সংবাদ শিরোনামঃ

সরকারের শেষ রক্ষা হবে না ** চাণক্যদের নোংরা খেলা ** ১০০ বছরের জ্বালানি সম্পদ হারিয়েছে বাংলাদেশ ** আফগানিস্তানে মতৈক্যের সরকার এবং শান্তির প্রত্যাশা ** সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণে মানুষ ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ** কুরবানির পশুর চামড়া ক্রয় বিক্রয়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন ** লতিফ সিদ্দিকী বনাম কাদের সিদ্দিকী ** জিতেছে চাঁদ দেখে পক্ষ ** ঝিনাইদহে সরকারি বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে আওয়ামী লীগ নেতার মার্কেট ** কবি ফররুখ আহমদের শিশু কবিতায় বিচিত্র পাখি **

ঢাকা, শুক্রবার, ২ কার্তিক ১৪২১, ২১ জিলহজ ১৪৩৫, ১৭ অক্টোবর ২০১৪

হারুন ইবনে শাহাদাত

বিশ্বখ্যাত কবি  শেখ সাদীর কবিতা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মুখে মুখে আজও উচ্চারিত হচ্ছে কাব্যরসে তপ্ত মানব হৃদয় সিক্ত করতে। শেখ সাদী ইরানের সিরাজ নগরে ১১৮৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পুরো নাম আবু মোহাম্মদ মুসলেউদ্দীন বিন আব্দুল্লাহ সিরাজী। কিন্তু তিনি তার লেখক নাম শেখ সাদী হিসেবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিত।  কেন তিনি শেখ সাদী ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন, এ সম্পর্কে তাঁর জীবনী লেখকগণ বলেন, তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ সিরাজী ছিলেন তৎকালীন পারস্যের সিরাজনগরের শাসক আতাবিক ই ফারিস সাদ ইবনে জঙ্গীর একজন বিশ্বস্ত কর্মচারী। শৈশবই তিনি তার পিতাকে হারান। ন্যায়পরায়ণ শাসক সাদ ইবনে জঙ্গী তাঁকে লালন পালন করেন। তীè মেধা ও নানান গুণাবলীর কারণে তিনি শেখ সাদীকে  ভালোবাসতেন। তাঁর সুদৃষ্টি না পেলে হয়তো শেখ সাদী বাল্যকালে লেখা পড়া করারই সুযোগ পেতেন না। শেখ সাদী এ মহৎপ্রাণ বাদশাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই তাঁর নামটিকে নিজের লেখক নাম হিসেবে গ্রহণ করেন।

সংগ্রামী জীবন মানেই অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। এ মহান কবির জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ভরা তাঁর জীবন। শৈশবে নিজ শহর সিরাজে লেখাপড়া শেষ করে তিনি চলে আসেন সে সময়ের অন্যতম বড় শিা প্রতিষ্ঠান বর্তমান ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি ইসলাম ও বিজ্ঞান, আইনশাস্ত্র, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও আরবি সাহিত্যের ওপর ব্যাপক অধ্যয়ন ও গবেষণা করেন। ১১৯৫ সাল থেকে নিয়ে ১২২৬ সাল পর্যন্ত তিনি নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করে একাডেমিক শিক্ষা অর্জন করেন। তারপর বাস্তব জ্ঞানার্জনের জন্য বের হয়ে পড়েন বিশ্বভ্রমণে। খুব কাছ থেকে দেখা মানুষের জীবনের সুখ, দুঃখ, হাসি কান্না, আবেগ অনুভূতিগুলো তিনি তুলে ধরেন তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে। শেখ সাদীর সাহিত্যের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি কখন কোনো পরিস্থিতিতে কবিতা রচনা করেছেন, গল্পের ঢংয়ে তিনি তা বিবৃত করেছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত দু’টি গ্রন্থ হলো: ১. বোস্তাঁ (বাগান) ২. গুলিস্তাঁ ( গোলাপ বাগান)।

 à¦¬à§‹à¦¸à§à¦¤à¦¾ রচনা করেন ১২৫৭ সালে এবং গুলিস্তাঁ রচনা করেন ১২৫৮ সালে। মহাকাব্যের ব্যঞ্জনায় তিনি ন্যায়বিচার, উদারতা, মধ্যমপন্থাকে উপস্থাপন করেছেন বোস্তাঁ কাব্যগ্রন্থে। একজন সত্যিকার মানুষের আচার আচরণ কেমন হওয়া উচিত বোঁস্তাতে তিনি তা তুলে ধরেছেন সুন্দর ও অনুপম উপমার মাধ্যমে। যেমন : ‘তাম্মুল দর আইনায়ে দিল কুলি/ ছাফাই বতাদরিজে হাছেল কুনি/ মাগার বুয়ে আজ ইশকে মস্তান কুনাদ,/ তলবগারে আহাদাস্তাত কুনাদ/’ অর্থাৎ তোমার মনের আয়নায় ফেলে নিজের ছবি / তারপর গবেষণায় মগ্ন হলে হে কবি/ দূর হবে  তোমার মনে কালিমা,/ দেখবে চোখে বিশাল নীলিমা। কিন্তু যদি মগ্ন থাক তোমার বরের ধ্যানে / মহবতে তাঁর মনের পাখায় ওড়বে সপ্ত আসমানে। অথবা ‘পাছে খোছ পান্দ আছুদা দরজীরে গেল, / কে খোছ পান্দ জুমদাম আছুদা দিল। গমে খেশদর জেন্দেগী খোরশে খেশ,/ ব- মোরদানা পরজাহাদ আজ হেরচে খেশ। অর্থাৎ  তোমার কারণে তোমার পাশের জীবিতরা না পায় ব্যথা যদি / কবরে তুমি শান্তিতে থাকবে নিরবধি,/ তোমার মৃত্যুর পর তোমার ধনে থাকবে যারা সুখে / মত্ত হয়ে ভোগে কাঁদবে না আর তোমার দুখে/’  শেখ সাদীর বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ দুটিই গদ্য পদ্যের মিশ্রণে রচিত। একজন জীবনী লেখক এ সম্পর্কে লিখেছেন,‘ He was particularly known for the wry wit he injected into his poems. উইট সম্পর্কে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তার সাহিত্যকোষ গ্রন্থে লিখেছেন,‘ বর্তমানে ‘উইট’ এবং ‘হিউমার’ উভয়কেই  কমিকের প্রজাতি রূপে বিবেচনা করা হয়; কমিক হচ্ছে পাঠক শ্রোতার চিত্তে উৎফুল্লতা, কৌতুক ও হাস্যরস উদ্রেকের জন্য সাহিত্যের যাবতীয় উপাদান। ‘উইট’ ও ‘হিউমার’ কিন্তু পূর্বতন সাহিত্য সমালোচনার ইতিহাসে বর্তমানের চেয়ে ভিন্নতর অর্থ বহন করেছে। এক সময় ‘উইট’ বলতে  বুঝাতো ‘বুদ্ধি’, ‘উদ্ভাবনমতা’। এই অর্থের আভাস এখনো পাওয়া যায় half wit ( হাবা) nit wit ( জড়বুদ্ধি) প্রভৃতি শব্দের মধ্যে। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে উইট বলতে বোঝাতো সাহিত্যের বিশেষ বুদ্ধিদীপ্ত উদ্ভাবনী মতাকে, প্রধানত অগতানুগতিক অভিনব চমক জাগানো উপমা নির্মাণের েেত্র।” শেখ সাদীর গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ মাঝে অনেক কাব্যাংশে ঊঢ়রমৎধস  এর বৈশিষ্ট্যও ল্য করা যায়। অত্যন্ত সংপ্তি বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গাত্ম, প্রশংসাসূচক, অথবা জ্ঞানগর্ভ মন্তব্যকে ইপিগ্রাম বলা হয়।  ইংরেজ কবি আলেকজান্ডার পোপ (১৬৮৮-১৭৪৪) এপিগ্রাম রচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

 à¦¶à§‡à¦– সাদীর জীবনী লেখকগণ তাঁর জীবনকে তিন ভাগে ভাগ করে আলোচনা করেছেন। ১. প্রথম পচিশ বছর তিনি শিক্ষা গ্রহণের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। ২. ত্রিশ বছর তিনি মানুষের বিচিত্র জীবনকে কাছ থেকে দেখতে প্রাচ্য, ভারতবর্ষ, দূর পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। ভ্রমণের সময় অব্যাহতভাবে লিখেছেন; কিন্তু তিনি ভ্রমণকাহিনী নয়, বিচিত্র অভিজ্ঞতার আলোকে সাহিত্য রচনা করেছেন। ৩. তিনি চৌদ্দবার পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেছেন।  শেষ জীবন তিনি তাঁর নিজ শহর সিরাজে অবস্থান করে সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে কাটিয়েছেন।

 à¦¶à§‡à¦– সাদী গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁর জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। এ ছাড়াও তাঁর তিনি লিখেছেন লিরিক বা গীতিকাব্য গ্রন্থ ‘গজলিয়াত’ ও দীর্ঘ গীতি কবিতা বা ওড গ্রন্থ ‘কাসিদা’। মোঙ্গলদের আক্রমণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাগদাদের করুণ অবস্থা  নিয়ে তিনি সে দীর্ঘ গীতি কবিতা লিখেছেন সেই সংকলনের নাম ‘কাসিদা’। তিনি আরবি ভাষাতেও কিছু সাহিত্য রচনা করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য গুলিস্তাঁ ও বোস্তাঁ ছাড়া তাঁর মূল্যবান অন্য সাহিত্যকর্ম এখন সংকলিত অবস্থায় পাওয়া যায় না।

ফারসি ভাষার কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে শেখ সাদী হলেন সেই সুভাগ্যবান লেখক যার লেখা সর্ব প্রথম ইউরোপের কোনো ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ গুলিস্তাঁ ১৬৫৪ সালে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তাঁর লেখার সম্পর্কে সাহিত্যসমালোচকদের অভিমত হলো,  Saadi’s prose style, described as “simple but impossible to imitate” flows quite naturally and effortlessly. Its simplicity, however, is grounded in a semantic web consisting of synonymy, homophony and oxymoron buttressed by internal rhythm and external rhyme. Iranian authors over the years have failed to imitate its style in their own language, how can foreigners translate it into their own language, no matter what language? (অর্থাৎ তাঁর গদ্য সাধারণ কিন্তু অন্তত; প্রকৃতির মতো অবলীলায় বহমান। এর  সহজ ভাষা প্রবাহের মাঝের বাগধারা, প্রতিশব্দ এবং অনুপ্রাসের  যথাযথ ব্যবহার ভিতরের ছদ্ম এবং বাইবের অন্তমিলকে করেছে তুলনাহীন। ইরানের লেখকগণ বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করেও তাকে অতিক্রম করতে পারেননি, বিদেশী লেখকগণ কি করে তাদের ভাষায়  শেখ সাদীর সাহিত্য অনুবাদ করবেন?)। বর্তমান এ আধুনিক পৃথিবীও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের হল রুমের প্রবেশ পথে তাঁর কবিতার  এ অংশ উদ্ধৃত করে:

Of one Essence is the human race,

Thusly has Creation put the Base;

One Limb impacted is sufficient,

For all Others to feel the Mace.

আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০০৯ সালের মার্চ মাসে ইরানের নববর্ষ ( নওরোজ) উপলে সে দেশের জনগণকে ভিডিও টেপের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান, এ শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি কবি শেখ সাদীর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গুলিস্তাঁ থেকে এ কাব্যাংশ কোড করেন।  তিনি তার ভিডিও বার্তায় বলেন, “There are those who insist that we be defined by our differences. But let us remember the words that were written by the poet Saadi, so many years ago: ‘The children of Adam are limbs to each other, having been created of one essence.”

( সব মানুষ মিলে এক জাতি যেমন এক গাছে নানান পাতা

 à¦­à§à¦²à§‡ কি গেছ তোমরা হজরত আদম তোমাদের আদি পিতা,

 à¦¦à§‡à¦¹à§‡à¦° এক অঙ্গে হলে ব্যথা সারা দেহ ব্যথায় হয় নীল

 à¦¸à§‡ নয় তো মানুষ অন্য মানুষের ব্যথায় যার না কাঁদে দিল। )

এ মহান কবি তাঁর মৃত্যু দিবস নিয়ে জীবনী লেখকদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ বলেছেন তিনি ১২৮৩ সালে আবার কারো মত তিনি ১২৯২ সালে সিরাজে ইন্তিকাল করেছেন।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।