ঈদ উপহার
মেছবাহ উদ্দিন মারুফ
উনত্রিশ ও ত্রিশ রোজার আধা ইফতার শেষে-
শিশু-কিশোর আমরা যেতাম খোলা মাঠে এসে।
দৃষ্টি থাকতো ঊর্ধ্বমুখী পড়তো না তো পলক-
দেখতে শুধু সবার আগে নতুন চাঁদের ঝলক।
চাঁদের উদয় ঘটতো হঠাৎ হৃদয় যেতো ভরে,
ঘরে ফিরতাম পুরো গাঁয়ে খুশির মিছিল করে।
মাঝরাত অবধি জেগে হতো ফজর বাদে ওঠা,
গোসল সারতে তাড়াতাড়ি দিঘির দিকে ছোটা।
ঘরে এসে পোশাক পরে সেমাই পায়েস খেয়ে-
সালাম সেরে নামায পড়তাম ঈদগাহে যেয়ে।
নামায শেষে কোলাকুলি চলতো অবিরত-
আবেশ ছিল সুসজ্জিত পরিবারের মতো।
সেলামি নিই হাটে গিয়ে নিতাম বেলুন বাঁশি,
পুরো পাড়া মুখর রাখতাম বাড়ি ফিরে আসি।
বন্ধুরা সব মিলেমিশে খেলতাম হরেক খেলা,
খুব আনন্দে কাটতো তখন সকাল-সন্ধ্যা বেলা।
বড় হয়ে ভাবলাম এখন শিশু-কিশোর যারা,
দারুণভাবে পালন করবে ঈদের দিনটা তারা।
কিন্তু হতাশ পাই না তাদের সেই খুশিময় মুখে,
সাদামাটা ঈদ আসে যায় এই পৃথিবীর বুকে!
শিশু-কিশোর পারবে একটি ঈদ উপহার দিতে?
যেটা দেখে পারবো যেতে সোনালি অতীতে।
আশা নিয়ে থাকবো বসে চাওয়া ঈদের দিকে-
ঘরে থেকে তোমরা আমার মন করো না ফিকে।
ছোটদের রোজা
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
রোজার দিনে দুপুর বেলা
খাচ্ছি বসে মুড়ি
বলল হেসে ফোকলা দাঁতে
পাশের বাড়ির বুড়ি।
কীরে খোকা, এই বেলাতে
কয়বার ইফতার করলি
সাহহী-ইফতার সব মিলিয়ে
কয়টা রোজা ধরলি?
সকাল বেলা ভাত খেয়েছি
এখন খেলাম মুড়ি
বিকাল বেলা কিছু খাবো না
সন্ধ্যায় খাবো পুরি,
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা মিলে
তিনটা রোজা হলো।
কথা শুনে ফোকলা বুড়ি
হেসেই যেন ম’লো।
ফোকলা বুড়ি হাসছে যেন
দুলকি হাওয়ার বেগে
মুড়ির ডালা ছিটকে ফেলে
বললাম তাকে রেগে,
আমরা হলাম ছোট্ট মানুষ
রোজাও মোদের ছোট
দিনের বেলা সাহরি খেলে
কেন হেসে ওঠো?
বুঝছি এবার, বুড়ো হলে
রোজাও হয় যে বড়
মোদের দেখে খিদের চোটে
তাই তো মশকরা করো?
কথা শুনে ফোকলা বুড়ি
মাথা চাপড়িয়ে মরে
আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে
দৌড়ে গেল ঘরে।
নেতার ছেলে
ফরিদ আহমদ ফরাজী
নেতার ছেলে হেঁটে যায় জোরকদম- লম্ফ
থরোথরো কাঁপে ভূমি যেন ভূমিকম্প।
চেয়ারম্যানের শালা বলে দাপটের শেষ নাই
ভয়ে সয়ে যায় সবে আদালতে পেশ নাই।
গাঁয়ের যত অপকর্ম সবি তার কর্ম
তার মুখের কথা যেন, এজিদের বর্ম।
দিন শুরু লাঠালাঠি ঝগড়া আর লাথিতে
সিগারেট ফুঁকে দেখো বড় নেতার নাতিতে।
নেতায় নেতায় বাড়াবাড়ি কথায় কথায় ঘর্ষণ
নেতার ছেলে করে যদি কারো মেয়ে ধর্ষণ
ওপর থেকে ফোন আসে বিচারের চাকাতে
ধামাচাপা দিতে হবে সামান্য টাকাতে।
বুক টান টান করে চলে সাজসজ্জায়
এসব দেখে ইবলিসে মুখ ঢাকে লজ্জায়।
নেতার ছেলে মদ খেলে আধুনিক-স্মার্ট
পুলিশ দেখে বলে বাবু তোমার ভালো কেসমাত।
পড়ালেখার সময় কই? ক্ষমতায় অটোপাস
বিটুমিন ছাড়া রোড, মর্গভরা লাশ।
ফিলিস্তিনের ঈদ
সাদমান হাফিজ শুভ
আমরা তো ভাই ঈদের দিনে
করি কত ধুম,
ঈদ আসে কি ফিলিস্তিনে?
রাঙা যে ওই ভূম।
পথের পরে কুসুমকলি
ঝরে পড়ে রয়,
কত যে মা দু’হাত তুলে
দুঃখের কথা কয়!
তবু ওরা নাহি ডরে
কাঁধে রাখে কাঁধ,
বুকে যে খুব ওই মহানের
রাজটা গড়ার সাধ।
রাজটা এলে আসবে তবে
ওদের দোরে ঈদ,
দেখতে সে ঈদ আমারও যে
খাখা করে হৃদ!
প্রার্থনা
মো. শাহাজাহান হোসেন
হঠাৎ যদি ঘুম ভেঙে যায়
প্রভুর কাছে চাও
তোমার পথে অটল থাকার
শক্তি আমায় দাও।
সে পথ থেকে মুক্ত করো
যে পথ আলোহীন
তোমার রঙে দাও রাঙিয়ে
জীবনটা রঙিন।
ক্ষমা করো ভুল করেছি
পাহাড়সম যা
অসৎ পথে আর না বাড়ুক
আমার দুটি পা।
তাওবা করি মাফ করে দাও
ওগো দয়াময়
তোমার পথে থেকে যেন
করতে পারি জয়।
আমরা শিশু
আরিফুর রহমান আদিব
আমরা শিশু আমরা কিশোর
আমরা দেশের বাতি,
দেশের হয়ে লড়বো মোরা
দেখবে শত জাতি।
নয়গো রাত্রি নয়গো দিবা
দেখবো রঙিন স্বপ্ন,
সফলতা আনবো ছিনে
হবো দেশের রত্ন।
দেশের আলো জ্বালবো মোরা
টানবো দেশের ঘানি,
সবার মাঝে ছড়িয়ে দেবো
আল-কুরআনের বাণী ॥
রোজা থেকে
মুহাম্মদ আলম জাহাঙ্গীর
রোজা থেকে না করি ভাই
আমরা ঝগড়াঝাঁটি,
ঝগড়া ঝাঁটি করলে রে ভাই
হয় না রোজা খাঁটি।
রোজা থেকে না বলি ভাই
আমরা মিছারই ছল,
মিছা কথা বললে রে ভাই
হয় রোজা তার নিষ্ফল।
রোজা থেকে না করি ভাই
আমরা গীবত কারও,
কইলে গীবত কারো কাছে
যায় বেড়ে যায় তারও।
রোজা থেকে না করি ভাই
আমরা কিছু চুরি,
করলে চুরি কারো কিছু
পুণ্য হয় তার নুড়ি॥
ঢাকা শহর
মুহাম্মদ ইব্রাহিম বাহারী
ঢাকা শহর মস্ত বড়
লোকগুলো নয় দোস্ত কারো
গলি আঁকা বাঁকা,
মেঘের মতো উড়ছে ধোঁয়া
টাকা কড়ি যাচ্ছে খোয়া
ঘুরছে গাড়ির চাকা॥
ইটপাথরের মস্ত দালান
দৈত্যদানব ভয়ে পালান
গাড়ির হর্নের সুরে,
ঢাকায়ও আছে ভাতের অভাব
বস্তিবাসীর বন্য স্বভাব
যাও না কমলাপুরে॥
কঠিন মনের মানুষ যত
ঘোরেন ঢাকায় অবিরত
একটু সুখের জন্য,
ঢাকা নিয়ে স্বপ্ন আশা
যদি থাকে একটি বাসা
তাতে মানুষ ধন্য।
মায়ের উপদেশ
রুনা লাইলা
জানতে হবে মানতে হবে
কুরআনেরই বাণী,
তবেই খুকী হবে তুমি
জান্নাতেরই রানি।
শুনতে হবে বলতে হবে
সদা সত্য কথা,
তোমার দ্বারা হয় না যেন।
কোন কাজ অযথা।
শিখতে হবে লিখতে হবে
ধরতে হবে কলম,
সমাজেরই ক্ষত জায়গায়
দিতে হবে মলম।
লড়তে হবে পড়তে হবে
তবেই হবে সেরা,
মনটা খুকী রেখো সদাই
মায়া দিয়ে ঘেরা।
ঈদ মোবারক
আবুল খায়ের বুলবুল
ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক
কণ্ঠে সবাইর শুনি
কী আনন্দ ঘরে ঘরে
মধুর সুরের ধ্বনি।
চাঁদ উঠেছে ঐ আকাশে
লাগলো খুশির ধুম
ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক
নাইরে চোখে ঘুম
ফজর পড়ে বলবে আবার
আল্লাহু আকবার ধ্বনি॥
রোজা রেখে নামাজ পড়ে
দিল হলো যে সাফ
হয়তো তিনি দিতে পারেন
গুনাহগুলো মাফ॥
রাত কাটে না ভোর আসে না
জেগে ওঠে দেখি
কখন জানি রাত পোহাবে
ঘড়ি হাতে রাখি
হঠাৎ নকীব বলছে ডেকে
ওঠো মুমিন গুণী॥
ঈদ এসেছে বলে
আমিনুল ইসলাম কাইয়ুম
আজ যেন উৎফুল্ল মনে
সবাই গেছে জেনে,
সিয়াম যেন ঢাল স্বরূপ
নিয়েছে মনে মেনে।
অন্যায়-অশ্লীল দূরে দিয়ে
আঁখির বারি ঝরে,
একটি মাস সিয়াম রেখে
সবাই ধৈর্য ধরে॥
সালাত পড়তে উঁচু নিচু
যাচ্ছে দলে দলে
হাসি আনন্দ সবার ঘরে
‘ঈদ এসেছে বলে’॥
শপথ নিয়ে আমি করি
মিলি তাদের সঙ্গে,
খুশি মনে সুখি হয়ে
বাইরে এবং বঙ্গে॥
সবাই যেন আজ আপন
কারণ ঈদুল ফিতর
এশার পরে তারাবি বাদ
পড়বো শুধুই বেতর॥
মানবিক কাজ
এইচ. এম কাওছার হোসাইন
সদা-সর্বদা করবো মোরা মানবিক কাজ
ভালো কাজে মোদের নেই কোনো লাজ,
ভালো কাজের প্রতিদান দেবেন আল্লাহ
রোজ হাশরে হবে ভারী মিজানের পাল্লা।
ভালো কাজ করলে কিছু কিছু মানুষ
নিন্দার ঝড় উঠাবে, হবে তারা বেহুশ!
তবুও কি আমরা সবাই থেমে থাকবো
মানবিক সকল কাজে অবদান রাখবো?
ছোট কিংবা বড় হোক, সকল ভালো কিছু
সম্মুখ প্রাণে এগিয়ে নেবো, হবো না পিছু,
একতার দৃঢ় বন্ধন রাখতে পারলে বজায়
সুন্দর সোনালি সমাজ, নির্মাণ হবে ধরায়।
এগিয়ে যাও
জাকিয়া আফরিন সোমা
এগিয়ে থাকো কথা ও কাজে
এগিয়ে থাকো সততায়
এগিয়ে থাকো স্বপ্ন সাহসে
এগিয়ে থাকো মমতায়।
এগিয়ে থাকো জ্ঞান বিজ্ঞানে
এগিয়ে থাকো তাকওয়ায়,
এগিয়ে যাও দীন বিজয়ে
এগিয়ে যাও সফলতায়।
এগিয়ে যাও বাধার প্রাচীর
বের হয়ে যাও দিগি¦দিক,
পিছু হটবে না কাপুরুষের মতো
যারাই চিহ্নিত ধিক।