সরকার ৫ জানুয়ারির স্টাইলেই সিটি নির্বাচন করতে চায় : রফিকুল ইসলাম খান

ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনে দখলদার ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবিতে ২০ দলীয় জোটের ডাকে দেশব্যাপী চলমান অবরোধ ও হরতাল সফল করায় নগরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান। গত ২৪ মার্চ মঙ্গলবার বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোটের অবিরাম আন্দোলনে সরকার দিশেহারা হয়ে জনদৃষ্টি ভিন্নদিকে সরাতেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মূলা ঝুলিয়ে এর আড়ালে বিরোধীদল নির্মূলে গুম- হামলা-মামলা-গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। সরকার ৫ জানুয়ারির স্টাইলেই সিটি নির্বাচন করতে চায়, তাই নির্বাচন কমিশনের কোনোই স্বাধীনতা নেই। পুলিশের দেয়া টাইম লাইন ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি ২০ দলীয় জোটের যেসব নেতা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন তাদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। পোলিং এজেন্ট হতে পারে এমন লোকদেরও পুলিশি হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি বিরোধীদল প্রভাবাধীন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও পুলিশি হানা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র করেই ফ্যাসিবাদের পতনের আন্দোলন থেকে দেশবাসীকে সরানো যাবে না। শুধুমাত্র পদত্যাগ করলেই আন্দোলন বিরতির বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমেই দেশে গণতন্ত্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যা করেছে তাই এই সংসদ ভেঙে দেয়ার মাধ্যমেই কেবলমাত্র গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব। জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জঙ্গিবাদ বিরোধী স্লোগান দিলেও সরকারই সারা দেশে জঙ্গিবাদী শাসন চালাচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে অজ্ঞাত লাশ পাওয়া যাচ্ছে। কোথাও স্বস্তি নেই। কাকে কখন কোথা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে কেউ বলতে পারছে না। একদলীয় শাসন টিকিয়ে রাখতেই এমন আতঙ্কবাদী পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে দলন নীতির মাধ্যমে অতীতেও কোনো সরকার টিকতে পারে নাই, বর্তমান শাসকরাও পারবে না।

বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, গণআন্দোলনের খবর যাতে গণমাধ্যমে প্রচার করা না হয় এ জন্যই বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি টেলিভিশনে গুম নিয়ে সংবাদ প্রচারে সেন্সর আরোপ করা হয়েছে। পোশাক শ্রমিক আমিনুলকে ৫ মার্চ পুলিশি পরিচয়ে তুলে নেয়া হলেও এখনো তার কোনো সন্ধান পায়নি তার পরিবার। গুম হয়ে যাবার মতো ভয়ঙ্কর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনও নির্বিকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরকারের দুঃশাসনের প্রতিবাদ জানালে তাদেরকেও আইসিটি এ্যাক্ট এ আটক করা হচ্ছে। প্রচারযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের আন্দোলনকে আড়াল করা যাবে না। নিয়ন্ত্রণমূলক কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন অনিবার্য। গণআন্দোলনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামকে বিজয়ী করা হবে।

তিনি আরো বলেন, দলীয়করণের কারণে জনপ্রশাসন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দক্ষ, মেধাবী, দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রেখে অযোগ্যদের পদোন্নতি দেয়ায় জনপ্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি করা হয়েছে। সবাই ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ে প্রশাসনকে যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। তাই দেশকে নিয়মতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতেই দখলদার সরকারের পতনের জন্য আন্দোলনের বিকল্প নেই। সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতেই শিগগিরই জনআকাক্সক্ষা অনুযায়ী নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে। আজ বুধবার রাজধানীর সকল থানায় সর্বস্তরের নগরবাসীকে সাথে নিয়ে জামায়াত ও ছাত্রশিবির, বিরোধী জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল সফল করতে এবং ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস পালনে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।