সংবাদ শিরোনামঃ

পরিস্থিতি বেসামাল : সতর্ক সরকার ** হত্যার রাজনীতি পরিহার করে নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিন ** মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদেরের রিভিউ আবেদন ** অনিশ্চয়তায় পোশাক খাত অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত ** বিরোধী নেতাদের ধরপাকড় সরকারের জন্য বুমেরাং হবে ** অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে ** অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া ** এখন আর সুষ্ঠু রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না ** রাজনৈতিক সঙ্কটে থমকে যাচ্ছে অগ্রগতি ** ধীরে ধীরে ইসরাইলের গলার ফাঁস এঁটে আসছে ** অনুভূতির সাগরে কুরআনের দেশে ** ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ ** সরকার দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ** পানিবদ্ধতায় হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরের আমনচারা এখন গোখাদ্য **

ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪২২, ২ মহররম ১৪৩৭, ১৬ অক্টোবর ২০১৫

প্রফেসর ড. সদরুদ্দীন আহমেদ
‘‘Comparison and analysis are the chief tools of the critic’’ -T.S.Eliot.   ফররুখ আহমেদের ‘সাত সাগরের মাঝি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত ‘পাঞ্জেরী’ একটি অত্যন্ত বিখ্যাত কবিতা। এটি সমুদ্র বা দরিয়া-সম্পর্কিত একটি কবিতা। তবে এই কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য দরিয়া-সম্পর্কিত কবিতার সঙ্গে এর পার্থক্য আছে। ‘সিন্দবাদ’ ও ‘বার দরিয়ায়’-এ দু’টো কবিতার কথা ধরা যাক। ‘সিন্দবাদ’-এ দরিয়ার আকর্ষণ ও উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতার বিবরণ আছে। ‘বা’ দরিয়ায়’ আমরা দেখি ‘সমুদ্র থেকে সমুদ্রে ছুটে দরিয়ার সাদা তাজী।’ পান্তরে ‘পাঞ্জেরী’তে আমরা শুনি এক অবসাদগ্রস্ত নাবিকের কান্ত কণ্ঠস্বর : ‘রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?’ জাহাজটি সমুদ্র ব,ে কিন্তু প্রায় নিশ্চল। বক্তা (Speaker) একাকী ভুলে দাঁড় টানছেন। তিনি পাঞ্জেরীকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছেন। ‘পাঞ্জেরী’ অর্থ কান্ডারী যিনি মাস্তুলে বসে দিক-নির্দেশনা দেন। কিন্তু এই কান্ডারী ঘুমিয়ে আছেন। সময় রাত্রি বেলা। পরিবেশ প্রতিকূল। আকাশ মেঘে-ঢাকা, ‘সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে’। সম্মুখে কুয়াশা ঘেরা। চারদিকে শূন্যতা বিরাজ করছে। বক্তার হঠাৎ প্রশ্ন, জাহাজের অবস্থান, রাত্রি বেলা, প্রতিকূল পরিবেশ একটি নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা করেছে।

দু’জন চরিত্রের উপস্থিতি আমরা অনুভব করি। একজন দাঁড়ি, যিনি বক্তব্য পেশ করছেন : আর একজন পাঞ্জেরী তিনি মাস্তুলে বসে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির কোন প্রতিক্রিয়া নেই কারণ তিনি ঘুমিয়ে আছেন। জাহাজে অন্যকোন নাবিক আছে বলে মনে হয় না। সব কিছু মিলে কান্তি, উৎকণ্ঠা ও হতাশার চিত্র ফুটে উঠেছে। দরিয়ার বুক চিরে সফরের যে উদ্দীপনা, উত্তাল সমুদ্রের মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে যে উত্তেজনা এবং ল্েয পৌঁছানোর জন্য যে সংকল্প যা অন্যান্য দরিয়া সম্পর্কিত কবিতায় সাধারণত আমরা দেখেছি তা ‘পাঞ্জেরী’তে অনুপস্থিত। সব উৎসাহ নিভে গেছে। কখন রঙিন ঊষার উদয় হবে তার জন্য তিনি প্রহর গুণছেন।

প্রত্যেক স্তবকের শুরুতে ‘রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?’ এবং শেষে ‘তুমি মাস্তুলে আমি দাঁড় টানি ভুলে’ এই চরণগুলোর পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এই পুনরাবৃত্তি বক্তার বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থার, তার গভীর হতাশার বহিঃপ্রকাশ, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। আবেগ যখন গভীর হয়, তখন নিজের অজান্তে মানুষ পুনরাবৃত্তি করে। এ সম্বন্ধে G. Leech বলেন, It (repetition) is almost involuntary to a prerson in a state of extreme emotional excitation . (A linguistic Guide to English Poetry) তাছাড়া, এ ধরনের মানসিক অবস্থা প্রলম্বিত হয় এবং সেটা গভীর হতে গভীরতর স্তরে নেমে যায়। বিপর্যয় আরো ভয়ঙ্কর রূপে প্রতিভাত হয়। আলোচ্য কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে আমরা সেটাই ল্য করি :

‘‘দীঘল রাতের শ্রান্ত সফর শেষে

কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা প’ড়েছি এসে?

একী ঘন-সিয়া জিন্দিগানীর বা’র

তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব,

অস্ফূট হ’য়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।

তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;

সম্মুখে শুধু অসীম কুয়াশা হেরি।’’

প্রথম স্তবকের বক্তব্য ও আবেগ এখানে সম্প্রসারিত করা হয়েছে। চিত্রকল্পে পরিবেশের উপস্থাপনা আরো ভয়ঙ্কর রূপ পেয়েছে। ‘দীঘল রাতের শ্রান্ত সফর’, ‘কালো দিগন্ত’, ‘ঘন-সিয়া জিন্দিগানীর বা’ব’, ‘ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব, ‘ক্রমে ডুবে যাওয়া জীবনের জয়ভেরী’-এসব চিত্রকল্পে পরিবেশের আতঙ্ক দিলের পেরেশানী, জীবনের আশা-আকাক্সা, স্বপ্ন-সাধ বিলীন হয়ে যাওয়ার ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। প্রথম স্তবকের সঙ্গে দ্বিতীয় স্তবকের যোগসূত্র Logical bq, Emotional. যুক্তির নয়, আবেগের।

কবিতাটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এই যে, এখানে বক্তার Mood বা মানসিক অবস্থা ণে ণে পরিবর্তিত হয়েছে। দ্বিতীয় স্তবকে যে প্রচণ্ড হতাশা ব্যক্ত হয়েছে, তৃতীয় স্তবকে সে Mood ভিন্ন মোড় নিয়েছে। বক্তা আত্মমগ্ন থাকেননি, বিপর্যয়ের মধ্য থেকে বেরিযে আসার চেষ্টা করছেন। তিনি নিজের কথা ভুলে গিয়ে বন্দরে অপেমাণ যাত্রীদের কথা ভাবছেন। তারা বন্দরে বসে জাহাজের আগমনের অপোয় প্রহর গুণছেন। হয়তো কুয়াশায়, জ্যোৎস্না মায়ায় জাহাজের পাল দেখতে পাচ্ছেন। তার অবস্থান থেকে বক্তার এই Sudden fantasy. এই আকস্মিক অবাস্তব ধারণা তার মনস্তত্ত্বের তার কল্পনা শক্তির একটি নাটকীয় উপস্থাপনা বলে অভিহিত করা যায়। সেই সঙ্গে যাত্রীদের প্রতি তার সহানুভূতি উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে :

‘‘আহা পেরেশান মুসাফির দল

দরিয়া কিনারে জাগে তক্দিরে

নিরাশার ছবি এঁকে।’’

বন্দরে অপেমাণ যাত্রীদের ‘মুসাফির’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে কারণ তারা জাহাজের যাত্রী হয়ে বন্দর থেকে বন্দরে, দেশ থেকে দেশান্তরে উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চায়। কিন্তু জাহাজের দেখা নেই, তাই তারা নিরাশ। বক্তার সঙ্গে তাদের এইখানে মিল। উভয়ই হতাশাগ্রস্ত। জাহাজ বন্দরে না পৌঁছে পথহারা এই দরিয়ার স্রোতে ভেঙে চলেছে, কোথায় যাচ্ছে, কোন সীমাহীন দূরে তা জানা নেই। পরণে তিনি আবার মুসাফিরদের কথা ভাবছেন : ‘মুসাফির দল ব’সে আছে কূল ঘেরি’, আর তিনি ‘ভুলে একাকী দাঁড় টানছেন ‘রাতের ম্লান জুলমাত হেরি।’

এই পর্যায়ে তার চিন্তা আবার মোড় নিয়েছে। কেন এমন হলো তার কারণ তিনি নির্দেশ করছেন :

‘‘শুধু গাফলতে, শুধু খেয়ালের ভুলে

দরিয়া-অথই ভ্রান্তি নিয়াছি তুলে,

আমাদের ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি’

দেখেছে সভায়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী;

মোদের খেলায় ধূলায় লুটায়ে পড়ি’

কেঁদেছে তাদের দুর্ভাগ্যের বিস্বাদ শর্বরী।’’

এখানে যাত্রীদের অতীত গৌরবের প্রতি ইঙ্গিত আছে। এক সময় তাদের ‘সেতারা, শশী’ আকাশে জ্বল জ্বল করতো। কিন্তু তারা সভয়ে সেই ‘সেতারা, শশী’ অস্ত যেতে দেখেছে, তাদের দুর্ভাগ্যের রজনী ধূলায় লুটায়ে পড়ে কেঁদেছে। তাদের এই বিপর্যয়ের জন্য বক্তা দু’টি কারণ নির্দেশ করেছেন : ‘গাফলত’ ও ‘খেয়ালের ভুল।’ এই ‘গাফলত’ ও ‘ভুল’ যাত্রীদের নয়, মাঝি-মাল্লাদের। এর মধ্যে বক্তা নিজেকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে মনে হয় : ‘আমাদেরই ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি’ তাদের ‘সেতারা শশী’ অস্ত যেতে দেখেছে; ‘মোদের খেলায়’ তাদের ‘বিস্বাদ শর্বরী’ ধূলায় লুটিয়ে পড়ে কেঁদেছে। তবে এই কারণগুলোর কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, শুধু উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। কি ধরনের গাফলতি করা হয়েছে, কি ভুল করা হয়েছে তা বলা হয়নি। তাই কারণগুলোর মধ্যে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে।

এরপর বক্তা সওদাগরদের কথা বলছেন। স্পষ্টত যাত্রী ও সওদাগরদের মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। যাত্রীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে দরিয়া কিনারে বসে আছে। সওদাগররা বাড়িতে অবস্থান করছেন। কিন্তু তাদের ঘরে ঘরে আহাজারী-ক্রন্দন। তারা ব্যবসায়ী, তাদের ব্যবসা ধ্বংস হয়ে গেছে মাঝি-মাল্লাদের উপরোক্ত গাফলতি ও ভুলের জন্য।

এ পর্যায়ে আর একটি Sudden fantasy. বক্তা আগেই উল্লেখ করেছেন যে, তারা কোন কালো দিগন্তে এসে পৌঁছেছেন তা জানেন না। কিন্তু এখন তিনি কিসের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন? যেন তিনি এই আওয়াজের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছেন। এ আওয়াজ কিসের তা নিয়ে তার মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে :

ওকি বাতাসের হাহাকার, -ওকি রোণাজারি ক্ষুধিতের!

ওকি দরিয়ার গর্জন,-ওকি বেদনা মজলুমের।!

এখানে যে অলঙ্কার (Figurative Language) ব্যবহার করা হয়েছে তাকে Parallelism বা সমান্তরাল বলা হয়। প্রত্যেক বাক্যের দু’টো অংশ সমান্তরাল অর্থাৎ ব্যাকরণগতভাবে এক : ‘ওকি বাতাসের হাহাকার-ওকি রোণাজারি ক্ষুধিতের/ওকি দরিয়ার গর্জন-ওকি বেদনা মজলুমের।’ এর ফলে একটা Sound Pattern বা ঐক্যতান সৃষ্টি হয়েছে। আবার উভয় অংশের মধ্যে একটা Contrast বা বৈপরিত্য প্রকাশ পেয়েছে। বাতাসের হাহাকার আর ক্ষুধিতের রোণাজারি এক নয়। দরিয়ার গর্জন আর মজলুমের বেদনার মধ্যে তফাৎ আছে। উভয় বাক্যের শেষের অংশটি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বাতাসের হাহাকার আর দরিয়ার গর্জনের চেয়ে ক্ষুধিতের রোণাজারি ও বেদনা এখানে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। আওয়াজটা ‘ক্ষুধাতুর পাঁজরায় মৃত্যুর জয়ভেরী’ কিনা সে অনুমানও বক্তা করছেন। সবগুলো অনুমান সঠিক, কিন্তু এ সবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি।’ ‘অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি।’ তাই বক্তা পাঞ্জেরীকে জেগে ওঠার জন্য প্রচণ্ড তাগিদ দিচ্ছেন :

 à¦¦à§‡à¦– চেয়ে সূর্য ওঠার কত দেরী, কত দেরী॥

কবিতাটির কাঠামো একটা সংঘাতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। এই সংঘাত দু’টি দলের মধ্যে। একদিকে যাত্রী ও সওদাগরের দল। অন্যদিকে পাঞ্জেরী ও নাবিক। আমরা দেখেছি যাত্রীরা বন্দরে, পানির কিনারে জাহাজের আগমনের অপোয় প্রহর গুণছে। তারা হতাশাগ্রস্ত। সওদাগরের ঘরে ঘরে আহাজারী উঠেছে। পান্তরে, কাণ্ডারী নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। জাহাজ পথহারা হয়ে নিরুদ্দিষ্টভাবে অতল সাগরের বুকে ভেসে চলেছে। কিন্তু কবিতার শেষে আমরা দেখি ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি। এটা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। নিষ্ক্রিয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একটা ধূমায়িত অসন্তোষ। নেতা নির্বিকার, ঘুমে অচেতন। আমরা সংঘাতের কথা বলছি। কিন্তু কবিতায় ঠিক সংঘাত দেখানো হয়নি। সংঘাতের পূর্ব ল্য প্রকাশ পেয়েছে তীব্র ভ্রুকুটির মধ্যে রোণাজারী শেষ পর্যন্ত কৈফিয়তের রূপ নিয়েছে। পাঞ্জেরী জেগে না উঠলে তার বিপদ আসন্ন-এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

এই দুই দলের মধ্যে বক্তার অবস্থান কোথায়? তিনি একজন নাবিক। সম্ভবত তিনি নেতাদের একজন। তিনি এক পর্যায়ে উল্লেখ করেছেন : ‘আমাদের ভুলে পানির কিনারে মুসাফির দল বসি/দেখেছে সভয়ে অস্ত গিয়াছে তাদের সেতারা, শশী।’ অতএব যাত্রীদের দুর্দশার জন্য তিনিও দায়ী। কিন্তু তার সঙ্গে পাঞ্জেরী ঘুমালেও তিনি একাকী দাঁড় টেনে চলেছেন এবং ক্ষুধিত মানুষের প্রতি তার সহানুভূতি উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে। তিনি শুধু সহানুভূতি প্রকাশ করে ক্ষান্ত হননি, পাঞ্জেরীকে জেগে উঠে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য জোর তাগিদ দিচ্ছেন।

কবিতাটির বক্তব্য কি? সেটা এক কথায় বলা মুশকিল। তাছাড়া, বক্তব্য ও তার কাব্যিক উপস্থাপনা এক জিনিস নয়। ছন্দ, শব্দ, রূপক, চিত্রকল্প, প্রতীক, নাটকীয়তা এবং বাস্তবতা ও fantasy’র সমন্বয়ে যে অর্থ প্রকাশ পেয়েছে তা সংেেপ ব্যক্ত করা যায় না। Cleanth Brooks-এর ভাষায় এই সব কাব্য-কৌশল Function in a good Poem to modify, to qualify and develop the total attitude which we are to take in coming to terms with the total situation. (The Well Wrought Lern). ‘পাঞ্জেরী’তে এই total situation I total attitudeটা কি?

সমুদ্র, জাহাজ, নাবিক-এই চিত্রকল্পগুলো ইতঃপূর্বে ফররুখ আহমদের একাধিক কবিতায় ব্যবহৃত হয়েছে। এগুলো শুধু চিত্রকল্প নয়, প্রতীকও বটে। সবগুলো মিলিয়ে বিবেচনা করলে অনুমান করা যায় যে, তিনি একটি জাতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আমরা আগেই বলেছি, অন্যান্য দরিয়ার কবিতায় সেই জাতিকে দুঃসাহসিক অভিযাত্রীর প্রতীক হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কিন্তু ‘পাঞ্জেরী’তে তাদের দুর্দশার, আশা-ভঙ্গের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে। নেতৃত্বের গাফলতি ও ভুল তাদের দুর্দশার কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পাঞ্জেরী মাস্তুলে বসে ঘুমুচ্ছেন; জাহাজ কোন দিকে যাচ্ছে সে দিকে তার খেয়াল নেই। তাই কবিতার শেষে তাকে প্রচণ্ড তাগিদ দিয়ে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে। তিনি না জাগলে এই জাতির দুর্দশার রাত পোহাবে না; নতুন ঊষার উদয় হবে না; তাদের বিরুদ্ধে ক্ষুধিত মানুষের রোষ তীব্র হয়ে উঠবে। তাই পাঞ্জেরীতে জেগে ওঠার প্রচণ্ড তাগিদ দিয়ে নাবিকের বক্তব্য শেষ হয়েছে।

এই বক্তব্য সরাসরি নয়, বক্তৃতার ভঙ্গিতে নয়। বিভিন্ন চিত্রকল্প, রূপক, প্রতীকের মাধ্যমে নাটকীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কবিতার স্তবকগুলো পরস্পরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। তবে এই সম্পর্ক যুক্তির নয়, আবেগের এবং এই আবেগের বিভিন্ন স্তর ল্য করা যায়। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, গণমানুষের প্রতি সমবেদনা, ক্ষুধিত মানুষের প্রতি সহানুভূতি, নেতৃত্বের গাফলত ও ভুলের জন্য অনুশোচনা, অবশেষে কাণ্ডারীকে জাতির প্রতি দায়িত্ব পালনের উদাত্ত আহ্বান-সবকিছু মিলে ‘পাঞ্জেরী’ হয়ে উঠেছে একটি অনবদ্য লিরিক এবং ফররুখ আহমদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা।

লেখক : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

অন্যান্য মিডিয়া bdnews24 RTNN Sheersha News barta24 Prothom Alo Daily Nayadiganta Jugantor Samakal Amardesh Kaler Kantho Daily Ittefaq Daily Inqilab Daily Sangram Daily Janakantha Amader Shomoy Bangladesh Pratidin Bhorerkagoj Daily Dinkal Manob Zamin Destiny Sangbad Deshbangla Daily Star New Age New Nation Bangladesh Today Financial Express Independent News Today Shaptahik 2000 Computer Jagat Computer Barta Budhbar Bangladesherkhela Holiday Bangladesh Monitor BBC Bangla Pars Today
homeabout usdeveloped by

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ মো. তাসনীম আলম।

এটিএম সিরাজুল হক কর্তৃক হক প্রিন্টার্স ১০/৮ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০ হতে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। যোগাযোগের ঠিকানাঃ ৪২৩ এলিফেন্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা - ১২১৭।

ফোন: ৮৮ ০২ ৪৮৩১৯০৬৫, ই-মেইল: sonarbanglaweekly@gmail.com, weeklysonarbangla@yahoo.com, সার্কুলেশন: ০১৫৫২৩৯৮১৯০, বিজ্ঞাপন: ৪৮৩১৫৫৭১, ০১৯১৬৮৬৯১৬৮, ০১৭৩৪০৩৬৮৪৬।