রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৭ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১০ মে ২০২৪

ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র এবং বর্তমান বাংলাদেশ

সব নির্বাচনই অগ্রহণযোগ্য

ভোটগ্রহণ তামাশায় পরিণত, তাই বিরোধীদলগুলোর বর্জন অব্যাহত
॥ ফারাহ মাসুম ॥
একের পর এক তিনটি একতরফা জাতীয় নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনকেও একতরফা ও হাস্যকর করায় বাংলাদেশে সব পর্যায়ের নির্বাচন ও ভোটগ্রহণ অকার্যকর তথা অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবেই বাংলাদেশ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে স্বৈরতন্ত্রের ব্র্যাকেটে চলে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সরকার বেছে নেয়ার যে অধিকার সংবিধান বাংলাদেশের মানুষকে দিয়েছিল, সেটি অকার্যকর হয়ে যাওয়ায় সব আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে বাংলাদেশের অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। সর্বশেষ পরিস্থিতিতে জনগণের ইচ্ছায় স্থানীয় প্রশাসন নির্বাচিত হয়ে তাদের পরিচালনার যে ব্যবস্থা সংবিধানে ছিল, তা-ও আর কার্যকর থাকল না।
বাংলাদেশের তিন স্তরের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তর হলো উপজেলা। সেই উপজেলায় একতরফা নির্বাচন শুরু হয়েছে ৮ মে থেকে। এ নির্বাচনে প্রার্থী মূলত সবাই শাসকদল আওয়ামী লীগের। এ দলের একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন প্রতিদ্বন্দি¦তা করছে। সরকারের হাইকমান্ড বা প্রশাসনকে যিনি যত ভালোভাবে করায়ত্ত করতে পারবেন, সাধারণভাবে দেখা যাবে তিনি ‘নির্বাচিত’ হয়ে গেছেন। এসব কারণে স্থানীয় সরকারের ভোটগ্রহণও এখন তামাশায় পরিণত হয়েছে।
একতরফা জাতীয় নির্বাচনের মতো একতরফা উপজেলা নির্বাচন করার জন্য আগে থেকে সব পরিকল্পনা নেয়া হয়। বাইরে থেকে সব দলকে এ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়। আর ভেতর থেকে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া আর অপহরণ-গুম করার মাধ্যমে এ বার্তা দেয়া হয়, এ নির্বাচনেও শাসকদলের প্রার্থীদেরই জয়ী করা হবে। মাঠের এ বার্তার পর বিরোধীদলগুলো শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনের কিছুটা প্রস্তুতি গ্রহণের পরও চূড়ান্তভাবে তা বর্জন করে গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থা ফেরানোর জন্য আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়।
সংবিধানের বিধান অকার্যকর : বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৫ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য নিয়ে সংসদ গঠিত হবে।’
এখানে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে’। অর্থাৎ ইলেকশন; সিলেকশন নয়। যে কারণে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় শতাধিক আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে ওই নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট হয়েছিল। যদিও সেই রিট খারিজ হয়ে গেছে। অর্থাৎ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেও তারা বৈধ সংসদ সদস্য হিসেবেই ঘোষিত হয়েছেন। এ রায় হওয়ার পেছনে বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের প্রভাবকে দায়ী করা হয়।
 সেইসাথে যে প্রশ্নটি একাডেমিক পরিসরে বেশ সক্রিয়, সেটি হলো বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে শুধু সরকারের বদল কিংবা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার বাইরে আর কী হয়েছে? সর্বজন গ্রাহ্য একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা কি আদৌ গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে? বা সেই লক্ষ্যে কি কোনো কাজ হচ্ছে?
নির্বাচনকে ক্ষমতার পালাবদলের প্রধান মাধ্যম বলা হলেও এ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো বিতর্কমুক্ত থাকেনি। তুলনামূলকভাবে কম বিতর্কিত হয়েছে, এরকম নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে মূলত নির্দলীয় সরকারের অধীনে। একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান রাজনীতিবিদদের জন্য কতটা সম্মানজনক, সেটি নিয়ে তর্ক থাকলেও এরকম একটি বিধান কেন চালু করতে হয়েছিল, তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
বাস্তবতা হলো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল হলেও এখন পর্যন্ত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে সংবিধানে যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল, সেটি তুলনামূলক ভালো পদ্ধতি হিসেবে এখন পর্যন্ত স্বীকৃত। আইনি যুক্তিতে নাকি রাজনৈতিক প্রভাবে সেটি ‘গণতান্ত্রিক নয়’ বলে উচ্চ আদালত বিধানটি সংবিধান থেকে বাতিল করেছেন, তা নিয়ে এখনো তর্ক রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এ বিধান বাতিল করার পর এখন যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে, সেই পদ্ধতিতে কি অবাধ-সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব? দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সময়ে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কি শতভাগ নিরপেক্ষ, নির্মোহ, চাপমুক্ত থাকতে পারেন বা থাকেন? অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, তার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেই দল হারেনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, মাঠ প্রশাসনের ওপর তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে যতই স্বাধীন বলা হোক না কেন, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যখন দেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সক্রিয় থাকে, তখন কমিশনের পক্ষে শতভাগ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করা কঠিন। আবার কমিশন যতই নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতমুক্ত থাকুক না কেন, মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটা চাপমুক্ত থাকতে পারে, সে প্রশ্ন বেশ পুরনো।
একদলীয় সংসদের উত্থান
সর্বশেষ যে একদলীয় সংসদ গঠন করা হয়, সেই সংসদের ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২৩৬টি আসনে জয়লাভ করে শাসকদল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ‘অভূতপূর্ব বিজয়’ অর্জন করে। এর মধ্যে রয়েছে ২২২ জন সরকারিদলের সরাসরি প্রার্থী, ৩টি জোট প্রার্থী এবং ১১টি জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের দ্বারা জয়ী আসন। তদুপরি ৬২ জনের মধ্যে ৩ জন ‘স্বতন্ত্র’ বাদে সকলেই সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য অথবা শাসকদলের বিভিন্ন স্তরের সদস্য। আওয়ামী লীগ তাদের ডামি প্রার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ হিসাবে সংসদের ২৯৮ জন নির্বাচিত সদস্যের মধ্যে ২৯৫ জন সরাসরি ক্ষমতাসীনদের সাথে যুক্ত। এমনকি ২০১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফলকেও ছাপিয়ে এটি এখন পর্যন্ত শাসকদলের সবচেয়ে বড় ‘জয়’। কিছু ক্ষেত্রে এটি ২০১৪ সালের নির্বাচনের অনুরূপ, যা বিরোধীরা বয়কট করেছিল। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অধিভুক্তি প্রমাণ করে যে, এটি একটি একদলীয় সংসদ।
নির্বাচনের পথটি এমন ঘটনা দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, যা ইঙ্গিত করে যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ছিল না। এর বিপরীতে গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিরোধীদের বিক্ষোভের পর থেকে হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে গ্রেফতার, বানোয়াট মামলায় বিরোধীদলগুলোর দেড় হাজারের বেশি সদস্যকে দোষী সাব্যস্ত করা, রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিদের নির্বাচনে যোগ দিতে বাধ্য করা, জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগি ইত্যাদি ঘটনা ঘটে। ক্ষমতাসীনদের পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থনে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করা এবং দলীয় সদস্যদের তাদের সীমালঙ্ঘনের জন্য দায়মুক্তি নিশ্চিত করার মতো ঘটনা এটি প্রকাশ করে যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কোনোভাবেই একটি শক্তিশালী বিরোধিতার মুখোমুখি হতে চায় না।
প্রক্রিয়াটির ন্যায্যতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। নির্বাচনের দিন ব্যালট স্টাফিং এবং অন্যান্য ধরনের অনিয়মের সাক্ষী হলেও নির্বাচন কমিশন প্রায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভোট বন্ধ হওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করে যে, ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ২৮ শতাংশ, কিন্তু তার সহকর্মীরা এটি ৪০ শতাংশের কাছাকাছি বলে উল্লেখ করার পর তিনি অবিলম্বে এ বিবৃতিটি প্রত্যাহার করেন। অথচ সকাল থেকে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ভোটারদের অনুপস্থিতি ভোট কেন্দ্রে একবারেই কম, কিছু কেন্দ্র একেবারে খালি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া সারা দিন নির্বাচন কমিশনের পর্যায়ক্রমিক সরবরাহের সাথে সংখ্যাটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। স্থানীয় সময় দুপুরে ভোটের প্রথম চার ঘণ্টায় ১৮.৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে দাবি করা হয়। দ্বিতীয় অফিসিয়াল গণনা তিন ঘণ্টা পর সরবরাহ করা হয়, যা ছিল মাত্র ২৬ শতাংশের বেশি। এক ঘণ্টা পরে যখন ভোট বিকাল ৪টায় বন্ধ হয়ে যায়, নির্বাচন কমিশনের ২৮ শতাংশ ভোট দেওয়ার মূল দাবিটি এক ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ করে ১৪ শতাংশ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক মনে হয়।
পেছনের ইতিহাস
বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। এ নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নেয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল হিসেবে ওই সময়ে দেশে আওয়ামী লীগের বিকল্প ছিল না- এমন একটি বাস্তবতায় যে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে শতভাগ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনেই যে আওয়ামী লীগ জয়ী হতো, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনে ২৯টি দল অংশগ্রহণ করে। বিজয়ী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) পায় ২০৭টি আসন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (মালেক) ৩৯, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (মিজান) ২, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ৮, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ ২০, অন্যান্য দল ৮ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হন ১৬টি আসনে। এ নির্বাচনটি হয়েছিল দেশের একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং তখন ক্ষমতায় জিয়াউর রহমান। ওই নির্বাচনটি যে শতভাগ প্রভাবমুক্ত ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়।
তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে। তখন রাষ্ট্রক্ষমতায় সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ। নির্বাচনে তার দল জাতীয় পার্টি পায় ১৫৩টি আসন। এর বাইরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭৬, জামায়াতে ইসলামী ১০, অন্যান্য দল ২৯, স্বতন্ত্র ৩২। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ নির্বাচনটিও শতভাগ প্রভাবমুক্ত ছিল না বলে মনে করা হয়। তবে তৎকালীন সরকার চাইলে আরও বেশি আসনে তাদের দলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে আনতে পারতো। কিন্তু এরশাদ সেই পথে না গিয়ে অন্তত সরকার গঠনের মতো আসনেই সন্তুষ্ট থেকেছেন।
চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই বছরের মধ্যে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ। এটি ছিল সাজানো নির্বাচন। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ  বিএনপি জামায়াত নির্বাচন বর্জন করে। এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জাতীয় পার্টি ২৫১টি আসনে জয় পায়।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরে প্রথমবারের মতো তুলনামূলকভাবে ভালো এবং গ্রহণযোগ্য ভোট হয় ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি, জাতীয় পার্টি ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি আসনে জয় পায়।
কিন্তু এরপর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনী ব্যবস্থা আবারও ধাক্কা খায়। ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচনটি হয় একতরফা। সারা দেশে এ নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এখনো খারাপ নির্বাচনের উদাহরণ দিতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনের কথা বলে। কিন্তু এটিও বাস্তবতা যে, এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদেই সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ একটি খারাপ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত সংসদে একটি ভালো নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিধান করা হয়।
১৯৯১ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এক ধরনের কেয়ারটেকার সিস্টেমে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯৬ সালের ১২ জুন। এদিন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হেরে যায়। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনটি যে প্রভাবমুক্ত এবং নিরপেক্ষ ছিল, তার প্রমাণ দেশের প্রধান দুই দলের ভোট পাওয়ার অনুপাত। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৬টি এবং বিএনপি ১১৬টি আসন। তৃতীয় দল হিসেবে জাতীয় পার্টি পায় ৩২টি আসন।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যায়। আবার ক্ষমতায় আসে বিএনপি। তারা পায় ১৯৩টি আসন। আর আওয়ামী লীগ ৬২টি। দেখা যাচ্ছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিরোধীদল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে।
দেশের উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দুই বছর পিছিয়ে যায়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে পুনরায় বিএনপি হেরে যায় এবং ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি তথা চারদলীয় জোট সরকারের আমলের নানা কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ থাকলেও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশের অন্যতম প্রধান দল মাত্র ৩০টি আসনে জয়ী হয়েছে এটিও স্বাভাবিক কিনা, সে প্রশ্নও আছে। তবে এটা ঠিক যে, ২০০৮ সালের নির্বাচন শতভাগ অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও চাপমুক্ত হলেও বিএনপি হয়তো বা হেরে যেত এবং আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করতে পারত।
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাটি বড় আকারে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে মূলত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ নির্বাচনে ২৩৪টি এবং তাদের শরিক জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসনে জয় পায়। নির্বাচনের এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও তারা মাত্র ৬টি আসনে জয়লাভ করে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পায় ২৫৮টি আসন। যত বিতর্কই থাকুক, বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান দল মাত্র ৬টি আসন পাবে, এটি খুব স্বাভাবিক ঘটনা নয়!
প্রশ্ন হলো, ১৯৯১ সালে দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা চালুর পরে যে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে একটি তুলনামূলক ভালো নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছিল, মাঝখানে এসে সেই পদ্ধতি বাতিল করে কি আরেকটি উত্তম পদ্ধতি চালু করা গেছে? যদি না হয়, তাহলে নির্বাচনী ব্যবস্থাটি নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে; দেশ যে নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে এ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করার ঘটনার কি কোনো দায় নেই?
নির্বাচনকে কার্যকর করতে হলে
আবার পূরনো প্রশ্ন, অর্থাৎ এ পর্যন্ত যে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে সরকারের বদল কিংবা সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার বাইরে আর কী হয়েছে? সংসদীয় গণতন্ত্র শক্তিশালী করা তথা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে যে নির্বাচনী ব্যবস্থাটি অধিকতর শক্তিশালী হওয়ার কথা ছিল, তার বিপরীতে কেন এ ব্যবস্থাটি দুর্বল করা হলো? বিতর্কিত করা হলো?
২০১১ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট একটি ‘নির্বাচিত সরকারকে একটি অনির্বাচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য বাধ্যতামূলক করে একটি নতুন সংসদ নির্বাচনের তত্ত্বাবধানে তার মেয়াদ পূর্ণ হলে অবৈধ’ বলে আদেশ দেয়। তবে বিএনপি ঘোষণা করে যে, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ এখনো বিদ্যমান। এক্ষেত্রে যুক্তি দেখানো হয় যে, যে সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দেয়া হয়, সেটির বৈধতার জন্য গণভোটের প্রয়োজন ছিল। এ গণভোট না করায় সংশোধনীটি বৈধ হয়নি। উচ্চতর আদালত বিষয়টি আইনিভাবে দেখলে এ সংশোধনী বাতিল হয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বহাল করতে পারে।
গণতন্ত্র সূচকে অব্যাহত অবনতি
১৬৭টি দেশ ও অঞ্চল নিয়ে ২০২৪ সালে গণতন্ত্র সূচক তৈরি করে দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। এ গণতন্ত্র সূচকে গতবারের তুলনায় এবার দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭৫তম। আর বাংলাদেশ রয়েছে ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ ক্যাটাগরিতে। লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশ করা ২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে (ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ একতরফা নির্বাচন হয় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। এ রিপোর্টটি প্রকাশ করা হবে ২০২৫ সালে। ধারণা করা হচ্ছে সেই রিপোর্টে বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার ব্র্যাকেটে চলে যাবে। সূচকে প্রতিটি দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে চারটি ভাগে ভাগ করেছে ইআইইউ। সেগুলো হলো পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, সরকারের কার্যকারিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিকদের স্বাধীনতাÑ এ পাঁচটি ধাপে প্রাপ্ত নম্বর বা স্কোরের ওপর ভিত্তি করে সূচকে দেশগুলোর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার হালনাগাদ অবস্থা মূল্যায়ন করা হয়। ২০২২ সালের ইআইইউর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশ ৭৩তম অবস্থানে ছিল। আর ২০২৩ সালের সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে বাংলাদেশ এখন ৭৫তম অবস্থানে। ইআইইউ বলছে, সর্বশেষ ২০০৬ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধরন ছিল ‘ত্রুটিপূর্ণ’। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের গণতন্ত্র টানা ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ তকমা পেয়ে আসছে।
হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বলতে ইআইইউ এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। এ শাসনব্যবস্থায় বিরোধীদলের ওপর সরকারের চাপ থাকে। বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয়। সাংবাদিকদের চাপ দেওয়া ও হয়রানি করা হয়। দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার, দুর্বল আইনের শাসন, দুর্বল নাগরিক সমাজ এমন শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
ফ্রিডম হাউস সূচকেও উন্নতি নেই
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম হাউস’ এর প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। সম্প্রতি তাদের ‘ফ্রিডম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। ২০২৩ সালে রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতায় ১৯৫টি দেশ ও ১৫টি অঞ্চলের পরিস্থিতি ফ্রিডম হাউসের এ প্রতিবেদনে উঠে আসে।
ফ্রিডম হাউসের এবারের সূচকেও বাংলাদেশ ‘আংশিক স্বাধীন’ শ্রেণিতে রয়েছে। রাজনৈতিক অধিকারচর্চা ও নাগরিক স্বাধীনতায় বাংলাদেশের সম্মিলিত স্কোর ৪০। এর মধ্যে রাজনৈতিক অধিকারচর্চার ক্ষেত্রে স্কোর ১৫, নাগরিক স্বাধীনতায় ২৫। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, ভুটান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো স্কোর করেছে। তাদের স্কোর যথাক্রমে ৬৬, ৬৩, ৬২ ও ৫৪।
ওই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অধ্যায়ে বলা হয়, বিরোধীদল এবং এর সঙ্গে যুক্ত বলে যাদের ধারণা করা হয়-তাদের, গণমাধ্যম এবং নাগরিক সমাজকে অব্যাহত হয়রানির মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা সুসংহত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি অবাধে ঘটছে এবং রাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে দুর্নীতিবিরোধী প্রয়াসকে দুর্বল করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্বলতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তারা দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবনতি হয়েছে।
ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েন
বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি বরং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক টানাপড়েনেও এটি একটি ইস্যু হয়ে উঠেছে। ভারত, চীন এবং রাশিয়া বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিয়েছে এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের দাবিকারী পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করেছে। শেখ হাসিনার বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছে দেশগুলো। এমনকি চীন তার সরকারকে ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
অন্যদিকে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত হাসিনা সরকারের প্রধান সমর্থক। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের আগের নির্বাচনের সময় এর সমর্থন হাসিনার শাসনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সহায়ক ছিল। ভারত শুধু এবার একই ভূমিকা পালন করেনি বরং জোর দিয়েছিল যে যুক্তরাষ্ট্র একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হাসিনাকে চাপ দেবে না।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও এর উন্নয়নের অন্যতম শর্ত হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বাংলাদেশের বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে জানায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া।
এখন একতরফা নির্বাচনের পর আবার কৌশলগত টানাপড়েনের সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। ভারত চাইছে বাংলাদেশ থেকে চীনা প্রভাব মুছে দিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিজেদের প্রভাব সৃষ্টি করতে। সেটি হতে দিতে চায় না চীন। এ টানাপড়েনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। আমেরিকান সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ট লুও বাংলাদেশে আসছেন। এখন বাংলাদেশ কর্তৃত্ব¡বাদী সরকারের হাতে পড়ে কৌশলগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, যার পরিণতি ভালো কিছু হবে বলে মনে হচ্ছে না।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।