সংবাদ শিরোনামঃ

নতুন কৌশলে আন্দোলনের মাঠে ২০ দলীয় জোট ** সতর্কতার সাথে এগুচ্ছে বিএনপি ** ভরাডুবির আশঙ্কা আ’লীগে ** নেতানিয়াহুর জয় মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট ঘনীভূত করবে ** গণতন্ত্র ছাড়া জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায় না ** স্বাধীনতা হোক অর্থবহ ** আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মার্কিন দলিলপত্র ** আগৈলঝাড়ায় খাল বিল বেদখল ** গ্রেফতার নির্যাতন উপেক্ষা করে সারাদেশে হরতাল অবরোধ অব্যাহত ** রাজনীতি ও সহিষ্ণুতা ** আমাদের স্বাধীনতার ৪৪ বছর **

ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ চৈত্র ১৪২১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৫

ইন্ডিয়ার ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি আইসিসি

প্রশ্নের মুখে ক্রিকেট বোদ্ধাদের নৈতিকতা

ডেস্ক রিপোর্ট : বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট থেকে টিম ইন্ডিয়া ছিটকে পড়লে মাথায় হাত পড়ে দেশটির ব্যবসায়ীদের। বিশ্ব ক্রিকেট ব্যবসায়ের সিংহভাগই নিয়ন্ত্রণ করছে ইন্ডিয়া। এর মধ্যে প্রধান ব্যবসায়ই হচ্ছে ক্রিকেট সম্প্রচার ও বিজ্ঞাপন থেকে আয়। সম্প্রতি ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ব্যবসায় স্টার স্পোর্টসের মতো ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের পাশাপাশি যোগ হয়েছে টুইটার ইন্ডিয়ার মতো কোম্পানি।

স্টার স্পোর্টসের মোট গ্রাহকের পরিমাণ প্রায় ১৪ কোটি। বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে স্টার স্পোর্টসের গ্রাহকের সংখ্যায় যোগ হয়েছে আরও আড়াই কোটি। অর্থাৎ স্টার স্পোর্টস বিশ্বকাপের এই দুই মাসে ১৬ কোটি গ্রাহকের কাছ থেকে সাবস্ক্রিপশন ফিই পাবে ৬০০ কোটি রুপি। এরপর রয়েছে বিজ্ঞাপন বাবদ আয়। বিজ্ঞাপন বাবদ আয়ের মোট সংখ্যাটা প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু বিজ্ঞাপন বাবদ আয় সাবস্ক্রিপশন ফি থেকে আয়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশিই হওয়ার কথা। এই হিসাবে বিজ্ঞাপন বাবদ আয় হবে কয়েক হাজার কোটি রুপি। বিশ্বের ক্রিকেট ব্যবসা যেমন ইন্ডিয়ানদের দখলে। তেমনি ক্রিকেট দর্শকের সিংহভাগও ইন্ডিয়ার নাগরিক। কেবল ইন্ডিয়ার জনসংখ্যাই ১২০ মিলিয়ন।

ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ব্যবসায় প্রথম ‘লালবাতি’ জ্বালিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের কাছে হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে টিম ইন্ডিয়া। আসলে ছিটকে পড়েছিল ইন্ডিয়ার ক্রীড়া ব্যবসায়ীরা। মাথায় হাত পড়ে ক্যাবেল টিভি ব্যবসায়ীদের। ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ ইন্ডিয়ায় প্রায় সবাই খেলা দেখা বন্ধ করে দেয়। সাথে সাথে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা সম্প্রচার বাবদ আয়। এরপর থেকেই বদলে যায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসির ওপর প্রভাব বাড়াতে থাকে ইন্ডিয়া। ২০১৫ সালে এসে ওই প্রভাব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

২০১৫ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট মাঠে গড়ানোর আগ থেকেই শুরু হয়ে যায় ইন্ডিয়াকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া কুচক্র। কারণটা আগেই বলেছি, বিশ্ব ক্রিকেটের সম্প্রচার ব্যবসায় প্রায় পুরোটাই ইন্ডিয়ার দখলে। ক্রিকেটপ্রেমী ইন্ডিয়ানরা আবার নিজেদের দল না থাকলে ক্রিকেট বৈরী হয়ে পড়ে, ক্রিকেট দেখে না। তাই ইন্ডিয়াকে তো টুর্নামেন্টে রাখতেই হবে!

এ কারণেই ইন্ডিয়া ও অন্যান্য বড় দলগুলোর টুর্নামেন্টে টিকে থাকা নিশ্চিত করেই নির্ধারণ করা হয় ফিক্সশ্চার। যেমন ২০১৫ বিশ্বকাপে এমনভাবে ফিক্সশ্চার করা হয় যাতে ইন্ডিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলগুলো টিকে থাকে। কিন্তু এবারও বাগড়া বাধায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডসহ আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় বাংলাদেশ।

কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়ে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয় আরেক মোড়ল ইন্ডিয়ার। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচে শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল আম্পায়ারদের পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তের খড়গ পড়বে বাংলাদেশের ওপর। শেষ পর্যন্ত, আম্পায়ারদের কয়েকটি বাজে সিদ্ধান্তে খেলা চলে যায় ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ফলে, সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায় ইন্ডিয়ার। আম্পায়ারদের এই বাজে সিদ্ধান্তগুলো কি কেবলই ভুল না কি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য পক্ষপাত?

কেবল বাংলাদেশ নয় পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে শ্রীলঙ্কার পক্ষ থেকেও। টুর্নামেন্টে শ্রীলঙ্কার খেলাগুলোর কোনোটা হয়েছে নিউজিল্যান্ডে, কোনোটা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর তুলনায় ভালোই অসুবিধায় পড়ে শ্রীলঙ্কা। এর বিপরীতে ইন্ডিয়ার অধিকাংশ খেলা ছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ফলে, একই গ্রাউন্ডে বারবার খেলে তুলনামূলক অনেকগুলো সুবিধা পায় ইন্ডিয়া। সর্বশেষ, বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ইন্ডিয়া খেলে মেলবোর্নে। মেলবোর্নে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে সেমিফাইনালে উঠার পথ সহজ করে নেয় ইন্ডিয়া।

আইসিসির ওপর ইন্ডিয়ার প্রভাব প্রসঙ্গে ইকোনমিস্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রিকেট নিয়ে ব্যবসায় ইন্ডিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ তৈরি না হলে আইসিসির ওপর দেশটির প্রভাব কমার কোনো সম্ভাবনাই নাই।

ক্রিকেটবোদ্ধাদের কত টাকা দেয় বিসিসিআই?

আম্পায়ারদের একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পরও চোখ-কান বন্ধ রেখে ধারাভাষ্য দিয়েছেন স্টার স্পোর্টস নেটওয়ার্কের কথিত ক্রিকেটবোদ্ধারা। তবে খোলা রেখেছিলেন মুখ। যতদূর পেরেছেন ইন্ডিয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। না পারলে চেপে গেছেন। কিন্তু কেন? প্রশ্নটার উত্তর সহজ হলেও নোংরা।

এক কথায় এই ক্রিকেটবোদ্ধারা ইন্ডিয়ার ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের পেইড এজেন্ট। এই মুহূর্তে কথাটি শুনতে অনেকেরই অবিশ্বাস্য মনে হবে। মনে হবে, পরাজয়ের গ্লানি থেকে অপপ্রচার। না পাঠক, খোদ ইন্ডিয়ার পত্রপত্রিকাতেই লেখা হয়েছে এই সকল ক্রিকেটবোদ্ধার সাথে বিসিসিআইয়ের অর্থ লেনদেনের হিসাব। এমনই একজন ক্রিকেটবোদ্ধা হচ্ছেন সুনীল গাভাস্কার। তিনি বিভিন্ন দলের সমালোচনা করেন, কখনও প্রশংসা করেন। কিন্তু ইন্ডিয়ার প্রশ্ন উঠলে চোখ বন্ধ করে সমর্থন করেন। তা সে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আম্পায়ারদের কলঙ্কজনক সিদ্ধান্তের মতো কিছু হলেও।

২০১১ সালে প্রকাশিত একটি হিসাব অনুসারে সুনীল গাভাস্কার, রবী শাস্ত্রীর মতো কথিত ক্রিকেটবোদ্ধাদেরকে বিসিসিআই বছরে সাড়ে তিন কোটি রুপী দেয় এবং এই চুক্তি বছরে বছরে নবায়ন করে। এদের কাছ থেকে বিসিসিআইয়ের লক্ষ্য থাকে, বোর্ডের যেকোনো সিদ্ধান্ত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে সমর্থন করা এবং ক্রিকেটবোদ্ধা হিসেবে বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয়া। এইভাবে মাসোহারা দিয়ে বিসিসিআইয়ের পক্ষে সাবেক ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রবণতা শুরু হয় ২০০৮ সালে।

এই তথ্যগুলো প্রকাশ করেছিলেন আউটলুক ইন্ডিয়ার ক্রীড়া লেখক রোহিত মহাজন। বিসিসিআইয়ের মাসোহারা পাওয়া এই ক্রিকেট বোদ্ধাদের প্রতাপ খেলাধূলার চ্যানেলগুলোতে তুলনাহীন। ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে এদেরকে আমন্ত্রণ জানাতে বাধ্য হয় স্টার স্পোর্টস, নিও, ইএসপিএনের মতো মিডিয়াগুলো। এবার এরাও ইন্ডিয়াকে প্রশ্নহীনভাবে সমর্থন করায় ইন্ডিয়ার মালিকানাধীন মিডিয়াগুলো এদেরকে আমন্ত্রণ জানায় সাদরে। এইভাবে বিসিসিআই ও ইন্ডিয়ার মিডিয়া তৈরি করছে ক্রিকেটবোদ্ধা নামের একদল পেইড এজেন্ট।

এইভাবে ক্রিকেটবোদ্ধা হিসেবে বিসিসিআইয়ের পেইড এজেন্ট তৈরি করার বিরোধিতা আছে খোদ ইন্ডিয়াতেই। এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন ইন্ডিয়ার তারকা খেলোয়াড় কপিল দেব। কপিল দেবের মতে, বিসিসিআইয়ের টাকা খেয়ে গাভাস্কাররা নিরপেক্ষভাবে কথা বলতে পারে না। যার নুন খান, তার গুনতো গাইতেই হয়!

ক্রিকেটবোদ্ধাদেরকে এইভাবে টাকা দিয়ে কিনে নেয়ার চেষ্টা সম্পর্কে ইন্ডিয়ার ক্রীড়া লেখক ও উপন্যাসিক রাহুল ভট্টাচার্য্য বলেন, কমেন্ট্রি বক্সের বক্তারা বিভিন্ন দলের পক্ষে কথা বলেন, এইটা স্বাভাবিক। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া সব দলের পক্ষেই কথা বলার জন্য এমন কেউ না কেউ থাকে। কিন্তু বিসিসিআইয়ের মতো করে টাকা দিয়ে কিনে নেয়ার কোনো দৃষ্টান্ত এর আগে দেখিনি। সৌরভ গাঙ্গুলি, অনিল কুম্বলের মতো বক্তারাও কখন বিসিসিআইয়ের পকেটে চলে যাবে কে জানে?

সৌরভ গাঙ্গুলি, অনিল কুম্বলেরা বিসিসিআইয়ের পকেটে চলে গেছেন কি না তা ভারতীয় লেখক রাহুল ভট্টাচার্য্য না জানলেও, ভালো করেই বুঝেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলায় কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনার পরও যেভাবে তারা আম্পয়ারদের ভুল সিদ্ধান্তগুলোকে এড়িয়ে গেছেন, সমর্থন করেছেন; এরপর আর কোনো প্রমাণ লাগে কি?

নতুনদিন-র সৌজন্যে।

এ পাতার অন্যান্য খবর

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।