সাংবাদিক লেখক মুহাম্মদ নূরে আলমের ‘ঋণমুক্ত দুনিয়া ও পাপমুক্ত পরকাল’ নামের একটি বই আমার কাছে এসেছে। বইটির নাম দেখলেই বোঝা যায়, বইটিতে দুনিয়ার কল্যাণ এবং আখিরাতের মুক্তির নির্দেশনা নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে ইহকাল কীভাবে সুন্দর হয়ে ওঠে এবং পরকালে কীভাবে শান্তি পাওয়া যাবে, সেই নসিহত দিয়েছেন লেখক বইটিতে। বইটি নিঃসন্দেহে আলোচনার অপেক্ষা রাখে। প্রকাশের কয়েকদিনের মধ্যে কলিগ হিসেবে আমাকে বইটি উপহার দিয়েছেন লেখক মুহাম্মদ নূরে আলম।
বইটি উল্টেপাল্টে দেখে এ উপলব্ধি হলো- ক্ষণস্থায়ী এ দুনিয়ায় চলতে-ফিরতে, জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে, পারিবারিক, সামাজিক; এমনকি ধর্মীয় জীবনে মানুষ হিসেবে কার অধিকার কার ওপর বর্তায়, প্রথম পার্টে সেই কথাটি বোঝাতে চেয়েছেন বিশদভাবে। ঋণ বলতে লেখক অধিকারকে বোঝাতে চেয়েছেন। অপরদিকে পরকালে মুক্তির জন্য এ জীবনে কী করা উচিত, সে বিষয়টি টেনেছেন দ্বিতীয় ভাগে। এক্ষেত্রে তিনি বহু বিদগ্ধ ইসলামিক পণ্ডিত ব্যক্তিদের বইয়ের রেফারেন্স টেনেছেন। সবচেয়ে বাস্তব বিষয় হলো, বইটি এমন পরিমিতি বোধের পরিসীমায় রেখে প্রকাশ করেছেন- যাতে পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। সেইসাথে বইটি কিনে পড়তেও অর্থের টানাপড়েন না তৈরি হয়।
বইটির ভূমিকায় চোখ বুলালেই বিষয়বস্তু সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হবে। এরপর প্রয়োজন অনুসারে বিষয়ের ওপর জোর দিয়ে কিস্তি কিস্তি করে পড়ার সুযোগ রয়েছে; যা অনুধাবন করে, তা বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটানো ঈমানের দাবি বলে মনে হয়েছে।
বইটির শুরুতেই লেখক পাঠককে জানাতে চেয়েছেন ঋণ জিনিসটা কী? সেইসাথে ইসলামের পরিভাষায় ঋণের মর্মার্থ। এরপর ঋণ দেওয়ার ফজিলত, ইসলামে সুদমুক্ত ঋণ, ঋণদান এবং পরিশোধ পদ্ধতি; এমনকি মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধের কথাও স্থান পেয়েছে বইটিতে। ব্যক্তি বা মানুষ ছাড়াও শরীরের অঙ্গ থেকে শুরু করে পারিবারিক অধিকার বা ঋণ, সামাজিক দায়দায়িত্ব যে ঋণের রূপ ধারণ করে, তাও বলা হয়েছে বিশদভাবে বইটিতে। বইটির দ্বিতীয় পার্টে এসে অন্যায় বা পাপমুক্ত জীবন গঠনের উপায়, জীবন ধারণের শিষ্টাচার, কেন নিজেকে পাপমুক্ত রাখা জরুরি তাও বলে দিয়েছেন লেখক। এমনকি অনলাইন দুনিয়ার পাপ থেকে কীভাবে মুক্ত থাকা যায়, সে সম্পর্কেও বাতলে দেওয়া হয়েছে বইটিতে। সর্বোপরি গোপন পাপ থেকে মুক্ত থাকার কথাও বলতে ভুলেননি।
লেখক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সার্থক এ কারণে যে, তিনি বইটি লিখতে গিয়ে আল্লামা খুররম মুরাদ থেকে শুরু করে অধ্যাপক গোলাম আযম পর্যন্ত যারা ইসলাম সম্পর্কে বিশুদ্ধ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন, তাদের বই অনুসরণ করেছেন। সমসাময়িক পত্রপত্রিকার রেফারেন্স টেনেছেন অনায়াসে। সাধুবাদ জানাই লেখককে এজন্য যে, তিনি বিষয়বস্তুর আলোচনা করতে গিয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআন এবং বিশুদ্ধ হাদিসের রেফারেন্স টেনেছেন সবচেয়ে বেশি। বইটির বিষয় বিন্যাস মনে ধরার মতো। ঝকঝকে ছাপার জন্য আল-ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বইটির দাম নাগালের মধ্যে রাখার জন্য প্রকাশক প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ। বইটি কিনে পড়া হলে লোকসান হবে না, সেই গ্যারান্টি দিয়ে রাখলাম। বইটির বিস্তর প্রচার প্রত্যাশা করছি। যোগাযোগ লেখকের সাথে সরাসরি : ০১৮৭৮৭১৬৮৭৯, প্রকাশক : ০১৭৭২৯৮২৭০০।
- ইবরাহীম খলিল