সংবাদ শিরোনামঃ

নতুন কৌশলে আন্দোলনের মাঠে ২০ দলীয় জোট ** সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে বিএনপি ** ভরাডুবির আশঙ্কা আ’লীগে ** নেতানিয়াহুর জয় মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট ঘনীভূত করবে ** গণতন্ত্র ছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় না ** স্বাধীনতা হোক অর্থবহ ** আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মার্কিন দলিলপত্র ** আগৈলঝাড়ায় খাল বিল বেদখল ** গ্রেফতার নির্যাতন উপেক্ষা করে সারাদেশে হরতাল অবরোধ অব্যাহত ** রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা ** আমাদের স্বাধীনতার ৪৪ বছর **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ চৈত্র ১৪২১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৫

টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ থেকে পিছু হটছে না ভারত

বরাকের উজানে ছোট ছোট আরো ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মাণ হবে

॥ সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ॥
ভারতের বন উপদেষ্টা কমিটির তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ থেকে পিছু হটছে না ভারত। দেশটি বরং প্রস্তাবিত বাঁধটির উচ্চতা কমিয়ে নতুনভাবে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা নিচ্ছে। নতুন পরিকল্পনায় বরাকের উজানে ছোট ছোট আরো ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মাণ করবে তারা। এ ব্যাপারে দেশটির পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নতুনভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ভারতের সমগ্র এলাকা বিশেষ করে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের জনগণের বিশাল প্রতিবাদের মধ্যেও ভারতীয় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় টিপাইমুখ ড্যাম তৈরিতে ২০০৮ সালে পরিবেশগত অনুমতি দেয়। কিন্তু ২০১৩ সালের শেষ দিকে ভারত সরকারের বন উপদেষ্টা কমিটি টিপাইমুখ এলাকার গাছ কাটার আবেদন অনুমোদন করেনি। কারণ হিসেবে কমিটি বলেছে, অনুমতি দিলে এ এলাকার কয়েক লাখ গাছ কাটা পড়বে, বাসস্থান হারাবে বিশাল সংখ্যার বন্যপ্রাণী, আর উচ্ছেদ হবে কয়েক শ’ আদিবাসী পরিবার।

কিন্তু সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ভারত বাংলাদেশকে জানিয়েছে, তারা বাঁধ নির্মাণে নতুনভাবে পরিকল্পনা করছে। ভারতে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের ওই বৈঠকটি ছিল টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে গঠিত সাব গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক। বৈঠকে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ প্রকল্পে যৌথ সমীক্ষার জন্য বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত তথ্য দাবি করে তথ্য চাইলে ভারত জানায়, তারা বাঁধটির উচ্চতা কমিয়ে নির্মাণে নতুন পরিকল্পনা নিচ্ছে।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশকে জানানো হয় যে, ভারত টিপাইমুখ বাঁধের উচ্চতা কমিয়ে দিয়ে সেখানে ছোট ছোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নেবে। বরাকের উজানে তারা বাঁধের আকার ছোট করে আরো কয়েকটি ড্যাম নির্মাণ করবে। কিন্তু কোনোভাবেই ওই বৈঠকে বরাক নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণে পুরোপুরি বাতিলের কোনো ঘোষণা দেয়নি ভারত। এ ব্যাপারে দেশটি শিগগিরই বাংলাদেশকে বিস্তারিত তথ্য দেবে বলে প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে। ভারতের আগের পরিকল্পনায় রয়েছে যে দেশটি আন্তর্জাতিক সীমানার প্রায় ২০০ কিলোমিটার উজানে বরাক নদীর ওপর টিপাইমুখের ভাটিতে একটি ড্যাম নির্মাণ করবে। টিপাইমুখ ড্যাম নামে এ বাঁধটি ১৬৩ মিটার উঁচু হবে, যে কারণে পশ্চিম মণিপুরের বরাক ও ইরাং নদী এবং উত্তর মিজোরামে টিপাই নদীর প্রবাহপথে ৩১ হাজার ১০০ হেক্টর আবাদি জমি জলমগ্ন করবে বলে পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে। এই বাঁধের কারণে পশ্চিম মণিপুরের হমার ও জেলিয়াংগ্রং নাগা এবং উত্তর মিজোরামের কুকিসহ বিপুল আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়ে যাবে। এই জলমগ্নতার কারণে গাছপালা, প্রাণী ও পরিবেশের তি হবে। এসব বিবেচনায় এনে দেশটির বন বিভাগ বরাকের উজানে এমন বৃহৎ ড্যাম না বানিয়ে ছোট ছোট ড্যাম বানানোর পক্ষে মত দেয়।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাব গ্রুপের বৈঠকে এসব তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নয়াদিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্র দফতর পর্যায়ের আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গঠন করা সাব গ্রুপ। ২০১২ সালের ২৭ আগস্ট নয়াদিল্লিতে দুই দিনব্যাপী সাব-গ্রুপের প্রথম বৈঠকে বাংলাদেশ তথ্য চেয়েছিল। অবশ্য এ বৈঠকে বাংলাদেশকে এই বাঁধ নির্মাণসংক্রান্ত কিছু তথ্য দেয়া হলে এসব তথ্য বাংলাদেশ ভালোভাবে স্টাডি করতে পারেনি। ফলে এর পরের বছরে অর্থাৎ ২০১৩ সালে সমীক্ষা করতে গিয়ে বাংলাদেশ আরো তথ্য চায় ভারত থেকে। কিন্তু এ পর্যন্ত প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও ভারত বাংলাদেশকে পর্যাপ্ত তথ্য দেয়নি। তবে এবারের বৈঠকে তারা টিপাইমুখ বাঁধটি নিয়ে নতুন তথ্য দেয়।

নতুন পরিকল্পনায় ক্ষতি হবে বাংলাদেশের : নতুন এই পরিকল্পনার ব্যাপারে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা হয় নয়া দিগন্তের ওই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পানি বিশেষজ্ঞ বলেন, বরাকের উজানে ধীরে ধীরে পানি কমে যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক কারণেও বরাকের উজানে পানি ব্যবহার বেড়েছে আবার অনেক্ষ ক্ষেত্রেই কমেছে। এ ছাড়া বাঁধটি নির্মাণের কথা বলে ইতোমধ্যে সেখানে বিশাল কর্মযজ্ঞে বিপুল পরিমাণে বন সাফ করে দেয়া হয়েছে। এতে সেখানে বৃষ্টিপাতও কমে গেছে। তিনি বলেন, ভারত এসব জেনে বুঝে কম পানির প্রাপ্তিসাপেক্ষে টিপাইমুখ বাঁধটি নির্মাণে নতুন পরিকল্পনায় নেমেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বাঁধের উচ্চতা বা বরাকের উজানে ছোট ছোট বাঁধ দিলেও ভাটিতে বাংলাদেশে পানি আরো কমে যাবে। মেঘনা নদী বিপর্যয়ে পড়বে; কারণ বরাকের উজানে এমনিতেই পানি কমে গেছে। উপরোন্তু এখন জলবিদ্যুৎ বা সেচের জন্য ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মিত হলে সেই পানিকেও বাংলাদেশের ভাটির দিকে থামিয়ে দেবে, যা নিঃসন্দেহে ভাটি অঞ্চলের জন্য নতুন বিপর্যয়।

জাতিসঙ্ঘের সাবেক পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ডক্টর এস আই খান বলেন, ছোট ছোট বাঁধ দিলে পুরো নদীর পানির ওপরে ভারতের পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে। ছোট বাঁধ দিয়ে ক্ষতি হবে না বলে জানিয়ে দেশটি বরাকের উজানে পানির প্রবাহে বিঘœ ঘটাবে। তিনি বলেন, ভারত এখন বাংলাদেশ থেকে টিপাইমুখ উজানে ছোট ছোট বাঁধ করার অনুমতি নিয়ে নিতে পারলে তাদেরই উপকার হবে। তবে আসলে সেখানে ভারত কী কী করবে তা জানতে তথ্য দরকার।

এ ব্যাপারে পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী ম ইনামুল হক নয়া দিগন্তকে জানান, টিপাইমুখের উজানে যতই ছোট ছোট বাঁধ দেয়া হোক না কেন ভাটিতে পানি কমবেই। তিস্তার উজানে এমন ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে তিস্তার করুণ দশা করেছে ভারত। কাজেই বরাক নদীর উজানেও ছোট ছোট ড্যাম বানিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলেও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা ভারতের বরাক নদীর অববাহিকার মাছসহ জলজ প্রাণীদের প্রজননপ্রক্রিয়া প্রচণ্ড আঘাতপ্রাপ্ত হবে। তাই কোনোভাবেই এ প্রকল্পে কোনো ধরনের ইতিবাচক সাড়া হবে বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়। (নয়া দিগন্ত)

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।