রেজি : ডিএ ৫১৭ ॥ ৬৩ বর্ষ : ৭ম সংখ্যা ॥ ঢাকা, শুক্রবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ ॥ ১ জিলকদ ১৪৪৫ হিজরী ॥ ১০ মে ২০২৪

॥  হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
বিরোধীদল নিরপেক্ষ-নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। আন্দোলন তীব্রতা পেয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে। কিন্তু সরকার দাবি মানেনি। এমনকি দাবি মানার ইঙ্গিত দিয়ে সংলাপের আহ্বানও জানায়নি। উল্টো আন্দোলন দমনে সরকার নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে। নির্বিচারে বিরোধীদলের বিক্ষোভ-সমাবেশে গুলি, গ্রেফতারের পর অকথ্য নির্যাতন, গুম, খুনের ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশিত হয়েছে। বিরোধীদল গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি জানিয়েছে। কিন্তু তদন্তের বদলে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দায়মুক্তি এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরস্কৃত করার ঘটনা ঘটেছে। পর্যবেক্ষকদের এমন দাবি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনের পর ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাস্টেস কন্ট্রোল অফিস বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ ব্যক্তি যারা, তাদের ভাষায় মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এ নিষেধাজ্ঞায় ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ছয় কর্মকর্তা হচ্ছেন- চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক), বেনজীর আহমেদ (সাবেক র‌্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন ২০১৯) এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)। এছাড়া এতে বলা হয়, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার জন্য বেনজীর আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, যার ফলে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।
এ নিষেধাজ্ঞার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আগের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রেখে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে কাজ করে এবং তাদের মনোবলের ঘাটতি না হয়, সেজন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের প্রশংসা করার সাথে সাথে পুরস্কৃত করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। তারপর গায়েবি মামলা, অজ্ঞাত আসামি হিসেবে বিরোধীদলের নেতাদের গ্রেফতার ও মিছিল-মিটিংয়ে গুলির ঘটনা ঘটলেও গুম ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা অনেক কমেছে। বিরোধীদল নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও সরকারের দমন-পীড়নের মোকাবিলায় শক্ত প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বলে মনে করেন পর্যক্ষেকমহল।
সরকারের দাবি বিরোধীদলের আন্দোলনের ডাকে জনগণ সাড়া দিচ্ছে না। বিরোধীদলের দাবি সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তারা মাঠে দাঁড়াতে, এমনকি শান্তিতে নিজের ঘরেও ঘুমাতে পারছে না। কিন্তু রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর মূল কারণ বিরোধীদলের অনৈক্য। সরকার বিভিন্ন ভয়, প্রোপাগান্ডা, অর্থ, অস্ত্র, নারী ও বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবহার করে বিরোধীদলের মধ্যে অনৈক্যের যে দেয়াল তুলেছে, তা দিন দিন আরো বেড়েছে। অথচ তা ভাঙার সাহস বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং আন্দোলনরত ডান-বামপন্থী অন্যান্য প্রায় ৭০টি দল সরকারের বিরুদ্ধে দেখাতে পারেনি। অথচ ৬৫টি দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে জনগণের আন্দোলনের বিজয় কোনো শক্তিই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এবার দেখা যাক কার দাবি সঠিকÑ সরকার, বিরোধীদল না পর্যবেক্ষকদের।
সরকারের দাবি সঠিক হলে জনগণ কেন ভোটবিমুখ
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনার মধ্য দিয়ে ২০০৮ সালে ১/১১-এর সরকারের হাতে দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকারের যে বিষবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে, তা ধীরে ধীরে শুধু গভীরে শিকড়ই শক্ত করেনি, মহীরুহরূপে ডালপালা ছড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে পরিচালিত সরকারগুলো কখনোই স্বীকার করে না- জনগণ তাদের পক্ষে নেই। এ প্রসঙ্গে রাজনীতি বিশ্লেষকরা উদাহরণ হিসেবে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামার একটি মন্তব্য প্রায়ই উল্লেখ করেন। রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামাকে এক পশ্চিমা সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন- ‘আপনার সমর্থকের সংখ্যা বর্তমানে কত শতাংশ হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? প্রতি উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ৮০ শতাংশ। ২০ শতাংশ লোক আমার বিরোধীপক্ষে রয়েছে বলে মনে করা হয়। তবে বিরোধীপক্ষের ওই ২০ শতাংশও কিন্তু আমাকে ভয় পায় বিধায় একদম নিশ্চুপ হয়ে গেছে, আমার বা আমার শাসনের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস তাদের নেই।’ এর ব্যতিক্রম অন্যান্য দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকারের মধ্যে দেখা যায় না। তাই তাদের কণ্ঠে একই ধ্বনির প্রতিধ্বনি শোনা যায়, ‘বিরোধীদলের পক্ষে জনগণ নেই।’ সম্ভব তারা বিরোধীদল ও তাদের সমর্থকদের জনগণের কাতারে ফেলতে চান না। তাই তো সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন বলা হয়, ‘দেশের অতি বাম, অতি ডান সবই এখন এক হয়ে গেছে। এ দুই মেরু এক হয়ে সরকারকে উৎখাত করার কথা বলছে।’  শোনার পরও তারা বিরোধীদলের পক্ষে জনগণকে দেখতে পান না।
গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বর্জনের বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে জনগণ ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে। এ আন্দোলন শুধু একটি ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কোনো হরতাল, ধর্মঘট, মিছিল, পিকেটিং, মহড়া নির্বাচনে ভোটদানের দিন বিরোধীদল দেখায়নি। উল্টো ক্ষমতা দখলকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে ভোটকেন্দ্রে যেতে চাপ দিয়েছে। কেউ ভোটকেন্দ্রে না গেলে চাকরিসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু তারপরও বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোর মতো ডামি নির্বাচনেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি- এ তথ্য সরকার অনুগত নির্বাচন কমিশনেরই। বিরোধীদলের দাবি, ৫ শতাংশ মানুষও কেন্দ্রে যায়নি। পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, ১৫ শতাংশ মানুষ কেন্দ্রে গিয়েছে ভোট দিতে। এখন হলো, জনগণ কার ডাকে সাড়া দিয়েছে, বিরোধীদল না ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী লীগের?
ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক কেন আসছে না
‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষকদের নীতি এ যুগের কর্তৃত্ববাদী শাসকদেরও নিপীড়নের হাতিয়ার। বিরোধীদলগুলোর মধ্যে এজেন্ট নিয়োগ, কালো টাকা, সন্দেহ, সংশয় সৃষ্টি, পুরোনা মীমাংসিত স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ দ্বন্দ্ব, ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে মতবিরোধ; এমনকি এবার রাজনীতিতে একটি নতুন অনুসঙ্গ যোগ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। তা হলো- নারীর অপব্যবহার। এ প্রসঙ্গে বিশ্লেষকরা বলেন, এ যেন আবার ঔপনিবেশিক ধারার শাসন কর্তৃত্ববাদ ফিরে আসছে। কথিত আছে ব্রিটিশরা উপমহাদেশের শাসন দীর্ঘস্থায়ী করতে একটি জরিপ চালিয়েছিল, মুসলমান, হিন্দু ও শিখ- এ প্রধান তিন ধর্মের ব্যক্তি রাজনীতিতে যাদের প্রভাব আছে বশে আনা যায়। এতে তারা যে ফলাফল পেয়েছে, তা হলো- ‘কথিত মুসলমান নেতা কাবু নারীর ফাঁদে, হিন্দুরা বশ টাকা ও পদে এবং শিখদের প্রিয় মদ।’ এজন্য দেখা যায়, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সেক্যুলার মুসলমানরা রংমহলে হিন্দু জমিদার, ইংরেজ সাহেবদের যখন মত্ত থাকতেন, আলেমরা তীব্রতর আন্দোলন গড়ার অভিযোগে আন্দামানের কালাপানিতে নির্বাসিত হতেন নয়তো ফাঁসির মঞ্চে শাহাদাতের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে ওপরের সুন্দর জীবনের বাসিন্দা হতেন। এবারের ডামি নির্বাচনের আগেও দেখা গেছে বিরোধী প্রতিবাদী ও প্রভাবশালী নেতারা কারাগারে অন্ধকারে নয়তো জীবনবাজি রেখে যখন রাজপথে লড়ছেন, ঠিক তখনই দেখা গেছে কতিপয় নেতা মধুচক্রে মজে জনগণের কথা ভুলে গেছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এদের কারণেই ইতিবাচক ঐক্য প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
মূলধারার দলগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ঐক্যের কথা বললেও লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু করছে না। অবশ্য বিরোধীদলের একাধিক নেতার দাবি, তারা ঐক্যবদ্ধ আছেন, কিন্তু রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে এক সাথে কর্মসূচি ঘোষণা এবং এক মঞ্চে তা পালনের ডাক আসছে না।
বিরোধীদল, আলেম ও নাগরিক সমাজের দাবি
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা সরকারের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করে বলেন, তারা কোনো ষড়যন্ত্র করছেন না, কাউকে ক্ষমতাচ্যুত করাও তাদের লক্ষ্য নয়। তারা জনগণের দাবি পূরণে তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং একটি নির্বাচিত সরকার দেশবাসীকে উপহার দেয়ার জন্য আন্দোলন করছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের পতনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্র নয়, বরং আন্দোলনে একাত্ম হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্র করছে না। বরং আন্দোলনে একাত্ম। ডান-বাম সবাই তারা প্রকাশ্যে বলছে, এ সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়েছে। সেজন্যই সরকার জনগণকে ভয় পায়। কারণ জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য শত শত বছর ধরে আন্দোলন করেছে। আবারও তারা যেকোনো স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াবে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকার গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এ আগ্রাসী শক্তি ও আধিপত্যবাদী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশে যারা সরকার পরিচালনা করছে, তাদের কাছে জনগণ নিরাপদ নয়। মানবতা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ হুমকির মুখে। বর্তমান সরকার যখনই এদেশের ক্ষমতায় আসে, তখনই বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, ব্যাংক লুট হয়, সকল অন্যায় বেড়ে যায়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়ে, সীমান্তে হত্যা বেড়ে যায়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে। কালচারাল আগ্রাসন পুরো জাতিকে গ্রাস করে নেয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের চেষ্টায় এদেশ ব্রিটিশ কলোনি থেকে মুক্ত হয়েছে আর বর্তমান সরকার এদেশকে আবারো পার্শ্ববর্তী দেশের কলোনি বানিয়েছে। তাই বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য, এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আরেকটি স্বাধীনতা-সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে পড়েছে।’
 দেশের ইসলামপন্থী সব রাজনৈতিক দল এবং রাজনীতি সচেতন দলনিরপেক্ষ আলেমসমাজ আজ ঐক্যবব্ধদ্ধ। হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হক দীর্ঘ কারাভোগ করে মুক্তির পর ছাত্রজনতার সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি ছোট-খাটো মতপার্থক্য ভুলে ইসলামপন্থী সকল আলেম ও রাজনৈতিক দলকে এক মঞ্চে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামের নেতার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে অরাজনৈতিক সংগঠন ওলামা-মাশায়েখ পরিষদের  নেতা মাওলানা ড. খলীলুর রহমান মাদানী সাংবাদিকদের কাছে সকল আলেমের মুক্তি দাবি ও জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন।
নাগরিক সমাজও চায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। গণতন্ত্রের জন্য বিরোধীদল ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকা খুবই জরুরি। এটা সরকারের জন্যও প্রয়োজন। ২০১৪ সালের পর সংসদ ও সংসদের বাইরে কার্যত বিরোধীদল নেই। অথচ দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধীদলের কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় ঐক্য সেই চাহিদা পূরণ করবে। নতুন এ ঐক্য সরকারের জন্য ভীতির কারণ হয়ে উঠেছে। ‘আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় ঐক্য হবে না’- সরকারের এমন প্রচারণার মধ্য দিয়েই ভীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হলে এবং জনগণকে শামিল করতে পারলে সরকারকে তারা ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। জনগণ গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চায়। জাতীয় ঐক্য সেই দাবিতে সোচ্চার।  সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে দাবি মানতে বাধ্য করা অসম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
একই শক্তি আন্দোলনেই মুক্তি
যুগে যুগে দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন গণআন্দোলনের মাধ্যমেই হয়েছে। এ দেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করে পর্যবেক্ষকরাও মনে করেন, সব বিরোধীদল ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক মঞ্চে এলে অতীতে কোনো সরকারই টিকতে পারেনি। গণদাবির কাছে নতি স্বীকার করে পদত্যাগ করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে বাধ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগের এ ইতিহাস অজানা নয়, তাই তারা চায় যেকোনো মূল্যে অনৈক্য টিকিয়ে রেখে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে। বিরোধীদল যেকোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দৃঢ়সংকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে তাদের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারেনি। কারণ ঐক্যই শক্তি, আন্দোলনেই শক্তিÑ এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই। 

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।