুক্তির উপায়: দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তির উপায়। যেমন আল্লাহ বলেন, “শেষ পর্যন্ত তারা যখন সেই উপদেশ সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেল, যা তাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিল, তখন আমরা সেই সব লোকদের মুক্তি দিলাম যারা খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতো। আর অন্যদের যারা জালিম ছিল তাদেরকে তাদেরই নাফরমানির কারণে কঠিন শাস্তি দিয়ে পাকড়াও করলাম।” (সূরা আ’রাফ : ১৬৫)।
দোয়া কবুলের শর্ত: দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ দোয়া কবুলের পূর্বশর্ত। হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত। নবী সা. বলেছেন, “সে সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন, তোমরা অবশ্যই সত্য-ন্যায়ের আদেশ দিবে এবং অন্যায় ও অসত্যের প্রতিরোধ করবে। অন্যথায় অচিরেই আল্লাহ তোমাদের শাস্তি দেবেন। (গজবে নিপতিত হয়ে) তোমরা দোয়া করবে কিন্তু তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবে না (দোয়া কবুল হবে না)” (রিয়াদুস সালেহীন, বাইসে, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৪৫)।
ঈমানের পরিমাপক যন্ত্র: দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ ঈমানের পরিমাপক যন্ত্র। “আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সা.কে বলতে শুনেছি : তোমাদের মধ্যে কেউ যখন কোনো প্রকার খারাপ কাজ হতে দেখে সে যেনো তার হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগে) তা প্রতিরোধ করে। যদি এ শক্তি তার না থাকে, তাহলে মুখের কথা দিয়ে (জনমত তৈরি করে) তা প্রতিহত করে। এতেও যদি সে সক্ষম না হয়, তাহলে মন দিয়ে (পরিকল্পিত উপায়ে) তা প্রতিহত করার প্রচেষ্টা করে। আর অন্তর দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করা ঈমানের দুর্বলতম এবং সর্বনিম্ন স্তর (এর নিচে ঈমানের আর কোনো স্তর নেই)।”(রিয়াদুস সালেহীন, বাইসে, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৪১)।
ঈমান-আকিদার রক্ষাকবচ : দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ ঈমান ও আকিদার রক্ষাকবচ। ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. বলেছেন, “আমার পূর্বে কোনো জাতির কাছে যে নবীকেই পাঠানো হয়েছে, তাঁর সহযোগিতার জন্য তাঁর উম্মতের মধ্যে একদল সাহায্যকারী ও সাহাবী থাকতো। তারা তার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরতো এবং তার নির্দেশের অনুসরণ করতো। এদের পরে এমন কিছু লোকের উদ্ভব হলো তারা যা বলতো তা নিজেরা করতো না এবং এমন কাজ করতো যা করার নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। অতএব এ ধরনের লোকের বিরুদ্ধে যে ব্যক্তি হাত দিয়ে (শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে) জিহাদ করবে, সে মুমিন। যে মুখ দিয়ে (মানুষকে বোঝানোর মাধ্যমে) এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন। যে অন্তর দিয়ে এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে সেও মুমিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমানের স্তর নেই। (রিয়াদুস সালেহীন, বাইসে, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৪১)।
সর্বোত্তম জিহাদ: দাওয়াহ ও তাবলিগের কাজ জিহাদের সমতুল্য। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. বলেছেন, “জালিম ও স্বৈরাচারী শাসকের সামনে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ কথা বলাই সর্বোত্তম জিহাদ।” (রিয়াদুস সালেহীন, বাইসে, প্রথম খণ্ড, পৃ. ১৪৫)।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়া।



অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।