‘গরিব আওয়ামী লীগাররা কীভাবে তিন বছরে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হলেন’

সোনার বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ সরকারের বিদ্যুৎ প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, যত টাকাই বিদ্যুৎ প্রকল্পে ভর্তুকি দেয়া হোক না কেন বিদ্যুৎ আমরা পাব না। কারণ বিদ্যুতের মাঠে মাত্র দুজন খেলোয়াড়। এর মধ্যে সামিট গ্রুপ হচ্ছে ম্যারাডোনা আর ওরিয়ন গ্রুপ হচ্ছে মেসি। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে শেয়ারবাজারে ধস, রাজনৈতিক বিবেচনায় বেসরকারি ব্যাংক অনুমোদের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে তার প্রশ্ন, গরিব আওয়ামী লীগাররা কীভাবে তিন বছরে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হলেন? গত ১৯ মার্চ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রসীমা জয় করছি। তবে সীমান্ত জয় করতে পারছি না কেন? তিস্তার পানি পাই না কেন? তিনি বলেন, সরকারের পছন্দের লোককে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব দেয়ায় মাত্র দুটি পরিবারের কাছে আমাদের বিদ্যুৎ খাত বন্দি আছে। সরকার চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ হাতে নিলেও ওরিয়ন গ্রুপকে এক হাজার ২০০ ও সামিট গ্রুপকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট-ই কেবল দুটি গ্রুপকে দেয়া হয়েছে। এ দুটি গ্রুপ এখন বিদ্যুতের মাঠে ম্যারাডোনা-মেসি। চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দায়িত্ব আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগাভাগি করে দিলে বিদ্যুতের এই দৈন্যদশা হতো না দাবি করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের পর চীনে আর কোনো ভাঙা মেশিন নেই। সব ভাঙা মেশিন বাংলাদেশে এক্সপোর্ট করেছে তারা। শেয়ারবাজারের দুরবস্থার ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, ঠিক এক বছর আগে এই সংসদে শেয়ারবাজারে ‘দরবেশ’-এর কথা বলেছিলাম। সেই দরবেশ ও মুরিদদের এখনো বিচার হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী তাকেই চেয়ারে বসিয়েছেন। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার রক্ষার জন্য অনেক কিছুই করা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা কিনে রাস্তায় বসানো হয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতাদের বাসায় সিসি ক্যামেরা বসালে টাকা কোথায় গেছে তা জানা যেত। নতুন কোনো আইন পাস করে শেয়ার কালপ্রিটদের বিচার করা যায় কি না, তা ভেবে দেখার অনুরোধ জানান পার্থ। মহাজোট সরকারকে ‘ব্যাংকারদের সরকার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা জানতাম আওয়ামী লীগ গরিব মানুষের সরকার। এখন দেখছি ব্যাংকারদের সরকার। তিনি বলেন, একটি ব্যাংক চালু করতে ৪০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়। একজন পরিচালককে দিতে হয় ৩২ কোটি টাকা। কিন্তু সরকারি দলের যে লোকদের ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের নির্বাচনী হলফনামায় লাখ টাকার হিসাব দেয়া ছিল।

তারা তিন বছরে কীভাবে ৪০০ কোটির টাকার মালিক হলেন? তিনি বলেন, মানুষ দুর্নীতি করে লুকিয়ে লুকিয়ে। এখন দেখছি এ সরকারের দুর্নীতি খুল্লাম খুল্লা অবস্থা। তিনি বলেন, সৌদি কূটনীতিক হত্যার পর আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন এতে সম্পর্কের কোনো অবনতি হবে না। তাহলে তিনি সৌদি ভিসা পেলেন না কেন? এখনো সময় আছে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সেখানে কাউকে পাঠান।

নইলে সৌদি আরব থেকে শ্রমিক ফেরত পাঠিয়ে দিলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে আন্দালিব বলেন, অবিশ্বাস ও রেসপেক্টের অভাবের কারণে সব দল মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। সেই অবিশ্বাস ও রেসপেক্টের অভাব আগের চেয়ে আরও বেড়েছে। সুতরাং দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন সম্ভব নয়।